আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্কুলশিশুরা তুলে ধরল নানা সমস্যার কথা || চাইল্ড পার্লামেন্ট অধিবেশন : কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাস

ভালো ..তবে কালো

'মাননীয় স্পিকার, অনেক শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে শুধু মোবাইল ফোনে কথাই বলেন না, কেউ কেউ ছাত্র-ছাত্রীদের ছবি তুলেন এবং ভিডিও করেন। এতে শিক্ষার্থী বিশেষ করে ছাত্রীরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে। ক্লাসে মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ হলেও তা অনেকে মানেন না। ' কথাগুলো বলছিল সিরাজগঞ্জের স্কুল শিক্ষার্থী নুরে জান্নাত। লক্ষ্মীপুরের শিশু নুসরাত আরা বলে, 'অনেক শিক্ষক মূল পাঠ্যবই না পড়িয়ে শ্রেণীকক্ষে গাইড বই পড়াচ্ছেন।

নিষিদ্ধ হলেও তাঁরা গাইড বইয়ের কথা তুলে ধরছেন। ' গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওস্থ এলজিইডি মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন অস্ট্রেলিয়ার সহায়তায় পরিচালিত শিশু সংগঠন চাইল্ড পার্লামেন্টের এক অধিবেশনে সারা দেশ থেকে আসা শিশু সদস্যরা এভাবেই বিদ্যালয় ও ছাত্র-ছাত্রীদের নানা সমস্যার চিত্র তুলে ধরেন। জাতীয় সংসদের আদলে একজন স্পিকার ও দুজন ডেপুটি স্পিকারের পরিচালনায় প্রাণবন্ত এই অধিবেশনে শিশুরা নানামুখী সমস্যার কথা জানায়। 'শিক্ষা ও সুশাসন' শীর্ষক চাইল্ড পার্লামেন্টের সপ্তম এই অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, 'আমি আবেগাপ্লুত। শিশুরা যেভাবে বক্তব্য ও পরামর্শ দিয়েছে তাতে আমি নতুন ধারণা পেয়েছি।

তাদের সমস্যার কথা নোট করেছি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করে কার্যকরী পদক্ষেপ নেব। ' তিনি আরো বলেন, 'আমি মনে করি, কোনো বিবেকবান শিক্ষকের শ্রেণীকক্ষে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা উচিত না এবং এ বিষয়ে তাঁদের সতর্ক করতে যা করার তা-ই করা হবে। ' অধিবেশনে চাইল্ড পার্লামেন্টের এক জরিপের ফল নিয়ে তৈরি করা একটি কর্মপত্র শিক্ষামন্ত্রীকে দেওয়া হয়। দেশের ৬৪টি জেলার ৫১২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক হাজার ২৪ জন শিক্ষার্থীর ওপর পরিচালিত এই জরিপে নানামুখী সমস্যার চিত্র ফুটে ওঠে।

জরিপের উল্লেখযোগ্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে, দেশের বিদ্যালয়গুলোর ৬৮ শতাংশ শিক্ষার্থী শিক্ষকদের হাতে শারীরিক বা মানসিকভাবে নির্যাতিত হয়। ৫৪ শতাংশ ছাত্রী রাস্তায় ইভ টিজিংয়ের শিকার হয়। এ ছাড়া প্রায় ৭৪ শতাংশ শিক্ষক ক্লাস চলাকালে মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন এবং গৃহশিক্ষকের কাছে বা কোচিংয়ে পড়ে ৭৬ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। এর ফলে শিক্ষায় নানা ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। জরিপে সমস্যার পাশাপাশি তা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিভিন্ন সুপারিশ করা হয়।

গতকালের অধিবেশনে স্পিকারের দায়িত্ব পালন করে বিদ্যালয় শিক্ষার্থী সুলতানা সেলিম নিশি, ডেপুটি স্পিকার হিসেবে ছিল নাসের আল মাহমুদ ও শাফিকা নওরীন ক্রশি। এ সময় দেশের ৬৪ জেলার প্রতিনিধিরা তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করে। তারা শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশনি ও কোচিং ব্যবসা, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ভর্তি ও পাঠগ্রহণ, বিশেষ অঞ্চলের স্কুলের জন্য বিশেষ অবকাঠামো নির্মাণ, রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন, স্কুলে বিশুদ্ধ সুপেয় পানি সরবরাহ ও ছেলে-মেয়েদের জন্য আলাদা টয়লেট ব্যবস্থা, দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চলে ছুটির তালিকা পরিবর্তন করা, সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতিতে শিক্ষকদের অদক্ষতাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরে। অধিবেশনে সেভ দ্য চিলড্রেন অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশস্থ কান্ট্রি ডিরেক্টর সুলতান মাহমুদসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আয়োজকরা জানান, ২০০৩ সাল থেকে চাইল্ড পার্লামেন্টের ছয়টি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।