আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শুরু হলো ঈমামদের দৌড়াত্তের প্রতিযোগীতা

কর্মঠ লোক রাজা হবে কিন্তু অলস চিরকালই প্রজা থাকবে।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সাওম সন্মন্ধে কোরআনে উল্লেখ করেছেন, "পুর্ববর্তীদের মতই তোমাদের উপর সাওম ফরয করা হয়েছে ,যাতে করে তোমরা তাকওয়া অর্জনে সক্ষম হয়। (বাকারা-১৮৩)" বছর ঘুরে আবার এলো রমজান আবারো সাথে নিয়ে এলো রহমত বরকত আর মাগফেরাতের এক অফুরন্ত ভান্ডার। এ মাস আল্লাহর পক্ষ থেকে হাজার মাসের এক অফুরন্ত নেয়ামত। আল্লাহর অনুগত বান্দাদের ঈমানকে আরো মজবুত আরো দৃঢ় আরো আত্ম সংযোমী হয়ে সেই বিশ্বাসের আলোকে জীবন পরিচালনার এক উত্তম প্রশিক্ষন নিয়ে প্রতিবছরই মুসলমানদের দার প্রান্তে এসে দাঁড়ায় এই রমজান।

আর আমরাও সেই রমজানকে বরন করার জন্য চেষ্টার ত্রুটি রাখিনা। কিন্তু আমাদের এই চেষ্টা কতটুকু মূল উদ্দেশ্যকে ঘিরে হয় তা হয়তো আমরা ভাবার চেষ্টা করিনা। যার কারনে রমজানের মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবগত না হয়ে আমরা আমাদের ইফতার,সেহরী নিয়েই ব্যাস্ত হয়ে পড়ি। ইবাদত বন্দিগীর মাঝেও আমরা আমাদের নূনতম স্বার্থের গন্ডি থেকে আমরা বেরুতে পারিনা। 'তেমনি আমাদের পাড়ার একটি ঘটনা এখানে উল্লেখ না করলেই নয়,''রমজানে খতম তারাবী্র নামাজের জন্য একজন ঈমামের প্রয়োজন।

খোজা হচ্ছে; কোন হাফেজ কত দ্রুত তারাবী নামাজ পড়াতে পারেন। এবং যে হাফেজ সাহেব কম সময়ের মধ্যে খতম তারাবী পড়ে শেষ করতে পারবেন তাকেই ঈমাম নিয়োগের ঘোষনা দেওয়া হলো। আর রমজানে খতম তারাবী কোন হাফেজ সাহেব কত দ্রুত পড়াতে পারেন, সাধারণত তার উপর হাফেজ সাহেবদের সম্মান ও সম্মানী নিভর্র করে। এ ক্ষেত্রে রমজান শুরু হতেই শোনা যায় যে এপাড়ার মসজিদের হুজুর চল্লিশ মিনিটে খতম তারাবী পড়ান তো ওপাড়ার মসজিদে আধা ঘন্টায় খতম তারাবী পড়ানো হয়। ফলে রিক্সা ভাড়া দিয়ে হলেও সবাই দৌড়ায় এসব মহান মহান ব্যক্তিদের মসজিদে, যারা কোরআন তেলাওয়াতকে নামিয়ে এনেছেন পুরোহিতদের মন্ত্রপাঠের স্তরে।

তারা যা পড়েন তা তারা নিজেরাও বোঝেন কিনা সন্দেহ, তবে আমরা যারা সাধারন মুসলমান যে দুয়েকটি সূরা ছাড়া বাকি তেলাওয়তের বিন্দু বিসর্গও বুঝি না তা তারা বোঝেন না কিংবা বলা যায় তারা বোঝার চেষ্টাও করেন না। ফলে প্রথম দিন সূরা ফাতিহা আর সূরা বাকারার কয়েকটি আয়াত আমাদের সবারই কিছুটা জানা থাকায় কষ্ট হয় না, তবে দ্বিতীয় দিন থেকেই ঘুমকাতুরে নামাজীর দল ভারী হতে থাকে, অনেকে নামাজের ফাঁকে একটু ঝিমিয়ে নিয়ে প্রথম রাকাতের রুকুর তাকবীর দেয়ার পর নামাজে সামীল হন। দিনে দিনে এদের পাল্লা ভারী হয়, ভারী হয় খতম তারাবী নেকীর (!) পাল্লা। খতমে তারাবী পড়ানোর নামে দৌড়াত্তের যে প্রতিযোগীতা তাতে ছিটকে পড়ে মুসল্লির দল। তাই শেষ রোজার দিকে এক কাতার মুসল্লীও তাই পাওয়া যায় না মসজিদগুলোতে ,আর যারা থেকে যান তারাও প্রতি রাকাতে গুনতে থাকেন আর কত রাকাত বাকী তারাবীর।

তাহলে শুধু মাত্র ছওয়াবের নিয়তে এ ধরণের হাস্যকর নামাজের কি আদৌ প্রয়োজন আছে?একজন মুসলমান পরিচয়ে আমরা আমাদের হাস্যকর ভাবে যখন আল্লাহর নিকট উপস্থাপন করি তখন আমাদের বিভেকে কি এতটকুও নাড়া দেয়না। অথচ এই মাস হচ্ছে তাকওয়ার মাস আল্লাহ ভীতির মাস। প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কি সত্যিই আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহর ইবাদত করতে চাই কিনা? তাহলে যদি খতম তারাবী সত্যিই পড়ার আগ্রহ থাকে তবে সঠিক ভাবে ইমাম নিয়োগ করা উচিৎ যারা সহিহ সুদ্ধভাবে স্পষ্ট উচ্চারণে কোরআনকে হৃদয়ঙ্গমের সাথে আবৃত্তি করে মুসল্লীদের শোনাবেন, যাতে সত্যিকারের সওয়াবের ভাগীদার হতে পারেন তারা। নয়তো এই ধরনের খতম তারাবীর চেয়ে ধীরস্থির ভাবে ছোট ছোট সূরা দিয়ে সূরা তারাবী পড়াই আমাদের জন্য উত্তম হবে বলে আমি মনে করি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.