আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিমানমন্ত্রী কি পদত্যাগের হুমকিতে আছেন?



নাইজেরিয়া ভিত্তিক কোম্পানি ‘কাবো’র উড়োজাহাজের চুক্তির মেয়াদ না বাড়ানো, হযরত শাহজালাল (রা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাগোয়া ৪৩৪ বিঘা সরকারি জমির লিজ সংক্রান্ত সিংগাপুর ভিত্তিক কোম্পানি ‘ইপকো’র সঙ্গে চুক্তি বাতিলের উদ্যোগ ও বিমানের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়েই মূলত বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী জিএম কাদেরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংসদীয় ‘কমিটি’র মতবিরোধ প্রকাশ্য হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া এবারের হজ ফ্লাইটের জন্য অজবন এরোনেটিসের দরপত্রে উদ্ধৃত দর নিয়েও পরস্পরবিরোধী বক্তব্য আসছে। এটিকে মন্ত্রীর সঙ্গে পুরো কমিটির দ্বন্দ্ব বলা হলেও প্রকৃত ঘটনা ভিন্ন। মন্ত্রীর সঙ্গে কার্যত সমস্যা চলছে কমিটির দুইজন সদস্যের। একজন কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, অপরজন কমিটির সদস্য মইন উদ্দীন খান বাদল (জাসদের কার্যকরী সভাপতি)।

এসব বিষয়ে জিএম কাদের গতকাল আমাদের সময়কে জানান, উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে তিনি কয়েকদিনের মধ্যেই প্রধানমš?ী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলবেন। বড় ভাই ও জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের সঙ্গেও পরামর্শ করবেন তিনি। তাদের দু’জনের মতামতের ওপর ভত্তি করেই নিজ করণীয় ঠিক করবেন। মš?ী বলেন, এখনই তিনি পদত্যাগের কথা ভাবছেন না। কোন কারণে যদি পদত্যাগ করতে হয় তাহলে সেজন্য তার দলেরও সিদ্ধান্তের বিষয় রয়েছে।

সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, রোজার ঈদের পর জি এম কাদেরের মন্ত্রণালয় পরিবর্তন হতে পারে। দফতর বদল হলে তাকে দেয়া হতে পারে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে। অপর সূত্র জানায়, ঈদের পর সংসদের ষষ্ঠ অধিবেশনে কয়েকটি সংসদীয় কমিটি পুনর্গঠনের সম্ভাবনা আছে। তাতে বিমান মন্ত্রণালয়ের কমিটি থেকে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ ও মইন উদ্দীন বাদলকে সরিয়ে অন্য কমিটিতে দেয়া হতে পারে। জিএম কাদের পদত্যাগ করছেন গত জুলাই মাসের প্রথমদিকেও এমন গুজব ছড়ায়।

তখনও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে সমস্যার কথা জানান জি এম কাদের। চুক্তির মেয়াদ শেষে ‘কাবো’ এয়ারের উড়োজাহাজকে চলাচলের অনুমতি না দেয়ায় গত ২৩ জুন জাতীয় সংসদের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে জি এম কাদেরকে দোষারোপ করে বাদল বলেছিলেন, ‘চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি না করার আকষ্মিক সিদ্ধান্ত দিয়ে বিমান মন্ত্রণালয় অহেতুক সরকারকে বিপাকে ফেলেছে’। সেদিন সংবাদ সম্মেলনে বাদল ছাড়া কমিটির অন্য কেউ উপস্থিত ছিলেন না। বৃহস্পতিবারও বিমানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কথা বলেছেন কেবল কমিটির সভাপতি মোশাররফ ও সদস্য বাদল। কমিটির একাধিক সদস্য জানান, মন্ত্রীর বিরুদ্ধে তাদের দু’জনের এরকম প্রকাশ্য বিষোদগারে তারাও বিব্রত।

তবে বিমান মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই ৭৪৭ এর টিকেট বিক্রি করা হয়। বিমানের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পুত্র সরকারের নিবন্ধন ছাড়াই ও বিনা দরপত্রে বিমানটি লিজ নেয়। ‘কাবো’ বিপুল অংকের ঘুষ দিয়ে অনেকটা পরিত্যক্ত ও ২৬ বছরের পুরনো এ জাহাজ চলাচলের অনুমতি নেয়ার চেষ্টা করছে। বোয়িং-৭৪৭ ছয় মাসের জন্য লিজ নেয় বিমান কর্তৃপক্ষ। গত দুই জুন লিজের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।

চুক্তির মেয়াদ আরও দুই মাস বৃদ্ধি এবং উড্ডয়নের অনুমতির জন্য বিমান কর্তৃপক্ষ আবেদন করলেও মন্ত্রণালয় তাতে সায় দেয়নি। বিষয়টি শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত গড়িয়েছিল। অন্যদিকে শাহজালাল বিমানবন্দর লাগোয়া ৪৩৪ বিঘা সরকারি জমির বিষয়েও মোশাররফ ও বাদলের সঙ্গে মন্ত্রীর মতদ্বৈততা দেখা দিয়েছে। ‘ইপকো’র সঙ্গে চুক্তি রক্ষা করতে গেলে এই জমি হাতছাড়া হয়ে যাবে সরকারের। এর ফলে ভবিষ্যতে বিমানবন্দরের সম্প্রসারণও অসম্ভব হয়ে উঠবে।

চুক্তি রক্ষার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন সংসদীয় কমিটির ওই দু’জন। তবে চুক্তি বাতিল করে সরকারি জমি রক্ষার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে সংসদীয় কমিটির বিগত কয়েকটি বৈঠকে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ ও বাদলের সঙ্গে বিমানমন্ত্রীর উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ও হয়। গত বছরের ২১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত বৈঠকে সংসদীয় কমিটি চুক্তির শর্ত ভঙ্গ ও কোনো কাজ না করার দায়ে ইপকো’র সঙ্গে চুক্তি বাতিল করতে সিভিল এভিয়েশনকে নির্দেশনা দেয়। একইসঙ্গে সরকারের আর্থিক ক্ষতিসাধন করার অভিযোগ এনে ক্ষতিপূরণ চেয়ে ইপকো’র বিরুদ্ধে মামলা করার জন্যও সিভিল এভিয়েশনকে বলেছিল কমিটি।

ওইদিন সংবাদ ব্রিফিংয়ে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ বলেছিলেন, ১৯৯৯ সালে ন্যাম সম্মেলনকে সামনে রেখে গল্ফ ক্লাব, কান্ট্রি ক্লাব ও হোটেল নির্মাণের জন্য ইপকো’কে সিভিল এভিয়েশনের প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ একর জমি ইজারা দেয়া হয়। আ’লীগ সরকার শেষদিকে এ চুক্তি বাতিল করে দেয়। পরবর্তীতে চারদলীয় জোট সরকার আবার ইপকো’র সঙ্গে নতুন চুক্তি করে। কথা ছিল ইপকো দেড় বছরে গল্ফ ক্লাব, কান্ট্রি ক্লাব ও অন্তত দেড়শ কক্ষের একটি হোটেল নির্মাণ করবে। কিন্তু কোনো কাজই করতে পারেনি ইপকো।

দীর্ঘদিন যাবত এই বিশাল পরিমাণ জায়গা অব্যবহৃত থাকায় সরকারের মোটা অংকের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। তবে গত বছরেরই ১০ নভেম্বর বিপরীত অবস্থানে চলে যায় সংসদীয় কমিটি। এদিন বৈঠকে কোনো মামলা কিংবা আইনি জটিলতায় না গিয়ে ইপকোর সঙ্গে আপস মীমাংসায় যাওয়ার পরামর্শ দেয় কমিটি। মইন উদ্দীন বাদল অভিযোগ করেছেন, এবারের হজ ফ্লাইটের জন্য অজবন এরোনেটিস দরপত্রে ১০ হাজার ছয়শত ডলার উদ্ধৃত করেছিল। দরপত্র খোলার পর দেখা যায়, সেখানে ঘষামাঝা করে ৯ হাজার ৬শ’ করা হয়েছে।

থাই এয়ারওয়েজ ৯ হাজার ৮শ’ ডলার দর উদ্ধৃত করায় এই ঘটনা ঘটানো হয়। এতে মন্ত্রীর মেয়ে ও মেয়ের জামাতা জড়িত কি-না তাও খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানান বাদল। অভিযোগ অস্বীকার করে জিএম কাদের বলেন, তার মেয়ে ও জামাতা ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। বাদল আরও দাবি করেন, বিমানের কেনাবেচা ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে একশ’ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ দুর্নীতি হয়েছে বলে তথ্য পেয়েছে সংসদীয় স্থায়ী। দুর্নীতি তদন্তে তাকে আহ্বায়ক করে গঠিত উপকমিটি বিমানের লন্ডন, রোম ও দুবাই কার্যালয় পরিদর্শন করতে চেয়েছিল।

তবে বিমান কর্তৃপক্ষ এক্ষেত্রে সহযোগিতা করেনি বলে অভিযোগ করেন বাদল।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।