আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নারীর আত্মহনন ও এর প্রতিকারের উপায়



বিগত কিছুদিন ধরে পত্রিকার পাতায় নারীর আত্মহননের খবর বেশ গুরুত্বের সাথে ছাপা হচ্ছে। খবরগুলি আমাদেরকে উদ্বিগ্ন করে তুলছে। বাংলাদেশে নারী উন্নয়ন হয়েছে এবং হচ্ছে। অনেক নারী এখন বিভিন্ন কাজ করে তার এবং তার পরিবারের ভরণ পোষণ করছে। অথচ এই নারীরা জীবনের উপরে বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছিল।

তাদের মনে হচ্ছিল, " এই জীবন রেখে কি লাভ? যেখানে কোন ভালোবাসা নেই, কারও কাছে আমার বেচে থাকার কোন গুরুত্ব নেই,মূল্য নেই, প্রয়োজন নেই। বিশেষ করে স্বামী। যিনি আমার জীবনের সব চাইতে আপন, বেচে থাকার একমাত্র অবলম্বন, আমার মান সন্মান। তার কাছেই যখন আমার জীবনের কোন দাম নেই তখন বেচে থেকে লাভ কি?" একজন নারীর কাছে প্রিয়দের তালিকায় বাচ্চার অবস্থান দ্বিতীয় স্থানে। সেই প্রিয় নাড়ীছেড়া ধনকেও সে সাথে করে নিয়ে যাচ্ছে।

তার মানে তার মনে হচ্ছে, " আমি যখন চলে যাবো তখন আমার বাচ্চার যত্ন নেবে কে? অনাদরে অবহেলায় এই বাচ্চাগুলি বড় হবে। সে না পাবে সময়মত খাবার, না পাবে চিকিত্সা। এমন কি আশ্রয় নাও পেতে পারে। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াবে। তার চাইতে আমি সাথে করে নিয়ে যাই।

" আর তাই সে সাথে করে নিয়ে যাচ্ছে তার নাড়ী ছেড়া ধনকে। তাদের মৃত্যুটাও কি মর্মান্তিক, কি বিভত্স এবং কি হিংস্র। চোখে দেখা যায় না। মনে করলেই গা শিউরে ওঠে। ঘুমের ওষুধ খেয়ে, গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে, রেলের নীচে ঝাপ দিয়ে তারা নিজেকে এবং বাচ্চাকে মেরে ফেলছে।

মারা যাওয়ার আগে তাদের উপরে অত্যাচারের কাহিনী বিভিন্নভাবে লিখে রেখে যাচ্ছে। তারা এভাবে এই সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে তাদের সম্মিলিত প্রতিবাদ করে যাচ্ছে। তারা তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করে বলতে চাইছে," তোমরা মানুষেরা এবং তোমাদের সমাজ ব্যবস্থা আমাদের বেচে থাকতে দিলো না। বেচে থাকার পরিবেশ তৈরী করতেও দিলো না। তাই আমাদের জীবন দিয়ে তার প্রতিবাদ করে গেলাম।

তোমরা যারা বেচে আছো তারা এর প্রতিবাদ ক'রো, আমাদের এই আত্মত্যাগের প্রতিশোধ নিও। " আমরা, আমাদের এই সমাজ ব্যবস্থা কি এই নারীদের বেচে থাকার কোন উপায় খুজে দিতে পারছিনা? নাকি তার মনে বেচে থাকার আকুতিটুকু তৈরী করে দিতে পারছি না। বিষয়টি সত্যি ভেবে দেখার মতো। আসুন বিষয়টি একটু আলোচনা করা যাক। একজন মানুষ কখন আত্মহত্যা করে।

যখন সে বেচে থাকার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। মানুষের কাছে সবচাইতে প্রিয় কি? তার জীবন। সেই জীবনটাকে সে নিজে বের করে দিতে চায়। শুধু নিজের জীবন নয়। সাথে তার বাচ্চাকেও নিয়ে যাচ্ছে।

কতটা আঘাতে সে ক্ষত বিক্ষত হয়েছে। বেদনায় সে কতটা নীল হয়েছে। যখন সে আঘাতে আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হচ্ছিল, বেদনায় নীল হয়ে যাচ্ছিল, তার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছিল তখন তার পাশে কেউ ছিলো না একটু সান্তনা দিতে, আশার বাণী শোনাতে। জীবনটা অনেক দামী। সেই জীবনে বিয়ে এবং স্বামী নিয়ে সংসার করাটাই একমাত্র কাজ নয়।

সংসারকে ছাড়িয়ে জীবনের গন্ডী আরও অনেক দুর পর্যন্ত বিস্তৃত। যদি স্বামী জায়গা নাও দেয়, তার সংসারে যদি নাও থাকা যায় তাহলেও বেচে থাকা যায়, নিজে নিজের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে নিজের এবং বাচ্চাদের বেচে থাকার খরচ সে যোগাড় করে নিতে পারে। পারে একটি সন্মানজনক জীবন বেছে নিতে। সে তার জীবনের একটি মানে খুজে পেতে পারে। পারে নান্দনিক নির্মল আনন্দ পেতে।

শুধু নিজের ও সন্তানের জীবন নয়, তার মতো আরও অনেক স্বামীর গৃহ হারা নারীর জীবনেও বাচার উপায় খুজে দিতে পারে। শুধু এই মানসিক অবস্থা তৈরী করে দিতে পারলে কিন্তু নারী আর বাচ্চাকে সাথে নিয়ে নিজেকে মেরে ফেলার মতো অনৈতিক কাজটি করা থেকে সে সম্পুর্ণ বিরত থাকতে পারে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।