আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাসন রাজার গানে আধ্যাত্বিকতা--একটি সাধারন বিশ্লেষন

যে মুখ নিয়ত পালায়......। ।

বাংলা সাহিত্যের একটা বড় অংশ জুড়ে আছে এদেশের গ্রাম বাংলার সাধারন মানুষদের রচিত গান। এসব গানকে পল্লীগান বা পল্লিগীতি বলে থাকেন অনেকে। আর সামগ্রিকভাবে গ্রাম বাংলার গান,গল্প,রুপকথা এগুলোর মিলে হয়েছে পল্লীসাহিত্য ।

গ্রামের লোক কবিদের এসব গানের মধ্যে আধ্যাত্বিকতার প্রকাশ ব্যপকভাবে লক্ষ করা যায়। হাসন রাজা বাংলাদেশের লোকগানের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রবাদ পুরুষ মরমি কবি খ্যাত হাসন রাজা(১৮৫৪-১৯২২)। তার জন্ম সুনামগঞ্জের লক্ষনশ্রীতে এক জমিদার বংশে। হাসন রাজা প্রায় দুইশত দশ টার মত গান লিখেছেন বলে জানা যায়। তার গান গুলোতে শাশ্বত সত্তার জন্য আকুলতা,শাশ্বত সত্তার রুপের বহিপ্রকাশ ইত্যাদি সম্পর্কে তত্ত্বজ্ঞান সমৃদ্ধ কথা আছে অনেক।

তাকে এজন্যই বলা হয় মরমি কবি। মরমি শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ mystic.গ্রীক muen(ম্যুন) শব্দ থেকে mystic শব্দটির উতপত্তি। এই muen শব্দের অর্থ হল চোখ বন্ধ করা। ব্যাপক অর্থে দাঁড়ায় চোখ বন্ধ করে ভিতরের শক্তি অনুভব করা, আত্নার রুপ অনুধাবনে নিজেকে নিয়োজিত করা। অনেক ধর্মগ্রন্থে এরকম বিষয়ের কথা বলা হয়েছে।

ঋষি সন্ন্যাসিরা পাহাড়ে পর্বতে বা গুহায় অন্তরাত্তার স্বরুপ উদ্ঘাটনেই ব্যস্ত থাকতেন বলে অনেক প্রাচীন ধর্মগ্রন্থে উল্লেখ আছে। হাসন রাজার গানে সেই বিষয়টাই উঠে এসেছে বার বার। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯২৫ সালে কংগ্রেসে এক সভায় এবং পরবর্তীতে লন্ডনে হিবার্ট বক্তৃতায় গ্রাম্য গানে দার্শনিকতার পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন ," পুর্ব বঙ্গের এক গ্রাম্য কবির গানে দর্শনের একটি বড় তত্ত্ব পাই। তা হচ্ছে, ব্যক্তি স্বরুপের সহিত সম্বন্ধ সুত্রেই বিশ্বসত্য। “ গানটা ছিল "মম আখি হইতে পয়দা হইছে আসমান জমিন শরীর করিল পয়দা শক্ত আর নরম আর পয়দা করিয়াছে ঠান্ডা আর গরম," এই গানে হাসন রাজা বলতে চেয়েছেন আমি ই সব।

“আমি” র চোখ থাকার ফলে সৃষ্টি হয়েছে অনিন্দ্য সুন্দর দৃশ্যাবলীর, “আমি” র নাকের অস্তিত্ব থাকার ফলে সুঘ্রান অথবা দুর্গন্ধের পরিচয় প্রকাশিত হয়েছে। আমি সকল জগতের সবকিছু আমি না থাকলে সৃষ্টি হত না ঠান্ডা গরম বা অন্য কোন অনুভূতির। রবীন্দ্রনাথ হয়ত এই আমিত্বের কল্পনা করেই লিখেছিলেন," "আমার চেতনার রঙ্গে পান্না হল সবুজ, চুনি উঠল রাঙ্গা হয়ে। আমি চোখ মেললুম আকাশে, জ্বলে উঠলো আলো। .................................... ................................. ও দিকে অসীম যিনি তিনি স্বয়ং করেছেন সাধনা মানুষের সীমানায় তাকেই বলে “আমি”।

" হাসন রাজার আরেকটি গানে আছে, "আমিই মুল নাগর রে আসিয়াছি খেইড় খেলিতে ভবসাগরে রে। আমি রাধা, আমি কানু,আমি শিব শঙ্করী অধর চাঁদ হই আমি গৌরী হরি। আমি মূল,আমি কূল আমিই সর্ব ঠাই আমি বিনে এ সংসারে অন্য কিছু নাই। " হাসন রাজার দর্শন তার শুধু গানে নয় তার বাস্তব জীবনেও ব্যাপ্তিমান ছিল। ।

তিনি মাটির ঘরে থাকতেন কখনো পাকা ঘর তৈরী করেন নি। একবার উইলিয়াম লিটল নামে এক নায়েব হাসন রাজার অন্দর মহলকে ঘিরে পাকা দেয়াল নির্মান করতে শুরু করেন। হাসন রাজা ছিলেন কলকাতায়। তিনি ফিরে এসে যখন দেয়ালটি দেখেন রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে সাথে সাথেই তা ভেঙ্গে দেন। ভাঙ্গা দেয়ালটি এখনো সুনামগঞ্জের লক্ষনশ্রীতে বিদ্যমান আছে।

। আরেকবার এক ভদ্রলোক এসে হাসন রাজার বাড়ি দেখতে চাইলে তিনি ঐ ব্যাক্তিকে তার জন্য নির্ধারিত কবরস্থানের জায়গায় নিয়ে বলেন, এটাই আমার আসল বাড়ি। হাসন রাজা হাসন রাজার গানে যে আধ্যাত্বিকতার পরিচয় পাওয়া যায় তার মধ্যে সুফি প্রভাব স্পষ্ঠ। তিনি যৌবনেই পাঞ্জাব থেকে আগত চিশতিয়া তরিকার এক দরবেশের কাছে মুরিদ হয়েছিলেন। তাই যুবক বয়স থেকেই সুফিবাদের সাথে তার পরিচয় ছিল বলা যায়।

সুফীবাদের মূল কথা হল, প্রেমের দ্বারাই জীব পরম এককের সাথে একাত্ন হয়ে যেতে পারেন,এই অবস্থাকে বলা হয় “ফানা”। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, Those of the bauls,who have Islamic leanings,call such death life “fana” a term used by the Sufis to denote union with the supreme being” রাধারমন দত্ত লোকজ গানের আধ্যাত্বিকতার আরেকটি ধারা হল বৈষ্ণব ধারা। সিলেটের বিখ্যাত আরেকজন মরমী সাধক কবি রাধারমন দত্ত ছিলেন বৈষ্ণব ধারার। এই দুই ধারার সাধকেরা আসলে একাত্ন হয়ে গিয়েছিলেন কারন উভয় ধারার উদ্যেশ্য ছিল মানবাত্তার পরম আত্তার সাথে মিলন। রুপ দেখিলাম রে নয়নে আপনার রুপ দেখিলাম রে আমার মাঝত বাহির হইয়া দেখা দিল আমারে...।

(হাসন রাজা) এক কপি এখানে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.