আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আপনার শিশুসন্তানটি কি সঠিকভাবে বেড়ে উঠছে???


আপনার শিশুসন্তানটি কি আপনার কথা একেবারেই শুনছে না??মুহুর্তে মুহুর্তে এটা সেটা বায়না ধরছে, স্কুলে যেতে চাচ্ছে না?? যদি আসলেই এরকমটি হয় তাহলে আপনার বাচ্চার এই ধরনের আচরন কে শুধুই দুষ্টুমী মনে না করে জেনে নিন এগুলো বড় কোন রোগের পূর্বলক্ষন কিনা?? আপনার বাচ্চা যদি সর্বদাই উপরোল্লেখিত আচরণগুলো করে থাকে তাহলে ধরে নিতে হবে সে বিহেভিয়ারাল প্রবলেম বা আচরণগত সমস্যায় ভুগছে। আচরনগত সমস্যা কোন মানসিক রোগ নয়। কোন নির্দিষ্ট কারনেও এই সমস্যা দেখা দেয় না। তবে অনেক বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের মতে বাচ্চার মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোব যদি কোন কারনে ছোট হয় তাহলে সে এই সমস্যায় ভুগতে পারে। আপনি আপনার বাচ্চাকে কোন পরিবেশে মানুষ করছেন, কিভাবে তার দেখাশোনা করছেন তার উপরও কিন্তু বাচ্চার মানসিক অবস্থা নির্ভর করবে।

বাচ্চার প্রতি অতিরিক্ত ভালোবাসা কিংবা অতিরিক্ত অবহেলা দুটোই কিন্তু বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বাচ্চার প্রতি ভালোবাসার কারনে আপনি যদি তার প্রত্যেকটা অন্যায় আবদার মেনে নেন, তাহলে একটি বাচ্চা ন্যায় অন্যায় এর পার্থক্য বুঝতে পারবেনা এবং সে তার এই অন্যায় আচরনকেই সঠিক বলে ধরে নিবে। পরবর্তিতে এগুলোই তার আচরনগত সমস্যা হিসেবে দেখা দিবে। যা সময়ের ব্যাবধানে বড় কন মানসিক রোগের কারন হয়ে দাড়াতে পারে। একজন পিতা বা মাতা তার বাচ্চাকে কিভাবে মানুষ করবে তার কিছু ধরন আছে, যাকে বলা পেরেন্টিং স্ট্র্যাটেজি।

মূলত তিন ধরনের স্ট্র্যাটেজি আমাদের সমাজে বেশী দেখা যায়- ১) অথোরেটেরিয়ানঃ এটাকে অন্য কথায় ডিমান্ডিং স্ট্র্যাটেজি ও বলা হয়। এই ক্ষেত্রে পিতামাতা সন্তানের কাছ থেকে অনেক কিছু আশা করে কিন্তু সেই তুলনায় সন্তানের ভালোলাগা মন্দলাগা বা তার ফিলীংস এর প্রতি কোনরূপ গুরুত্ব প্রদান করে না। তারা বাচ্চাকে কঠিন নিয়ম কানুনের মধ্যে বড় করতে বেশী পছন্দ করে। বাচ্চার সামাজিক ও পারিবারিক আচরন তারা আগে থেকেই ঠিক করে রাখে এবং সে ভাবেই বাচ্চাকে পরিচালিত হতে বাধ্য করে। এর ফলে বাচ্চার মধ্যে এক ধরনের অসহায়ত্বের জন্ম হয় এবং বাচ্চা প্যাসিভ হয়ে যায়।

ইচ্ছা না থকলেও সে বিনা প্রতিবাদে সবার সব কথা মেনে নেয়। এইসব বাচ্চারা পরবর্তিতে বড় ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে, যেমন তারা অতটা সামাজিক হয়না, জীবনের বড় কোন সিদ্ধান্ত নিতে ভয় পায়, অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পরে। ২)পারমিসিভঃ পারমিসিভ পিতামাতরা সন্তানের প্রতি যতটা রেসপনসিভ হয় ততটা ডিমান্ডিং হয়না। তারা তাদের সন্তানকে কখনোই না বলতে পারেনা। সন্তান মানুষ করার ক্ষেত্রে তারা কোন রকমের নিয়ম-কানুনের সীমানা বেধে দেয়না, বা কোনরূপ কর্তৃত্ব ও সৃষ্টি করে না ,ফলে সন্তান তার নিজের পছন্দমত বেড়ে উঠতে পারে।

কিন্তু এক্ষেত্রে একটা বড় সমস্যা হল সন্তানের সব আবদার(ইনক্লুডিং সেক্সুয়াল এন্ড এগ্রেসিভ ইমপালস্) মেনে নেওয়ার ফলে সন্তান বখে যেতে পারে। কোন বাউন্ডারি না থাকায় বাচ্চা নিজেকে আনসেফ মনে করতে পারে। বাচ্চার মধ্যে বিদ্রোহ করার প্রবনতা তৈরী হয়। ৩)ইকুয়িলিটিরিয়ানঃ এক্ষেত্রে পিতামাতা বাচ্চার বেড়ে উঠার ক্ষেত্রে খুব মনযোগী হয়। তারা বাচ্চার পছন্দ অপছন্দের যেমন মূল্য দেয় তেমনি বাচ্চাকে সঠিক ও ভুলের মধ্যে পার্থক্য ও বুঝিয়ে দেয়।

এখানে নিয়মও থাকে আবার বাচ্চার মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও থাকে। বাচ্চার ভালো মন্দ বিবেচনা করা ক্ষেত্রবিশেষে নিয়ম- কানুন পরিবর্তিত হয়। ফলে বাচ্চার মানসিক বিকাশ সুস্থ ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়। একটি শিশুর মানসিক বিকাশ যদি ঠিকভাবে সম্পন্ন না হয়, তাহলে তার আচরনগত সমস্যাগুলো পরবর্তিতে বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, যেমন ১) অটিজম ২)ফোবিয়া ৩)অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারএক্টিভ ডিজঅর্ডার ৪)ডিপ্রেশন ৫)লার্নিং ডিজঅ্যাবিলিটি ইত্যাদি। আর বাচ্চার বিভিন্ন আচরনগত সমস্যার মধ্যে নিম্নোক্ত সমস্যাগুলো বেশী ভয়াবহ।

মিথোম্যানিয়াঃ এই ক্ষেত্রে বাচ্চা অত্যধিক মিথ্যা কথা বলে। এমনকি বানিয়ে বানিয়ে ও মিথ্যা কথা বলে এবং ক্রমশ তা অভ্যাসে পরিনত হয়। ট্যানট্রামঃ মুহুর্তে মুহুর্তে বায়না ধরে। তার আবদার মেনে না নিলে মাটিতে শুয়ে পরে বা হাত-পা ছুড়াছুরি করে। অন্যের মনযোগ আকর্ষন করার জন্য বিভিন্ন ধরনের পাগলামী করে।

কন্ডাক্ট ডিজঅর্ডারঃ বাচ্চা কারো কথা শুনেনা। মাঝে মাঝে হিংস্র হয়ে উঠে,স্কুলে যেতে চায় না, খেতে চায় না। বিভিন্ন অসামাজিক কাজকর্ম করতে পছন্দ করে। বন্ধু বান্ধবের সাথে প্রায়ই মারামারি করে ইত্যাদি। বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারঃ বাচ্চা কথায় কথায় রাগ করে, কষ্ট পায়।

কোন কারনে মন খারাপ হলে নিজেকে বিভিন্নভাবে কষ্ট দেয়, যেমন ছুরি দিয়ে হাত-পা কেতে ফেলা, আত্মহত্যা করার প্রবনতা, একা থাকা, প্রায়ই মন খারাপ হওয়া ইত্যাদি। উপরোক্ত লক্ষনগুলো আপনার বাচ্চার মধ্যে দেখা দিলে অবহেলা না করে জরুরী ভিত্তিতে একজন বিশেষজ্ঞ কাউন্সিলরের পরামর্শ নেয়া উচিত। এতে আপনার বাচ্চা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে। তাছাড়াও বাচ্চার সাথে বন্ধুত্বসুলভ আচরন, তাকে সময় দেয়া, মাঝে মাঝে তাকে নিয়ে বাইরে বেড়াতে যাওয়া, তার মতামতের গুরুত্ব দেয়া সন্তানের প্রতি পিতা বা মাতা হিসেবে আপনার দায়িত্ব। আপনার ছোট্ট একটি ভুল সিদ্ধান্ত আপনার বাচ্চার জীবনের চরম পরিনতি ডেকে আনতে পারে।


 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.