আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইবরাহীম আ. কর্তৃক স্বীয় প্রিয় পুত্রকে কুরবানী বিষয়ক মাওলানা আব্দুল মালেক সাহেবের সংক্ষিপ্ত কিন্তু তথ্যবহুল প্রবন্ধ



بسم الله الرحمن الرحيم ইবরাহীম আ. ইসমাঈল আ. কে কুরবানী করতে আদিষ্ট হয়েছিলেন, ইসহাক আ. কে নয় ইবরাহীম আ. আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে জ্যেষ্ঠ পুত্র ইসমাঈলকে কুরবানী করার আদিষ্ট হয়েছিলেন, ইসহাককে নয়। ছোট পুত্র ইসহাককে কুরবানী করার আদেশ করা হয়েছিল-এ কথা ভুল। এই বাস্তব সত্যকে কয়েকভাবে উপস্থাপন করা যেতে পারে। ১। কুরআন মজীদের আলোকে ২।

বাইবেলের স্পষ্ট বর্ণনার আলোকে ৩। তারীখ-ইতিহাসের আলোকে ৪। অভিজ্ঞদের গবেষণার আলোকে। ১। কুরআন মজীদের আলোকে কুরআন মজীদের ৩৭ তম সূরা ‘আসসাফফাত’ এ যবাহ (কুরবানী)-এর ঘটনা উল্লেখ রয়েছে।

পরিপূর্ণ বিশ্লেষণসহ পূর্বাপর তা লক্ষ্য করা জরুরি। ইরশাদ হয়েছে- قالوا ابنوا له بنيانا فألقوه في الجحيم فأرادوا به كيدا فجعلنهم الاسفلين. وقال انى ذاهب الى ربى سيهدين. رب هب لى من الصلحين. فبشرنه بغلم حليم. فلما بلغ معه السعى قال يبنى انى ارى فى المنام انى اذبحك فانظر ماذا ترى قال يابت افعل ما تؤمر ستجدنى ان شاء الله من الصبرين. فلما اسلما وتله للجبين. ونادينه ان يابرهيم. قد صدقت الرءيا انا كذلك نجزى المحسنين. ان هذا لهو البلؤا المبين. وفدينه بذبح عظيم. وتركنا عليه فى الخرين. سلم على ابرهيم. كذلك نجزى المحسنين. انه من عبادنا المؤمنين. وبشرنه باسحق نبيا من الصلحين. وبركنا عليه وعلى اسحق ومن ذريتهما محسن وظالم لنفسه مبين. তারা পরস্পর বলল, ইবরাহীমের জন্য একটি অগ্নিকুণ্ড প্রস্তুত কর এবং তাঁকে সে জ্বলন্ত অগ্নিতে নিক্ষেপ কর। মোটকথা তারা ইবরাহীমের অনিষ্ট করার ইচ্ছা করল। সুতরাং আমি তাদেরকে অধঃপতিত করে দিলাম। এবং ইবরাহীম বললেন, আমি তো আমার রব্বের দিকে ফিরে যাচ্ছি, তিনি আমাকে (উত্তম স্থানে) পৌঁছে দিবেনই।

(দুআ করলেন,) হে আমার রব্ব! আমাকে একটি সুসন্তান দান করুন। অতঃপর আমি তাঁকে ধৈর্য্যশীল প্রকৃতির একটি পুত্রসন্তানের সুসংবাদ দিলাম। অনন্তর যখন পুত্রটি তাঁর সাথে চলাফেরা করার মতো বয়সে উপনীত হল, তখন তিনি বললেন, বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, তোমাকে যবেহ করছি। অতএব তুমিও চিন্তা কর, তোমার কী মত? তিনি বললেন, আব্বাজান! আপনি যে বিষয়ে আদিষ্ট হয়েছেন, পূর্ণ করুন, ইনশাআল্লাহ আমাকে ধৈর্য্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন। ফলকথা, যখন তাঁরা আত্মসমর্পণ করলেন এবং পিতা পুত্রকে কাত করে শায়িত করলেন এবং আমি তাঁকে ডেকে বললাম, হে ইবরাহীম! নিশ্চয়ই আপনি স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখিয়েছেন।

আমি বিশিষ্ট বান্দাদেরকে এরূপই পুরস্কার প্রদান করে থাকি। প্রকৃতপক্ষেও তা ছিল একটি বড় পরীক্ষা। আর আমি তার পরিবর্তে একটি শ্রেষ্ঠ যবেহের পশু দান করলাম। এবং আমি তাঁর জন্য পশ্চাতে আগমনকারীদের মধ্যে এই বাক্য থাকিতে দিলাম যে, ইবরাহীমের প্রতি সালাম হোক। আমি বিশিষ্ট বান্দাদেরকে এরূপই পুরস্কার প্রদান করে থাকি।

নিঃসন্দেহে তিনি আমার ঈমানদার বান্দাগণের অন্যতম ছিলেন। আর আমি তাঁকে ইসহাক সম্বন্ধে সুসংবাদ প্রদান করলাম যে, তিনি নবী, (এবং) সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হবেন। আর আমি ইবরাহীম ও ইসহাকের প্রতি বরকতসমূহ নাযিল করেছি। এবং তাঁদের উভয়ের বংশে অনেক নেক লোকও রয়েছে এবং অনেকে এমনও রয়েছে, যারা প্রকাশ্যে নিজেদের ক্ষতি সাধন করছে। -সূরা সাফফাত : ৯৭-১১৩ উপরোক্ত আয়াতসমূহ ও সামনে উল্লেখিত এ সম্পর্কিত অন্যান্য আয়াতসমূহ সামনে রেখে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো লক্ষ্য করা দরকার।

১। সূরা সাফফাত-এর উপরোক্ত আয়াতসমূহে ইবরাহীম আ.-এর দু’জন সন্তানের সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে। প্রথম সন্তানের নাম উল্লেখ করা হয়নি; বরং غلام حليم (ধৈর্য্যশীল প্রকৃতির একটি পুত্রসন্তান) উল্লেখ করে তার কুরবানীর ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। এরপর দ্বিতীয় পুত্রসন্তানের সুসংবাদ নামসহ উল্লেখ করা হয়েছে-فبشرنه بإسحق । এ কথা সর্বজনস্বীকৃত যে, ইবরাহীম আ.-এর মাত্র দুজন পুত্রসন্তান ছিলেন : ইসমাঈল ও ইসহাক।

সুতরাং একজন অর্থাৎ ইসহাক আ.-এর উল্লেখ নামসহ হলে অপরজন, যাকে غلام حليم (ধৈর্য্যশীল প্রকৃতির একটি পুত্রসন্তান) আখ্যা দিয়ে তার কুরবানীর ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে সে ইসমাঈল আ. ছাড়া আর কে হবেন? ইসহাক আ.-এর আলোচনা তো কুরবানীর ঘটনার পরে উল্লেখ করা হয়েছে এবং তাঁর সুসংবাদ তো নিজের ‘একমাত্র পুত্র’ ইসমাঈলকে কুরবানী করার আদেশ পালনে সফলতার পুরস্কার হিসাবে প্রদান করা হয়েছে। আয়াতের বর্ণনাভঙ্গি থেকেই তা সুস্পষ্ট। ২। কুরবানীর ঘটনা যে পুত্রের সঙ্গে সংঘটিত হয়েছে তাকে কুরআন মজীদে (সূরা সাফফাত (৩৭) : ১০৭) غلام حليم (ধৈর্য্যশীল প্রকৃতির একটি পুত্রসন্তান) আখ্যা দেওয়া হয়েছে। অথচ ইসহাক আ.কে তো غلام عليم (বড় বিদ্বান সন্তান) আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

দেখুন : সূরা হিজর (১৫) : ৫৩; সূরা যারিয়াত (৫১) : ২৮ বোঝা গেল, غلام حليم দ্বারা ইসমাইল আ. উদ্দেশ্য। যিনি নিঃসঙ্কোচে নিজের জীবন উৎসর্গ করাকে বরণ করে নিলেন। এরচেয়ে বড় حلم (সহনশীলতা) আর কী হতে পারে? কুরআন মজীদে ইসমাঈল আ.কে من الصابرين (ধৈর্য্যশীল) বলেও আখ্যা দেওয়া হয়েছে। (দেখুন : সূরা আম্বিয়া (২১) : ৮৫) এ গুণটিই উপরোক্ত আয়াতসমূহে কুরবানীর ঘটনায় (সূরা সাফফাত (৩৭) : ১০২) উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ কুরআন মজীদের কোথাও ইসহাক আ.-এর জন্য এ গুণের উল্লেখ নেই।

৩। যে পুত্রের সঙ্গে কুরবানীর ঘটনা সংঘটিত হয়েছে তার সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা ইবরাহীম আ.-এর দুআর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর সুসংবাদ প্রদান করেছেন। ইরশাদ হয়েছে- رب هب لى من الصلحين. فبشرنه بغلم حليم. (তরজমা) হে আমার রব্ব! আমাকে একটি সুসন্তান দান করুন। অতঃপর আমি তাঁকে ধৈর্য্যশীল প্রকৃতির একটি পুত্রসন্তানের সুসংবাদ দিলাম। -সূরা সাফফাত (৩৭) : ১০০-১০১ আর ইসহাক আ. (غلام عليم)-এর জন্মের সুসংবাদ ইবরাহীম আ.-এর দুআ ছাড়াই বৃদ্ধ বয়সে ফেরেশতাদের মুখে প্রদান করা হয়েছে।

যার কারণে তিনি অনেকটা অবাকও হয়েছেন যে, আমি তো বৃদ্ধ। তাছাড়া আমার স্ত্রীও বৃদ্ধা ও বন্ধ্যা তাহলে সন্তান কীভাবে হবে? বিবি (সারা রা.)ও বিস্মিত হয়েছেন এবং এই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন। কুরআন মজীদে (সূরা হুদ (১১) : ৬৯-৭৫; সূরা হিজর (১৫) : ৫১-৫৬; সূরা যারিয়াত (৫১) : ২৪-৩০) এ ঘটনা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ রয়েছে। লক্ষ্যণীয় বিষয় এই যে, দুআ ব্যতীত যে غلام (পুত্রসন্তান)-এর সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে তার নাম ইসহাক। সূরা হুদ (১১:৭১) এ তা স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে।

আর সূরা সাফফাত (৩৭: ১০০-১০১) এ কথা সুস্পষ্ট যে, কুরবানীর ঘটনা যে পুত্রের সঙ্গে সংঘটিত হয়েছে তার সুসংবাদ ইবরাহীম আ.-এর দুআর পরিপ্রেক্ষিতে প্রদান করা হয়েছে। সুতরাং তা ইসহাকের নয়, ইসমাঈলের ঘটনা। আল-কুরআন মজীদে স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, কুরবানীর আদেশ শুধু পরীক্ষামূলক ছিল। আর পরীক্ষার স্বার্থ তখনই অর্জিত হতে পারে যদি তা ইসমাঈলকে কুরবানী করার আদেশ হত। কেননা, ইসহাক আ.-এর সুসংবাদ প্রদানের সময় আরো দুটি বিষয়ের সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছিল।

প্রথমত তার ভবিষ্যত প্রজন্ম থেকে ইয়াকুব জন্মলাভ করবেন। দ্বিতীয়ত তিনি (অর্থাৎ ইসহাক আ.) নবী মনোনীত হবেন। প্রথম বিষয়ের আলোচনা সূরা হুদ ((১১) :৭১) এবং দ্বিতীয় বিষয়টি সূরা সাফফাত ((৩৭):১১২) উল্লেখ রয়েছে। যেহেতু তাঁর সম্পর্কে পূর্ব থেকেই এ দুটি বিষয়ের সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে তাই তিনি পরীক্ষার বস্তু হতে পারেন না। কেননা, পূর্ববর্তী সুসংবাদের কারণে পরীক্ষিত ব্যক্তি (ইবরাহীম আ.) অবগত আছেন যে, এই সন্তান বড় হবে।

এমনকি তাঁর বংশে ইয়াকুব জন্মলাভ করবেন এবং তিনি নবী মনোনীত হবেন। আর আল্লাহ তাআলা এসব স্পষ্ট দুটি সুসংবাদ প্রদানের পর এর পরিপন্থী কোনো নির্দেশ কখনো দিবেন না। এই পরীক্ষা ইসমাঈল আ.-এর জন্যই প্রযোজ্য, যার জন্মের সুসংবাদের সাথে এমন কোনো সুসংবাদ যোগ করা হয়নি যা পরীক্ষার প্রতিবন্ধক হতে পারে। মোটকথা, কুরআন মজীদের উল্লেখিত আয়াতসমূহ এবং বর্ণনাভঙ্গী দ্বারা এই বিষয়টি অকাট্যভাবে প্রতীয়মান হয় যে, কুরবানীর ঘটনা ইসহাক আ.-এর নয়; বরং ইবরাহীম আ.-এর অপর পুত্র ইসমাঈল আ.-এর। এ সম্পর্কিত আরো ইঙ্গিত (যা অনেক সময় স্পষ্ট বর্ণনা থেকেও অধিক তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে থাকে) কুরআন মজীদে বিদ্যমান রয়েছে, এখানে কেবল চারটি বিষয় উপস্থাপন করা হল।

একটু লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে যে, এত সব আলোচনার পর যাবীহুল্লাহ (যার সঙ্গে কুরবানীর ঘটনা সংঘটিত হয়েছে) কে নাম উল্লেখ করে (ইসমাঈল) নির্দিষ্টকরণের কোনো প্রয়োজন ছিল না। তাছাড়া এই বর্ণনাভঙ্গিটিও নাম উল্লেখের তুলনায় কম স্পষ্ট নয়। এ বিষয়ে আরো জানতে সূরা সাফফাতের সংশ্লিষ্ট আয়াতসমূহের তাফসীর তাফসীরে ইবনে কাসীর খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ১৬-২১; তাফসীরে উসমানী পৃষ্ঠা : ৫৮৩-৫৮৪; তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন খণ্ড : ৭, পৃষ্ঠা : ৪৬২-৪৬৬;, তাফহীমুল কুরআন খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ২৯৭-৩০১ দেখা যেতে পারে। * বাংলা ভাষায় কুরআন মজীদের সর্বপ্রথম অনুবাদক হিসাবে খ্যাত জনাব গিরিশ চন্দ্র সূরা সাফফাতের সংশ্লিষ্ট আয়াতের অর্থ করেছেন- হে আমার প্রতিপালক, তুমি আমাকে সাধুদিগের (একজন) দান কর। অবশেষে আমি তাহাকে প্রশান্ত বালকের (এস্‌মায়িল নামক পুত্রের) সুসংবাদ দান করিলাম।

- কোরআন শরীফ (হরফ প্রকাশনী, কলকাতা-৭ থেকে মুদ্রিত), পৃষ্ঠা : ৫১৩, সূরা সাফফাত : ৯৯-১০০ হায়, যদি আমাদের দেব নারায়ণ মহেশ্বর বাবুও এই সহজ-সত্য বিষয়টি অনুধাবন করতেন!!! ২। বাইবেলের বর্ণনার আলোকে যেহেতু কট্টরপন্থী ইহুদী ও খৃষ্টান সমপ্রদায়ই কুরআনের এই বাস্তবতাকে অস্বীকার করে এবং কুরবানীর ঘটনাটি ইসহাক আ.-এর সঙ্গেই সংঘটিত হয়েছে বলে মনে করে। তাই বাইবেলের আলোকেও এই বিষয়ে আলোচনা করা সমীচীন মনে হল। বাইবেল পুরাতন নিয়মের প্রথম কিতাব ‘আদি পুস্তক’-এর ১৬, ১৭, ২১ ও ২২ নং অধ্যায়ে ইসমাঈল ও ইসহাক আ.-এর সুসংবাদ ও জন্মের আলোচনা এবং কুরবানীর ঘটনাও উল্লেখ রয়েছে। যেখানে নিচের বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে বিদ্যমান রয়েছে : ১।

অব্রাহামের ছিয়াশি বছর বয়সে ইশ্মায়েলের জন্ম হয়েছিল। -আদি পুস্তক ১৬: ১৬ ২। অব্রাহামের বয়স যখন একশো বছর তখন তাঁর ছেলে ইসহাকের জন্ম হয়েছিল। -আদি পুস্তক ২১:৫ বোঝা গেল যে, বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ীও ইসমাঈল জেষ্ঠপুত্র ছিলেন, যিনি ইসহাক থেকে ১৪ বছরের বড়। আর ১৪ বছর পর্যন্ত ইসমাঈলই ইবরাহীম আ.-এর একমাত্র পুত্র ছিলেন।

আদি পুস্তকের (Genesis : ) ২২তম অধ্যায়ে (২২:২) কুরবানীর যে আদেশ দেওয়া হয়েছে তাতে only son (একমাত্র পুত্র) কে কুরবানী করার কথা রয়েছে। (বাইবেলের বাংলা তরজমায় ‘অদ্বিতীয় পুত্র’ কথাটি ভুল। ) স্পষ্টত বড় পুত্র ইসমাঈলের বর্তমানে ইসহাক একমাত্র পুত্র হতে পারেন না। তবে ইসহাকের জন্মের ১৪ বছর পূর্ব পর্যন্ত ইসমাঈল একমাত্র পুত্র ছিলেন। সুতরাং বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ীও কুরবানীর ঘটনা ইসমাঈলের সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট।

এ বিষয়ে বাইবেলের তরজমাসমূহে ইসহাকের উল্লেখ স্পষ্ট ভ্রান্তি, যা বাইবেলের স্পষ্ট বর্ণনাসমূহেরও পরিপন্থী। অক্সফোর্ড থেকে প্রকাশিত Short Encyclopedia Of Islam -এর অনুসরণে ইসলামিক ফাউণ্ডেশন কর্তৃক সংকলিত ও প্রকাশিত ‘সংক্ষিপ্ত ইসলামী বিশ্বকোষ’-এর নিম্নোক্ত দুটি আলোচনা লক্ষ্য করা যেতে পারে : ‘‘ইসমাঈল (اسمعيل) (‘আ) একজন প্রসিদ্ধ নবী, বীবী হাজিরাঃ-এর গর্ভজাত হযরত ইবরাহীম (‘আ)-এর জ্যেষ্ঠপুত্র। ইসমা‘ঈল শব্দটির হিব্রু প্রতিশব্দ হইল ...। হযরত ইবরাহীম (‘আ)-এর ৮৬ বৎসর বয়সে তাঁহার জন্ম (Genesis, ১৬:১-১৬)। তিনি ছিলেন কুরাইশ ও উত্তর ‘আরবের ‘আদনান বংশীয় অধিবাসিগণের আদি পিতা।

তাঁহার জন্মের অল্প কিছুদিন পর পিতা ইবরাহীম (‘আ) আল্লাহর ইচ্ছায় তাঁহাকে ও তাঁহার মাতাকে বর্তমানে যেখানে কা‘বাঃ অবস্থিত সেখানে এক জনমানবহীন মরু প্রান্তরে রাখিয়া আসেন। ...। ইবরাহীম (‘আ) তাঁহার প্রচার ক্ষেত্র কানআান-এর দিকে চলিয়া গিয়াছিলেন। কিছুদিন পর তিনি আসিয়া দেখিলেন, ইসমাঈল (‘আ) কিছুটা বড় এবং পিতার সহিত চলাফেরা করিতে সক্ষম হইয়াছেন। তখন ইবরাহীম (‘আ) একদা স্বপ্নে তাঁহাকে কুরবানী করিতে আদিষ্ট হন।

জাগ্রত হইয়া তিনি পুত্রকে বলিলেন, ‘‘হে পুত্র আমি স্বপ্নে দেখিলাম, আমি তোমাকে কুরবানী করিতেছি, তুমি কি বল? তিনি বলিলেলন, হে পিতা, আপনি যাহা করিতে আদিষ্ট হইয়াছেন তাহাই করুন। আপনি, ইনশাআল্লাহ আমাকে ধৈর্য্যশীল দেখিতে পাইবেন (৩৭ঃ১০২)। ’’ পুত্রকে কুরবানী করিবার উদ্দেশ্যে ইবরাহীম (‘আ) এক প্রান্তরে (মিনা) উপস্থিত হইলেন। ইবরাহীম (‘আ) পুত্রের গলায় ছুরি চালাইবেন-এমন সময় আল্লাহর তরফ হইতে আওয়ায শুনিলেন, ‘‘হে ইবরাহীম! তুমি তোমার স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করিয়াছ। আমি এই প্রকারেই সৎকর্মশীল ব্যক্তিদিগকে পুরস্কৃত করি (৩৭:১০১-১০৫)।

’’ অতঃপর আল্লাহ ইবরাহীম (‘আ)কে পুত্রের পরিবর্তে এক পশু দান করিলেন কুরবানীর জন্য (৩৭: ১০৭)। তখন হইতে ইসমাঈল (‘আ) যাবীহুল্লাহ নামে খ্যাত হইলেন। মুসলিম বিশ্ব তখন হইতে একই দিবসে সেই মহান কুরবানীর অনুষ্ঠান করিয়া থাকে আত্মোৎসর্গের প্রতীকরূপে। কুরবানী সংক্রান্ত আয়াতে ইসমাঈল (‘আ)-এর নামটির উল্লেখ নাই। এই সুযোগে য়াহুদী ও খৃস্টান লেখকগণ তাহাদের নিকটতম পূর্বপুরুষ, সারার-এর গর্ভজাত ইবরাহীম (‘আ)-এর দ্বিতীয় পুত্র ইসহাক (‘আ) কে যাবীহুল্লাহ নামে আখ্যায়িত করেন।

তাহাদের এই দাবী ভ্রান্ত। কারণ বাইবেলোক্ত Thine only son Genesis ২২:২) ইবরাহীম (‘আ)-এর একমাত্র পুত্র নহেন। তাঁহার পূর্বে ইসমাঈলের জন্ম হইয়াছিল। Genesis, ১৬:১৬ অনুযায়ী ইবরাহীম (‘আ)-এর ৮৬ বৎসর বয়সে ইসমাঈলের জন্ম এবং Genesis ২১:৫ অনুযায়ী ১০০ বৎসর বয়সে ইসহাকের জন্ম। সুতরাং ইসহাক তাঁহার প্রথম পুত্রও নহেন।

যদি হইতেন তাহা হাইলে দ্বিতীয় পুত্রের জন্মের পূর্বক্ষণ পর্যন্ত তাঁহাকে একমাত্র পুত্র বলা হইত। কুরআনের কথায় ইসহাকের জন্মের সুসংবাদ আসিয়াছিল প্রথম পুত্র ইসমাঈলের জন্ম এবং কুরবানী অনুষ্ঠানের পর ৩৭:১১২)। খলীফা উমার ইবন ‘আবদিল-‘আযীয একদা জনৈক ইসলামে দীক্ষিত য়াহুদীকে এই সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করিলে তিনি বলেন, য়াহুদীরা জানে, ইসমাঈলই প্রকৃত যাবীহ। তবে তাহারা আপনাদের প্রতি ঈর্ষবশত ইহা স্বীকার করে না। ’’-সংক্ষিপ্ত ইসলামী বিশ্বকোষ, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ১৮৫-১৮৬ ‘‘ইসহাক (اسحاق) (‘আ) ইনি বাইবেলোক্ত Issac ।

তাল্‌মুদ (Rosh hash-shana পৃষ্ঠা ১১) অনুসারে তাঁহার জন্ম হইয়াছিল Foaest of passah -এর সময়। মুসিলম কিংবদন্তী অনুসারে তাঁহার জন্ম ‘আাশূরা-র রাত্রিতে (আছ-ছা‘লাবী, পৃ. ৬০; আল-কিসাঈ, পৃ. ১৫০)। ইবরাহীম (‘আ)-এর নিয়ম এই ছিল যে, কোনো দরিদ্র অর্থাৎ পথিক মেহমানরূপে উপস্থিত হইলে তবে তিনি তাহার সহিত আহার করিতেন। একদা কতিপয় ফিরিশতা মানুষের রূপ ধারণ করিয়া তাঁহার মেহমান হইলেন। তাঁহাদেও আপ্যায়নের জন্য তিনি একটি ভর্জিত গো-বৎস তাঁহাদের সামনে উপস্থিত করিলেন।

তাঁহারা আহার্য গ্রহণ করিতেছেন না দেখিয়া তিনি বিস্মিত এবং কিঞ্চিৎ ভীত হইলেন। মেহমানগণ তাঁহাকে জানাইলেন, তাহারা ফিরিশতা। লূত (‘আ)-এর অবাধ্য উম্মাঃকে শাস্তি দানের জন্য তাঁহারা প্রেরিত হইয়াছেন। অতঃপর ফিরিশতাগণ তাঁহাকে তাঁহার স্ত্রী সারা-র গর্ভজাত একটি পুত্রসন্তান লাভের সুসংবাদ প্রদান করেন। সারাঃ এই সুসংবাদ শ্রবণে অতিশয় আশ্চার্যন্বিতা হইলেন, (১১ঃ৬৯-৭৩), কারণ তাঁহার বয়স ছিল নব্বই এবং তাঁহার স্বামীর বয়স একশত বৎসর (Genesis, ১৭:১৮)।

ইহার পর ইসহাক (‘আ) জন্মগ্রহণ করেন। বাইবেলে উক্ত হইয়াছে, ইবরাহীম (‘আ) আল্লাহর আদেশে ইসহাককে কুরবানী করিতে উদ্যত হইয়াছিলেন (Genesis, ২২:২)। কিন্তু ইহা ভ্রামাত্মক, কারণ উক্ত শ্লোকে Issac -কে Thine only son বলা হইয়াছে। অথচ ইসহাক-এর জন্মের পূর্বে ইসমাঈল ছিলেন only son । অন্যপক্ষে Issac যে ইবরাহীমের ২য় পুত্র-বাইবেলের বর্ণনায় ইহাও সুস্পষ্ট।

ইসমাঈলের বংশধরগণই সেই কুরবানীর আদর্শ আজ পর্যন্ত বজায় রাখিয়াছে, ইসহাক ও তৎপুত্র য়া’কুবের বংশধর ইহাতে শরীক নহে। ইসহাক (‘আ) ফিলিস্তীনের হেবরন নামক স্থানে তাঁহার পৈতৃক আবাসস্থলেই বাস করিতেন (মাওদূদী, তাফহীমুল-কুরআন ২ঃ৩৮১)। এখানে তিনি তাঁহার পিতার স'লাভিষিক্তরূপে বসবাস করিতে থাকেন। তিনি যথাসময়ে নুবূওয়াত প্রাপ্ত হন। ইহার পুত্র য়া’কুব (আ), বাইবেলের Jacob ইসরাঈলীদের আদি পিতা।

’’-সংক্ষিপ্ত ইসলামী বিশ্বকোষ, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ২০০-২০১) * তাছাড়া বাইবেলের সবচেয়ে বিশুদ্ধতম বর্ণনা, যা ‘ইঞ্জিলে বারনাবাস’ নামে প্রসিদ্ধ, তাতে ৪৩ ও ৪৪ নং অধ্যায়ে ঈসা আ.-এর স্পষ্ট বাণী উল্লেখ রয়েছে যে, কুরবানীর ঘটনা ইসমাঈল আ.-এর, ইসহাক আ.-এর নয়। এটা ভিন্ন প্রসঙ্গ যে, খৃস্টানগণ এই ইঞ্জিলটিকে গ্রহণযোগ্য মনে করেন না। আর তা মূলত এর এসব বিশুদ্ধ ও স্পষ্ট তথ্যসমূহের কারণেই। -ইঞ্জিলে বারনাবাস পৃষ্ঠা : ১৭৭-১৮১ * এ প্রসঙ্গে ড. হামীদুল্লাহ রাহ.-এর একটি ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে। ১৯৯৪ খৃষ্টাব্দের কথা।

ড. সাহেব যখন এ বিষয়ের উপর ইহুদীদের কিতাবসমূহ এবং ইতিহাসের তথ্যসমূহ থেকে প্রমাণ করে দিলেন যে, কুরবানীর ঘটনা ইসমাঈল আ.-এরই তখন ইহুদী পণ্ডিতগণ তাকে নির্জনে বলেছিল, আপনার এই গবেষণা মেনে নিলে তো আমাদের পুরো মাযহাবই বাতেল হয়ে যাবে। ড. সাহেব বলেছিলেন, সঠিক বিষয় পেশ করা আমার কাজ। দলীলের আলোকে আমি তা করেছি। এখন মানা না মানা আপনাদের কাজ। -ড. মুহাম্মাদ হাদীদুল্লাহ কী বেহতরীন তাহরীরেঁ, সংকলক সাইয়্যেদ কাসেম মাহমুদ, ভূমিকা, পৃষ্ঠা : ২৯-৩০, সাপ্তাহিক তাকবীর-এর উদ্ধৃতিতে ৩।

তারীখ-ইতিহাসের আলোকে * ইতিহাসের সুদৃঢ় পরম্পরা দ্বারা প্রমাণিত যে, কুরবানীর এই ঘটনা মক্কার হারাম এলাকায় সংঘটিত হয়েছে। কুরবানীর আদেশ পালনের সময় শয়তান যে তিনটি স্থানে কুমন্ত্রণা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল এবং ইবরাহীম আ. প্রত্যেকবার তাকে ৭টি করে কঙ্কর নিক্ষেপ করেছিলেন মূলত তারই স্মৃতিচারণে মিনার জামরাসমূহে কঙ্কর নিক্ষেপের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর তখন থেকেই হজ্বের বিধানসমূহে কুরবানী অন্তর্ভুক্ত হয়। হজ্ব ছাড়াও যিলহজ্ব মাসে কুরবানী প্রথা আরবে (যারা ইসমাঈল-এর বংশধর) পালিত হয়ে আসছে। বলাবাহুল্য যে, মক্কার হারাম এলাকা ইসমাঈল আ.-এর বাসস্থান ছিল, ইসহাক আ.-এর নয়।

কেননা, তিনি শাম এলাকায় বসবাস করতেন। সুতরাং হারাম এলাকায় কুরবানীর ঘটনা সংঘটিত হওয়া এবং আজ পর্যন্ত তার প্রচলন অব্যাহত থাকা এ কথার প্রমাণ যে, এই ঘটনাটি ইসমাঈলের, ইসহাকের নয়। কুরবানীর আদর্শ ইসমাঈল-বংশীয়দের মাঝে পালিত হয়, ইসহাক-বংশীয়দের মাঝে নয়। -ইবনে তাইমিয়া (৭২৮ হি.) : মাজমুউ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ৩৩৫-৩৩৬; ইবনুল কাইয়্যিম (৭৫১ হি.) : যাদুল মাআদ ফী হাদয়ি খাইরিল ইবাদ খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৭৩; ইগাছাতুল লাহফান মিন মাসাইদিশ শায়তান খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ৩৮৫; শাব্বীর আহমদ উসমানী (১৩৬৯ হি.) : তাফসীরে উসমানী, সূরা সাফফাত; সাইয়্যিদ সুলাইমান নদভী (১৩৭৩ হি.) : সীরাতুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খণ্ড : ১, পৃৃষ্ঠা : ৭৮-৮৬ * বিশুদ্ধ বর্ণনাসমূহ দ্বারা এ কথাও সুপ্রমাণিত যে, হযরত ইসমাঈল আ.-এর পরিবর্তে যে দুম্বাটি যবাই করা হয়েছিল তার শিং হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা.-এর সময় পর্যন্ত কাবা শরীফে সুরক্ষিত ছিল। (আলআরযকীকৃত আখবারে মক্কায় এ বিষয়ে অনেক বর্ণনা বিদ্যমান রয়েছে।

) মক্কা বিজয়ের সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা ঢেকে রাখার নির্দেশ দেন। যেন কোনো নামাযীর মনোযোগে বিঘ্ন না ঘটে। -সুনানে আবু দাউদ খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ২৮৯-২৯০, কিতাবুল মানাসিক; মুসনাদে আহমদ খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ৬৮ ও খণ্ড : ৫, পৃষ্ঠা : ৩৮০ এর দ্বারাও প্রতীয়মান হয় যে, কুরবানীর ঘটনা শাম দেশে নয়; বরং মক্কায় সংঘটিত হয়েছে। আর ইসহাক আ. নয়; বরং ইসমাঈল আ.-এর সাথেই সংঘটিত হয়েছে। এজন্য ইবরাহীম ও ইসমাঈল কর্তৃক নির্মিত বাইতুল্লাহ শরীফে তার স্মৃতিচিহ্ন (ইসমাঈলের পরিবর্তে প্রদত্ত দুম্বার শিং) সংরক্ষণ করা হয়েছিল।

-ইবনে কাসীর (৭৭৪ হি.) : তাফসীরুল কুরআনিল আযীম খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ১৮, সূরা সাফফাত ৪। সকল যুগের গবেষকদের বিশ্লেষণের আলোকে প্রত্যেক যুগের গবেষকদের বিশ্লেষণ একটি দীর্ঘ আলোচনার দাবি রাখে। এখানে শুধু নমুনাস্বরূপ কয়েকজন ব্যক্তি ও কিতাবের নাম উল্লেখ করা হল। ১। সাহাবিয়ে রাসূল আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, যার পরিবর্তে দুম্বা কুরবানী করা হয়েছে তিনি ইসমাঈল।

ইহুদীরা তাকে ইসহাক বলে থাকে। এটি তাদের মিথ্যাচার। -তাফসীরে ইবনে কাসীর খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ১৯ ২। তাবেয়ী মুহাম্মাদ ইবনে কা’ব আলকুরাযী (১২০ হি.) বলেন, আল্লাহ তাআলা ইবরাহীম আ.কে যে পুত্র কুরবানী করার আদেশ করেছেন তিনি হলেন ইসমাঈল। এ বিষয়টি আমরা কিতাবুল্লায় (কুরআন মজীদ) পেয়েছি।

কেননা, আল্লাহ তাআলা কুরবানীর ঘটনা উল্লেখ করার পর ইসহাক আ.-এর আলোচনা করেছেন এবং অন্য স্থানে ইরশাদ করেছেন- فبشرنها بإسحق ومن وراء إسحق يعقوب অর্থ : আমি ইবরাহীমকে ইসহাক ও ইসহাকের বংশে পৌত্র ইয়াকুবের সুসংবাদ প্রদান করেছি। এরপরও তাকে যবাই করার আদেশ কীভাবে দেওয়া যেতে পারে? নিঃসন্দেহে যবাই করার আদেশ ইসমাঈল সম্পর্কেই ছিল। -তাফসীরে ইবনে কাসীর খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ২০ ৩। মুহাম্মাদ ইবনে কা’ব আলকুরাযীর বর্ণনা যে, আমার উপস্থিতিতে উমর ইবনে আবদুল আযীযকে জিজ্ঞাসা করা হল যে, যবীহ হযরত ইসমাঈল ছিলেন নাকি হযরত ইসহাক? তখন মজলিসে এমন এক ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন যিনি পূর্বে ইহুদী পণ্ডিত ছিলেন পরবর্তীতে পরিপূর্ণ মুসলমান হয়েছেন। তিনি বললেন, আমীরুল মুমিনীন! আল্লাহর শপথ, তিনি ইসমাঈলই ছিলেন।

ইহুদিরা এই বিষয়টি জানে, কিন' আরবদের প্রতি ঈর্ষাবশত এই দাবি করে যে, যাবীহ হলেন হযরত ইসহাক। -ইবনে জারীর : তাফসীরুত তাবারী খণ্ড : ১০, পৃষ্ঠা : ৫১৪ ৪। আসমায়ী একবার আবু আমর আলআলা (১৫৪ হি.) কে জিজ্ঞাসা করলেন, যবীহ কে ছিলেন? তিনি উত্তরে বললেন, তোমার বুদ্ধি কোথায় হারিয়ে গেল! ইসহাক আ. কখনো মক্কায় ছিলেন? ইসমাঈল আ.ই তো পিতার সঙ্গে বাইতুল্লাহ নির্মাণ করেছেন। আর কুরবানীস্থ'ল তো মক্কায়?!-আবু হাইয়্যান উন্দুলুসী (৭৫৪ হি.) : আলবাহরুল মুহীত (সূরা সাফফাত) যেসব কিতাবে এ বিষয়ে প্রামাণিক গবেষণা উল্লেখ রয়েছে তা থেকে কয়েকটি কিতাবের নাম এখানে উল্লেখ করা হল : ১। مجموع فتاوى ابن تيمية (মাজমুউ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া) (৭২৮ হি.) খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ৩৩১-৩৩৬ ২।

منهاج السنة النبوية(মিনহাজু সুন্নাতিন নাবাবিয়্যাহ), ইবনে তাইমিয়া খণ্ড : ৫, পৃষ্ঠা ৩৫৩-৩৫৫ (পুরাতন মুদ্রণ : খণ্ড : ৩, পৃষ্ঠা : ৮৮-৮৯) ৩। زاد المعاد في هدي خير العباد(যাদুল মাআদ ফী হাদয়ি খাইরিল ইবাদ), ইবনুল কাইয়্যিম (৭৫১ হি.), খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৭১-৭৪ ৪। إغاثة اللهفان(ইগাসাতুল লাহফান), ইবনুল কাইয়্যিম খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ৩৮৫-৩৮৮ ৫। سيرة النبي(সীরাতুন্নবী), শিবলী নুমানী খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৭৮-৮৬ ৬। الإسرائيليات والموضوعات(আলইসরাঈলিয়াত ওয়ালমওযূআত ফী কুতুবিত তাফসীর, ড. মুহাম্মাদ ইবনে মুহাম্মাদ আবু শাহবা পৃষ্ঠা : ২৫২-২৬০ ৭।

رحمة للعالمين (রহমাতুল্লিল আলামীন), কাযী মুহাম্মাদ সুলাইমান মনসুরপুরী খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ৪৭-৫১ ৮। القول الصحيح في تعيين الذبيح(আলকওলুস সহীহ ফী তা’য়ীনিয যাবীহ), মুহাম্মাদ সায়ীদ আলআনী, যা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে লিখিত ৮৮ পৃষ্ঠার বৃহৎ পুস্তিকা। ৯। الرأي الصحيح في من هو الذبيح(আররা’য়ুস সহীহ ফী মান হুয়ায যাবীহ), হামীদুদ্দীন ফারাহীর প্রবন্ধ, যা তার কিতাব তাফসীরে নিযামুল কুরআনের ভূমিকায় উল্লেখ রয়েছে। যার উর্দু তরজমা ‘কুরবানী আওর উসকি হাকীকত’ নামে মাকতাবা তামীরে ইনসানিয়াত, লাহোর থেকে প্রকাশিত হয়েছে।

১০। قصص الأنبياء(কাসাসুল আম্বিয়া), আবদুল ওয়াহহাব নাজ্জার ১১। قصص القرآن(কাসাসুল কুরআন), হিফযুর রহমান, সীহারাভী খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ১৬৫-১৬৭ ১২। উর্দু দায়েরায়ে মাআরিফে ইসলামিয়া লাহোর, পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটি খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ৭২৮-৭৩৪, প্রবন্ধ : ইসমাঈল আ.। ১৩।

সংক্ষিপ্ত ইসলামী বিশ্বকোষ, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ১৮৫-১৮৬ ও ২০০-২০১ সত্যসন্ধানীদের জন্য ইনশাআল্লাহ এই দলীল-প্রমাণ ও তত্ত্ব-উপাত্ত অপ্রতুল নয়। যদিও আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের নিকট এ বিষয়ক আরো তত্ত্ব-উপাত্ত বিদ্যমান রয়েছে। আপাতত এখানেই সমাপ্ত করা হল। আশা করি, সত্যপন্থীদের হক গ্রহণে কোনো সংশয় থাকবে না। আর সাধারণ মুসলমানদের উচিত তারা যেন নিজের আকীদায়ে মুতাওয়ারাসার বিষয়ে স্বার্থান্বেষী কিংবা মূর্খ লোকদের কুমন্ত্রণায় প্রভাবিত না হন।

وصلى الله تعالى وسلم على سيدنا ومولانا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين. والحمد لله رب العالمين. মুহাম্মাদ আবদুল মালেক দারুত তাসনীফ মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা ২৩/০৮/১৪৩১ হিজরী ০৪/০৭/২০১০ ঈসায়ী প্রয়োজনে : ০১৭১২-৮৪১৮৪৭ সময় : বেলা ১১-১২ টা।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৫ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।