আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চুক্তি হোক - আমাদের ফেনী নদীর পানি বনাম ভারতের তিস্তার পানি

পাঠকগণ হয়তঃ ইতিমধ্যে বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছেন যে, যে ফেনী নদীর পানি ভারত হয়ে আমাদের দেশে আসে এবং যার জন্য চুক্তি নামক নতুন ষড়যন্ত্রমুলক নাটক রচনা করা হচ্ছে, সে ফেনী নদীর উৎপত্তিস্থলই বাংলাদেশ। দক্ষ জনবল এবং উপযুক্ত তথ্যসুত্রের অভাবে আমাদের অজান্তে এভাবে আমাদের অনেক সম্পদই অন্যেরা কৌশলে লুটে নিচ্ছে, সে সাথে একই সম্পদকে আমাদের প্রতি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। যা-ই হোক মমতার দেশপ্রেমের কারণে শেষ পর্যন্ত তিস্তা চুক্তি হল না। কথায় আছে , অনেক কিছু ঘটে যায় শুধু ভাল কিছু হওয়ার জন্যই। ঠিক তেমনি করে এতদিনে আমরা একটা অজানা জানতে পারলাম ফেনী নদীর উৎপত্তিস্থল পার্বত্য চট্টগ্রামের মাটিরাঙা ও পানছড়ি উপজেলার মধ্যবর্তী ভগবানটিলা নামের একটি পাহাড়ে।

পাহাড়ের ছড়া থেকে উৎপত্তির পরপরই নদীটি বাংলাদেশ সীমান্ত পার হয়ে ভারতের ইজেরা গ্রামে প্রবেশ করে। ইজেরা গ্রাম থেকেই নদীটি ফেনী নদী নামে পরিচিত। দুই দেশের সীমান্ত ঘেঁষে বেশ কিছুটা অগ্রসর হওয়ার পর নদীটি মিরসরাইয়ের আমলীঘাট এক নম্বর গড়েরহাট ইউনিয়ন দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে ছাগলনাইয়া, সোনাগাজী উপজেলা ছুঁয়ে মিলিত হয়েছে বঙ্গোপসাগরে। অথচ ভারত এ নদীর উৎপত্তি ত্রিপুরা রাজ্যের পর্বত শ্রেণী থেকে হয়েছে বলে দাবি করছে। উইকিপিডিয়ায় বলা হয়েছে, দক্ষিণ ত্রিপুরা থেকে উৎপত্তি হওয়ার পর ফেনী নদী ত্রিপুরা রাজ্যের সাব্রুম হয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে।

এমনকি বাংলাপিডিয়ায় বলা হয়, ফেনী নদী ত্রিপুরার পাহাড়ি অঞ্চল থেকে প্রবাহিত হয়ে আলীগঞ্জ পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের সঙ্গে সীমান্তরেখা তৈরি করেছে। এরপর সমতলে নেমে এসে নদীটি চট্টগ্রাম থেকে নোয়াখালীকে আলাদা করে বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। ফেনী নদীর পানিবণ্টন নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত বিরোধ দীর্ঘদিনের। ভারত নদীটির পানি প্রত্যাহার করে ত্রিপুরায় সেচকাজে ব্যবহারের বেশ কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিলেও বাংলাদেশের আপত্তিতে সে উদ্যোগ অনেকটাই থমকে আছে। সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় ফেনী নদীর পানিবণ্টন নিয়ে দুই দেশের চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।

ফেনী নদীর প্রবাহপথ চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের আমলীঘাট থেকে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙার অভ্যা সীমান্ত এলাকা পর্যন্ত সরেজমিন অনুসন্ধানের সময় স্থানীয় লোকজন জানায়, নদীটির উৎস প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশে। জানা গেছে, মাটিরাঙা ও পানছড়ি উপজেলার মধ্যবর্তী ভগবানটিলা নামের পাহাড় থেকে এ নদীর প্রবাহ শুরু। ভগবানটিলায় গেছেন এমন এক সাংবাদিক খাগড়াছড়ির দীঘিনালার কমল চাকমা কালের কণ্ঠকে জানান, ওই পাহাড়ের ছড়া থেকে উৎপত্তি হয়ে ফেনী নদী সীমান্ত অতিক্রম করে ত্রিপুরার ইজেরা গ্রাম ঘেঁষে প্রবাহিত হচ্ছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য দ্য আসাম ট্রিবিউনে গত ৪ সেপ্টেম্বর 'ত্রিপুরা হোপস ফর সলিউশন টু রিভার ডিসপুটস উইথ বাংলাদেশ' শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'ফেনী নদীর পানিবণ্টন নিয়ে ১৯৩৪ সাল থেকেই বিরোধ চলছে। এ নদীর মোট আয়তন ১১৪৭ বর্গ কিলোমিটার।

এর মধ্যে ৫৩৫ বর্গকিলোমিটার ভারতের মধ্যে রয়েছে। নদীর বাকি অংশ বাংলাদেশ অংশে। ' দ্য আসাম ট্রিবিউন লিখেছে, বিভিন্ন কারিগরি জটিলতায় ফেনী নদীর পানির পরিমাণ এখন পর্যন্ত নির্ধারণ করা যায়নি। সে জন্য পানির ভাগাভাগি নিয়েও বিরোধ নিষ্পত্তি হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশের নাগরিকরা ফেনী নদীর পানি ছুঁতে গেলেও বাধা দেয় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।

'নো ম্যানস ল্যান্ড' আখ্যা দিয়ে বিএসএফ বাংলাদেশিদের এ নদীর পানি ব্যবহার করতে বাধা দিচ্ছে। অথচ ভারতীয়রা দিব্যি ব্যবহার করছে নদীর পানি। ভাঙন রোধে বাংলাদেশিদের ব্লক বসাতে বিএসএফ বাধা দিলেও নদীর অপর পাড়ে ব্লক বসিয়েছে ভারত। এমতাবস্থায় আমাদের সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার এবং বন্ঠন নিশ্চিতকরণে সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের উচিত হবে - এই নদীটির উৎপত্তিস্থল নির্ধারন করে, এ থেকে প্রবাহিত পানির বিনিময়ে তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়ন করার জন্য সরকারকে উদ্ধুদ্ধ করা। যাতে ট্রানজিট নামক আগ্রাসী চুক্তি থেকে দেশের ভূখন্ড রক্ষা করা যায়।

সংবাদ বিশ্লেষণ: কালের কণ্ঠ। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.