আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘ঘরের সঙ্গে স্বপ্নও ভেঙে গেছে’

ঘরের সঙ্গে স্বপ্নও ভেঙে গেছে রিজিয়া বেগমের। বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলার দক্ষিণ আমতলী গ্রামের রিজিয়া মাস দুই আগে পুরো দুই লাখ টাকা খরচ করে একটি ঘর বানিয়েছিলেন। মেয়ে বড় হচ্ছে। ভালো একটা ঘর না থাকলে যে মেয়ের জন্য ভালো বর পাওয়া যাবে না।
পুরোনো বাড়ি ছেড়ে নতুন ভিটেতে ঘর তুলেছিলেন রিজিয়ার স্বামী রাজমিস্ত্রি মোস্তফা গাজী।

বহু বছরের সঞ্চয় এক লাখ টাকার সঙ্গে গ্রামীণ ব্যাংক ও আশা থেকে আরও এক লাখ টাকা ঋণ নিয়ে গড়া তাঁদের ঘরটি ঘূর্ণিঝড় মহাসেন মাটিতে মিশিয়ে দিয়ে গেছে। সদ্য গড়া ঘরটি ভেঙে গেলেও ঘরের জন্য নেওয়া ঋণ শোধের জন্য আরও অনেক দিন সপ্তাহান্তে দেড় হাজার টাকার কিস্তি গুনতে হবে তাঁদের।
রিজিয়া বেগমের সঙ্গে যখন কথা হয়, তখন তিনি ভেঙে পড়া ঘরের ভেতর থেকে বের করে এনে রোদে শুকাতে দিচ্ছিলেন কিছু চাল ও আলু। তাঁর বাড়ির চারদিকে থইথই করছিল পানি। রিজিয়ার প্রতিবেশী ফারুক পেয়াদার ছেলে বাকী বিল্লাহ জানালেন, খুব বেশি পানি নেই।

তবে এই পানির নিচে ডুবে গেছে তাঁদের সব জমিজমা। একান্নবর্তী এ পরিবারের সদস্যসংখ্যা ১৪। কৃষি তাঁদের একমাত্র নির্ভরতা। বাকী বিল্লাহদের তিনটি ঘরের দুটি ঝড়ে ভেঙে পড়েছে। ঘর দুটির একটি আবার গাছের নিচে চাপা পড়ে দুমড়ে-মুচড়ে গেছে।


ঘূর্ণিঝড় মহাসেন দক্ষিণাঞ্চলের পটুয়াখালী, বরগুনা ও ভোলা জেলার যেসব এলাকা দিয়ে বয়ে গেছে, সর্বত্রই তছনছ করেছে ঘরবাড়ি ও গাছপালা। গতকাল শুক্রবার বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলার কিছু এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, আহাজারি করছে ঘরহারা মানুষগুলো। এখনো তাঁদের কেউ কেউ রয়ে গেছে আশ্রয়কেন্দ্রে।
বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার নূরুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, বৃহস্পতিবার ঘূর্ণিঝড় বইয়ে যাওয়ার পর যেমনটা ধারণা করেছিলেন, ক্ষতির পরিমাণ তার চেয়ে অনেক বেশি হয়েছে। তিনি জানান, পটুয়াখালী ছাড়া আর কোনো জেলা থেকে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ বিবরণ এসে পৌঁছেনি তাঁর হাতে।


পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক অমিতাভ সরকার জানান, তাঁর জেলার উপকূলবর্তী উপজেলা কলাপাড়া, গলাচিপা, বাউফল ও রাঙ্গাবালি সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পটুয়াখালী জেলায় সাত হাজার ৫৪০টি ঘর সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ির সংখ্যা ১৮ হাজারের বেশি।
ঘরহারা মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি কলাপাড়ার লালুয়া ইউনিয়নে। সমুদ্রতীরবর্তী এ ইউনিয়নের এমন কোনো গ্রাম নেই যেখানে মানুষ গৃহহারা হয়নি।

লালুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল বিশ্বাস জানান, তাঁর ইউনিয়নে ১২ থেকে ১৩ শ ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। ঘরহারা মানুষগুলোর মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। নেই আসছে দিনগুলোর খাবারের নিশ্চয়তাও। ওই ইউনিয়নের অধিকাংশই জেলে।
ফসলের ক্ষতি হয়েছে পুরো পটুয়াখালী জেলায়।

লালুয়ার অদূরবর্তী লতাচাপালি ইউনিয়নের মিস্ত্রিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ আব্বাসের কণ্ঠে ঝরে পড়ল গভীর উর্যাকণ্ঠা। আব্বাসের দোচালা একটি ঘর ঘূর্ণিঝড়ে ভেঙে গেছে। ধ্বংস হয়েছে তাঁর ফসলি জমির সবটুকু। আব্বাসের নিজের জমি নেই বললেই চলে। তিনি একজন বর্গাচাষি।

বিঘা পাঁচেক জমিতে আব্বাস মরিচ চাষ করেছিলেন। ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে হয়ে যাওয়া প্রবল বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে আব্বাসের সব জমি।
পটুয়াখালী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এ জেড এম মমতাজুল করিম বলেন, ঘূর্ণিঝড় ও ঘূর্ণিঝড়ের সময় হয়ে যাওয়া বৃষ্টির কারণে যে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে, তাতে ফসলের ক্ষতি হয়েছে অপূরণীয়। তিনি জানান, জেলায় এবার ১০ হাজার ৩১০ হেক্টর জমিতে তিল, সাত হাজার ৪০০ হেক্টর চিনাবাদাম, ১৩ হাজার হেক্টর মরিচ চাষ হয়েছিল, যা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। ৬০ হাজার হেক্টর মুগডালের মধ্যে ২৪ হাজার হেক্টর ও ৬৫০ হেক্টর পানের বরজের মধ্যে ৩৫০ হেক্টর পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ক্ষতি হয়েছে ধানের বীজতলাও। ফলে পানি সরে গেলেও কৃষকের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হয়ে পড়বে।
সরেজমিনে দুর্গত এলাকার সর্বত্রই ফসলি জমি ডুবে থাকতে দেখা গেছে। এলাকাবাসী জানান, কোথাও হাঁটুপানি পর্যন্ত রয়েছে। কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মসিউর রহমান বলেন, এই জলাবদ্ধতা কাটতে কমপক্ষে ১৫ দিন লাগবে।

এর মধ্যে আবার বৃষ্টিপাত হলে অবস্থা হবে ভয়াবহ। ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।