আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্মৃতিবিলাস, পর্ব-একঃ যুগল ক্ষণে!

জীবনটা যেন এক বর্ণীল প্রজাপতি
" প্রহর শেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্র মাস------- তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ। এ সংসারের নিত্য খেলায় প্রতিদিনের প্রাণের মেলায় মাঠে ঘাটে হাজার লোকের হাস্য পরিহাস---- মাঝখানে তার তোমার চোখে আমার সর্বনাশ!" পাশাপাশি দুটি বাড়ি। একটি বাড়িতে একটি মেয়ে থাকে। কবরীর মত দেখতে। অথবা তরুনী শাবানা।

শ্যামল বর্ণের। দীঘল কালো চুল। মায়াবী চোখ। তাদের পাশের বাসাটি তার চাচার বাসা। সেই বাসার এক ভাড়াটিয়া অনেক দিন ধরে ওই বাসায় ভাড়া থাকে।

ভাড়াটিয়া বউ এর আপন ভাই ঢাকায় থেকে পড়াশুনা করে। নটরডেম কলেজে। সেই পড়াশুনা শেষে সেই ছেলেটি ভর্তি হলো নারায়নগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। মাঝে মাঝে ঢাকায় বোনের বাসায় আসে। এই আসা যাওয়ায় তার পছন্দ হয়ে যায় পাশের বাসার তরুনী শাবানা অথবা কবরীর মত দেখতে লালমাটিয়া কলেজে বিএসসি পড়ুয়া মেধাবী মেয়েটিকে।

বোনের ছেলেরা আবার তার নিজেরই সমবয়সী। মামার পছন্দের কথা তারা জানিয়ে দেয় মায়ের কাছে। তারপরে সেটা গ্রামের বাড়িতে ছেলের বাবা-মা হয়ে প্রস্তাব আসে মেয়ের বাসায়। ছেলেদের ফ্যামিলি ভালো। ছেলেও অসম্ভব মেধাবী।

এলাকায় প্রাইভেট টিউটর হিসেবে অনেকে চেনে তাকে। মেয়ের এলাকার ছোট ভাই-বোনদের পড়িয়েছে। অংকে দারুন মাথা। প্রশ্ন দেখেই উত্তর বলে দিতে পারে। তাছাড়া লম্বা।

একহারা গরন। দারুন সুদর্শন। কিন্তু, এখনও ছাত্র। কামাই রোজগারতো কিছু করেনা। বিয়ে করে বউকে কি খাওয়াবে? এমন ছেলের কাছে এখনই কিসের বিয়ে? মেয়ের বাবা তো কিছুতেই এই বিয়ে দেবেনা।

মেয়ের মামারা আবার খুবই উৎসাহী। ভালো যোগ্য পাত্র কি সব সময় পাওয়া যায়! মেধাবী ছাত্র। পাশ করেতো কিছু নিশ্চয়ই করবে। তাছাড়া ফ্যামিলি বিবেচনায় সবকিছু ভালই। ছেলের বাবা ডাক্তার।

একসাথে এলোপেথি এবং হোমিওপেথি। ছেলের দাদাও ছিলেন ডাক্তার। ভাই, বোন, বোন-জামাইরাও শিক্ষিত এবং ভালো পদে নিয়োজিত। তারপর বলা যায় তাদের প্রচেষ্টাতেই এই বিয়েটা হয়ে যায়। মেয়ের বাবা তখনও কিছুটা নাখোশ! ভীষণ বদরাগী লোক।

এবং একগুয়ে। নিজে যা বুঝেন তার থেকে নড়তে চান না একটুও। তবু, বিয়েটা হয়ে গেল। কি আর করবেন! স্বয়ং তার শ্বশুড় অর্থাৎ মেয়ের নানা তাকে বোঝালেন। মেয়ের নানা আবার সম্পর্কে তারই আপন ফুপা।

ওনার মত ঘাউড়া লোকের জন্য এই একজন মানুষই ছিলো বুঝানোর মত যার কথা তিনি মান্য করবেন। জন্ম হতে ঢাকা শহরে বেড়ে ওঠা মেয়েটি বিয়ের পর গিয়ে উঠলো তার শশুড় বাড়িতে। গ্রামের বাড়ি। বিশাল যৌথ ফ্যামিলি। ননদদের বিয়ে হয়নি।

এক দেবর তখনও অবিবাহিত। আরোও থাকে এক গাদা আত্মীয়-স্বজন। একগাদা লোকের রান্নাবান্না করা। তার উপর গ্রামের বাড়ির নির্দিষ্ট কাজকর্মতো আছেই। যেগুলো ঢাকায় শহুরে পরিবেশে থাকা নতুন বউ কিছুই করেনি।

অভ্যেসই নেই। আর, দেখেওনি অনেক কিছু। এখানে তার নতুন পরিবেশ। আর একগাদা মানুষ। এ কোন জায়গায় এসে পড়লো সে! শাশুড়ি আবার ভীষণ রাগী।

দুপুরে একদম সঠিক সময়ে তার খাবার চাই। একবার হয়েছে কি জানেন, নতুন বউকে দুপুরের খাবারে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আজকে রান্না করতে হবে তাকে। অন্যান্য আইটেমের সাথে লাল শাক ভাজি। গ্রামের বাড়ি।

রান্না ঘরে তাকের উপর রাখা আছে তেলের শিশি। লাল শাক ভাজি করা শেষ। এমনি সময়ে দেবর এসে হাজির। বললো, "কি ভাবি দেখি, তোমার শাক ভাজি কেমন হইছে? " বলে মুখে দিয়ে বললো, "হায় হায় করছে কি শালি! মধু দিয়া শাক ভাজি করছে! দিবোনে তোমারে শ্বাশুড়ি আজকে!" বলে হাসতে লাগল। এইখানে হয়েছে কি, পাশাপাশি দুটি বোতলের একটিতে রাখা সরিষার তেল আর আরেকটিতে রাখা মধু! তাইলেই বুঝুন অবস্থা! গরলটা বেঁধেছে কোথায়!! তার আগেই বাড়িতে আরও দুটি বউ।

দুজনই কাছাকাছি শহরের বাসিন্দা। বাবা বাড়ি পাশের জেলাতেই। তাই তাদের বাবার বাড়ি যাবার জন্য মন অতটা কাঁদেনা। আর , তাছাড়া পড়াশুনা নিয়েও তাদের মাথাব্যাথা নেই। আর লুৎফারতো সামনে বিএসসি ফাইনাল।

সবার মধ্যে থেকে সে টেনশন করলেও বড় জা তাকে বেশ আপন করে নিয়েছেন। সবাইই ভালো অবশ্য। সে নিজেই বরং ভয়ে ভয়ে থাকে। সকলের মন জয় করার চেষ্টায় থাকে। বড় জায়ের মনটা খুবই ভাল।

তা না হলে তিনি নিজের রাজত্বের ভাগ আরেকজনের হাতে তুলে দেন! তিনিই বরং এই ঢাকাবাসী নতুন বউটিকে কাছে বসিয়ে কাজ শেখান। কোথায় কিভাবে শ্বশুড় শ্বাশুড়ির মন জয় করতে কি করতে হবে তা বলে দেন। এভাবে দিনগুলো বেশ কেটে যায়। আর, শ্বাশুড়ি একটু রাগী হলেও বেশ ভালো ছিলেন। নতুন বউ ধিরে ধিরে অনেক কিছুই শিখে গেল।

আর তার কাছে সবচেয়ে ভালো লাগলো, গ্রামের অশিক্ষিত একজন মা তার ছেলে মেয়ে অনেক আত্মীয় -স্বজন নিয়ে থাকেন অথচ কোন দিকে কোন কথার প্যাঁচ লাগেনা। একা হাতে নিপুণ ভাবে পুরো সংসারটিকে পরিচালনা করছেন। শ্বাশুড়ি খুব রাগি হলেও শ্বশুড় মশায় দারুন মানুষ। রোগী দেখা থেকে ফিরে এসে নতুন বউকে একটা চকলেট দিয়ে বলবেন , "নাও বৌমা, তোমার জন্য আনছি। " আবার বলবেন, "গ্রামের লোকতো বুঝেনা।

অশিক্ষিত মানুষ। ওরা যখন আসে তখন তোমার লম্বা বড় চুল ঢেকে রেখো। আর, এই বুড়ো মানুষটিকে শুধু শ্বশুড় ভেবোনা। আমার সামনে চুল ছেড়ে রেখো সমস্যা নেই। বাবার কাছে মেয়ের কোন লজ্জা নেই।

" কাহিনীটা আমার জন্মের আগের... চলবে..... সুচনা পর্বঃ Click This Link
 


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।