আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইফতার রিপোর্টিং: উপবাসী মানুষের রসনাবিলাসে উস্কানি

সঙ্গে সাহিত্যের সুবাস ...

রমজানের সঙ্গে অল্পাহারের বিষয়টি প্রত্যক্ষভাবে প্রযোজ্য থাকলেও, এটা খুব একটা পরিহাসের বিষয় যে, রমজান মাসে আমাদের খাবার খরচ বেড়ে যায়। আর এই বাড়তি খাদ্যগ্রহণের চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমাদের খাদ্যবিক্রেতা-ব্যবসায়ীরাও দাম বাড়িয়ে, খাদ্যপণ্যের সিন্ডিকেট-মজুদ করে বেশ একটা দুর্বৃত্তায়নে নিজেদের ব্যাপৃত রাখেন। ত্যাগ ও ইবাদতের মাস হয়ে পড়ে ভোগ ও দুর্নীতি-অন্যায়ের মাসে। গরিবের অনাহার-কষ্ট বোঝার জন্য যে-রোজা, সেই মাসে আমরা অধিক খেয়েদেয়ে বড়লোক-ভোক্তা হয়ে উঠি। রসনাকে বশে রাখার জন্য খাদ্যবিরতি, অথচ ইফতারকে ঘিরে আমরা অধিক ভোজনরসিক হয়ে উঠি।

ইফতারকে ঘিরে এই খাদ্যোৎসবের পরিধি দিনদিনই বাড়ছে। রাসুল (সাঃ)-এর কেবল খেজুর খেয়ে রোজা ভাঙার উদাহরণ আমাদের কাছে একটা গল্পকথা বা মিথ হয়ে সুদূর আরবেই আটকে থাকে, বাংলা মুলুকের রোজাদারদের অন্তরে তার অধিষ্ঠান নাই। রমজানের তাৎপর্যের উল্টোদিকে হাঁটার এই প্রবণতায় মিডিয়ার একটা অবদান আছে, এই নিবন্ধে আমি সেদিকটায় আলোকপাত করবো। আমি ১৬ থেকে ২১ আগস্ট, ২০১০ তারিখের শীর্ষস্থানীয় তিনটি দৈনিক -- প্রথম আলো, কালের কণ্ঠ ও সমকাল-এর ইফতার সংক্রান্ত রিপোর্ট ও ফিচারগুলো নিয়ে বিশ্লেষণ করবো। তিনটি পত্রিকার প্রায় এক সপ্তাহের ইফতার-সংক্রান্ত রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, অল্পাহারের রমজানকে ভোজনবিলাসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে এই রিপোর্টগুলো।

রিপোর্টগুলোর টেক্সট মনোযোগ দিয়ে পাঠ করলে যেকারোরই এরকম ধারণা হবে। আর বাজারমুখিন ও শ্রেণীপক্ষপাতী মিডিয়াগুলো ইফতারের মতো দৈনন্দিন ঘটনাকে ‘ইফতার বাজার’-এ পরিণত করেছে এবং এক্ষেত্রে তাদের অভিজাত এলাকার বাজারগুলোর দিকেই আগ্রহ বেশি। ১৬ আগস্ট তারিখে প্রথম আলো পত্রিকার শেষ পাতায় সচিত্র রিপোর্টের শিরোনাম ‘বেইলি রোডে দাম চড়া, বিক্রি বেশি’। রিপোর্টের শুরুতেই বলা হচ্ছে: “বেইলি রোডের ক্যাপিটাল ইফতরি বাজারে পা ফেলার জো নেই। ইফতারের তখনো চার ঘণ্টা বাকি।

তবুও বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বেইলি রোডে এসেছেন ভোজনরসিকেরা। রসনা বিলাসের জন্য খ্যাতি যে বাঙালি জাতির, তারা সংযমের পরীক্ষায়ও যেন উত্তীর্ণ। এই দোকানের ঘিয়ে ভাজা পরোটা আর মাংসের নানা পদের ম-ম গন্ধ কল্পনাপ্রবণ মানুষকে চোখের পলকে পৌঁছে দেবে কোনো বাদশাহি ভোজন উৎসবে। ” এই অনুচ্ছেদ আমাদের এই ধারণা দিচ্ছে যে, ইফতার কিনতে আসেন ‘ভোজনরসিকেরা’, তাদের মধ্যে এই ভোজনরস এতই তীব্র যে প্রাকৃতিক বাধা উপেক্ষা করেও তারা চলে আসেন। আর ইফতারের আয়োজন দেখে মনে হবে এটা একটা ‘বাদশাহি ভোজন উৎসব’।

অবশ্য ‘তারা সংযমের পরীক্ষায়ও যেন উত্তীর্ণ’ -- এই শব্দগুলোর অর্থ অস্পষ্ট এবং দ্ব্যর্থকও বটে। রিপোর্টের তৃতীয় অনুচ্ছেদে বলা আছে: “এম আর হায়দার নামের এক ব্যবসায়ী সেই চকবাজার থেকে বেইলি রোডে এসেছেন ইফতারি কিনতে। চকে ইফতার সামগ্রীর এমন রাজকীয় আয়োজন থাকতে বেইলি রোডে কেন, এমন প্রশ্নে তিনি জানালেন, পত্রপত্রিকা ও টিভি মারফত এই বাজারের নাম শুনেছেন, একটু চেখে দেখতে চান খাবারটা কেমন। ” অর্থাৎ সারাদিন অভুক্ত তার শুকনো জিব নব নব খাবারের স্বাদ নিতে চায়, আর তাকে সাহায্য করছে পত্রিকা-টিভির রিপোর্ট। বেইলি-রোড ইফতার বাজার অন্যের কাছে বিখ্যাত হয়ে উঠেছে মিডিয়ার কল্যাণে।

তবে চকবাজার ইফতার-বাজার আগে থেকেই বিখ্যাত, এম আর হায়দার ছিলেন চকবাজারেরই বাসিন্দা। কালের কণ্ঠ ২১ আগস্ট তাদের ফিচার পাতা ‘শুধুই ঢাকা’র ৪ নম্বর পৃষ্ঠাজুড়ে সেই চকবাজারের ইফতার বাজার নিয়ে বিশেষ ফিচার করেছে। সেই পাতার প্রথমেই রয়েছে প্রায় ৭২ পয়েন্টে (এক ইঞ্চি) বিশাল শিরোনাম: ‘কাবাব, হালিম আর দইবড়া’। শিরোনামটা এতই বড় যে তা আমি সেদিন প্রথম পড়ি, নীলক্ষেত অঞ্চলে, একটি গাড়ি যখন আমার রিকশাকে অতিক্রম করছিল, আরোহী ভদ্রমহিলা পত্রিকাটি পড়ছিলেন এবং ঐ এক মুহূর্তেই পুরো শিরোনমটা আমার পড়া হয়ে যায় (এই নিবন্ধটি লেখার তাগিদ তৎক্ষণাৎই আসে আমার মনে)। ফিচারের প্রথম অনুচ্ছেদে আছে ‘‘রাস্তার দুই ধারে শুধু খাবার আর খাবারের দোকান।

যতদূর চোখ যায়, সারিবদ্ধভাবে বসেছে রসনাপূজার পসরা’’। রমজান মাসে ফিচারলেখকের ‘রসনাপূজা’ কথাটা লিখতে একটুও হাত কাঁপেনি সম্ভবত। কারণ তার পরের অনুচ্ছেদেই আছে: “এসময় রোজাদাররা সুস্বাদু খাবার দিয়ে ইফতার করার যথাসাধ্য চেষ্টা করে”। আসলে এধরনের শব্দ (‘সুস্বাদু খাবার’, ‘যথাসাধ্য চেষ্টা’) ব্যবহারের মাধ্যমে রসনাবিলাসকেই উস্কে দেয়া হচ্ছে, রমজান মাসে। যাহোক, এরপর লেখক লিখছেন ‘সবচেয়ে বেশি বিক্রীত ১০টি পদ নিয়েই এই আয়োজন’।

১০ পদের ছবি দেবার পাশাপাশি সেখানে তিনি লিখছেন: ‘‘জিলাপি ছাড়া ইফতার আয়োজন ঢাকাবাসীর কাছে অকল্পনীয় ব্যাপার”; “ভোজনরসিকদের কাছে দই বড়া না হলে যেন ইফতারই অসমাপ্ত থেকে যায়”; “ঢাকাবাসীর কাছে হালিম ছাড়া ইফতারে বসা অকল্পনীয়ই নয়, অসম্ভবও”। লেখকের কথা যদি সত্য ধরে নেই তবে একজন ঢাকাবাসী যদি ইফতারে বসেন তবে অন্যান্য অনেক কিছুর সঙ্গে সেখানে অবশ্যই থাকতে হবে জিলাপী, দই বড়া ও হালিম। এই অবশ্যসম্ভাব্যতা একজন ঢাকাবাসী রোজাদারের মনে একটা অপ্রাপ্তির বোধ তৈরি করে, যদি তিনি এসব নিয়মিত না খেয়ে থাকেন। তার এই অপূর্ণতাবোধ তাকে ঠেলে দেয় একজন আদর্শ ঢাকাবাসী রোজদার হতে, অর্থাৎ ইফতারের জন্য দইবড়া কিনতে তিনি ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। ফিচার থেকে আরও জানা গেল কোয়েল পাখির রোস্ট, চিকেন কাঠি বা মাংস-ডিমের ডাবলি, কাশ্মিরী শরবত কেবল রমজান মাসেই, চকবাজারে পাওয়া যায়।

অন্য কোনো সময় নয়। অর্থাৎ অন্য মাসে আমরা যেটা খাই না, রমজান মাসে সেটা খাই, যেন রমজান হলো খাবার মাস। অন্য সময় যেটা খাও না, এমাসে সেটাও খাও। প্রথম আলোর বেইলি রোডের রিপোর্টেও বলা হচ্ছে: “বিক্রেতা মো. ইয়াসিন অবশ্য বললেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতাদের রুচি ও চাহিদার পরিবর্তন হচ্ছে। প্রায় এক যুগ ধরে তিনি এ এলাকায় ব্যবসা করছেন, কিন্তু দইবড়া বা দইবুন্দিয়ার মতো খাবারগুলো খুব সাম্প্রতিক সংযোজন।

” আর এই সংযোজনের কথা আমাদের জানিয়ে দিল মিডিয়া রিপোর্ট। এখন দইবড়া বা দইবুন্দিয়া খেতে মিরপুর বা পোস্তগোলা থেকে বেইলি রোডে আসবেন রসনালিপ্সু রোজদারেরা। তবে সমকালের এক রিপোর্টে (১৬ আগস্ট, পৃষ্ঠা ৩) বলা হচ্ছে দইবড়াই নাকি বাংলার নিজস্ব ইফতার। ডোবাতেলে ভাজা বেগুনি, পেঁয়াজু ইত্যাদি হলো মোগলাই খাবার। কিন্তু রিপোর্টার জানাচ্ছেন: “বইপত্র ঘেঁটে ও ইতিহাসবিদদের মতে, ছোলা-মুড়ি, দই-চিড়া, দইবড়া -- আরও কিছু পদ বাংলার নিজস্ব ইফতারের পদ”।

ইতিহাসবিদরা কে, তা অবশ্য রিপোর্টার জানাননি। ইফতার নিয়ে এই ‘আদেখলাপনা’ কেবল ঢাকা শহরের মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্তের মধ্যেই বেশি দেখা যায়। অন্যান্য শহরে ইফতার-উৎসব অতটা চোখে পড়েনা। কালের কণ্ঠ ১৬ আগস্ট ৩-এর পাতায় পরিবেশন করেছে একটি রেস্টুরেন্টে কী কী ইফতারি পাওয়া যায়: “ফ্রেন্ডস রেস্টুরেন্টে আছে বাহারি ইফতার। জিলাপি, বোম্বে জিলাপি, খাসির হালিম, খাসির জালি কাবাব, বিফ চপ, চিকেন ফ্রাই, গ্রিল চিকেন, খাসির মগজের স্যান্ডউইচ, ফুল ডিমের চপ, বিফ কোপ্তা, রেশমি কাবাব, ফুলুরি, কইপাতা, টিক্কা কাবাব, খাসির রোস্ট, বোম্বাই রোস্ট, ছোলা, ফালুদা ও লাচ্ছি”।

১৭ আগস্ট প্রথম আলোর ৩-এর পাতায় দেয়া হচ্ছে আরেক লিস্ট: “ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি, হালিমের পাশাপাশি এসব রেস্তোরাঁয় রয়েছে লাচ্ছা পরোটা, পাঞ্জাবি চিকেন, চিকেন মসাল্লাম, চিকেন তাওয়া ড্রাই, প্রন টোস্ট, চিকেন বড়া কাবাব, বিফ রেনডাং, বিফ তাওয়া ড্রাই, নানা রকম ফিরনি ও জিলাপি”। পাঠক, ভাবুন তো আপনি এত এত খাবারের সমারোহ কোনো উৎসবে কি দেখেন? ঈদে বা অন্য কোনো দিনে? এসব ভিন্নধর্মী বা স্পেশাল খাবার, আপনার সামর্থ্য থাকলে, আপনি ছ-মাসে বা বছরে একবার খেতে পারেন, প্রোগ্রাম করে। রোজার মাসের তিরিশটা দিন এইসব রাশি রাশি খাবার আপনি পাচ্ছেন, অথচ এই মাসে আপনার কম খাবার কথা। আপনার জন্য এই বিশাল উৎসবের খবর আসছে মিডিয়াবাহিত হয়ে। আর এসব খাবারের কাব্যিক বর্ণনা পড়ে, রোজাদারের জিব লকলকিয়ে উঠবে দিনের শুরুতে, এবং রোজা ভেঙ্গে যাবার সমূহ সম্ভাবনা তৈরী হবে।

প্রথম আলোর সেই রিপোর্টেই বিশেষভাবে বর্ণনা করা হচ্ছে ‘ছুপা রুস্তম’ নামের এক কাবাবে কথা: “একেবারেই সাদামাটা এক কাবাব এই ছুপা রুস্তম। তবে মুখে দেওয়ার পর ধারণা বদলে যাবে। চার পরতে তৈরি এই কাবাব পাওয়া যায় গুলশানের খাজানা রেস্টুরেন্টে। চার পরতের প্রথমে সবজি, এরপর খাসির মাংস, তারপর মুরগির মাংস, সবশেষে জিভে লাগবে পনিরের স্বাদ। মাংস লুকানো থাকে বলে এর নাম ছুপা রুস্তম।

” রমজান উপলক্ষ্যে রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা নব নব খাবারের আবিষ্কার করে চলেছেন এবং এই বিষবৃক্ষে পানি ঢালছে মিডিয়া, রসনাকাব্য রচনার মধ্য দিয়ে। সমকালের ১৬ আগস্টের রিপোর্টটিতে একটি খাবারের বর্ণনা এমনভাবে একটি খাবারকে ভিজুয়ালাইজ করছে যে, তা ক্ষুধার্ত রোজাদারকে স্খলিত করবে: “মানিকের দই-চিড়ায় দই আর সারারাত ভেজানো নরম চিঁড়ার সঙ্গে থাকে ঘোল ও খেজুরের গুড়ে মাখানো মচমচে ভাজা মুড়ি। এ জন্যই এক চামচ মুখে নিলেই মুখ ভরে যায় ঘোল-দইয়ের টক-মিষ্টি স্বাদে। আর চাবাতে শুরু করলেই পাওয়া যায় মচমচে মুড়ি ভাঙার কুড়মুড়ে শব্দ”। এধরনের কাব্যিক বর্ণনানির্ভর ইমেজ তৈরির কাজটিকেই জন ফিস্ক ও জন হার্টলি (ফিস্ক ও হার্টলি, ২০০৩) বর্ণনা করেছেন মিডিয়ার ‘পোয়েটিক ফাংশন’ হিসেবে।

আগেই বলেছি যে, বাজারমুখিন ও শ্রেণীপক্ষপাতি মিডিয়ার ইফতার-বাজার বর্ণনার ক্ষেত্রে প্রথম পছন্দ হলো অভিজাত এলাকার বাজার বর্ণনা। প্রথম আলোয় ১৭ আগস্টের শিরোনাম ‘অন্যরকম আবহ অভিজাত এলাকার ইফতারি বাজারে’ (গুলশান-বনানী), কালের কণ্ঠে ১৬ আগস্টের শিরোনাম ‘ধানমণ্ডির অভিজাত রেস্টুরেন্টে ইফতারি: বৈচিত্র্যেই আগ্রহ বেশি’, প্রথম আলোর ১৬ আগস্টের শিরোনাম ‘বেইলি রোডে দাম চড়া, বিক্রি বেশি’। সেইসব রিপোর্টে অবশ্য অভিজাত এলাকার আভিজাত্যের বর্ণনাও আছে -- দীর্ঘ গাড়ির সারি আর হৈচৈবিহীন বেচাকেনার কথা উল্লেখ আভিজাত্যের পরিচায়ক হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। গতবছর এফএম রেডিওতে শোনা একটি লাইভ ইফতার-রিপোর্ট-এর কথা প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করতে চাই। সেখানে আবার ইফতার রিপোর্ট পড়েছিল ‘প্রডাক্ট প্লেসমেন্ট’-এর খপ্পরে।

সংবাদ বা অনুষ্ঠানের মাঝে কায়দা করে পণ্যের নামটি ঢুকিয়ে দেয়ার নাম ‘প্রডাক্ট প্লেসমেন্ট’। ২০০৯ সালের রোজার সময়ে ইফতার-সম্পর্কিত একটি অনুষ্ঠান হতো রেডিও আমার-এ। ঐ অনুষ্ঠানটির স্পন্সর ছিল ম্যাঙ্গো জুস ফ্রুটো। টিএসসি এলাকা থেকে ইফতারের লাইভ রিপোর্ট করছিলেন একজন রিপোর্টার। তিনি স্টেশনের অ্যাঙ্করকে জানাচ্ছিলেন কে কী ইফতার নিয়েছেন এবং বলছিলেন সবার সঙ্গেই রয়েছে পানীয় হিসেবে ফ্রুটো।

তিনি এটা জানাতেও কসুর করলেন না যে তিনি নিজেও একটা ফ্রুটো নিয়েছেন এবং অ্যাঙ্করের জন্যও ফ্রুটো রেখেছেন। এভাবে ব্র্যান্ড নিজেই অনুষ্ঠানের টেক্সট হিসেবে ঢুকে যাচ্ছে, পণ্যকে স্থাপন করা হচ্ছে টেক্সটের অংশ হিসেবে। তবে নির্বাচিত ছয় দিনের পত্রিকায় ইফতারের ওপর ভিন্নধর্মী ও ভালো কিছু রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে প্রথম আলোয়। সেসব রিপোর্টের শিরোনাম হলো: ‘ব্যস্ত দিনের শেষে বুড়িগঙ্গার মাঝির নিরিবিলি ইফতার’ (২১ আগস্ট, পৃষ্ঠা ৩); ‘ইফতারের জন্য ফুটপাতের দোকানই গরিবের ভরসা’ (১৮ আগস্ট, পৃষ্ঠা ১৯); ‘বদলে যায় হাসপাতালও’ (২০ আগস্ট, শেষ পৃষ্ঠা)। গরিব, খেটে খাওয়া এবং সাধারণ জীবনযাপনের বাইরে অবস্থান করছেন যে মানুষ, তাদের জীবনে ইফতারের বাস্তবতা কী, তা উঠে এসেছে এসব রিপোর্টে।

রমজানের যে-তাৎপর্য, তার সঙ্গে এধরনের রিপোর্টই বেশি সাযুজ্যপূর্ণ। ভোজনলোলুপতা বাড়ায়, এরকম রিপোর্টের পরিবর্তে, সাধারণ মানুষের জীবনের রমজান কীভাবে উপস্থিত হয়, সেই বাস্তবতাকে তুলে ধরাই হোক রিপোর্টিংয়ের লক্ষ্য। তথ্যসূত্র: জন ফিস্ক ও জন হার্টলি (২০০৩)। রিডিং টেলিভিশন। লন্ডন: রাউটলেজ।

২২ আগস্ট, ২০১০। প্রথম প্রকাশ: খালেদ মুহিউদ্দিন সম্পাদিত 'মিডিয়াওয়াচ', ২৯ আগস্ট, ২০১০।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।