আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নেপাল ভ্রমণ: পর্ব-৩



পোখারা যাওয়ার জন্য আগের রাতেই গোছগাছ সেরে রেখেছিলাম। ভোরে উঠে রেডি হয়ে নিলাম। যাওয়ার আগে কাঠমান্ডুর হোটেলর বিল, একটা মোবাইল সিম কার্ডের বিল, বিমানবন্দর থেকে আসার ট্যাক্সি ভাড়া, রাতের দুজনের খাবার বিল, সার্ভিস চার্জ এবং টিপস মিলিয়ে ২০০০ রুপি খরচ হল। হোটেলের সামনে থেকে কারে আমাদের নিয়ে রওয়ানা হলো ড্রাইভার পোখারার উদ্দেশে। আমরা ছাড়াও আরো কিছু স্থানীয় যাত্রী একটু বড় আকারের কার গাড়িতে ছুটলাম পোখারার পথে।

আমাদের ভাড়া পড়ল ৬০০ টাকা করে জনপ্রতি। কাঠমান্ডু শহরতলি থেকে আমরা বের হয়ে ধীরে ধীরে চলতে লাগলাম পোখারার পথে। রাস্তা অনেক সরু। পাহাড়ের খাজে। এত ভয় করছিল যে কি বলব! পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে।

গাড়ি একপাশে চললে আরেক পাশে থেমে থাকে অনেক পথ। পাহাড়ের পাথরগুলা যাতে না পড়তে পারে রাস্তার ওপর এজন্য পাথর নেট দিয়ে বেধে রাখা হয়েছে। পাহাড় বেয়ে আমাদের গাড়ি এত উপরে উঠতে লাগল যে মেঘগুলো মনে হচ্ছিল হাত দিয়ে ছোয়া যাবে। কখনো আমাদের গাড়ির কাচ ভিজে যাচ্ছিল মেঘে। দেখে প্রথমে কুয়াশা বলে অনেকে ভুল করতে পারে।

আসলে পেজা তুলোর মতো মেঘদল আমাদের এত নাগালের ভেতরে ছিল এত কাছে ছিল। আমাদের ভিজিয়ে দিল এক দমকা মেঘ। চলতে চলতে আমাদের গাড়ি একটি রেস্তোরায় থামল সকালের নাস্তার জন্য। আমরা সাদা ভাতের মধ্যে নারকেল আর ভুট্টা মেশানো এক রকম রাইস খেলাম। সঙ্গে চানা (বুট) এবং মুলা।

তাড়াহুড়া করে খেয়ে আবার গাড়িতে ওঠা। একপাশে পাহাড়, আরেক পাশে ত্রিশুল নদী। পাহাড়ী নদীগুলা কতযে গভীর আর খরস্রোতা হয় সেটা চাক্ষুষ না দেখলে বিশ্বাস করা সম্ভব না। ওপর থেকে কোনা গাড়ি যদি পাহাড়ের ঢালে পড়ে যায় তাহলে সেখানেই তার নির্ঘাত সলিল সমাধি। মাথার ওপরে সাদা মেঘ উড়ে বেড়াচ্ছে।

পাহাড়ের ওপরের মেঘগুলাকে দূর থেকে মনে হবে যেন আগুন লেগেছে কোথায়। ধুয়ার কুন্ডুলী উড়ছে। আসলে সেগুলা মেঘ। রাস্তার দু ধারে ছোটো বড় অসংখ্য দোকান, বসতি। পাহাড়ী জীবন এরা কত সুন্দরভাবেই না মানিয়ে নিয়েছে।

দেখলাম ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েরা দল বেঁধে স্কুলে যাচ্ছে। দেখছি আর ভাবছি, এখান থেকে কতটা স্ট্রাগল করে স্কুল কলেজ পাশ করে অনেকে আমাদের দেশে পড়তে আসে। ধীরে ধীরে আমাদের গাড়ি এগিয়ে চলেছে পোখারার দিকে। রাস্তায় অনেক জায়গায় দেখলাম পাথর কাটছে মেশিন দিয়ে। পাহাড়ি নদী থেকে অনেক মহিলা পাথর তুলছে।

অনেকটা আমাদের জাফলংয়ের মতো। নদীর ওপর দেখলাম ঝুলন্ত সেতু। একটা ব্যাপার লক্ষ্যনীয় পাহাড়ের খাজে যতোদূর চোখ যায় বসতি। পাহাড়ের গায়ে তিনতলা, চারতলা বাড়ি কত সুন্দর ডিজাইন। পাহাড়ের সর্বোত্তম ও সর্বোচ্চ ব্যবহার কিভাবে করতে হয় নেপালিরা তা জানে।

পাহাড়ের সমতলে দেখলাম ধান চাষ করেছে। পাহাড় থেকে বেয়ে আসা পানি দিয়ে চলেছ ধান চাষ। আছে মাসকলাই, ভেন্ডি, ভুট্টার খেত। অনেক বাড়িতে ভুট্টা ঝুলিয়ে রাখতে দেখলাম। দেখলাম আমাদের মতো খড়ের গাদা।

গরু আর মহিষ পালে গেরস্থরা। লাঙল চষতেও দেখেছি। দেখলাম পাহাড়ি নদীর ওপর কিভাবে পাওয়ার প্লান্ট বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে। আমাদের গাড়ি ছুটছে তো ছুটছেই। এক জায়গায় দেখি একটা কার এক্সিডেন্ট করেছে।

খোজ নিয়ে জানলাম পাহাড় থেকে ছিটকে আসা ইয়া বড় এক খন্ড পাথর পড়েছে গাড়ির ওপর। হতাহত অবশ্য কেউ হয়নি। গাড়ির ওপর দিয়ে গেছে ধাক্কাটা। যাক আল্লাহ বাচিয়েছেন। এটা দেখে আরও ভয় লাগল।

শেষ পর্যন্ত আমাদের ড্রাইভার সাবধানে চালাচ্ছিল গাড়ি। প্রায় সাত ঘন্টার জার্নি শেষে আমরা অবশেষে পোখারা শহরে পৌছালাম। নামতেই ঘিরে ধরল একগাদা হোটেল রিসিপশনিস্ট। আমাদের হোটেলে উঠুন, এটা ভালো, এই আছে, গরম পানি, বাথ টাব, পাহাড়, লেক দেখা যায়-ইত্যাদি বলে আমাদের আগ্রহ বাড়ানোর চেষ্টা করল। অবশেষে একটা হোটেল ওঠার জন্য রাজি হলাম।

ভাড়া ৮০০ রুপি পার নাইট। ট্যাক্সিওয়ালা এগিয়ে এসে লাগেজ তুলে নিল গাড়িতে। আগামীকাল পড়ুন পোখারার দর্শনীয় সব স্থানের বর্ণনা: আগের দুটি পর্বের লিঙ্ক এখানে: Click This Link Click This Link

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৪৭ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।