আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নওরীন, এক ছলনাময়ী

সমাজকে বদলানোর জন্য নিজেকে আগে বদলানো প্রয়োজন। আসুন আমরা সবাই বদলে যাই সত্যের আলোয়।
নাম তার নওরীন আহমেদ। বয়স ৩৯ বছর। উচ্চতা পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি।

উদ্ভিন্নযৌবনা সুন্দরী। তবে এ সৌন্দর্য তার অলঙ্কার নয়, অহঙ্কার নয়। অস্ত্র। এ অস্ত্র প্রয়োগ করে তিনি ঘায়েল করেন তার উদ্দিষ্ট শিকারদের। এ অভিযোগ ভুক্তভোগী অনেকের।

তাদের একজন রিয়াজ চৌধুরী। সিলেটের শাহজালাল উপশহরের বাসিন্দা। গত ১লা মার্চ নিজের অভিজ্ঞতার বিবরণ দিয়ে তিনি এক জেনারেল ডায়েরি (জিডি) করেন সিলেটের কোতোয়ালি থানায়। এ বিবরণে শুধু নওরীন নয় সংশ্লিষ্টেরও অনৈতিক জীবন যাপনের কদর্য চিত্র ফুটে উঠেছে। তাই নওরীনকে ঘিরে এ কদর্যতার শেষ কোথায়- এ প্রশ্ন এখন অনেকের।

এ সব কিছুই কি থেকে যাবে আইনের ধরাছোঁয়ার বাইরে? ম্যারেজ মিডিয়া নওরীনের যাবতীয় কর্মকাণ্ডের উৎস বিভিন্ন ম্যারেজ মিডিয়া বলে জানা যায়। এমন এক ম্যারেজ মিডিয়া বাসাবো’র ‘কান্তা’। এর স্বত্বাধিকারী মিসেস কান্তা জানান, নওরীন নামে আমাদের একজন সদস্য রয়েছেন। তিনি এসে বিবাহপ্রার্থী পুরুষদের টেলিফোন নম্বর সংগ্রহ করতেন। তিনি আরও জানান, গত বছরের শেষের দিকে নওরীন টেলিফোনে জানান- হাসান নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক হয়েছে।

কাবিন হলে তারা দু’জনে এসে ফি দিয়ে যাবেন। কিন্তু এরপর তারা আর আসেননি। ভুক্তভোগী ক’জন প্রবাসী ব্যবসায়ী হাসান আহমেদ জানান, কান্তা ম্যারেজ মিডিয়ার মাধ্যমে পরিচয় হয় নওরীনের সঙ্গে। এক পর্যায়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে দু’জনের মধ্যে। তিনি দামি আংটি ও অন্যান্য সামগ্রী উপহার দেন নওরীনকে।

বিয়ের প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এক সময় নওরীনের চলন বলনে সন্দেহ জাগে। তার সেলফোনে প্রচুর কল আসে। আর ফোন এলেই দূরে গিয়ে আড়ালে সে কথা বলে। এরপর খোঁজখবর নিয়ে তিনি জানতে পারেন, নওরীন আসলে ডিভোর্সি।

ধানমন্ডির বাসিন্দা এক এডভোকেটের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল তার। সে বিয়ে তিন মাসের মাথায়ই ভেঙে যায়। ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, সন্তান না থাকায় আত্মীয়-স্বজনদের চাপে বেশি বয়সেও বিয়ের জন্য পাত্রী খুঁজছিলেন। বিভিন্ন ম্যারেজ মিডিয়ায় বায়োডাটা জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে পত্রিকায় ‘পাত্র চাই’ বিজ্ঞাপন দেখে ফোন করেন।

তখন পরিচয় হয় নওরীন আহমেদের সঙ্গে। এক পর্যায়ে সামনা-সামনি দেখা হয়। কথা হয়। পছন্দ করেন তাকে। উপহার দেন দামি আংটি।

বেশ কিছু দিন যোগাযোগ হয়। এর মধ্যে একদিন বাসার সমস্যার কথা বলে ১০ হাজার টাকা ধার নেয় নওরীন। এরপর আর তার খোঁজ মেলেনি। টাঙ্গাইলের এক ফার্নিচার ব্যবসায়ী জানান, এক বন্ধুর বিয়ের অনুষ্ঠানে অন্য এক বন্ধুর মাধ্যমে পরিচয় হয় নওরীনের সঙ্গে। বেশ কিছু দিন কথাবার্তা হয় সেলফোনে।

বিয়ের কথা পাকা হয় এক পর্যায়ে। গত ৫ই মে গাড়িতে করে কঙবাজার যান তারা। বেড়িয়ে আসার দু’দিন পর থেকে ফোন করে টাকা চাইতে শুরু করে নওরীন। বেশ কয়েকবার টাকা দিয়েছেন তিনি। অ্যাডভোকেট কামরুল হাসান তুহিন বলেন, বাড়ির মামলা নিয়ে নওরীনের সঙ্গে পরিচয় হয় আমার।

এক সময় সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়। এ ঘনিষ্ঠতার কারণে মামলা বাবদ কোন খরচ তার কাছ থেকে নেইনি। এক সময় নওরীন তার জীবনের নানা কষ্টের কথা আমাকে জানায়। পরে আমাদের বিয়ে ঠিকঠাক হয়। তখন সে পরিবারের সমস্যার কথা বলে।

বিয়ের খরচের কথা বলে ৬০ হাজার টাকা চেয়ে নেয়। এ ধরনের আরও কাহিনী শোনা যায় আহমেদ মিথুন, বাড্ডার সিদ্দিকুর রহমান, নামী দৈনিকের এক সাংবাদিক ও অন্যান্যের কাছে। এসব কাহিনী মোটামুটি একই রকম ছলনার। প্রেম, ভালবাসা, যৌনতার জালে জড়িয়ে, বিয়ের কথা বলে, নগদ অর্থ ও সম্পদ সামগ্রী আদায় করা- এটাই নওরীনের মূল উদ্দেশ্য। অনুমান করা হয় অন্তত জনা পঞ্চাশেক পুরুষকে নিঃস্ব করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সে।

রিয়াজ চৌধুরীর জিডি সিলেটের কোতোয়ালি মডেল থানার দায়েরকৃত জেনারেল ডায়েরিতে (নং ৫৭২, তাং ০১.০৩.২০১০) রিয়াজ চৌধুরী উল্লেখ করেন- ‘আমি একজন পুরাতন গাড়ি ব্যবসায়ী। আমি বিবাহিত এবং আমার স্ত্রী লন্ডন প্রবাসী। গত দেড় বছর আগে এক পরিচিত পরিবারের মাধ্যমে নওরীন আহমেদের সঙ্গে পরিচয় হয়। এরপর সে আমার টেলিফোন নাম্বার নেয় এবং আমি তাকে ফোন নাম্বার দেই এবং আমাকে ফোন করে ঢাকায় এলে যোগাযোগ করতে বলে। যেহেতু আমি পুরাতন গাড়ির ব্যবসা করি সেহেতু আমাকে মাঝে মাঝে ঢাকায় যেতে হয়।

অতঃপর আমরা মাঝে মাঝে দেখা করি এবং ঘনিষ্ঠ হতে থাকি। বিভিন্ন সময় আমরা বিভিন্ন রেস্ট হাউসে যাই... বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে এক সঙ্গে খাওয়া দাওয়া করি। অতঃপর তাকে নিয়ে দেশে ও বিদেশে আনন্দ ভ্রমণ করতে যাই। আমরা শিলং হয়ে দার্জিলিং যাই। (থাইল্যান্ডের) পাতাইয়া বীচে এবং অন্যান্য স্থানে যাই।

... আমি পুরাতন গাড়ি ক্রয় করিয়া... ১৯/০৯/২০০৯ তারিখে আসার সময় সে আমার সাথে সিলেটে আসে এবং আমরা অনুরাগ হোটেলের ৩০৪ নং রুমে অবস্থান করি এবং ২২/০৯/২০০৯ তারিখে নওরীন আহমদ ঢাকার উদ্দেশে বাসে রওয়ানা দেয়... অক্টোবর মাসের ২৪ তারিখে সকালে সে ঢাকা থেকে বাসে করে রওয়ানা দেয় এবং ৩.৩০ মি.-এর দিকে আবার একই হোটেলের ৩০২ নং রুমে অবস্থান করে। এমতাবস্থায় তার সঙ্গে আবার... রাত্রিযাপন করি... তারপর ২৬ তারিখে সে হোটেল ত্যাগ করে এবং আমি তাকে বাস স্ট্যান্ডে দিয়ে আসি। উল্লেখ্য আমরা মাইক্রোবাস ভাড়া করিয়া সিলেটের জাফলং, মাধবকুণ্ড সহ বিভিন্ন স্থান ঘুরাফিরা করি এবং শপিং করি। ইতিমধ্যে আমি ঢাকা গিয়ে শুনতে পাই যে, সে একটি খারাপ মেয়ে এবং ৩০-৪০ বৎসর বয়সের ছেলেদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক আছে। তারা বিভিন্ন গেস্ট হাউসে ভিন্ন ভিন্ন নাম দিয়ে অবস্থান করে এবং তাদের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত থাকে।

ইতিমধ্যে আমি আমার ঢাকার এবং সিলেটের বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে এই বিষয়ে আলাপ করি তারাও ওই মেয়ের সম্বন্ধে অনেক কিছু জানে এবং তারা বলে ওই মেয়ের অনেক ছেলেদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক আছে। সে একজন ডিভোর্সি মহিলা। সবাইকে ছোট ভাই হিসেবে পরিচয় দেয়। বর্তমানে সে আমাকে বিয়ে করার জন্য চাপ দেয় এবং না করলে আমাকে নানারকম হুমকি প্রদর্শন করে। আমি ঢাকায় কিভাবে ব্যবসা করবো তা সে দেখে নিবে বলে।

কিছুদিন অপরিচিত কিছু ছেলে আমাকে আমার বাসার সামনে জিজ্ঞাসাবাদ করে তখন আমি আমার এই সমস্ত ঘটনা তাদেরকে বলি এবং কাগজে লিপিবদ্ধ করি। তারপর ওই সময় আমার মোবাইলে তাকে ফোন করি... সে উত্তেজিত হয়ে আমাকে গালাগালি করে এবং আমার মোবাইলটি ওই অপরিচিত ছেলেরা নিয়ে যায়। অতএব আপনার কাছে আবেদন যে, ওই মহিলা (নওরীন আহমেদ) এর কাছ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য আপনার কাছে আবেদন জানাচ্ছি। ’ কে এই নওরীন? নওরীনের পিতা মরহুম বোরহান উদ্দিন আহমেদ (সিলেটের হোটেলে দেয়া ঠিকানায় নওরীন উল্লেখ করেছে রহমান আহমেদ) একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। মা হামিদা আহমেদ গৃহিনী।

তিন ভাই তিন বোনের মধ্যে নওরীন সবার ছোট। বড় দুই ভাই আমেরিকায় প্রবাসী, বড় এক বোন ঢাকার এক নামী হাসপাতালের ডাক্তার। গুলশান-২ এলাকায় এক অভিজাত ফ্যাট ভবনে এ পরিবার বাস করে। ওই ভবনের বাসিন্দারা নওরীনের উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপনে বিরক্ত ও অতিষ্ঠ হয়ে গুলশান সোসাইটির কাছে অভিযোগ করেছেন। এ তথ্য জানান ওই ভবনের পাঁচতলার বাসিন্দা রাজু আহমেদ।

নওরীন আহমেদ নিজেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রেখেছেন রিয়াজ চৌধুরীর জিডি দায়েরের পর থেকেই। তার মা হামিদা আহমেদ মেয়ের ব্যাপারে কিছু বলতে রাজি নন। বড় বোন ডাক্তার নিজের নাম না প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নওরীনের সঙ্গে আমাদের ভাইবোন কারও কোন সম্পর্ক নেই। তবে তার কারণে এখনও ভুগতে হচ্ছে আমাদের। আমরা বাবাকে হারিয়েছি তার জন্যই।

তার কথা চিন্তা করতে করতে বাবা মারা গেলেন স্ট্রোক করে। তিনি জানান, মগবাজারে থাকাকালে নওরীনের চলন বলন পালটে যায়। লালমাটিয়া মহিলা কলেজে পড়ার সময় সে উচ্ছৃঙ্খল হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে তাকে বাসায় আটকে রাখা হয়েছিল সাত দিন। পরে পড়াশোনা অব্যাহত রাখার স্বার্থে আবার কলেজে যেতে দেয়া হয়।

ডিগ্রি পাস করার পর ধানমন্ডির স্থায়ী বাসিন্দা এক অ্যাডভোকেটের সঙ্গে বিয়ে দেয়া হয়। সে বিয়ে টেকে মাত্র তিন মাস। তিনি বলেন, এ বিয়ে হয়েছিল আট বছর আগে। সুত্রঃ মানবজমিন।
 



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.