আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পানি সংকট ও পানি সংকট

:::

রাজধানীতে পানি সংকট দীর্ঘদিনের। লোডশেডিংয়ের কারণে চৈত্রের খরদাহে নগরবাসীর জন্য তা হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। বিভিন্ন স্থানে পানির দাবিতে বিক্ষোভ করছে মানুষ। পানি সংকট পরিস্থিতিতে সামনে চলে এসেছে ঢাকা ওয়াসার সামর্থ্যরে বিষয়টি। রাজধানীতে পানির চাহিদা বেড়েছে যে হারে, ওয়াসার সামর্থ্য সে হারে বাড়েনি।

অনেক ক্ষেত্রে কমেছে বলা যায়। ওয়াসার ৮৬ শতাংশ পানি আসে ভূগর্ভ থেকে। রাজধানীতে পানির স্তর ক্রমে নিচে নেমে যাওয়ায় গভীর নলকূপগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। বাকি ১৪ শতাংশ পানি সরবরাহ করা হয় নদীর পানি শোধন করে। নদী দূষণে শোধনাগারের উৎপাদন ক্ষমতা কমে যাওয়া ও জরাজীর্ণ লাইনের কারণে সংকট আরও প্রকট হয়েছে।

এখন প্রতিদিন পানির ঘাটতি ৩০ কোটি লিটার। বর্তমান পরিস্থিতিতে উৎপাদন বাড়িয়ে এ ঘাটতি রাতারাতি দূর করা সম্ভব নয়। তবে পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বাড়িয়ে তা সহনীয় পর্যায়ে আনা সম্ভব হতে পারে। মিটার রিডার ও পরিদর্শকদের দুর্নীতির কারণে ওয়াসার পানির একটি অংশ চুরি হয়ে যায়। ওয়াসার হিসাবে, প্রতিদিন চুরি হয় প্রায় ৩০ শতাংশ পানি।

চুরি হওয়া পানি অবশ্য কেউ না কেউ ব্যবহার করে, তবে তা অবৈধভাবে। চুরি কমিয়ে সেই পানি বৈধ গ্রাহকদের কাছে সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। চুরি ছাড়াও প্রতিদিন পানির একটি বড় অংশ অপচয় হয়। ওয়াসার হিসাবে, এটা ১০ শতাংশ। একটি দৈনিকের ভাষ্যমতে, অপচয় হয় ৩০ শতাংশ পানি।

ওয়াসার পানি অপচয় হয় নানাভাবেই। এজন্য গ্রাহকরা যেমন দায়ী, তেমনি দায়ী ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ওয়াসা যেসব পানির কল বসিয়েছে, তার অনেকগুলোরই ছিপি নেই। অনেকে আবার কল একবার খুলে তা বন্ধ করে না। এভাবে পানি নষ্ট হয়।

এক্ষেত্রে নিয়মিত মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা থাকা উচিত। প্রয়োজনে ওয়াসার জনবল বাড়াতে হবে। এ ব্যবস্থায় অন্তত অর্ধেক পানির অপচয়ও যদি রোধ করা যায়, তাতেও সংকট কমবে। লোডশেডিংয়ের সময় জেনারেটর দিয়ে ওয়াসার পাম্পগুলো চালু রাখার কথা থাকলেও এর সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। বিদ্যুৎ বিভাগ নাকি কয়েক বছর আগেই ওয়াসাকে পাঁচশ’ জেনারেটর কেনার পরামর্শ দিয়েছিল।

ওয়াসা কেনার সিদ্ধান্ত নেয় দু’শটি। তা এখনও রয়েছে প্রক্রিয়াধীন। ওয়াসার যেসব জেনারেটর রয়েছে, তার একটি বড় অংশ প্রায়ই বিকল থাকে। সেসবের মেরামত নিয়ে চলে গড়িমসি। জেনারেটর ব্যবহার নিয়ে দুর্নীতিরও অভিযোগ রয়েছে।

পানি সংকট নিরসনে এসব অনিয়ম কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে। রাজধানীর পানির স্তর যেভাবে নিচে নেমে যাচ্ছে, তাতে আর ক’বছর পর ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন দুরূহ হয়ে উঠতে পারে। ওয়াসাকে তাই ক্রমান্বয়ে ভূ-উপরিভাগের পানির ওপর নির্ভরতা বাড়াতে হবে। রাজধানীর আশপাশের নদীগুলোর পানি দূষিত হয়ে পড়ায় দূরবর্তী উৎস থেকে পানি সংগ্রহ করতে হবে। ব্যয়বহুল হলেও ক্রমবর্ধমান পানির চাহিদা মেটানোর এটাই হতে পারে উপায়।

ওয়াসার পানি পরিশোধন ও সরবরাহ ক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগও নিতে হবে। সেটা আশু সম্ভব না হলে অন্তত মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। নিশ্চিত করতে হবে পানির বিশুদ্ধতাও। অনেক এলাকায় ওয়াসার পানি সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও তা পানের অযোগ্য। মানুষ বাধ্য হয়েই তা পান করছে।

আক্রান্ত হচ্ছে নানা রোগব্যাধিতে। ওয়াসার পানি দূষিত হওয়ার একটি বড় কারণ এর সরবরাহের লাইনগুলো। অধিকাংশ লাইন দীর্ঘদিনের পুরনো হওয়ায় তাতে ময়লা জমেছে। ছিদ্রপথেও ময়লা ঢুকছে। এতে সরবরাহকৃত পানি ব্যবহার করে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।

ওয়াসার লাইনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার এবং পুরনো লাইন পরিবর্তন করা জরুরি। আমরা আশা করব, রাজধানীতে পানি সংকট আরও তীব্র হয়ে ওঠার আগেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে ওয়াসা। সুত্রঃ জাতীয় দৈনিক পত্রিকা থেকে সংগ্রহীত

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.