আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের চার নেতা

বাংলা আমার দেশ

একাত্তর সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করার অভিযোগ এনে করা মামলায় জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় চার নেতাকে কারাগারে আটক রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গতকাল সোমবার জামায়াতের নেতাদের ট্রাইব্যুনালে প্রথম হাজির করা হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে গ্রেপ্তার জন্য আদেশ চেয়ে গতকাল ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেছে প্রসিকিউশন শাখা। ট্রাইব্যুনাল আগামীকাল শুনানির দিন ধার্য করেছেন। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল চারজনের উপস্থিতিতে গতকাল বেলা পৌনে ১১টায় আদেশ দেন।

আদালত পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাঁদের কারাগারে আটক রাখার নির্দেশ দেন। আদেশের অনুলিপি কারা কর্তৃপক্ষকে সরবরাহ করতেও বলা হয়েছে। চার আসামি হলেন জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লা। সকাল নয়টা ৫৫ মিনিটে চারজনকে কড়া নিরাপত্তায় প্রিজন ভ্যানে করে ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসা হয়। গত ২৯ জুলাই ট্রাইব্যুনাল তাঁদের ২ আগস্ট ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে (প্রডাকশন ওয়ারেন্ট) নির্দেশ দিয়েছিলেন।

গতকাল চারজনের আইনজীবীরা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ প্রত্যাহার করাসহ তিনটি আবেদন উপস্থাপন করেন ট্রাইব্যুনালে। ট্রাইব্যুনাল রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে আবেদনগুলো জমা দিতে নির্দেশ দেন এবং আইনজীবীরা তা করেন। আবেদনগুলোর শুনানির বিষয়ে আগামীকাল বুধবার দিন নির্ধারণ করা হবে। আবেদনগুলো রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিদেরও সরবরাহ করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালে চার নেতা: বিচারকক্ষের ঘড়িতে ১০টা ২৮ মিনিট।

এজলাসে প্রবেশ করেন নিজামী, মুজাহিদ, কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লা। পুলিশি পাহারায় তাঁদের এজলাসের কাঠগড়ায় (ডকে) নেওয়া হয়। এজলাসের ডান পাশে রাখা কাঠগড়ার চারটি চেয়ারে বসেন তাঁরা। এ সময় নিজামী, মুজাহিদ ও কাদের মোল্লার পরনে সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি ছিল, আর কামারুজ্জামানের পরনে ছিল শার্ট-প্যান্ট। নিজামী, মুজাহিদের হাতে ছিল পানির বোতল এবং কাদের মোল্লার হাতে ছিল পানি ও জায়নামাজ।

উপস্থিত বিএনপি ও জামায়াত-সমর্থক আইনজীবীরা তাঁদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এর আগে সকাল নয়টা ৫৫ মিনিটে প্রিজন ভ্যানে করে চার আসামিকে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে আনা হয়। ট্রাইব্যুনালের নিচতলার হাজতখানায় প্রায় আধঘণ্টা তাঁদের রাখা হয়। এজলাস, শুনানি, আদেশ: সাড়ে ১০টায় এজলাসে আসেন বিচারপতিরা। ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকসহ অপর দুই সদস্য আসন গ্রহণ করেন।

চেয়ারম্যানের ডান পাশে বসেন বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর, বাঁ পাশে এ কে এম জহির আহমেদ। চার আসামির পক্ষে আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও তাজুল ইসলাম মামলা পরিচালনার জন্য ওকালতনামা জমা দেন। পাঁচ মিনিট শুনানির পর ১০টা ৩৫ মিনিটে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান আদেশ দেওয়া শুরু করেন। আদেশে ট্রাইব্যুনাল বলেন, সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষ তাঁদের হাজির করেছে।

এর আগে তাঁদের প্রতি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারিসংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেছেন, বিভিন্ন মামলায় তাঁরা কারাগারে থাকায় তাঁদের প্রতি পরোয়ানা তামিল করা যায়নি। ট্রাইব্যুনাল বলেন, চারজনকে কারাগারে রাখার নির্দেশ দেওয়া হলো। আদালতের এ আদেশ কারা কর্তৃপক্ষের কাছে সরবরাহ করতে বলা হয়। আদেশ দেওয়া শেষ করে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে অপর দুই সদস্যসহ এজলাস ত্যাগ করেন।

১০টা ৪০ মিনিটে কাঠগড়া থেকে পুলিশি পাহারায় চার আসামিকে এজলাস থেকে নিয়ে প্রিজন ভ্যানে করে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। শুনানিতে আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, এর আগে চারজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারিসংক্রান্ত আদেশ প্রত্যাহার, চারজনের প্রতি অভিযোগ এবং এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের আদেশের অনুলিপি সরবরাহের জন্য আবেদন করা হয়েছে। চারজনের পক্ষে মনোনীত পরিবারের সদস্যদের আইনগত ক্ষমতা প্রদানের (লেটার অব অথরিটি) জন্য আবেদন করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বলেন, ট্রাইব্যুনালের নিজস্ব বিধিবিধান রয়েছে। ওই বিধান অনুযায়ী ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে আবেদন জমা দিতে হবে।

রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি গোলাম আরিফ জানান, সন্দেহভাজনদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। তাঁরা ডকে আছেন। একপর্যায়ে আইনজীবী তাজুল ইসলাম চার নেতার সঙ্গে কথা বলতে সময় প্রার্থনা করেন। আদালত বলেন, ‘আজ নয়। কথা বলায় সময় পাবেন।

রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে আবেদনগুলো জমা দেন। ’ এজলাসকক্ষের পরিবেশ: শুনানি চলাকালে নিজামী ও মুজাহিদকে পরস্পরের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। কামারুজ্জামান ছিলেন নিশ্চুপ। নিরাশ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন কাদের মোল্লা। এজলাসের বাঁ পাশের প্রথম বেঞ্চে বসে ছিলেন চারজনের পক্ষে আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী, মো. গিয়াসউদ্দিন, তাজুল ইসলাম ও ফেরদৌসী আক্তার ওয়াহিদা।

অন্য পাশে প্রথম বেঞ্চে ছিলেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি গোলাম আরিফ, সৈয়দ রেজাউর রহমান, সৈয়দ হায়দার আলী, জেয়াদ আল মালুম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এক কে রহমান। এজলাসকক্ষে রাখা ১৯টি বেঞ্চেও আইনজীবীসহ আগতদের স্থান সংকুলান হয়নি। অনেকে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পর্যবেক্ষক হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ম. হামিদ উপস্থিত ছিলেন। প্রতিক্রিয়া: রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি গোলাম আরিফ সাংবাদিকদের বলেন, আদালত পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আসামিদের কারাগারে রাখার নির্দেশ দেন।

বিচার পর্যবেক্ষণ করতে ট্রাইব্যুনালে আসা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতের চার নেতা বিচারের মুখোমুখি হলেন। তাঁরা এজলাস, বিচারক ও বিচারকক্ষ দেখলেন। এটা সত্য ও ন্যায়ের অসাধারণ প্রকাশ। বেলা সোয়া দুইটায় নিজ কার্যালয়ে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার মো. শাহিনুর ইসলাম আদেশ সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফিং দেন। সাঈদীর গ্রেপ্তার শুনানি কাল: দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে গ্রেপ্তার বিষয়ে করা আবেদনের ওপর ৪ আগস্ট শুনানি হবে।

গতকাল দুপুরে রেজিস্ট্রার মো. শাহিনুর ইসলাম এ তথ্য জানান। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী জানান, সাঈদীকে গ্রেপ্তার বা আটক দেখানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে। তদন্ত সংস্থার সদস্য আবদুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে গ্রেপ্তার বা আটক দেখানোর জন্য গত রোববার প্রসিকিউশন শাখায় আবেদনটি করা হয়।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.