আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্পর্শ

সহজ আলোয় দেখা...

সন্ধ্যে হতে বেশি দেরী নেই আর। আশপাশটা অন্ধকার হয়ে আসছে আস্তে আস্তে। ঘর ফেরা পাখিদের ডাক শুনতে পাচ্ছি। কী এক নাম না জানা ফুলের গন্ধে মন ভরে ঊঠছে। এই ফুলের গন্ধটা আমার খুব প্রিয়।

প্রতিদিন সন্ধ্যে হবার আগে আগে ফুলটা ফোটে, নরম একটা আবেশ তৈরি করা গন্ধ, সন্ধ্যে মিলিয়ে যাবার পরও অনেকক্ষণ পর্যন্ত থাকে, রাতের নিস্তব্ধতা আরো গভীর করে রাখে। আজ আমার বড় ছেলে এসেছিলো আমার কাছে। মনটা একারণেই অনেক ভালো। প্রায়ই আসে সে। আমার ছেলে যেদিন দেখতে আসে আমাকে, সেদিন আগে থেকেই কিভাবে যেন টের পাই।

দু’একবার ভুল যে হয়নি তা নয়, কিন্তু সারাদিন তার অপেক্ষায় থাকতে ভালো লাগে। সাধারণত বিকেলের দিকেই আসে, থাকে সন্ধ্যে নামা পর্যন্ত। বেশির ভাগ সময় সে একাই আসে। কোনও কোনও দিন ঝাড়ু দিয়ে পরিস্কার করে রাখে আশপাশটা, নয়ত ফুলগাছগুলোতে পানি দেয়। আর বাকী সময়টা চুপচাপ বসে থাকে।

কী যে ভালো লাগে আমার! মন ভরে তাকিয়ে থাকি। মাঝে মাঝে অবশ্যি খুব দুশ্চিন্তা লাগে, বয়স হচ্ছে ছেলেটার। শরীর-স্বাস্থ্যের যত্ন নেয় না বোধ হয়। একটা সময় কত বলেছি, কে শোনে কার কথা। খুব ইচ্ছে হয় বলি, বাবা খাওয়া-দাওয়া ঠিক মতো করিস, ঠিক মতো ঘুমাস।

সেদিন বৃষ্টির মধ্যে বসে থাকল, কী ঝুম বৃষ্টি ছিলো, তার মধ্যেও। তার ওপর ওর আছে ঠান্ডার ধাত। কোনো বড় অসুখ করতো যদি। আমিতো আর হারিয়ে যাচ্ছি না, এইখানেই আমার অনন্ত কালের বসবাস। যখন ইচ্ছা আসবে, যাবে।

এরপরও এই রকম পাগলামির কোনো মানে আছে? আমার নাতি-নাতনিদের দেখিনা অনেকদিন। বড় নাতি কলেজে ঊঠেছে মনে হয়। চশমা পড়লে তার মধ্যে একটু জ্ঞানী জ্ঞানী ভাব আসে তার মধ্যে। কথা-বার্তাও একটু কম বলে সে। এরপরের জন হলো নাতনি, খুবই চঞ্চল স্বভাবের, সারাক্ষণ হৈ চৈ লেগেই আছে।

তবে আমার সাথে খাতির বেশি ছিল ছোট নাতির সাথে। আমাকে দেখলেই ছুটে এসে ঝাঁপ দিত কোলে। কতখানি বড় হয়েছে ওরা দেখতে ইচ্ছে করে খুব। আমার ছোট ছেলে থাকে বিদেশে, গতমাসে এসেছিল দেশে। বিয়ে-সাদী এখনো করেনি বোধ হয়।

ভাইয়ের সাথে এসেছিল এখানে। বিয়ে করলে তো সাথে বৌ আসত। হাত নেড়ে নেড়ে কি জানি বলছিল বড় ভাইকে। বড় ভালো লাগছিল দু’ভাইকে একসাথে দেখতে। আজকে আমার বড় ছেলে এসেছিলো লাল জামাটা পড়ে।

কটকটে রঙের এই লাল জামাটা কিনে দিয়ে ছিলাম কোনো এক ঈদে। জামার রং দেখে সে মহা বিরক্ত। অনেক রাগারাগি করল। জামা তার মোটেই পছন্দ হয়নি। অনেকদিন পর্যন্ত এ জামা পড়তেও দেখিনি তাকে।

এইখানে আমার ঠিকানা হবার পর আমার পাগল ছেলেটা এ জামাটা পড়ে আসে প্রায়ই। খুব ইচ্ছে করে আমার ছেলেটার জন্যে নতুন একটা জামা কিনে দেই। সত্যি এমন সুযোগ পেলে এবার এমন সুন্দর একটা জামা কিনে দিতাম, যেটা পড়লে আমার ছেলেকে রাজপুত্রের মতো দেখাতো। বারবার এখানে এসে সে কি শান্তি পায় সে কে জানে। জনমানুষ নেই কোথাও, সাপ-খোপের ভয়ও আছে।

এসে বসে থাকে ঘন্টার পর ঘন্টা। কী মায়া নিয়ে তাকিয়ে থাকে। জীবিত বাবাকে কখনও জড়িয়ে ধরতে পারেনি লজ্জায়, আর এখন কী যত্ন করে হাত বুলিয়ে দেয় বাবার কবরটায়, কবরটা জড়িয়ে ধরে ছোট বাচ্চাদের মতো চিৎকার করে কাঁদে। আমার খুব কষ্ট হয় তখন, খুব কষ্ট হয়। আমার খুব সাধ হয় ছেলেটাকে বুকে জড়িয়ে ধরে গলা ছেড়ে কাঁদি।

তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিই। আহারে আমার ছেলেটা, আহারে!

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।