আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্পঃ লিমি

মুক্ত আকাশ দেখব বলে বয়ে চলা। আকাশ কেন মুক্ত হয় না।

একঃ লিরার সাথে কেমন করে জানি পরিচয় হয়ে গেল অমির। অমি একটু চুপচাপ থাকতে ভালবাসে। নিজের মত করে চলে।

নিজের আলাদা ভূবন। গল্পের বইয়ে বুদ হয়ে থাকে, লেখালেখিতে একটু আগ্রহ আছে, ছবিও আঁকে মাঝেসাজে, এটাকে অবশ্য ছবি আঁকা বলা চলে না পেন্সিল স্কেচও বলা যায়। তবে আজকাল ইন্টারনেট টাকে বেশী বেশী পাত্তা দিচ্ছে অমি। অবশ্য পাত্তা না দিয়ে করবেই বা কি! ইন্টারনেট আজকাল জীবনের অংশ। হলের ছোট্ট সিঙ্গেল রুমটাকে এত চমৎকার করে সাজিয়ে রেখেছে যে কেউ দেখলেই পছন্দ করবে।

কম্পিউটার টেবিলটার পাশে মানি প্লান্ট ঝুলছে। কিন্তু পড়ার টেবিলটা কিছুটা জঙ্গল মনে হয়। সুনীলের ‘সুখের দিন ছিল’ বইটা পড়ছিল আজ। বিকেল হয়ে আসছে। বাইরে বেরুতেও ইচ্ছে করছে না।

সব শালা বন্ধুরা আজকে বাসায় চলে গেছে। সামনে পরীক্ষাও নেই। কিছুদিন রেস্ট পাওয়া গেছে। নীলক্ষেত যাওয়া যায়। কিছু বই কিনা যেতে পারে।

কয়টা দিন ভাল কাটবে। আজকে টিউশনীও নেই। শেরে বাংলা হল থেকে বেরুল অমি। যখনি বাইরে যায় হল থেকে সোহরাওয়ার্দী গেট পর্যন্ত হেঁটে হেঁটে যেতে পছন্দ করে অমি। এতো সুন্দর চমৎকার পরিবেশ ঢাকা শহরে আর কোথাও নেই।

তাই প্রকৃতি দেখতে দেখতে যায়। এই শহরের মাঝে কি সুন্দর ধানের ক্ষেত, আমের বাগান, স্বপ্নের মত। গেট পার হয়ে রিক্সা নেয়। সিটি কলেজের কাছে পৌঁছে। রিক্সা আর এগুবে না মনে হয়।

এত যানজট ঢাকা শহরে! অমির ভাল লাগে না……কার না ভাল লাগে। অমি রিক্সা থেকে নেমে যায়। সাইন্স ল্যাব এর উল্টাদিকে সংবাদপত্র বিক্রয় কেন্দ্র দেখা যাচ্ছে। অমি দূর থেকে কনককে দেখতে পায়। কনক তার খুব কাছের বন্ধু নয় কিন্তু আড্ডা হয় মাঝে মাঝে।

একসাথে পড়াশুনা করে কিন্তু একটু বেশী ভাল ছাত্র। কনকের পাশে এই অপূর্ব সুন্দরী মেয়েটা কে? অমি একটু অবাক হয়। শালা কনককে তো কখনই কোন মেয়ের সাথে দেখা যায় না তার উপর আবার এতো সুন্দরী! অমি কাছে যায়। কিরে কই যাচ্ছিস? কনক জিজ্ঞেস করে। এইতো একটু নীলক্ষেত যাচ্ছি।

তুই কি করিস এখানে? ও আচ্ছা পরিচয় হ আমার বন্ধু লিরা। ও কলকাতা থেকে এসেছে। এই যে সাইন্স ল্যাব এ রিসার্স এর একটা কাজে। বায়োগ্যাস প্লান্টের উপর কাজ। ১ বছরের প্রজেক্ট।

আর লিরা ও হচ্ছে আমার বন্ধু অমি। আমরা একসাথে পড়াশুনা করি। হাই অমি কেমন আছ? লিরা বলে ভাল……আপনি? এই তুমি আমাকে আপনি করে বলছ কেন? তোমাদের বাংলাদেশের বন্ধুদের আপনি করে বলাটা আমার ভাল লাগে না। আসলে আমাদের দেশে কালচার হচ্ছে অচেনা কাউকে প্রথমে আপনি করে বলতে হয়। আপনাদের ওখানে সহজেই তুমিতে চলে যায়।

যাই হউক আপনি চাইলে আমি অবশ্যই তুমি করে বলব। বলবে মানে কি? এক্ষনি বল। আমরা তো এখন বন্ধু হয়ে গেলাম। কি বলিস কনক। কনক মাথা নাড়ে।

কিন্তু অমি অবাক বিষ্ময়ে চেয়ে থাকে। এতো সুন্দর মেয়ে হয়। যেমন লম্বা--অমির প্রায় কাছাকাছি, গায়ের রংটাও অসাধারন, ফিগার, কথা বলার ধরন যে কারও ভাল লেগে যাবে। কিন্তু কনককে অনেক খাট লাগছে লিরার পাশে। এই মেয়ের খবর আছে।

কত ছেলেযে ওর পিছু নিবে! যাই হউক আবার দেখা হবে বলে অমি বিদায় নেয়। কনক আবার কি মনে করে……হয়ত তারও লিরাকে পছন্দ। অমি নীলক্ষেত থেকে সঞ্জীবের লোটাকম্বল, সুনীলের ২টা ছোট বই আর হুমায়ুন আহমেদ এর জ্যোস্না ও জননীর গল্প কিনে নেয়। এই ক’দিনে কাজে দিবে। কিন্তু মাথা থেকে এতো সুন্দর লিরাকে সরাতে পারছে না।

মানুষ এতো সুন্দর হয় কেমন করে! অমি এম্নিতেই মেয়েদের এড়িয়ে চলে। আর সুন্দর হলে তো কথাই নেই। অনেক ভাব থাকে তাদের। এই ভাবটা দেখতে ভাল লাগে না অমির। কিন্তু লিরা অনেকটাই আলাদা।

ধুর মেয়েটা আর একটু ভাব নিলেই পারত। দুইঃ এর মাঝে অনেকদিন কেটে গেছে। লিরার কথা আর মনে নেই তেমন অমির। ক্লাস শুরু হয়েছে। কনককে ২/১ দিন দেখেছে।

কনককে দেখলে অবশ্য লিরার কথা মনে আসে। কিন্তু জিজ্ঞেস করতে পারে না। নূরকে অমি লিরার কথা বলেছিল। নূর অমির সবচেয়ে ভাল বন্ধু তার বিশ্ববিদ্যালয়ে। নূর অবশ্য পাত্তা দেয়নি ব্যাপারটা।

রা্তের বেলা নূর রুমে আসে। এই শালা কি করিস? নূর আয়। তোর জন্যেই অপেক্ষা করছিলাম। শালা এতোক্ষন দেরী করলি কেন। চল বাইরে থেকে একটু হেঁটে আসি।

না দোস্ত আমার অনেক প্রাকটিক্যাল লেখা বাকি। আজকে রাতের মধ্যে শেষ করতে হবে। শালা আতলামী করবিনাতো। তোরে এইরকম আতলামীতে মানায় না। চল যাই।

আচ্ছা ঠিক আছে চল। তুই যখন বলছিস। হাহাহা তা ভাবটা নিচ্ছিলি কি জন্যে। চল তাইলে আর দেরী না। চা খেতে হবে।

ওরা সেলিমের দোকানের সামনে বসেছে। অনেক ছাত্র। ক্যাম্পাসটা কেমন জমজমাট এখন। ক্লাস ছুটি হলে কেমন জানি লাগে। ওহহ অমি শোন কালকে ‘ফেসবুক শেকৃবি’ গ্রুপের একটা গেট টুগেদার আছে টাওযারের ওখানে।

যাবি নাকি? গ্রুপের অফিসার ক’জন থাকবে আর আমরা যারা আছি। চল যাই। তা যাওয়া যায়। আমারতো তেমন কাজ নেই এখন। আমাদের ক্যাম্পাসের হয়েও অনেককেই ফেসবুকের কল্যানে চিনি, দেখা হয়নি কখনও।

মজাই হবে চল। আর অফিসারদের একটু বাঁশ দেওয়া যাবে। ঠিকঠাক কাজ করছে না তারা। ওরা যার যার রুমে ফিরে আসে। অমি কম্পিউটারটা অন করে ফেসবুকে ঢুকে।

৪টা মেসেজ এসেছে। ইনবক্স ওপেন করে অমি। শেকৃবি গ্রুপ থেকে ২টা, লিমন ১টা আর লিরা ঘাঁসফুল ১টা। অমি খুব অবাক হয়। এটা কি তবে সেই লিরা? আমাকে কেন মেসেজ করবে? অমি ওপেন করে।

‘যদি ভুল করে না থাকি তাহলে আমি তোমাকে চিনি। তোমার সাথে আমার একদিন কথা হয়েছিল সাইন্স ল্যাব এর পাশে। তুমি কি সেই অমি? আমি কি তোমার বন্ধু হতে পারি এখানে?’ লিরা কলকাতা থেকে। অমি খুব অবাক হয়। এই এতো সুন্দর মেয়েটা আমাকে মনে রেখেছে আবার আমার বন্ধু হতে চাইছে! ওরতো বন্ধুর অভাব হবার কথা নয়।

অমি উত্তর দেয়। লিরা তুমি ঠিক চিনতে পেরেছ। কিন্তু তুমি আমাকে এভাবে মনে রেখেছ! অসংখ্য ধন্যবাদ। বন্ধু কেন হতে পারবে না? সত্যি বলতে কি আমি তোমার মতো সুন্দর একটা মেয়ের বন্ধুত্ব প্রত্যাশা করিনা। তুমি কি ঢাকা ছেড়ে গেছ? আর কখনও আসবে না? অমি পরের মেসেজে জানা গেল লিরা ১৫ দিনের ছুটিতে কলকাতা গেছে।

আবার ফিরে আসবে। এই কিছুদিন ঘুরে ফিরে বেড়াবে, পরিবারের সাথে সময় কাটাবে। লিরার সাথে অমির ভাল বন্ধুত্ব হয়ে যায় এই ক’দিনেই। লিরা সুন্দর সুন্দর ছবি পাঠায় ইমেইলে, আবার ফেসবুকে দেয়, অমিকে দেখতে বলে। অমি দেখে।

একটু একটু করে ভাল লাগে বিষয়গুলো। সময়টা ভালভাবে কেটে যায়। বই পড়া কমছে, নেটে সময় কাটানো বাড়ছে অমির। ( চলবে...স্বত্ব লেখকের)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।