আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জন্মকথা (বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী)

তাহমিদুর রহমান

১ বাইরে কি বৃষ্টি হচ্ছে? এই মধ্যরাতে এক পশলা বৃষ্টি হলে মন্দ হয় না। ভাবে লিয়ান। অনেক্ষন ধরেই সিডি প্লেয়ারে গান শুনছে সে। ঘরে টেবিল ল্যাম্প জ্বলছে ঠিক তার বিছানার কাছে। এই আলোতে বিছানায় শুয়ে থাকতে বেশ মজা লাগে লিয়ানের।

আলো আঁধারিতে মন কেমন যেন খেলা খেলে যায়। কিছু না ভেবেই অনেকক্ষন কাটিয়ে দেওয়া যায়। মোবাইল বাজছে কি? লিয়ান সিডি প্লেয়ারটা বন্ধ করে মোবাইল হাতে নেয়। কে কল করেছে না দেখেই মোবাইলটা সুইচ অফ করে দেয়। তারপর আবার সিডি প্লেয়ারটা ছেড়ে দেয়।

যেন পুরো পৃথিবীর উপরই তার অনেক অভিমান। জানালার পাশে এসে দাড়ায় সে। সারি সারি ছয়তলা, দশতলা বিল্ডিং। চারিদিকে কৃত্রিম আলোর ছড়াছড়ি। শহরের এ দিকটা অনেক পরিষ্কার পরিছন্ন।

লিয়ান জানালার পাশ থেকে সরে আসে। সিডি প্লেয়ারটা বন্ধ করে টেবিল ল্যাম্পটা বন্ধ করে দেয়। তারপর নরম বিছানায় এলিয়ে দেয় নিজেকে। ফজরের দিকে ঘুম ভেঙ্গে যায় লিয়ানের। তীব্র ব্যাথায় কাতরাতে থাকে সে।

ডাইনিং টেবিলের দিকে ছুটে যেতে চাইল সে। কিন্তু কোথায় রুমের দরজা। কিছুতেই সে দরজা খুজে পাচ্ছে না। চারিদিকে দেয়াল। তার মনে হচ্ছে ঘরের ভিতর অসংখ্য ঝিঁ ঝিঁ পোকা ডাকছে একসাথে।

পাগলের মত চারিদিকে হাতরাতে থাকে সে। ভয়ে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। জ্ঞান হারাবার আগে তার মুখ দিয়ে মা শব্দটি ছাড়া অন্যকিছু শোনা যাচ্ছিল না। লিয়ানের যখন জ্ঞান ফিরে তখন সে দেখতে পায় চারিদিকে শুধু সাদার ছড়াছড়ি। এটা কোন জায়গা? সে কি মরে গেছে? হঠাৎ মাথায় কার কোমল স্পর্শ পায় সে।

কোমল স্পর্শদানকারিনীর দিকে তাকায় সে। চিনতে পারে মাকে। স্মিত হাসি দেয় লিয়ান। বুঝতে পারে সে হাসপাতালে। গতরাতের কথা মনে পড়ে।

-এখন কেমন লাগছে বাবা? জিজ্ঞেস করেন লিয়ানের মা। -ভাল। অস্ফুট স্বরে উত্তর দেয় লিয়ান। কিছুক্ষন চুপ করে থাকে তারপর মাকে জিজ্ঞেস করে বসে, -মা, আমি কি আর বাঁচব না? লিয়ানের মা দিশেহারা বোধ করেন। তবু মুখে হাসি ফুটিয়ে বলেন, -ধুর পাগল।

তুই মরতে যাবি কোন দুঃখে? তোর কি মরার বয়স হয়েছে? পাগল ছেলে। লিয়ান মার মুখের দিকে তাকায়। কিছু বলে না। তারপর জিজ্ঞেস করে, -আম্মু আব্বু কোথায়? -আছে। ডাক্তারদের সাথে কথা বলছে।

-আম্মু তোমাদের বিয়ের গল্পটা আবার শুনাবে? লিয়ানের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে হেসে উঠেন লিয়ানের মা। -এক গল্প কতবার শুনবি? -বলই না। বিশেষ করে ওই জায়গাটা যখন তুমি আব্বুর হাত ধরে বাসা থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলে। -কেন ওই জায়গাটা কেন? -আমার হেভি মজা লাগে। কেমন জানি সিনেমা সিনেমা ভাব আছে।

-ওরে দুষ্টরে। এই সময় লিয়ানের বাবা এসে ভিতরে ঢুকেন। মুখটা কালো। মুখ দেখেই লিয়ানের মা অনুমান করতে পারেন ডাক্তাররা কি বলেছেন। লিয়ানের মা লিয়ানকে শক্ত করে ধরে রাখেন।

লিয়ানের লাস্ট স্টেজে ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়েছিল। ঠিক পাঁচদিন পরে তার মৃত্যু হয়। ২ আজ রেজাল্ট বের হয়েছে। দুরু দুরু বুকে রেজাল্ট আনতে যাচ্ছে আনহা। রেজাল্ট যা ভেবেছিল তাই হয়েছে।

লিস্টে তার নাম নেই। প্রফেসর স্টাইন তাকে পাশ করাননি। সে প্রফসরের কাছে ছুটে যায়। ওকে দেখেই প্রফেসর স্টাইন বলে উঠল, -আনহা তোমাকে আগেই বলেছিলাম, ১০২৫ নম্বর কোর্সটা তুমি নিও না। -কিন্তু প্রফেসর? -কিন্তু কি? তুমি যেসব প্রাণি তৈ্রি করেছিলে তা আমার কাছে বুদ্ধিমান মনে হয়নি।

আর শারিরীকভাবে খুবই দূর্বল। -কিন্তু বুদ্ধিমান প্রাণি তো শারিরীকভাবে বিচার করা হয় না। তাছাড়া তারা অনেক উন্নতি সাধন করেছিল এবং তা সম্পূর্ণ নিজেদের দক্ষতায়। -না তা হয় না। বুদ্ধিমান প্রাণিগুলোর এত সহজে মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না।

-কিন্তু অন্যদের চেয়ে আমার প্রাণিগুলো মধ্যে কিছু ব্যতিক্রম ছিল। ওদের মধ্যে প্রেম, ভালবাসা, সুখ-দুঃখ ছিল। -অপ্রয়োজনীয় বিষয়। -কিন্তু? -এখনো সময় আছে, কোর্সটা পাল্টিয়ে ফেল। -না।

আর কোন কথা না বলে আনহা বের হয়ে আসে প্রফেসরের রুম থেকে। এরপর আনহাকে কেউ প্রকাশ্যে দেখেনি। তবে সে বড় একটা ল্যাবরেটরি তৈরি করে যেখানে সে তার তৈ্রি প্রাণিগুলো ছেড়ে দেয়। বিস্ময়করভাবে প্রাণিগুলো এখনো বেচে আছে। কিছু তরুন বিজ্ঞানী তা আবিষ্কার করে।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আনহাকে অবশেষে স্বীকৃ্তি দেওয়া হয়। এবং ‘আনহা ডে’ নামে একটা দিন ঘোষনা করে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।