আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সমসাময়িক স্বাস্থ্য কথাঃ ভেজালের সাতকাহন

ভালোকিছুর সন্ধানে নিরন্তর হেঁটে চলা পথের এক ক্লান্ত পথিক ... আমি।

আমাদের এই গরীব দেশে আমদানী হয় না এমন কোন জিনিষ নেই বললেই চলে। আমদানী নীতিতে আমরা বড় বেশী উদার। দেশীয় কোনকিছু উৎপাদন কিংবা শিল্প বিকাশে আমাদের সদাই অনীহা। কারণ আমদানীতে ‘টু-পাইস’ কামানো অতি সহজ ।

তাইতো শত সহস্র যুক্তি আমদানীর পক্ষে যেমনঃ উৎপাদনে খরচ বেশী, উৎপাদিত পণ্য নিম্নমানের, কাঁচামাল, দক্ষ জনশক্তি তথা কলকারখানার অভাব ইত্যাদি। আর এ সব যুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মুনাফা লোভী অসৎ চক্র নিম্নমানের মেয়াদোত্তীর্ণ বিষমেশানো শিশু খাদ্য তথা অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী আমদানী করছে অবাধে। চারিদিকে জালের মত ছড়ানো ছিটানো মৃত্যু ফাঁদ। নতুন নতুন পন্থা সংযোজিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্রতিকারের চেষ্টা নেই।

আর থাকলেও তা যৎসামান্য। আম-কলাতে ‘কার্বাইড’ বা ‘এ্যাসিটিলিন’, আপেল-আঙ্গুর তথা ফলে কিংবা মাছ-মাংস ও দুধে ‘ফরমালিন’ হরহামেশাই মেশানো হচ্ছে জনসম্মুখে। দেশীয় খাদ্যের এ ভেজাল পুরানো ব্যাপার হলেও আমদানীকৃত পণ্য যথা- শিশু খাদ্য, গুড়ো দুধ, ক্যাডবেরী-ক্যান্ডিতে ‘মেলামাইন’ নতুন খবর। 'মরার উপর খাড়ার ঘা’-র মত। আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় দুধ এবং দুগ্ধজাত দ্রব্য একটা বিরাট অংশ দখল করে আছে।

দেশে আমদানীকৃত আটটি ব্রান্ডের শিশু খাদ্য দুগ্ধে বড় রকমের ভেজাল পাওয়া গেছে। ঐ আট ব্রান্ডের দুই একটা কোম্পানীর তরফ থেকে তাদের দুধে মেলামাইন নেই এবং নিরাপদ বলে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওযা হচ্ছে। কোথায় যাবো আমরা? আর এসবই করা হয়েছে সুপরিকল্পিতভাবে অধিক মুনাফা লাভের আশায়। কিন্তু কিভাবে তা করা হচ্ছে? মজার ব্যাপার হলো দুধের গুনগতমান দেখার সময় তার অনন্য উপাদান প্রোটিন কতটুকু আছে তা জানতে নাইট্রোজেন এর পরিমাপ করা হয়। অর্থাৎ পরীক্ষায় যদি দেখা যায় নাইট্রোজেন বেশি আছে, তবে ধরে নেওয়া হয় এই দুধ প্রোটিনসমৃদ্ধ।

আর মেলামাইনের মধ্যে যেহেতু বিপুল পরিমাণ নাইট্রোজেন আছে, সে কারণে দুধে পানি দিয়ে তাতে মেলামাইনের গুড়া মিশিয়ে প্রোটিনের পরিমাণ আপাতদৃষ্টিতে ঠিক রাখা হতো। যা প্রাথমিক ও সহজ পরীক্ষাগুলোতে ধরা পড়ে না। এতে করে দুধের দাম কমিয়ে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছিল এসব চীনা ব্র্যান্ডের। দাম কম, বিক্রি বেশি তাই মুনাফা বেশি! বিষয়টি আগে বহু দেশেরই নজর এড়িয়ে গেছে কেননা খাবারে কেউ মেলামাইন মেশাতে পারে এ ধারনাটাই অনেকের মধ্যে ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে যেসব দুধ কোম্পানির সঙ্গে চীনের কোনো সম্পর্ক নেই তাদের দুধেও মেলামাইন পাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

কারণ অসৎ ব্যবসায়ীরা চীনের মেলামাইনযুক্ত দুধ অন্য দেশের সিলমার্কা প্যাকেটে ভরে বাজারজাত করেছে। মেলামাইন হলো নাইট্রোজেন এ পরিপূর্ন একটি রাসায়নিক যৌগ যা সাধারনত প্লাষ্টিক, এডহেসিভ, হোয়াইট বোর্ড, লেমিনেট এবং আমাদের থালা বাসন তৈরীতে ব্যবহার হয়ে থাকে। মানব দেহে মেলামাইন প্রবেশের পর কখনো শোষিত হয় না। মেলামাইন এবং আরো একটি যৌগ মিলে এক ধরনের পাথর তৈরি করে এবং তা কিডনি নামক ছাঁকনিতে আটকে যায় ও প্রসাবের সাথে সহজে বের হয় না। একসময় পাথর জমতে জমতে কিডনি বিকল হয়ে যায়।

মজাদার চটপটি খাবেন ? আপনার অজান্তে বিক্রেতা মেশাচ্ছেন তেঁতুল টকের বদলে Citric Acid এবং Acetic Acid. যারা বেশি টক পছন্দ করেন, তাদেরকে উনি আরেকটু বেশী বেশী অপরফ দিয়ে দিবেন, কোন চিন্তা নাই। খাদ্যের স্বাদ, বর্ণ ক্রেতা-ভোক্তাদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য বিবিধ রাসায়নিক পদার্থ সংযোজন করা হয়। তাছাড়া খাদ্যে বিভিন্ন্ ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার আমাদের লিভার, কিডনী এবং স্নায়ুমণ্ডলীর যথেষ্ট ক্ষতি করতে সক্ষম। অনেক রাসায়নিক পদার্থ মাংস এবং অস্থিতে জমে দেহে ক্যান্সারের মতো রোগেরও সৃষ্টি করতে পারে। পৃথিবীর অনেক দেশেই এসব ফুড এডিটিভের ব্যবহার সুনিয়ন্ত্রিত ও নিষিদ্ধ।

কিন্তু আমাদের দেশে এসবের ব্যবহার অনিয়ন্ত্রিত। এজন্যে দেশে Blood Pressure, Diabetes, Heart Attack, Kidney Disorder, Stroke ইত্যাদি-র মত ভয়াবহ রয়্যাল রোগ বেড়ে যাচ্ছে আশংকাজনকভাবে। তাই প্রক্রিয়াজাত খাবারে সতর্কতার পাশাপাশি টাটকা এবং বিশুদ্ধ খাবারের প্রতি আমাদের দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। বিশ্বের উন্নত তথা উন্নয়নশীল সবদেশেই খাদ্যে ভেজালকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি আজীবন জেল-জরিমানা সহ মৃত্যুদন্ড। আর আমাদের দেশে শাস্তির মাত্রাটা ভেজালে উৎসাহিত করার মত।

কয়েক মাসের জেল বা জরিমানা গুটি কয়েক টাকা মাত্র। আমরা আর কতকাল অপেক্ষা করব এই খুনী ভেজালকারীদের দ্রুত সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য ?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।