আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর তিন চমক ! মঈনুল আলম

ওস্তাদী ধুনে তুলি সাঁইজীর গান

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সউদি আরব সফরে এখানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দৃষ্টিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দিপুমণি একাধিক অভাবিত চমক সৃষ্টি করেছেন! প্রথম চমক হলো যখন ডা. দিপুমণিণ্ডযিনি মন্ত্রী হওয়ার পর যতবার ক্যামেরার সামনে এসেছেন তাঁকে কখনও মাথায় কাপড় দেওয়া অবস্থায় দেখা যায় নিণ্ড তাঁকে যখন হঠাৎ দেখা গেল মাথায় হিজাব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়িয়ে ওমরাহ্ পালন করছেন; তা দেখে প্রবাসী বাঙালিরা অনেকেই চমকে ওঠেন। ডা. দিপুমণি মন্ত্রী হওয়ার আগ পর্যন্ত তাঁর নাম প্রায় অশ্রুতপূর্ব ছিল; আওয়ামী লীগের দীর্ঘকালের আন্দোলন ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাঁর নাম শোনা গেছে বলে কেউ মনে করতে পারছেন নাণ্ডতাঁকে একজন সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হতে নেওয়া মন্ত্রী বলেই সকলের ধারণা ছিল। মক্কা-মদিনায় কোন অমুসলমানের প্রবেশ নিষেধ, এটা সর্বজনবিদিত। তাই হঠাৎ ডা. দিপুমণিকে ওমরাহ্ পালন করতে দেখে প্রবাসী বাঙালিরা প্রকৃতই চমকে গেল। অবশ্য কোন সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হতে নেওয়া মন্ত্রীর প্রতি প্রবাসী বাঙালিদের কোন নেগেটিভ দৃষ্টিভঙ্গী নেই।

বাংলাদেশের মুসলিম পরিবারসমূহে ঐতিহ্যিকভাবে ছেলেমেয়েদের নাম আরবি-ফারসি প্রভাবিত সুন্দর ও অনুপ্রেরণাময় অর্থবহ শব্দ দিয়ে রাখা হয় এ ধারণা হতে যে সুন্দর অর্থবহ নাম ছেলেমেয়েদের সুন্দর মানুষ রূপে গড়ে ওঠতে অনুপ্রেরণা জোগায়। উদাহরণস্বরূপ প্রধানমন্ত্রীর নাম ‘হাসিনা’ আরবি শব্দ যার অর্থ ‘সুন্দরী’, বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ নেত্রী সাজেদা চৌধুরীর নাম ‘সাজেদা’ ও আরবি শব্দ যার অর্থ ‘সেজদায় প্রণতা নারী’, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম ‘সাহারা’র অর্থ ‘স্বস্তি’ অথবা ‘সহায়তা’। এঁদের মধ্যে ব্যতিক্রম মতিয়া চৌধুরী, তাঁর নাম ‘মতিয়া’ উৎসরিত হয়েছে মূল্যবান পাথর ‘মতি’ হতে এবং তা মতিয়া রূপ পেয়েছে ‘ঠেট হিন্দি’ অথবা ‘দেহাতি’ কথ্যভাষায় ‘মতি’ নামের কোন মেয়েকে যখন আহ্বান করা হয় ‘এ্যাই মতিয়া, ইধার আও’ বলে। অবশ্য কৃষিমন্ত্রীকে যখন ব্যাপকভাবে দেহাতি চাষীবাসীর সাথে জনসংযোগ করতে হবে দেহাতি গ্রামীণ মানুষের কাছে এই মতিয়া নাম তাদের নিকটতর ঠেকবে, সেই প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা তাঁকে কৃষি দপ্তরের দায়িত্ব দিয়ে বিজ্ঞতারই পরিচয় দিয়েছেন বলতে হবে। মুসলিম পরিবারের নামের উপরোক্ত ঐতিহ্যিক চিহ্ন অথবা আর কোন আভাস ডা. দিপুমণির নামে নেই যদ্বারা তাঁকে মুসলিম বলে ধারণা করা যেতে পারে।

‘মণি’ শব্দটি বাংলায় এক ধরণের দামি পাথরের নাম বটে, কিন্তু শুদ্ধ বাংলাতে ‘দিপু’ বলে কোন শব্দ নেই। সাধারণভাবে অনেকে মনে করেন যে ‘দিপু’ শব্দটি ‘দীপ’ শব্দেরই আদুরে সংক্ষিপ্তকরণ। এটা ধারণা মাত্র, এর ভাষাগত কোন ভিত্তি নেই। তবে ডা. দিপুমণিকে একজন অমুসলিম মন্ত্রী মনে করে সহজভাবে গ্রহণ করে নিতে প্রবাসীদের কোন অস্বস্তি হয় নি। এহেন ডা. দিপুমণি দ্বিতীয় চমক দিলেন প্রধানমন্ত্রী সউদি আরব সফরে যাওয়ার সপ্তাহখানেক আগে মিডিয়াতে পস্টভাবে বক্তব্য রেখে যে “বাংলাদেশ মুসলিম রাষ্ট্র নয়, বাংলাদেশ একটি ‘সেক্যুলার’ বা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র যার জনসংখ্যার অধিকাংশ মুসলিম”।

এটা বলে তিনি কি বুঝাতে চেয়েছিলেন তা প্রবাসী বাঙালিদের কাছে পরিষ্কার হয় নি, তবে তিনি একজন অমুসলিম মন্ত্রী বলে এখানে ধারণা আরও দৃঢ় হয়েছিল। ডা. দিপুমণি যখন এই বক্তব্য রাখলেন তারই সপ্তাহখানেক আগে খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা নিজের মুখেই বলেছেন যে ‘মুসলিম বিশ্বে’র সাথে মার্কিন সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে তিনি তাঁর বিদেশ সফর শুরু করছেন সর্বপ্রথম একটি ‘মুসলিম রাষ্ট্র’ তুরস্ক সফর করে (যদিও তুরস্ক নিজেকে ‘মুসলিম রাষ্ট্র’ বলে না এবং তার সংবিধানে ‘সেক্যুলার’ রাষ্ট্ররূপে নিজেকে আখ্যায়িত করে )। যেখানে খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্টের মুসলিমপ্রধান দেশগুলোকে মুসলিম রাষ্ট্র বলতে বাধে না, সেখানে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম সংখ্যক মুসলিমদের অধিবাস বাংলাদেশকে ‘মুসলিম রাষ্ট্র’ ( ‘ইসলামি রাষ্ট্র’ বলা হচ্ছে না) বলতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এত অনীহা কেন? পররাষ্ট্রনীতি নিয়মের কূটনৈতিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইসলামের পবিত্রতম নগরী মক্কায় ওমরাহ পালন এবং সউদি বাদশা’র সাথে বৈঠক করতে যাওয়ার অব্যবহিত পূর্বে বাংলাদেশকে মুসলিম রাষ্ট্র নয় ঘোষণা দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশস্থ সউদি রাষ্ট্রদূত, সউদি সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত বাংলাদেশের কয়েক শত মাদ্রাসার লক্ষ ছাত্র ও শিক্ষকদের এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যাঁর আতিথ্য গ্রহণ করতে যাচ্ছেন সেই সউদি বাদশা’র প্রতি কী সঙ্কেত দিলেন? এবং তাতে বাংলাদেশের ইমেজের কি অবস্থা হলো? ডা. দিপুমণি তৃতীয় চমক দেখালেন যখন সউদি আরব সফর হতে ফিরে এসে তিনি মিডিয়াতে লিখিত বিবৃতিতে বললেন যে সউদি বাদশা’র সাথে বৈঠক করাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ব্যক্তিগত অনুরোধে’ সউদি বাদশা লক্ষ বাঙালির আকামা পরিবর্তনের অনুমতি দিয়েছেন! পররাষ্ট্রমন্ত্রী কি ‘প্রোটোকল’ সম্পর্কে কোন ধারণা রাখেন? বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সরকারিভাবে সফর করা কালে সউদি বাদশা’র সাথে বৈঠকে বসলেন। সেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদা ও ক্যাপাসিটিতে তিনি মতবিনিময়, অনুরোধ ইত্যাদি করবেন, এই-ই ত প্রোটোকল। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সউদি বাদশা’কে ‘ব্যক্তিগত অনুরোধ’ করার কারণ ও স্কোপ কোথায়? শেখ হাসিনার সউদি বাদশা’র সাথে কি এমন কোন ব্যক্তিগত ‘জানাজানি’ বা ‘সম্পর্ক’ আছে (যেমন ড. ইউনুস এর ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে হিলারি ক্লিনটনের সাথে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে দুজনের সহপাঠি হওয়ার সুবাদে) যার দ্বারা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীরূপে নয় বরং ‘ব্যক্তিগতভাবে’ সউদি বাদশা’কে অনুরোধ করলে সউদি বাদশা তা ফেলতে পারেন না! ডা. দিপুমণি লিখিতভাবে ‘ব্যক্তিগত অনুরোধে’ বাক্যাংশটি উল্লেখ করায় ধারণা হয় এই দুই দেশের দুই ভিভিভিআইপির মধ্যে একটি ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও জানাজানি আছে আন্দাজ করে তিনি অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়েছেন।

তাঁর ধারণা হয়ে থাকতে পারে যে যেহেতু আরব সমাজে ‘শেখ’ পদবি সর্বোচ্চ সম্মানবহ পদবি এতই যে সউদি আরব, কুয়াইত, বাহরায়েন প্রভৃতি আরব রাষ্ট্রকে ‘কিংডম’ না বলে প্রায়শ: ‘শেখডম’ বলা হয়, এবং যেহেতু আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও পরিবারগতভাবে একজন ‘শেখ’, অতএব শেখ হাসিনা ও সউদি বাদশা ‘শেখ’এর মধ্যে একটি ‘ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করার উপযোগী সম্পর্ক’ আছে বলে ইংগিত দিলে তাতে হাসিনা’র শেখ পদবির মাহাত্ম্য আরও সমুন্নত হবে! কিন্তু বিজ্ঞ পররাষ্ট্রমন্ত্রী কি বুঝতে পারেন যে শেখ হাসিনার পারিবারিক পদবিকে তুলে ধরার জন্য এ ভাবে অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়ে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদের মর্যাদাকে কতদূর নামিয়ে ফেলেছেন ? লেখক: প্রবীণ সাংবাদিক, কানাডাবাসী।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.