আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সংখ্যায় বেশি বাংলাদেশী

ভালো ..তবে কালো

ব্রিটেন থেকে হাজার হাজার বিদেশি ছাত্রকে বিদায় করার প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছে কনজারভেটিভ দলের নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন সরকার। ইমিগ্রেশন মন্ত্রী ডেমিয়েন গ্রিনের বক্তব্যে এটা পরিষ্কার যে, নন-ডিগ্রি কোর্সে অধ্যয়নরত অন্তত ৯০ হাজার বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা এক্সটেনশনের পথ বন্ধ করবে সরকার। এই ক্যাটাগরিতে ব্রিটেনে অবস্থানরত বিদেশি ছাত্রদের একটি বড় অংশ রয়েছে বাংলাদেশী, ভারতীয় এবং পাকিস্তানি। পড়াশোনার মাঝপথে দেশে পাঠিয়ে দিলে বিরাট সমস্যায় পড়বে এসব শিক্ষার্থী। একই সঙ্গে যেসব শিক্ষার্থী এখন যুক্তরাজ্যে আসতে চান তাদেরও নানা হিসাব-নিকাশ করে আসতে হবে।

এ বিষয়ে লন্ডন কলেজ অব ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজের ভাইস প্রিন্সিপাল ড. পিআর দত্ত বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো শিক্ষার্থীই যেন আইইএলটিএস ছাড়া এখানে না আসে। একই সঙ্গে তারা যেসব কলেজে ভর্তি হতে ইচ্ছুক সেসব কলেজেরও খোঁজ-খবর নিয়ে আসতে হবে। প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের ঘোষিত অভিবাসী নীতি কার্যকর করতে ব্রিটেন থেকে বিদেশি তাড়ানোর অংশ হিসেবে স্টুডেন্ট ভিসা প্রক্রিয়া সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। এ উদ্যোগের আওতায় সরকার ব্রিটেন থেকে ওয়ার্ক পারমিট, স্পাউজ ভিসাসহ নানা ক্যাটাগরির ভিসা প্রক্রিয়া এর মধ্যে কঠিন করে দিয়েছে। ব্রিটেনের প্রভাবশালী দৈনিক দি ডেইলি মেইল ইমিগ্রেশন মন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, ব্রিটেনে অন্তত ৯০ হাজার স্টুডেন্ট বেসরকারি পর্যায়ে ছোট ছোট কলেজে পড়াশুনা করছে।

মন্ত্রীর ভাষায় এসব কলেজ মূলত জিসিএসসি অথবা ভোকেশনাল কোর্সগুলোর মতো কোর্স করাচ্ছে। এসব কলেজে পড়াশুনার নামে বিদেশি ছাত্ররা মূলত অর্থ আয়ের জন্যই ব্রিটেনে আসছে বলে মন্ত্রী একাধিকবার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন। এসব কলেজ স্থাপনের সুযোগ দেয়ার জন্য ইমিগ্রেশন মন্ত্রী লেবার সরকারের সমালোচনা করেন। দি ডেইলি মেইলের সঙ্গে এক সাক্ষাত্কারে ডেমিয়েন গ্রিন পাঁচ বছরের অধিক সময় ধরে স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে ব্রিটেনে বসবাসকারীদের নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। উল্লেখ্য, ২০১০ সালের জুন পর্যন্ত এক হিসাবে দেখা গেছে, বিশ্বব্যাপী ব্রিটেনের হাইকমিশন বা দূতাবাসগুলো ৩ লাখ ৬২ হাজার ১৫ জনের জন্য স্টুডেন্ট ভিসা ইস্যু করেছে, যা এর আগের এক বছরের তুলনায় ৩৫ শতাংশ বেশি ছিল।

বাংলাদেশ থেকে গত বছর আনুমানিক ১৭ হাজার স্টুডেন্টের ভিসা ইস্যু করা হয়েছে বলে চলতি বছরের প্রথমদিকে ব্রিটিশ হাইকমিশন থেকে জানা গিয়েছিল। ক্রমবর্ধমানহারে বিদেশি ছাত্রদের ব্রিটেনে প্রবেশে কয়েকটি মহলের সমালোচনার মুখে সরকারি কঠোর অবস্থানের কথা জানান ইমিগ্রেশন মন্ত্রী। তবে ভবিষ্যতে স্টুডেন্ট ভিসা ইস্যু করার ক্ষেত্রে অন্যান্য ক্যাটাগরির মতো কোনো ক্যাপ আরোপ করার সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, ক্যাপ আরোপ করা সহজ নয়। তবে নিয়ম-কানুন কঠিন করার মাধ্যমে গণহারে স্টুডেন্ট প্রবেশ কমানো হবে।

এর আগে হোম অফিসের এক হিসাবে জানানো হয়েছে, ব্রিটেনে নেট ইমিগ্রেশনের সংখ্যা এক-পঞ্চমাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। হোম অফিসের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ব্রিটেনের জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো দীর্ঘদিন যাবত্ অবস্থানকারী ছাত্ররা। গবেষণায় জানা যায়, ২০০৪ সালে অস্থায়ী স্টুডেন্ট ভিসা যাদেরকে দেয়া হয়েছিল তাদের ২১ শতাংশ এখনও ব্রিটেন ছেড়ে যায়নি। সে সময় ১ লাখ ৮৫ হাজার ভিসা ইস্যু করা হয়েছিল। তবে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ইমিগ্রেশন মন্ত্রীর বরাত দিয়ে বলছে, ছাত্র ভিসায় এসে ভিসা ক্যাটাগরি পরিবর্তন করে ব্রিটেনে স্থায়ী হওয়ার পথ রুদ্ধ করার কথাও সরকার সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে।

এদিকে পূর্ব লন্ডনের বিভিন্ন কলেজের ওয়েবসাইট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অধিকাংশ কলেজেই যেসব কোর্স পড়ানো হচ্ছে তা মূলত নন-ডিগ্রি লেভেলের পর্যায়ে পড়ে। আমার দেশ-এর পক্ষ থেকে কয়েকজন বাংলাদেশী ছাত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা মূলত ঙঞঐগ, ওঅগ, ওগওঝ, ওঈগ এবং ইঈঝ প্রফেশনাল বডিগুলোর আওতায় যেসব কোর্স পড়ছে তা মূলত ডিপ্লোমা লেভেলের, যা কিনা সরকার ঘোষিত কঠোর নিয়ম-কানুনের আওতায় পড়ে। বাঙালি অধ্যুষিত পূর্ব লন্ডনের কলেজগুলোর ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত কোর্সের তথ্যগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অধিকাংশ কলেজ মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টতা বহির্ভূত কয়েকটি প্রফেশনাল বডির ডিপ্লোমা কোর্স পড়ানোর মাধ্যমে তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখছে। নন-ডিগ্রি লেভেলের একটি ব্যাখ্যা দিতে অনুরোধ করা হলে হোয়াইট চ্যাপেল কলেজের পরিচালকদের অন্যতম ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসেন বলেন, আনুমানিক ৭০ শতাংশ বাংলাদেশী ছাত্রই এজাতীয় কোর্সে অধ্যয়ন করছে। নন-ডিগ্রি লেভেলের স্টুডেন্টদের ভিসা এক্সটেনশন বন্ধ করা হলে বাঙালি মালিকানাধীন হাতেগোনা কলেজ ব্যতীত অধিকাংশ কলেজের ব্যবসাও গুটিয়ে ফেলতে হতে পারে।

এদিকে ডিপ্লোমা লেভেলের কোর্সের জন্য কয়েকটি কলেজ দ্রুত তাদের বকেয়া ফি আদায়ের জন্য ছাত্রদেরকে একাধিকবার চিঠি দিচ্ছে। তবে সরকারের ঘোষণায় ছাত্ররা এখন সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের এফিলিয়েটেড ডিগ্রি লেভেলের কোর্সগুলো করার প্রতি ঝুঁকছে। এমতাবস্থায় নন-ডিগ্রি কোর্স নিয়ে যেসব কলেজ তাদের ব্যবসা করছে তাদের সঙ্গে ছাত্রদের সম্পর্কে তিক্ততা বাড়ছে। তবে গত বছরের অক্টোবর থেকে বাস্তবায়িত ইমিগ্রেশন নীতির কারণে বিদেশি ছাত্রদের ওপর কলেজগুলোর প্রভাব বিসত্মার করার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। সরকারের এ নীতির কারণে বিদেশি ছাত্রদেরকে তাদের বর্তমান কলেজের ফি পরিশোধ করে অন্য প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার কোনো বিকল্প থাকবে না।

এক্ষেত্রে সরকারি নীতির কারণে ছাত্রদেরকে দ্বিগুণ অর্থ খরচ করতে হতে পারে। বাংলাদেশ, নেপাল এবং ভারতের একাংশের ওপর স্টুডেন্ট ভিসা ইস্যু করার ব্যাপারে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল গত ১২ আগস্ট থেকে তা পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হলে বাঙালি কলেজ মালিকদের কেউ কেউ তাদের ব্যবসায়িক প্রসার ঘটানোর চেষ্টা করার সময় সরকারের নতুন ঘোষণা তাদের জন্য বজ্রাঘাত হিসেবে দেখছে কলেজ সংশ্লিষ্টরা। ড. পিআর দত্ত বলেন, বর্তমান বাস্তবতায় রোজগার করে পড়াশোনা করা খুব কঠিন। সুতরাং যারা এখানে আসতে চায় তাদের সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে, পড়াশোনা একটি বড় বিনিয়োগ।

তিনি গ্রাজুয়েশন ডিগ্রিধারী ছাড়া কোনো শিক্ষার্থীকে এখানে না আসার পরামর্শ দেন। বাংলাদেশের স্টুডেন্ট কনসালট্যান্সি প্রতিষ্ঠান এক্সট্রা কনসার্নের পরিচালক মো. মিজানুর রহমান আমার দেশকে বলেন, আমরা এখন দেখেশুনে যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদেরই যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করতে যাওয়ার প্রক্রিয়া করছি। মেধাবী ও অবস্থাসম্পন্ন পরিবারের সন্তানরা এখানে অগ্রাধিকার পাচ্ছে। কারণ, কাজ করে এখন আর যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করা যায় না। মিজানুর রহমান এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.