আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মোবাইল হটাচ্ছে কম্পিউটারকে



এক দশক আগেও দেশবাসী ভাবতে পারেনি, মোবাইল ফোনই একদিন ক্যামেরার উষ্ণ জমিনটুকুর গর্বিত মালিক হয়ে যাবে। একই কায়দায় হাতঘড়িও এখন মোবাইল প্রযুক্তির কাছে আচ্ছা করে খাবি খাচ্ছে। এর পরের পালা কি কম্পিউটারের? টেক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মোবাইল অচিরেই এ হাইটেক ডিভাইসটিরও ভাত মারবে। কারণ এক সময়কার রেফ্রিজারেটরের সমান আকৃতির কম্পিউটার হাফ সেঞ্চুরি পেরুতেই ডেক্সটপে রূপ নিয়েছে। কিন্তু মোবাইল আগ্রাসনে ওটা এখন ল্যাপটপে পরিণত হয়ে 'জাত' ধরে রাখতে চাইছে।

ল্যাপটপ নোটবুকের ব্যানারে বনে গেছে সুদৃশ্য পাম-টপে। কিন্তু ল্যাপটপের ফাংশান আর অনুভূতি যদি পামটপে মেলে, তাহলে খবর দেখছি এখন ল্যাপটপেরও। টেক বিশেষজ্ঞরা অন্ত এটাই ধারণা করছেন। ওই ডিভাইসটিকে আপনি কি বলবেন--- যাতে রয়েছে একটি সুদৃশ্য স্ক্রিন, একটি পরিমিত কীবোর্ড, কন্টাক্ট, ইমেইল আর ডকুমেন্টের মতো ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণের জম্পেশ স্টোরেজ, আঙ্গুলের আলতো ছোঁয়ায় অডিও-ভিডিও ফাইল খোলার চৌকস সামর্থ্য, গেমস আর স্প্রেডশিট প্রোগ্রাম, রয়েছে যোগাযোগের অনন্য উপাদান। উত্তরটা অনেকের জিভের ডগায় লাফাবে।

এক নিঃশ্বাসে হয়তো কেউ কেউ বলবেন, কেন কম্পিউটার! জনাব, হিসেবে ভুল হচ্ছে। কারণ ওটা যে মোবাইল ফোন - ডাহা আধুনিক। প্রযুক্তিবিদরা কম্পিউটারের জায়গা জাদুঘরে আগে ভাগে বুকড করে রাখতে চাইছেন। খবরে পেলাম, আমেরিকার মতো উন্নত দেশে ৫৭ শতাংশ ইন্টারনেটের কাজ মোবাইলের মাধ্যমে চলছে। অর্থনৈতিক দিক ও বাস্তবতার দিক থেকে বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে ইন্টারনেট ছড়িয়ে দিতে মোবাইল ফোনই সবচেয়ে বেশি কার্যকর প্রযুক্তি।

আমি বিশ্বাস করি, মোবাইল ফোন কম্পিউটারের জায়গা দখল করে নিচ্ছে। আগামীতে বাংলাদেশেও যে কোনো ধরনের টিকেট, টাকার লেনদেন, উকিল নোটিশ মোবাইল বাটনে টিপেই সারতে পারবেন দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে, যে কোনো সময়। মোবাইলে এ সব সুবিধা মিললে কম্পিউটারের কীবোর্ডে হামলে পড়ার আগ্রহ থাকবে কার? অন্তত ডিজুস প্রজন্ম মোবাইল প্রযুক্তিকে রাত দিন পেন্নাম জানাবে। টেক বিশেষজ্ঞদের ধারণা, জটিল ও অত্যাধুনিক বেশ কিছু কাজে পিসি আর ল্যাপটপ থেকেই যাবে। কারণ একজন আর্কিটেক্ট যদি ডিজাইন প্রোগ্রাম চালাতে চান, তাহলে পিসিই হবে তার শ্রেষ্ঠ অবলম্বন।

ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার যদি নতুন ধরনের সার্কিটের ডিজাইনে তৈরি করতে চান, তাহলে তিনি পিসিকেই প্রাধান্য দেবেন। ফিল্ম মেকার যদি ভিডিও এডিট করতে চান, তাহলে পিসিই গ্রেট! কিন্তু গণমানুষের হাতের তালুতে ঠাঁই পাওয়া মোবাইল ফোনকে চোখ রাঙানোর ক্ষমতা কম্পিউটার দিন দিন হারিয়ে ফেলছে। বিষয়টাকে সম্ভবত এভাবেই বলা যায়- জটিল কাজে কম্পিউটার আরও দীর্ঘ সময় ধরে বল্লাল সেন মার্কা কৌলীন্য-গীত গাইবে আর মোবাইল ফোন গণমানুষের কাতারে এসে গণসংগীতের কোরাস তুলবে। কম্পিউউটারের বিবর্তন হচ্ছে ধীরগতিতে। অথচ মোবাইল ফোনের বিবর্তন কল্পনাকেও হার মানাচ্ছে।

সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, মোবাইল ফোন নিজেই এখন কম্পিউটার হয়ে উঠছে। টেক-পাগল লাখ লাখ জাপানি এখন মোবাইল ফোন ছাড়া ভিন্ন কিছু ভাবতেই পারছেন না। কারণ ইন্টারনেট ভিত্তিক ব্যাক-আপ সার্ভিস এখন মোবাইলে পাওয়া যাচ্ছে। বিজ্ঞানী কেনেথ বোল্ডিংয়ের জ্ঞান-বন্দনা তত্ত্বাটিকে একটু ঘুরিয়ে বললে হয়তো এভাবে বলা যাবে : 'মোবাইলের সম্ভাব্য শক্তি এখন অতি ভীষণ/এখন আর যে প্রস্তর যুগে ফিরে যাওয়া যায় না। দুধে মাখন আছে, আমাদেরকেই তা মন্থন করে নিতে হবে।

মোবাইলই শক্তি এবং মহাকাশই তার সীমা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.