আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মঈনুল রোডের একটি বাড়ীর দখলদারিত্ব ও কিছু কথা

আশার ভেলায় ভাসছি

হুজুগে বাঙালী তো আর আমাদের এমনিতেই বলে না । ১৫ মাস আগে ঢাকা সেনানিবাসের মঈনুল রোডের একটি বাড়ীর লিজ বরাদ্দ বাতিল নিয়ে কতই না হৈ চৈ হলো । কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আমরা সবাই তা ভুলে গেলাম । দেশের একজন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বছরে মাত্র ০১ টাকা খাজনার বিনিময়ে কোটি কোটি টাকার সরকারী সম্পত্তি বছরের পর বছর ভোগ দখল করে আসছেন । জাতি হিসাবে আমরা কতটা অভাগা এটা তারই একটা উদাহরণ ।

বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহনের পর গত ০৮ এপ্রিল ২০০৯ তারিখে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রীসভার বৈঠকে বেগম খালেদা জিয়ার মঈনুল রোড, ঢাকা সেনানিবাসের বাস ভবনের বরাদ্দ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । কিন্ত বিভিন্ন আইনি মারপ্যাচের কারণে বরাদ্দ বাতিলের পর দীর্ঘ ০১ বছরের অধিক সময় অতিবাহিত হলেও এখনো তা কার্যকর করা হয়নি । সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূতভাবে গুলশানের ৩০ কাঠা ও সেনানিবাসের ০৯ বিঘা জমির উপর নির্মিত বাড়ীর ভোগ দখল করে আসছেন । উল্লেখ্য, ১৫ জুন ১৯৮২ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় দুস্থ হিসাবে তাকে গুলশানের ৩০ কাঠা ১১ ছটাকের একটি বাড়ী বরাদ্দ দেওয়া হয় । এর আগে ১৯৮১ সালে সেপ্টেম্বর মাসে মাত্র ০১ টাকার বিনিময়ে বছরে ০১ টাকা খাজনায় সেনানিবাসের ৬ মঈনুল রোডের ০৯ বিঘা বাড়িটি বেগম জিয়াকে বরাদ্দ দেওয়া হয় ।

বেগম খালেদা জিয়া এ বাড়িতে শুধুমাত্র তার পরিবার নিয়ে বসবাস করতে পারবেন । কারো কাছে বিত্রিু, বন্ধক রাখা অথবা এই বাড়ী জামানত রেখে কোন ঋন নেওয়া যাবে না এই শর্তে মিলিটারী স্টেট ইউনিট এ বাড়িটি ৯৯ বছরের জন্য লিজ দেয় । কিন্তু এই বাড়িটি লিজ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনরুপ নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করা হয়নি । উক্ত জায়গাটি সেনানিবাসের 'এ' গ্রেডের জায়গা, যা কোন ভাবেই কারো নিকট লিজ দেওয়ার নিয়ম নেই । তদুপরি সেনানিবাসের মাষ্টার প্লান অনুযায়ী উক্ত জায়গাটি অফিসার্স আবাসিক এলাকা হিসাবে চিহ্নিত রয়েছে ।

নির্বাচন কমিশনে দেওয়া খালেদা জিয়ার হিসাব অনুযায়ী গুলশানের বাড়ীর দাম ১০০ টাকা । আর সেনানিবাসের বাড়ীর দাম ০৫ টাকা । এই বাড়ী সহ তার সম্পত্তির পরিমান প্রায় ০৫ কোটি টাকা । তার বার্ষিক আয় প্রায় ২৬ লাখ টাকা । এরপরও দু-দুইবারের নির্বাচিত এই প্রধানমন্ত্রী কিভাবে নিজেকে দুস্থ ভাবেন ? বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও সংসদনেতা শেখ হাসিনা মঈনুল রোডের এই জায়গাতে ফ্ল্যাট বানিয়ে বিডিআর বিদ্রোহে শহীদ সেনাকর্মকর্তাদের পরিবারকে পূর্ণবাসন করার প্রস্তাব দেন ।

এ রকম একটি মহতী উদ্যোগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে খালেদা জিয়ার নিজ থেকেই বাড়িটি ছেড়ে দেওয়া উচিৎ । এ ছাড়াও আরও কিছু নৈতিক কারনেও তিনি অবৈধভাবে লিজ প্রদানকৃত এ বাড়িটি সেনানিবাস কর্তৃপক্ষকে ফেরৎ দেওয়া উচিৎ । * বর্তমানে তিনি যে অর্থনৈতিক অবস্থানে আছেন তাতে নিজেকে দুস্থ ভাবা কতটুকু যৌক্তিক ? উল্লেখ করা যেতে পারে যে, বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনিই একমাত্র প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী যিনি জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করেছেন । * তারেক জিয়া তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা হিসেবে এ বাড়ীটিকে ব্যবহার করছেন। সেনানিবাসের একটি বাড়িকে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবহার করা যায় কিনা, তাও বিবেচনা করা উচিৎ ।

* নিজেকে একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হিসেবে পরিচয়দানকারী এই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী কি জানেন না যে আরো অনেক সেক্টর কমান্ডার সহ অগনিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নূন্যতম মাথা গোজার ঠাই পর্যন্ত নেই, সেখানে তিনি একাই জোরপূর্বক দুইটি বাড়ী দখল করে রয়েছেন । সত্যিকার অর্থে দেশের মানুষের কল্যানে রাজনীতি করে থাকলে তার জন্য এটা কতটুকু যৌক্তিক ? * ঢাকা সেনানিবাসের প্রান কেন্দ্রে একটি পরিবার ৯ বিঘা জমি দখল করে আছে, যেখানে বর্তমান হিসাব অনুযায়ী ৯০০ অফিসারের আবাসিক সংঙ্কটে রয়েছে । * জনগণের নেত্রী হিসাবে রাজনীতি করে থাকলে জনগনের মাঝে না এসে সেনানিবাসে বসে রাজনীতি করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত? সেনানিবাসে থেকে রাজনীতি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও তিনি ৩০ বছর ধরে নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাংগুলী দেখিয়ে সেনানিবাসের নিরাপদ গন্ডির ভেতরে থেকে রাজনীতি করেছেন । যা সম্পূর্ণভাবে অনৈতিক । এমতাবস্থায় জরুরী ভিত্তিতে বাড়িটি সেনানিবাস কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পূণঃদখল করে যথাযথভাবে ব্যবহার করা উচিৎ ।

আর বেগম জিয়ার প্রতি সবিনয় নিবেদন জোর পূর্বক বের করে দেবার পূর্বেই দেশের মানুষের কল্যানের কথা চিন্তা করে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ীটি ছেড়ে দিন

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.