আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কৈশরের দিন গুলি

ভাল আছি

স্কুল বাঁকে পথে পাওয়া ফ্রক ফিতে ওরা সামাল সামাল সেই হাওয়া....... হঠাৎ অনেক দিন পর যেন সেই হাওয়ার একটা হালকা পরশ এসে লাগল আমার হৃদয়ে, আমার চোখের পাতায়। আমার মনের রঙিন কাগজে রূপালি কালির আঁচড় দিয়ে গেলো। কৈশরের দিন গুলো কেটেছে রবীন্দ্র তে বুঁদ হয়ে। নজরুল তখনও আমার কাছে দুর্বোধ্য। মা বাবা দুজনেই নজরুল এর ভক্ত।

বাবার অনেক গানের কালেকশন ছিলো যার বেশিরভাগই নজরুল সংগীত। মার সবচেয়ে পছন্দ ফিরোজা বেগম। আর আমি ছিলাম সংখ্যালঘু বিরোধী দল। আমার পছন্দের রাগ ভৈরব। সকাল সকাল এক কাপ চা হাতে হারমনিয়াম নিয়ে বসে পরা ছিল আমার প্রতিদিনের প্রথম কাজ।

ভৈরবের কোমল ঋষব আর কোমল ধৈবত এই সূর দুটো একটু বেশি অনুভব করি সবসময়ই। মাঝে মাঝেই ভোর বেলা গুনগুনিয়ে উঠি। এখন আর গান গাওয়া হয়না। তবু মনে হয় আমার মনের অনেক গভীরে কোথাও যেন সপ্ত সূরের আবাসভূমি। আমি এখনও নীল জামা কিনতে পারিনা।

নীল জামা দেখলেই মনে হয় স্কুল ড্রেস। জীবনের অনেকগুলো বছর কাটিয়েছি এই নীল জামা পড়ে। ঈদের নতুন জামাটা পরার জন্য যখন মন অস্থির হয়ে উঠত তখনও ঐ নীল জামা পরে স্কুলে যাওয়ার চেয়ে কষ্টের আর কি হতে পারে। একবার সাহস করে ঈদের লাল জামাটা পরে গিয়েছিলাম স্কুলে। পায়ে লাল স্যান্ডেল,আর লাল একটা ছাতা হাতে(দূর্ভাগ্যবশত )।

সেদিন যা বেতের বারি কপালে জুটেছিলো তা এখনো মনের পরে। জামা ,জুতা আর ছাতার সাথে হাত দুটোও লাল হয়ে গিয়েছিল আমার। সামনে চুল কাটা ছিল বলে একদিন পরীক্ষার হলে মিস সবার সামনে অপমান করলেন। সেদিনই বাসায় ফিরে মাথা ন্যাড়া করেছি। পরদিন মিস আমায় দেখে বুঝতে পারলেন আসলে অতটা অপমান না করলেও পারতেন।

সবাই শুধু বাঁধতে চায় অদম্য কৈশর কে। কিন্তু কৈশর বয়স টাই এমন, যাকে বাঁধা যায়না। আমার মা ছিলেন অনেক আধুনিক। অনেক বুদ্ধিমতিও বটে। কখনও শৃংখলে বাঁধেনি আমায়।

তবে সুকৌশলে এক অদৃশ্য শৃংখল তৈরী করে দিয়েছে আমার ভিতরে। যে শৃংখল থেকে আমি চাইলেও বের হয়ে আসতে পারিনা। প্রতি বছর শীতে নানীর বাড়ি যেতাম। কুয়াশা চাদরে ঢাকা পৌষের সকালে নানীর হাতের ভাপা পিঠা ,চালকুমড়ার মোরব্বা আর দুধ চিতৈ। নানী এখন অনেক অসুস্থ্য।

ডায়াবেটিস প্রায়ই বেড়ে যায়। বয়স ও হয়েছে অনেক। প্রতি বছর ঈদে শাড়ি কিনতে গেলে মনে ভয় হয় আগামী ঈদে শাড়ি কিনতে পারবত! আমার গান নানীর খুব পছন্দ। প্রায় সন্ধ্যায় নানীর বাড়িতে বসত ঘরোয়া গানের আসর। আসরের মধ্যমনি থাকত আমার মা।

মা এতো সুন্দর গান করে আমরা মুগ্ধ হয়ে শুনি। নানীর চোখে পানি চলে আসে। কতদিন নানীর বাড়ি যাইনি। হঠাৎ কখনও স্বপ্নে দেখি সেই ছোটোবেলার মত বৃষ্টির দিনে নানীর বাড়ির উঠোনে জমে থাকা পানিতে কাগজের নৌকা ভাসাচ্ছি। দিপাবলী তে আমাদের সারা এলাকা জুড়ে আলোকসজ্জা হতো আর কত রকমের আঁতশবাজি।

রীতা নীতাদের বাসায় নিমন্ত্রন থাকতো। রাতের খাওয়া সেরে ছাদে চলে যেতাম বাজি পোড়াতে। রাতে বাবা সঙ্গে করে বাসায় নিয়ে আসতো। এখনও আলোকসজ্জা হয় এখনও বাজি পোড়ানো হয় , কিন্তু আমি বা আমরা এখন আর সেই আনন্দের অংশ নই। অনেক পথ পারি দিয়ে অনেক দূরে চলে এসেছি।

তবুও মনে হয় ববি, আমি, রীতা ,নীতা, রিক্তা, টুনি,শান্ত , টিনি, মিমি, অন্জু আর জুন, আমাদের সেই বিখ্যাত "ওরা এগার জন"। ক্লাস নাইনের শুরুটা কেটেছে অনেক আনন্দে। বেসরকারি স্কুল শিক্ষকদের ধর্মঘট চলছিল, স্কুলে ক্লাস হতনা। আর মা অনেক শিথিল, কারন বৃত্তি না পেলে আবার ক্লাস এইটে রেখে দেবে ঠিক করেছে। তাই কোনো পড়ার চাপ নেই।

সারাদিন খেলা খেলা আর খেলা। মাথায় শুধু একটাই দুশ্চিন্তা যদি আবার ক্লাস এইটে পড়তে হয় তাহলে পুরোনো বন্ধুদের সাথে একসাথে চলতে পারবোনা। পরমকরুণাময় আল্লাহ তায়ালা আবারও মুখ তুলে তাকালেন। আমি ক্লাস নাইনে বন্ধুদের সবার সাথে একত্রে পড়ালেখা চালিয়ে গেলাম। এরপর আবার শুরু হল দেশে সরকার বিরোধি আন্দোলন,দিনের পর দিন হরতাল, স্কুলে যেতে হয়না।

স্কুল ফাঁকি দেয়ায় একটা আলাদা আনন্দ আছে ঠিকই কিন্তু এভাবে বাধ্য হয়ে বাসায় বসে থাকতে একটুও ভালো লাগছিলোনা। তখন টিভিতে এত চ্যানেলও ছিলোনা। একটা সাপ্তাহিক আর একটা ধারাবাহিক নাটক। সাথে ছিলো বিটিভির নতুন সংযোজন প্যাকেজ নাটক। বিতর্ক দেখতে আমার খুব ভাল লাগত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, ঢাকা মেডিকেল কলেজের বিতার্কিকদের বিতর্ক দেখে সপ্ন দেখতাম একদিন আমিও এমন বক্তা হব। তখন কেবল উপস্থিত আর নির্ধারিত বক্তৃতায় অংশ নেই। স্কুলের নাজমা আপা সাথে করে নিয়ে যেতেন বগুড়া, রাজশাহী। আমাদের মফস্বলের স্কুলে বিতর্কের ততটা প্রচলন ছিলনা। পরবর্তীতে যখন রোকেয়া হলে ছিলাম হলের পক্ষ থেকে টিভিতে বিতর্ক করি।

মনে হল স্বপ্ন পূরণ যদি এতই সহজ হয় তাহলে কেন কৈশরে সাহস করে আরো অনেক অনেক স্বপ্ন দেখলামনা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।