আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খুলনাবাসীর একটি স্বপ্ন পূরণ এবং আমার কিছু স্মৃতি ----হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান, সাবেক ফল রাষ্ট্রপতি পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও জাতীয় পার্টি

খুলনাবাসীর একটি স্বপ্ন পূরণ এবং আমার কিছু স্মৃতি ----হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কোটি কোটি মানুষের আনন্দ-উৎফুল্লতার সাথে আমিও একীভূত হয়েছি। তাদের একটি স্বপ্নসাধ পূরণ হয়েছে। প্রমত্তা রূপসা নদীর উপর দুই পাড়ের মধ্যে সেতুবন্ধনের সেতু নির্মিত হয়েছে। বাস, গাড়ি ট্রাককসহ মানুষের পারাপারের দুর্ভোগ কেটে গেছে। অনেক প্রতীক্ষার পর খুলনাবাসীর স্বপ্নের সেতুটি বাস্তব রূপ পেয়েছে।

সেতুটি উদ্বোধন করতে পারায় দেশের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আমি অভিনন্দন জানাই। তিনি খুলনা তথা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের অনেক দিনের প্রত্যাশার ফলক উন্মোচন করেছেন। আরো ভালো লাগতো যদি প্রথম পরিকল্পনা অনুযায়ী এই সেতুর সাথে রেললাইন সংযোজিত থাকতো। মংলাকে কার্যকরি সমুদ্র বন্দরে পরিণত করতে রেল যোগাযোগের ব্যবস্থা করা ছিলো একটি অপরিহার্য বিষয়। ওলিকুল শিরোমণি হযরত খান জাহান আলী -রহঃ)-এর নামানুসারে রূপসা সেতুর নামকরণ করা যথার্থই হয়েছে বলে আমি একান্তভাবেই মনে করি।

এই সেতুটি বাস্ত ব রূপ লাভ করায় আমার হৃদয় আনন্দে উদ্বেলিত হবার কারণ এখানে আমারও কিছু স্মৃতিচিহ্ন জড়িয়ে আছে। পাকিস্তান আমলে সম্ভবত ১৯৬৭ সালে এই রূপসা সেতু নির্মাণের প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছিলো। তবে সেতুটি নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলাম আমি। খুলনার অবিসংবাদিত নেতা সবুর খান সাহেব পাকিস্তান আমলে ক্ষমতার সাথে যুক্ত থাকাকালে দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে যথেষ্ট অবদান রেখেছেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তার ভূমিকার জন্য তিনি বিতর্কিত হয়েছেন এটা সত্য- কিন্তু ১৯৪৭ সালে খুলনাকে পূর্ববঙ্গের সাথে যুক্ত করতে যে ভূমিকা পালন করেছেন সে ইতিহাসও মনে রাখতে হবে।

হয়তো খুলনার জনগণ সে কথা মনেও রেখেছিলো। তা না হলে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতিতে তীব্র সমালোচিত হওয়া সত্ত্বেও ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে সবুর খান তিন আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনটিতেই বিপুল ভোটে বিজয়ী হতে পারতেন না। আমার সমস্যা হচ্ছে- যার যেটুকু অবদান তা ভুলতে পারি না। সে কথা স্মরণ করি। খুলনা শিল্প নগরী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবার পেছনে যার অবদান সবচেয়ে বড় তিনি সবুর খান।

তিনি রূপসা সেতু নির্মাণের দাবি তুলেছিলেন পাকিস্তান আমলে। কিন্তু কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেননি। তারপর পাকিস্তান আমল গেছে, স্বাধীন বাংলাদেশেরও অনেক সময় পেরিয়ে গেছে। খুলনাবাসীর একটি প্রাণের দাবির দিকে কোনো সরকার ফিরে তাকায়নি। ক্ষমতা গ্রহণের পর আমি রূপসা সেতু নির্মাণের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলাম।

সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করার সময় আমি পাইনি। কারণ সংসদে এ ব্যাপারে প্রস্তাব পাসের পর মাত্র চার মাসের মতো সময় পেয়েছি। তবে আমি গর্বের সাথে বলতে পারি- খুলনা তথা দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে আমি যতোটা কাজ কাজ করেছি, আর কোনো সরকার তা করতে পারেনি। এমনকি আমার পরে আর কোনো সরকার দক্ষিনাঞ্চলের দিকে ফিরেও তাকায়নি। খুলনায় আড়াইশ’ বেডের আধুনিক হাসপাতাল, খুলনাকে মেট্রোপলিটন সিটিতে রূপান-র, খুলনা পৌর কর্পোরেশন, খুলনা পাবলিক হল প্রতিষ্ঠা আমার উদ্যোগেই হয়েছে।

খুলনা-মংলা মহাসড়ক, খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক, খুলনা-চালনা সড়ক, খুলনা-পাইকগাছা সড়ক, খুলনা-বাগেরহাট মহাসড়কসহ অনেক ছোট-বড় পাকা রাস্তা নির্মাণের ফলে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এসেছে আমার সরকারের আমলে। সবচেয়ে বড় কথা আমি খুলনাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। যে বিশ্ববিদ্যালয়টি নিজ জেলা রংপুরে প্রতিষ্ঠা করতে পারতাম, সেটি আমি খুলনাবাসীকে উপহার দিয়েছি। এখানে আমার মধ্যে জেলাপ্রীতি কাজ করেনি। ন্যায় ও বিচারবোধকে আমি বড় করে দেখেছিলাম।

রংপুরবাসীরও বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি ছিলো। খুলনারও ছিলো। আমি খুলনাবাসীর দাবি অগ্রগণ্য বিবেচনা করেছি। কারণ তখন একমাত্র খুলনা বাদে অন্য সব বিভাগীয় শহরে বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো। দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে গোটা দেশকে আমি সমান চোখে দেখেছি।

সেদিন যদি ন্যায়-নীতি-নিরপেক্ষতাবোধ বিসর্জন দিয়ে খুলনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা না করতাম তাহলে আজ হয়তো দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের সামনে এভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারতাম না। এতোটা বড় গলা নিয়ে আজ এই নিবন্ধ লিখতে পারতাম না। আমি মাঝে মধ্যে রংপুরের জনগণের প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি- ক্ষমতায় থাকাকালে কেনো আমি রংপুরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করিনি। সেখানেও একই কথা বলেছি- রাষ্ট্রপতি হিসেবে তখন আমি একটি অঞ্চলের জনগণের প্রতি অবিচার করতে পারিনি। সে সময় দেশের ৪টি বিভাগের মধ্যে ঢাকা, রাজশাহী, ও চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো।

খুলনা ছিলো বঞ্চিত। দেশের তৃতীয় বৃহত্তম বিভাগীয় শহর হিসেবে খুলনাতে বিশ্ববিদ্যালয় করা না হলে বিবেকের কাছে প্রতারণা করা হতো। যা আমি করতে পারিনি। বিজ্ঞ পাঠক সমাজের হয়তো জানা আছে যে, ফজলুল কাদের চৌধুরী পাকিস্তানের স্পীকার থাকাকালে একবার ২৪ ঘণ্টার জন্য প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এই সময়টুকু দায়িত্ব পালনের মধ্যেই তিনি কুমিল্লায় যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হবার কথা ছিলো তা বাতিল করে চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়ে সে সিদ্ধান্তে স্বাক্ষর করে রেখে যান।

সেভাবেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে কারা অভ্যন্তরে রহস্যজনকভাবে ফজলুল কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। হয়তো কুমিল্লার জনগণের দীর্ঘশ্বাস তাঁর বুকে লেগেছে। তখন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন্দর নগরী হিসেবে চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা জরুরি ছিলো। কিন্তু তা অন্য কোনো অঞ্চলকে বঞ্চিত করে করতে হবে কেনো।

খুলনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে রংপুরের জনগণ আমার ন্যায় বিবেচনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এখন দেশে আর একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হলে সে ক্ষেত্রে রংপুরের দাবিই হবে অগ্রগণ্য। কারণ ভৌগোলিকভাবে রংপুর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থিত। আমি রাজনৈতিকভাবে বিভাগীয় ব্যবস্থার পক্ষপাতী নই। প্রদেশ প্রতিষ্ঠা হচ্ছে আমার সংস্কার প্রস্তাব।

তবে বর্তমান ব্যবস্থায় রংপুরকে বিভাগীয় মর্যাদায় উন্নীত করা যায়। তাই আমার অঙ্গীকার আছে- যদি সুযোগ পাই তাহলে আমার প্রথম কাজ হবে রংপুরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা। আজ খুলনা তথা দক্ষিণাঞ্চলের জনগণের সামনে বড় মুখে বলতে পারি- যদি সময় পেতাম তাহলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় বাস-বায়নের মতো রূপসা সেতুও অনেক আগেই নির্মাণ করে যেতে পারতাম। প্রশ্ন আসতে পারে, নয় বছরে পারিনি কেনো? এ ধরনের একটি সেতু নির্মাণ করতে প্রস্তুতিপর্বে যথেষ্ট সময় ব্যয় হয়। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ করতে হয়।

আমার শাসনামলে যমুনা বহুমুখী সেতু নির্মাণের উদ্যোগসহ ৫০৮টি ছোট-বড় সেতু নির্মাণ করেছি। এর পাশাপাশি রূপসা সেতু নির্মাণেরও উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। যে অর্থ ব্যয়ে রূপসা সেতু নির্মিত হয়েছে, ওই পরিমাণ অর্থের মাধ্যমেই রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ সেতু নির্মাণ সম্ভব ছিলো। এ ব্যাপারে রাশিয়ার জরিপকারী দল তাদের রিপোর্ট পেশ করেছিলো। রূপসা সেতু নির্মাণের ব্যবস্থা করার জন্য আমার মন্ত্রী সুনীল গুপ্তকে মস্কোতে পাঠিয়েছিলাম।

সে সময় মস্কো সরকারের সাথে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে রূপসা সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ব্যাপারে বাংলাদেশ-রাশিয়া একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিলো। আজো স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠে খুলনাবাসীর স্বপ্নের রূপসা সেতু নির্মাণের লক্ষ্যে আমার গৃহীত পদক্ষেপের কথা। ১৯৮৯ সালের ৯ মার্চ খুলনার সার্কিট হাউজ ময়দানে আমার জনসভা ছিলো। অনেক প্রত্যাশা নিয়ে খুলনার জনগণ সেই জনসভায় সমবেত হয়েছিলো। জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিলো খুলনার ঐতিহাসিক সার্কিট হাউজ ময়দান।

সেদিন খুলনাবাসীর প্রাণের দাবি রূপসা সেতু নির্মাণের ঘোষণাটি ছিলো তাদের প্রত্যাশা। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কয়েক কোটি মানুষের স্বপ্ন পূরণের কথাটি জানানোর জন্য আমিও ব্যাকুল হয়ে উঠেছিলাম। এর আগে রূপসা সেতু নির্মাণের সকল সম্ভাব্যতা আমি যাচাই করে নিয়েছিলাম। এ ব্যাপারে ১৯৮৫ সালের ১৩ এপ্রিল রাশিয়ান সরকারের সাথে আমাদের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তাদের একটি জরিপকারী দল রূপসা সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করে এবং এই সেতু নির্মাণের ব্যয় নির্ধারণ করে।

রাশিয়ান জরিপকারী দলটি ১৯৮৬ সালের ১৭ এপ্রিল আমার কাছে তাদের রিপোর্ট পেশ করে। ওই রিপোর্টে তিন ভাবে সেতু নির্মাণের তিনটি ব্যয়ভারের প্রস-াব দেয়া হয়। ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিলো একভাবে ৫৫০ কোটি, একভাবে ৫৩৯ কোটি এবং রেল যোগাযোগসহ একভাবে ৬১৯ কোটি টাকা। এই রিপোর্ট বিবেচনা করে ১৯৮৮ সালের ২৭ জানুয়ারি যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে রূপসা সেতু নির্মাণের পক্ষে মন-ব্য সম্বলিত সুপারিশ পেশ করা হয়। এরপর আরো অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে আমার সরকার রূপসা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

এই ঘোষণাটি দেয়ার জন্যই আমি খুলনা সার্কিট হাউজ ময়দানে উপস্থিত হয়েছিলাম। আজো মনে পড়ে সেই জনসভার কথা। যখন বলেছিলাম রূপসা নদীর ওপর সেতু নির্মিত হবে- তখন লাখো জনতার হর্ষধ্বনি-আনন্দ-উচ্ছ্বাসের উচ্চারণ রণদামামার মতো খুলনাকে প্রকম্পিত করে তুলেছিলো। দেখেছি মানুষের আনন্দ- সে স্মৃতি আজো আমাকে সুরের মূর্ছনার মতো মোহাবিষ্ট করে রাখে। তারপর রূপসা সেতু নির্মাণের প্রস্তুতিপর্বে আরো কিছুটা সময় ব্যয় হয়।

সেতুটি নির্মাণের লক্ষ্যে সংসদে বিল পাসের জন্য উত্থাপন করা হয়। ১৯৯০ সালের ১৯ জুলাই আমার দলের সংসদ সদস্য খুলনা-৪ থেকে নির্বাচিত মোক্তার হোসেন প্রস্তা সংসদে উত্থাপন করেন। এটা ছিলো বাংলাদেশের চতুর্থ জাতীয় সংসদের ষষ্ঠ অধিবেশনের ২৭তম বৈঠক। সংসদ বিতর্ক ষষ্ঠ খণ্ডের ২৭ পৃষ্ঠা থেকে এর বিস্তা রিত বিবরণ পাওয়া যাবে। ডেপুটি স্পীকার রিয়াজউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদের ওই বৈঠকে খুলনায় রূপসা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত প্রস্তাবটি গৃহীত হয়েছিলো।

সংসদে যে সিদ্ধান্ত প্রস্তাব পাস হয়েছিলো তাতে রূপসা সেতুর সাথে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ সেতু নির্মাণের প্রস্তাব পাস হয়েছিলো। সংসদে রূপসা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর আমরা যখন সেতু নির্মাণ করার প্রস্তুতি নিতে যাচ্ছিলাম, সে সময়ে বিরোধী দল তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে থাকে। তারপর ৪ মাস ব্যবধানে আমি ক্ষমতা ছেড়ে দেই। ফলে খুলনাবাসীর স্বপ্নের সেতুর বাস্তব রূপ পেতে প্রায় পনের বছর সময় পার হয়ে যায়। রূপসা সেতু কোনো আকস্মিক প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন নয়।

এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ফসল। তবে এই ফসল পেতে যে সময় লাগার কথা ছিলো, লেগেছে তারচেয়ে ঢের বেশি সময়। কথা ছিলো সেতুতে রেলের সংযোগ থাকবে। তা হলো না। ফলে মংলা বন্দরকে যতোটা কার্যকরভাবে ব্যবহার করার কথা ছিলো, তা কিছুটা হলেও ম্লান হলো।

এই সেতু শুধু একটি অঞ্চলের স্বার্থেই নির্মিত হয়নি। এর সাথে জড়িয়ে আছে গোটা দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির স্বার্থ। এই সেতুর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম এবং উত্তরাঞ্চল সরাসরি উপকার পাবে। বিশেষ করে মংলা বন্দরের জন্য এই সেতুর প্রয়োজনীয়তা আমি দারুণভাবে উপলব্ধি করেছিলাম। তবে একটি বন্দর রেললাইন ছাড়া পূর্ণাঙ্গ হয় না।

সেই দিক থেকে রেল যোগাযোগবিহীন সেতু নির্মিত হওয়ায় মংলা বন্দর অপূর্ণই থেকে গেলো। অবশ্য মংলা তো এখন প্রায় বিরাণবন্দর! তাই আমার দুঃখ হয়। এই দেশের প্রতিটি আনাচে-কানাচে আমার রয়েছে আত্মার সম্পর্ক- হৃদয়ের গভীর অনুভূতি। দেশের সাফল্য দেখলে আনন্দে উদ্বেলিত হই- ব্যর্থতায় ব্যথিত হই। খুলনাকে ঘিরে রয়েছে আমার অনেক স্মৃতি।

যেদিন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলাম, সেদিনের জনসভায় দেখেছিলাম আমার দেখা সর্ববৃহৎ জনসমাবেশ। ওইদিনই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম- খুলনাবাসীর আর একটি প্রাণের দাবি রূপসা সেতু আমি নির্মাণ করবো। সময় আমাকে সে সুযোগ দেয়নি। তবে উদ্যোগ আমি গ্রহণ করেছি। আজ তা বাস্তবায়িত হয়েছে- এটাই আমার সুখ- আমার আনন্দ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।