আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেনাবাহিনীতে কর্মরত আমার হারিয়ে যাওয়া ভাই (কপি)



সেনাবাহিনীতে কর্মরত আমার হারিয়ে যাওয়া ভাই এবং মানবাধিকার সম্পর্কিত কতিপয় জিজ্ঞাসা (অন্তরীণরত পাঁচ সেনা অফিসারের স্মরণে লেখা, এদের মধ্যে চার জনই সাবেক ক্যাডেট) লিখেছেন : আদিল (৯১-৯৭) | বিভাগ : আলোচনা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত আমার ভাইকে গত ২৭/০৪/২০১০ তারিখ থেকে সেনাবাহিনীর আর ও চার অফিসারের সাথে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের মেস- বি হতে প্রহসনমূলকভাবে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে সেনাবাহিনী কর্তৃক অন্তরীণ রাখা হয়েছে। অদ্যাবধি আমার ভাই ও অপর অফিসারদের সাথে গত চার মাসে পরিবারের কাউকে সাক্ষাত করতে দেয়া হয়নি। উল্লেখ্য যে, আমার ভাই সহ পাঁচ সেনা অফিসারকে বি.ডি.আর সদর দপ্তর, পিলখানাতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে কর্মরত থাকাকালীন ব্যারিষ্টার ফজলে নূর তাপসের উপর গত বছরের অক্টোবর মাসে সংঘটিত গাড়ি বোমা হামলার অভিযোগ তদন্তের জন্যে গত বছরের নভেম্বর মাসে বিডিআর থেকে সেনাবাহিনীতে তলব করা হয়। সুদীর্ঘ সাত মাস তদন্ত কার্য পরিচালিত হবার পর গত ২৭-০৪-২০১০ তারিখে আমার ভাইসহ পাঁচ সেনা অফিসারকে পরিবারের কাউকে কিছু জানানোর সুযোগ না দিয়ে অধিকতর তদন্তের জন্যে অজ্ঞাত স্থানে বিশেষ সেলে অন্তরীণ রেখে পরিবারের সাথে সকল প্রকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এমতাবস্থায় আমরা উৎকন্ঠিত পরিবারের সদস্যরা সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে বারংবার যোগাযোগ করে জানতে পারি, উক্ত সেনা অফিসারেরা তাদের উপর আনীত অভিযোগ স্বীকার না করা পর্যন্ত বিশেষ সেলে তদন্ত অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত চলবে।

“উপরোক্ত তদন্তের অন্যতম উদ্দেশ্য জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়“- সেনাবাহিনীর দায়িত্বশীল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নিকট হতে এরূপ বক্তব্য শুনে আমরা হতবিহ্বল হয়ে উক্ত তদন্তের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলি এবং তাদের উপর শারীরিক নির্যাতনের মাধ্যমে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়ের প্রচেষ্টায় মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ তুলি। উক্ত কর্মকর্তা একথা শুনে কিছুক্ষণ নিশ্চুপ ছিলেন এবং আমাদেরকে আর কোন জবাব না দিয়ে শুধু বলেন, “আপনারা প্রয়োজন মনে করলে সিভিল কোর্টে আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। “ সেনাবাহিনীর কার্যধারা শুধুমাত্র সেনা আইনে চলে এবং সিভিল কোর্ট এর প্রতিকারের সুযোগ রাখে না – প্রকারান্তরে এই কথাটাই হয়তো তিনি বলে দিলেন। অসহায় আমরা – মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-পরিজন এই কথাটিকে নীরবে সংবরণ করে ফিরে এসেছি। এরপর আমরা বারবার সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আমার ভাইসহ পাঁচ সেনা অফিসারদের মুক্তি, তাদের সাথে সাক্ষাৎ, ঘটনাটির আশু নিষ্পত্তি ও সার্বিক ন্যায়বিচারের আবেদন করেছি।

প্রতিবারই আমাদের আশ্বাস দেয়া হয়েছে; কখনো ৭ দিনের সময় চাওয়া হয়েছে, কখনো বলা হয়েছে ১০ দিনের কথা। এই সময়ক্ষেপণের খেলায় ইতিমধ্যে ১০০ দিন ও পেরিয়ে গেছে। এই সুদীর্ঘ চার মাসের মধ্যে সেনা অফিসারদের সাথে পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাতের ন্যূনতম মানবিক দাবী ও প্রত্যাখাত হয়েছে বারবার। কোন আইনে তাদের সাথে আমাদের দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না, এর কোন সদুত্তর ও আমরা পাইনি। আর, কোন নাগরিকের সাথে অনির্দিষ্টকাল পরিবারের সদস্যদের দেখা করতে না দেবার অধিকার সামরিক কিংবা বেসামরিক কোন আইনেই কেউ রাখে না, আর তা নাগরিক অধিকার ও মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লংঘন।

অনন্যোপায় আমি আমার ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ ও তার প্রতি ন্যায়বিচারের মানবিক দাবি নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম। এ ব্যাপারে মানবাধিকার কমিশনের কাছে পাঠানো অভিযোগের প্রেক্ষিতে [অভিযোগ নং-১১৬/২০১০] প্রতিরক্ষা সচিবের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর সচিবালয়ের কাছে পাঠানো পত্রের জবাব পাঠানোর জন্য কমিশনের বেঁধে দেয়া সময়সীমা ১লা আগস্ট ইতিমধ্য পার হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কোন জবাব কমিশনে পাঠানো হয়নি আর আমি ও অদ্যাবধি কোন জবাব পাইনি। উৎকন্ঠিত আমরা পরিবারের সদস্যরা কিছুদিন আগে (আগস্টের শুরুতে) ঊর্ধ্বতন সেনা কর্তৃপক্ষের কাছে আবার গিয়েছি। ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা ব্যাপারটির দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যাপারে জানালেন তার অপারগতার কথা, বললেন যে আলোচ্য ব্যাপারটির সমাধান সেনাবাহিনীর হাতে নেই।

রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় মধ্য দিয়ে ঘটনাটির সমাধান হতে পারে এবং তার জন্য কোন সময়সীমা ও তিনি বলতে পারেননি। অতঃপর আমরা বিনীত হয়ে অনুরোধ করলাম, সেনা অফিসারদের সাথে তাদের স্বজনেরা শুধু একটিবারের জন্যে দেখা করতে চাই। উক্ত সেনা কর্মকর্তা শুধু তার অক্ষমতার কথা বলে অপারগতা প্রকাশ করে বললেন, ’দেখা করতে অনুমতি দেবার ক্ষমতা ও আমার নেই। ’ এখন তাই মনের কোনে প্রশ্ন জাগে, প্রকৃত ক্ষমতা আসলে কার কাছে, আলোচ্য ঘটনার উৎস কোথায়, একটি তদন্তের আইনি সমাধান কি করে আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সমাধান হতে পারে। আমার ভাইসহ অন্য সেনা অফিসারদের সাথে সাক্ষাতের ন্যূনতম মানবিক অধিকার থেকে কেন আমাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে তার সরল কিংবা আইনি ব্যাখা ও আমি কার ও কাছ থেকে পাচ্ছি না।

সার্বিক ঘটনাপ্রবাহের বিশ্লেষণে চারিদিকে শুধু দেখি অস্পষ্টতা, ধোঁয়াশা আর শৃংখল; এখানে নেই কোন স্বচ্ছতা ,জবাবদিহিতা, ন্যায়বিচার আর মানবাধিকার । তারপর ও আমি আশাবাদী, দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ ঘটনাটির ন্যায়সংগত সমাধানে এগিয়ে আসবে, আমার ভাইসহ পাঁচ সেনা অফিসার ন্যায়বিচার পাবে। অপেক্ষার প্রহর সব সময়ই অনেক দীর্ঘ মনে হয় - আমার ভাই হারানোর পাঁচ মাস চলছে এখন, কেউ কি আছে আলোর পথ দেখাবে। আমি জানি, আলো আসবেই – অন্ধকার দীর্ঘ রাতের পর আমার প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশে এখন ও প্রতিদিন ভোর হয়। সবার মত আমার প্রশ্ন .... এর নাম কি গনতন্ত্র........।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.