আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উড়োচিঠির যতসব উড়ু উড়ু জানালা - রাত্রী

বিদায় - পথের নয়, পথিকের...
রাত্রী, আজ তোকে লিখছি এটা ভেবে যে তুই প্রায়ই আমাকে অভিমানী সুরে বলিস কেন তোকে লিখিনা? আমি আসলে কি যে লিখি খুঁজে পাই না, তোর উড়োচিঠিটা সেদিন এক পেঁচার কাছ থেকে পেলাম। নিস্তব্ধ আঁধার আর নিস্তব্ধ সব তোর ভালো লাগা, ইচ্ছেকৃত আলো-আঁধারী খেলা নিয়ে তুই হয়তো ভালোই আছিস, নক্ষত্রের থেকে ছুটে আসা আলো গুনতে গুনতে অনেক ব্যস্ত! তেমনটাই জানিয়েছিস তুই। তুই জানতে চেয়েছিলি তোকে আমি কেমন জানি, কেমন ধারনা রাখি, এই প্রশ্নটা হয়তো আমার জন্য অনেক কঠিন একটা প্রশ্ন অনেক বেশি কঠিন একটা প্রশ্ন! আমি আসলে তোকে অনুভব করি, অনুভবে তোর শূন্যতাগুলো মেপে দেখি, আমি আরো অনুভব করতে চাই তোর নিঃসঙ্গতাকে, হয়তো আমি সব প্রকাশ করতে চাই তোকে কেমন অনুভব করি, কতটা অনুভব করি, কিন্তু সীমাবদ্ধ আমি প্রকাশে সব সময়ই ব্যার্থ কারন আমি অন্ধকার! আমি প্রকাশিত হই না কখনো, আমি প্রকাশ করতে পারি না আমার অন্তর্নিহিত অনুভূতিগুলো, সেগুলো নক্ষত্রের আলো নয় যে তোকে আলোকিত করবে, সেগুলো জোছনার কণাও না যে তোকে ভাসিয়ে দেবে, সেগুলোও আরো নিগূঢ় অাঁধার, সেগুলোই আমার অনুভূতি! সে কারনে সেগুলো আবদ্ধ থাকে, কিন্তু বিশ্বাস কর রাত্রী আমি কখনো মিথ্যে নই আমি যতটুকুই অন্ধকার অনুভূতি নিয়ে ভেসে চলি, সেগুলোই আমার অস্তিত্ব, আমি তেমনই। আমি অন্ধকার বলেই তোর বন্ধু, তুই রাত্রী বলেই আমার বন্ধু , আমরা বন্ধু বলেই আমরা নিজেদের নিভৃত আঁধারগুলো পরস্পর বন্টন করে চলি। রাত্রী তুই হয়তো চাসনা জোছনা তোকে ছেড়ে যাক, তুই হয়তো চাসনা নক্ষত্রগুলো মেঘে ঢেকে যাক, কিন্তু তুই আঁধার বিলাসী, তুই এও চাস না আঁধার তোকে ছেড়ে যাক।

আমি অন্ধকার হতে পারি, কিন্তু আঁধার নই! আঁধার আমার অস্তিত্বে মিশে আছে, যেমনটি তোর। আমি অন্ধকার হয়ে মিশে যাই সব কিছুতে, আলোর সাথে লুকোচুরি খেলাই আমার কাজ। তোর আছে গোধূলী, তোর আছে সন্ধ্যা আমার আছে জোনাকপোকা আর বিস্তৃত শূন্যতা। আমি জোনাকের আলো তোর সাথে শেয়ার করতে পারি তুই কি জোনাক ভালোবাসিস বেশি নাকি জোছনা? আমার মনে হয় তুই সূর্য্য ভালোবাসিস, কারন তুই রাত্রী, আমি যেমন ভালোবাসি আলো! যা আমাদের নেই তাই আমরা কাছে পেতে চাই, যা আমাদের নিঃশেষ করে দেয়, যার ছোঁয়ায় আমরা প্রতারিত হই, তাকে নিয়েই আমরা বাঁচতে চাই! এজন্যেই তুই আমার বন্ধু, কারন তোর নিভৃত আঁধার গুলো আমি দেখি, তোর শূন্যতাগুলোও অনুভব করি। আমার আঁধার গুলো কি তুই দেখতে পাস? হয়তো নিজের নিভৃতচারীতায় অবসর পাস না তাই আমাকে নিয়ে ভাববার সময় তোর নেই।

সেদিন যে হায়েনাটি তোকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলো সূর্য্য দেবে তোকে, তারপর তুই সব কিছু ছেড়ে-ছুড়ে ভোরের সীমান্তে গেলি আর হায়নার অপেক্ষা করলি সূর্য্যের কাছে নিয়ে যেতে, আমি জানি সেই ভোরে তুই কতটা অসহায় বোধ করছিলি, কারন সূর্য্য উঠছিলো আর তোর অস্তিত্বের আঁধার গুলো নিঃশেষ হচ্ছিলো, সেই হায়েনার দেখা আর মিললো না! আমি আমার সব টুকু আঁধার দিয়ে অনুভব করেছিলাম তার সবটুকু, আমি দেখতে পেয়েছিলাম নিস্তব্ধ হয়ে আমার বন্ধুটি একটি প্রতারকের অপেক্ষা করে যাচ্ছে, অথচ সেই প্রতারকটি কখন পালিয়ে গেছে আলোর ভয়ে! রাত্রি তুই সেই প্রতারকের অপেক্ষায় দিনটাকে এড়িয়ে আবার ফিরে এলি আঁধারে, আরো কিছু রাত, আরো কিছু নক্ষত্র খসে পড়লো, আর সেই হায়েনাকে তুই মনে মনে খুঁজতে লাগলি! আসলে অবসেশন তোর হায়েনাকে ঘিরে নয় সূর্য্যকে ঘিরে আমি সেটাও জানি। তুই এটা নিয়েই বোকার মতো নিজের নক্ষত্রের রাতগুলো ক্ষয়ে ক্ষয়ে ফেললি! রাত্রী, আমাদের সবচেয়ে বড় বোকামী কি জানিস? আমরা আলো ফিরিয়ে দেই না, আমরা আলোকে ভালোবেসে সযতনে আঁধারের গহীনে লুকিয়ে রাখি, যা আলোও কখনো খোঁজ রাখে না, আর এটা নিয়ে মন খারাপ করে আঁধার ভারী করার মধ্যে আমি আর নাই। এবার অন্য কথা বলি, সেদিন এক ভবঘুরে ঝড় এসেছিলো, আমি জোনাকের বাগানে ছিলাম, ঝড়টা এসে সব লন্ড ভন্ড করে দিলো আর আমার সব কিছু এলোমেলো লাগতে লাগলো, তখন তুই তোর চিরচেনা দুঃখ নিয়ে পৃথিবীর ওপাড়ে বেড়াতে গিয়েছিলি, তুই তো জানিস তোকে ছাড়া আমাকে গহীন সব অরন্যে গিয়ে লুকিয়ে থাকতে হয়, যেখানে আলো গিয়ে পৌছতে পারে না, যেখানে নিঃসীম সব নিরাকার আঁধারেরা বেড়াতে আসে, আমি ওদের সাথে ঠিক খাপ খাওয়াতে পারি না, ওরা এত আত্মমুখী আঁধার যে কারো সাথে কথা না বলে মুখ গুঁজে পড়ে থাকে। তুই আসলে তোর সাথে গল্প জমবে এই অপেক্ষায় আমি ঘাপটি মেরে পড়ে থাকি, কিন্তু যখন তুই এসেও চুপচাপ! কেবল এলোমেলো হাওয়া ছাড়া আর কিছু চারিদিকে অনুভব করা যায় না আমি তখন অসহায় হয়ে পড়ি! তখন আমি বিস্তৃত একটা জায়গা নিয়ে অন্ধকার হয় বসে থাকি, দিনের বেলা কুয়ো গুলো লুকিয়ে থাকার খুব ভালো জায়গা, মাঝে মাঝে অবশ্য কিছু দুষ্টু আলো উঁকি ঝুঁকি দেয়, তখন আমি আরো গভীর কুয়োতে গিয়ে বসে থাকি! তুই সূর্য্যের সাথে লুকোচুরি খেলিস, আমি খেলি আলোর সাথে, এটাতে কিন্তু অনেক মজা! কিন্তু যখন মাঝে মাঝে নিজেরই আঁধার সাথে লুকোচুরি খেলতে হয় তখন খুব ক্লান্ত লাগে রে, আমাকে তখন অনেক বেশি অভিনয় করতে হয়, অনেক বেশি ছুটোছুটি করতে হয় আঁধারকে এটা বোঝাতে যে, আমি ঠিক আছি! আরো অনেক আঁধার যখন এসে পুরোটা ভারী করে ফেলে আমাকে তখন আমি আলো খুঁজি যেন ওটা এসে আমাকে একটু হালকা করে দেয়! কিন্তু ওটা বড্ড অন্ধকার বিমুখ! তোরও কি এমন হয়? আমাকে লিখে জানাবি। যখন তুই আসিস তখন পাখিগুলো সব নীড়ে ফিরে আসে আর নিজের ছানা পোনা নিয়ে কি আদুরে করে ঘুমায়, তুই কি সেটা দেখিস? আমি মাঝে মাঝে উঁকি দিয়ে দেখি এটা।

যখন তুই অনেকগুলো আঁধারকে এক সাথে জড়ো করে নিয়ে বসে থাকিস আর গল্প করে আঁধার জমিয়ে ফেলিস, তখন জোছনা আলো বিলিয়ে চারদিক মাতিয়ে ফেলে আর আমার অন্ধকারের মাঝে জোনাকিগুলো কি যে হৈ চৈ করে খেলা ধুলা করে! তুই যখন অনেক গভীর তখন আমিও অনেক পরিপূর্ণ করে ফেলি নিজেকে। একটি পরিপূর্ণ চাঁদের আলো যতটা জোছনা দিতে পারে ঠিক ততটুকু বিশ্বাস তোকে করতে চাই রাত্রী, হয়তো সব কিছুই উৎযাপনের জন্য, আমি যেমন আঁধারে জানালায় বসে পড়ে আলোকে দেখতে চাই আর তেমন তুই আঁধারের মধ্যে বিস্তৃত থেকে উৎযাপন করবি দিন, এমনটাই চাই। রাত্রী আমি তোর নিভৃত সহচর, তাই পৃথিবী তোকে যেপাশেই নিয়ে যাক না কেন, আমি তোর পাশে থাকতে চাই বন্ধু হয়েই,কারন আমি তোকে অনুভব করতে পারি, তোর আঁধার গুলোকে আমার সাথেই বন্টন করে ভাসিয়ে দিতে পারি, আশা করি আঁধারগুলো স্বার্থপরের মতো লুকিয়ে রাখবি না, যেদিন কোন এক আলো এসে আমাকে খেয়ে ফেলবে সেদিন না হয় তুই আমাকে ভুলে যাস। বন্ধু থাকিস। তোর আঁধার গুলো প্রশান্ত হোক....... -----অন্ধকার বিঃদ্রঃ একটা উড়ে যাওয়া বাঁদুরের ডানায় চিঠিটি পাঠিয়ে দিলাম, এটা একটু ফাঁকিবাজ টাইপের, ঠিক আস্থা রাখা যায় না এটার উপর, চিঠি পেয়ে আমাকে জানাস # উড়োচিঠির যতসব উড়ু উড়ু জানালা - পথ
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।