আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বৈরী জলবায়ুর সবচেয়ে বড় শিকার কৃষি : প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ



একবিংশ শতাব্দীর শুরুতেই বৈরী জলবায়ু পৃথিবীর টেকসই উন্নয়ন ও মানবজাতির অসত্দিত্বের ক্ষেত্রে বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে । বৈরী জলবায়ুর ওপর Intergovernmental Panel on climate Change-IPCC "বিজনেস আজ ইউজুয়াল" পটভূমিতে হিসেব করে দেখিয়েছে যে ২১০০ সালের মধ্যে পৃথিবীর উষ্ণতা ৪.২ ডিগ্রী বাড়বে । বৈরী জলবায়ুর ব্যাপারটি এক সময় আশংকা মনে করা হতো, এখন প্রায় সকলে একে অবশ্যম্ভাবী মনে করেন । বৈরী জলবায়ুর অভিঘাত কৃষির জন্য বিরাট এক হুমকি । কৃষি নির্ভর বাংলাদেশে কৃষক ও কৃষি- জাতির হ্নদপিন্ড,এক বৃনত্দে ফোঁটা দুটি ফুল ।

কৃষক বাঁচলে কৃষি বাচঁবে , কৃষি বাঁচলে অর্থনীতি বাঁচবে । তাই যে কোন মুল্যে কৃষিকে বাঁচাতে হবে । কৃষি আমাদের- শক্তি, শিৰা, কল্প ফলের রস, অর্থনীতির প্রাণ। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উৎপাদনশীল ব্যক্তিখাত, কর্মসংস্থানের বৃহত্তম ৰেত্র এবং দারিদ্রতা কমাতে এর ভূমিকা সার্বজনীন । শিরোনাম বিশেস্নষণ; তত্ত্বগত আলোচনা: প্রতিদিনের গড় তাপ, চাপ, বায়ুপ্রবাহ, আদ্রতা ও বারিপাতের তথ্যের ভিত্তিতে কোনো এলাকার যে অবস্থা প্রকাশ করা হয় তা হল Weather।

এবং এই প্রাকৃতিক বিষয়গুলিরই ৩০ থেকে ৪০ বছরের গড় আবহাওয়া অবস্থাকে Climate বলে। যেসকল প্রাকৃতিক Components দ্বারা আমরা আবহাওয়া বা জলবায়ুকে নির্দেশ বা নির্ধারণ করি; সেগুলি হল: বায়ুর Temperature, Pressure, Movement, Humidity , Precipitation। কিছু প্রাকৃতিক Factors রয়েছে যার দ্বারা নির্ধারিত হয় কোন স্থানের জলবায়ু কেমন হবে। সেগুলি হলঃ Latitudinal Location, Height of the place, Distance from the sea, Wind movement pattern, Ocean Current, Distance from the hills or the mountains, Slope of the place, Characteristics of the soil, Distance from the forest or the vegetation covered region ইত্যাদি। জলবায়ু পরিবর্তন একটি প্রাকৃতিক ঘটনা যদিও মানুষের কর্মকান্ড দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে।

সাধারণভাবে আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি পরিবর্তন যা প্রাকৃতিক ভাবে ঘটে তাকে Climate Change বলে। এর ফলে 'আবহাওয়ার চরম ভাবাপন্নতাই ক্ষতি ঘটাবে বেশি। এতে ঘটবে প্রচন্ড খরা ও ঝড়, পরিণামে ঘটবে মৃতু্য' । পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যনত্দ বিভিন্ন যুগে , বিভিন্ন মাত্রায় ও বিভিন্ন সময়ের মাপকাঠিতে জলবায়ুর পরির্বতন ঘটেছে । কার্বন ডাই অঙ্্রাইড নির্গমনের কারণে পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তিত হতে পারে একথা প্রথম বলেছিলেন, জে টিন্ডলে ১৮৬৩ সালে ।

১৮৯৬ সালে সুইডিশ রসায়নবিদ সেভান্ট এরেনিয়াস দেখিয়েছিলেন, বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই অঙ্্রাইডের পরিমাণ দ্বিগুণ করা হলে তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাবে। ১৯৩০ ও ১৯৫০ এর দশকে বৈজ্ঞানিকরা বুঝতে পারেন যে জলীয়বাষ্প আরো ভয়ংকর গ্রিণ হাউস গ্যাস । ১৯৬০ এর দশকে এর উপর গুরম্নত্ব দেয়া হয় । কৃষি , ল্যাটিন শব্দ 'এ্যাগার' ও 'কালুচরা' শব্দদ্বয়ের সমন্বয়ে এগ্রিকালচার তথা কৃষি শব্দের উৎপত্তি। এ্যাগার শব্দের অর্থ জমি বা মাঠ এবং কালচুরা শব্দের অর্থ হল র্চচা বা চাষ করা।

তাই শাব্দিকভাবে জমি চাষ করে ফসল উৎপাদনকে কৃষি বলা হয় । অন্যকথায় লাভজনকভাবে ফসল , গবাদি পশু ও হাঁস মুরগি এবং মৎস্য উৎপাদনের জন্য বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার নীতিসমূহ অনুসরণ ও প্রাকৃতিক সম্পদসমূহের সুষ্ঠু ব্যবহারকরণের কলাকৌশলকে কৃষি বলা হয়। বৈরী জলবায়ু natural systems ও human systems এ দুয়ের উপরই বিরম্নপ প্রভাব ফেলছে । প্রাকৃতিক পরিবেশের আওতায় আছে ,Natural systems at risk include glaciers, coral reefs and atolls, mangroves , boreal and tropical forests , polar and alpine ecosystems, prairie wetlands , and remnant native grasslands. আর্থ সামাজিক পরিবেশের আওতায় আছে- Human systems that are sensitive to climate change include mainly water resources; agriculture (especially food security) and forestry; coastal zones and marine systems (fisheries); human settlements, energy, and industry; insurance and other financial services; and human health. The vulnerability of these systems varies with geographic location, time, and social, economic and environmental conditions. বাংলাদেশের কৃষি; বৈরী জলবায়ুর প্রভাব ও বাসত্দবতা পৃথিবী এমন এক মহাবির্পযয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে যেখানে বৃষ্টির মৌসুমে বৃষ্টি নেই ,আবার কখনো অতির্বষণ । পরিবেশবিজ্ঞানীদের মতে এর পেছনে রয়েছে জলবায়ুর পরির্বতন ।

বৈরী জলবায়ুর কারণে বাংলাদেশ বিশাল র্অথনৈতিক ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হবে । ওচঈঈ -হিসেব করেছে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হলে খরচ হবে ১.২ বিলিয়ন ডলার । নিম্নে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জলবায়ু পরির্বতনের তুলনামূলক চিত্র দেখানো হল: অঞ্চল ভৌত পরির্বতনের ঝুঁকি প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর ঝুঁকি অর্াথ- সামাজিক ঝুঁকি মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা বাসত্দবায়নের ঝুঁকি র্সবমোট দক্ষিণ- পর্ূব ৭২(২) ৪৮(২) ৫৮(৬) ২৬(৯) ৪ দক্ষিণ- মধ্য ৬০(৪) ৩৩(৬) ৬৫(৩) ৫৪(৬) ৩ দক্ষিণ-পশ্চিম ৭৭(১) ৩৮(৪) ৮০(২) ৬১(৪) ১ সুন্দরবন ৬০(৪) ৫০(৩) ০(৯) ৭৭(১) ৭ মধ্যঞ্চল ৪২(৭) ১৮(৮) ৪৫(৫) ৪৯(৭) ৬ মধ্য-পশ্চিম ৫৭(৩) ১৩(৯) ৮৩(১) ৪৮(৮) ৫ উত্তর-পর্ূব ১০(৯) ৩০(৪) ১২(৮) ৬৩(৩) ৯ উত্তর-মধ্য ২৭(৮) ২৯(৭) ৩৫(৭) ৫২(৫) ৮ উত্তর-পশ্চিম ৪৯(৬) ৫৬(১) ৬৯(৪) ৬১(২) ২ নোট: (ঝুঁিক সংখ্যা/১০০) (র্যাঙ্কিং/১০) ঝুঁকির পরিমাণ যত বাড়ে, প্রতিক্রিয়ার সাথে মানিয়ে নেবার ক্ষমতার সাথে ব্যবধানও তত বাড়ে। ১১ মন্ত্রনালয়ের রিপের্াট অনুযায়ী, ঝুঁকি হলো জাতির জলবায়ু পরির্বতন ও সমুদ্র পৃষ্টের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়ার সাথে মানিয়ে নেওয়ার অক্ষমতা । ঝুঁকি মানিয়ে নিতে জাতিকে সক্ষম করে তুলতে হবে ।

জলবায়ুর পরিবর্তনে বাংলাদেশের দক্ষিণের বিরাট অংশ তলিয়ে যাবার আশঙ্কা রয়েছে । প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, সমুদ্র পৃষ্টের উচ্চতা ১.৫ মিটার বাড়লে দৰিনাঞ্চলের ২২০০০ বর্গ কিলোমিটার স্থলভাগ সমুদ্রগর্ভে চলে যাবে । অউই প্রকাশিত প্রতিবেদনে(১৯৯৪) বলা হয়েছে , যদি ৪৫ সে.মি. উচ্চতা সত্দর বৃদ্ধি পায় তাহলে বাংলাদেশের প্রায় ১১ শতাংশ ভূমি ২০৭০ সালের মধ্যে সমুদ্র গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে । অতিবৃষ্টির ফলে নদীভাঙ্গনে প্রতিবছর প্রায় ১০ লাখ লোক গৃহ হারিয়ে উদ্বাস্তুতে পরিণত হচ্ছে, বাড়ছে বসত্দিবাসীর সংখ্যা । কৃষি ও অকৃষি ৰেত্রে বন্যায় ৰয়ৰতি(১৯৯৮ ও ২০০৪ সাল ) খাত বন্যা ১৯৯৮ বন্যা ২০০৪ মোট ৰয়ৰতি(%) জিডিপি(%) মোট ৰয়ৰতি(%) জিডিপি(%) কৃষি খাত ৪৯.৪ ২.৩১ ২৫.৬ ০.৮৭ শস্য খাত ৪২.৮ ২.০০ ২২.২ ০.৭৫ অশস্য খাত ৬.৬ ০.৩১ ৩.৪ ০.১২ উৎস: চৌধুরী, ইসলাম ও ভট্রাচার্য(১৯৯৮),১৯৯৮ এর বন্যার তথ্যের ৰেত্রে প্রযোজ্য ।

সিপিডি(২০০৪),২০০৪ সালের বন্যার তথ্যের ৰেত্রে প্রযোজ্য বাংলাদেশে অঞ্চলভেদে বৈরী জলবায়ুর পরিবর্তনকে দু'ভাবে চিনত্দা করা যায় । প্রথমটি হলো- দৰিনাঞ্চল, যেখানে পানি নিষ্কাশনের অপ্রতুলতার সাথে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে লবনাক্ত পানির প্রবেশ ঘটেছে । দ্বিতীয়ত-উত্তর পশ্চিম অঞ্চল, যেখানে পানির অভাবে খরার সৃষ্টির মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষি পরিবেশ ৰতিগ্রসত্দ হওয়ার উপক্রম হচ্ছে । আবহাওয়া উত্তপ্ত হওয়ায় সাগর ফুঁেস উঠবে,উঠছে । বাংলাদেশের ৩৫ শতাংশ মানুষ পরোৰ ৰতিগ্রসত্দ হতে পারে আশংকা ব্যক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা ।

পরপর দুটি বন্যা ও ঘূর্নিঝড় সিডরের কারণে ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরে প্রায় ২০ লাখ টন ধান উৎপাদন কম হয়েছে । যার আর্থিক মুল্য প্রায় ৬শ মিলিয়ন ডলার । জাতিসংঘের কো- অর্ডিনেশন অফ হিউম্যান টারিয়ান এফিয়ার্স -এর তথ্য অনুযায়ী, 'সিডর ২০ লৰ একর জমির ফসল এবং ৮ লৰ ৮৫ হাজার গবাদি পশুর ৰতিসাধন করেছে । ' ২০০৭ সালে সিডরের আঘাতে প্রায় ৪ হাজার লোকের মৃতু্য ঘটে। প্রায় ৫ থেকে ২০লাখ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয় ।

এর মধ্যে ১০ লাখ মেট্রিক টন রোপা আমন ধ্বংস হয় । ২০০৯ সালে আইলার আঘাতে অনেক মানুষ ও প্রাণীর মৃতু্য ঘটে। বাঁধ ভেঙ্গে সমুদ্রের লোনা পানি প্রবেশ করায় লক্ষ লক্ষ চিংড়ি চাষী অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে যায়। ১৯৯১ সালের সাইক্লোনেও ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ ,অসংখ্য হেক্টও জমির ফসলসহ ঘর বাড়ি অর্থ সম্পদ বিনষ্ট হয়েছিল । '১৯৬০থেকে ২০০০ সাল পর্যনত্দ বাংলাদেশে ৪০ টি ঘূর্ণিঝড় সংঘটিত হয়েছে ( চৌধুরী ২০০৭)।

' প্রাকৃতিক দুযের্াগ বিশেস্নষণ(২০০১-২০০৭) দেশ প্রাকৃতিক দুযের্াগ বছর ৰয়ৰতি(মিলিয়ন ইউ এস ডলার) প্রাপ্তি মূল্যে ২০০৭ মুল্যে বাংলাদেশ বন্যা ২০০৪ ২,৩০০ ২,৫১০ ২০০৭ ১,১০০ ১,১০০ ঘূর্ণিঝড় সিডর ২০০৭ ১,৬৭৫ ১,৬৭৫ উৎস: অংরধহ উরংধংঃবৎ চৎবঢ়ধৎবফহবংং ঈবহঃবৎ ঞযধরষধহফ; ঊঈখঅঈ,ঋগ-উঅঞ, ডড়ৎষফ ইধহশ সিডরে ৰতিগ্রসত্দ অর্থনৈতিক খাতসমূহ অর্থনৈতিক খাত ৰতি(কোটি টাকায়) % কৃষি ৩,০১৯.৭ ২৮.৫ উৎস-বিশ্ব ব্যাংক(২০০৮) ওচঈঈ ( ওহঃবৎমড়াবৎহসবহঃধষ চধহবষ ড়হ ঈষরসধঃব ঈযধহমব )ুএর ৪র্থ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে-বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে প্রাকৃতিক দুযের্াগের ঝুঁকি বাড়বে, খাদ্য ও পানির প্রাপ্যতা কমিয়ে ৰুধা, দারিদ্র ও রোগব্যাধির প্রকোপ বৃদ্ধি করবে । বায়ুমন্ডলে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়লেই বাংলাদেশের ১১ শতাংশ সাগরের নিচে চলে যাবে, প্রতিবছর বন্যা , খরা , সাইক্লোন ইত্যাদি বৃদ্ধি পাবে । ফলে খাদ্য নিরাপত্তা গউএং- এর লৰ্য অর্জন ও সামগ্রিকভাবে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হবে । ২০১৫ সাল নাগাদ ৩ থেকে সাড়ে ৩ কোটি মানুষ জলবায়ুর খারাপ প্রভাবের শিকার হবে । বাংলাদেশের গড় বার্ষিক তাপমাত্রা গত ১৪ বছরে (১৯৮৫-১৯৯৮) মে মাসে ১০ সেলসিয়াস এবং নভেম্বর মাসে ০.৫০ সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাংলাদেশে মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধি ৮,৩০,০০০ হেক্টর আবাদি জমির ক্ষতি করেছে। বাংলাদেশের গড় বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পেয়েছে। ভয়াবহ বন্যার পূনরাবৃত্তি ঘটে গত ২০০২, ২০০৩, ২০০৪, ২০০৭ সালে। বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা বেড়েছে। গ্রীষ্মকালে সমুদ্রের লোনাপানি দেশের অভ্যনত্দরে প্রায় ১০০ কি.মি. নদীতে প্রবেশ করছে।

২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের ধানের উৎপাদন কমবে প্রায় ৮% এবং গমের উৎপাদন কমবে প্রায় ৩২%। সমুদ্রের উচ্চতা ১ মিটার বৃদ্ধির ফলে দেশের মোট আয়তনের প্রায় ১৬% পানিতে ডুবে যাবে । ২২৮৮৯ বর্গ কিলোমিটার কৃষি জমি কমে যাবে , হারিয়ে যাবে সুন্দরবন, পরিবেশ উদ্বাস্তু হবে ৩ কোটি মানুষ । বিরম্নপ প্রভাবের দরম্নণ ২০৫০ নাগাদ দেশে ধানের উৎপাদন ৮ ভাগ ও গমের ্্্্্্উৎপাদন ৩২ ভাগ কমে যাবে । ( পরিবেশ ও বন মন্ত্রনালয় ২০০৮) বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তরের ক্লাইমেট চেঞ্জ সেল কতর্ৃক এপ্রিল ২০০৮ প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা যায় , ১৯৯১-২০০০ সালের মধ্যে ২০০০০০ লোকের মৃতু্য এবং কৃষি ও অবকাঠামো ৰতি হয়েছে ৪১৩০০ কোটি টাকা ।

১৯৭৩-১৯৮৭ সালে খরার কারণে নষ্ট হয়েছে ২১৮০০০০ মে.টন ধান এবং বন্যার কারণে নষ্ট হয়েছে ২৩৮০০০ মে.টন.ধান । বাংলাদেশ মৃত্তিকা সম্পদ উন্ন্য়ন ইনস্টিটিউটের রিপোর্টে বলা হয়েছে,'১৯৭৩-২০০০ পর্যনত্দ উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ১৭ লাখ হেক্টর জমি লবণাক্ততা দ্বারা আক্রানত্দ হয়েছে। ' নদ-নদীর মোহনায় অবস্থিত দ্বীপ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অধিক পরিমান লোনা পানি প্রবেশ করে মৎস সম্পদ ও কৃষিখাতে অপূরণীয় ক্ষতি করে । উপকূলীয় নদীতে লবণাক্ততা প্রবেশ ২ লৰ টন চাল উৎপাদন কমার অন্যতম কারণ । পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. জহরম্নল হকের মতে তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি বাড়লে বাংলাদেশে গমের উৎপাদন প্রায় বন্ধ হয়ে যাবে ।

আলু ও শীতকালীন ফসলের ফলনে মারাত্বক ধস নেমে আসবে । বাংলাদেশের পরিবেশের উপর প্রকাশিত ট্রাস্কফোর্স রিপোর্ট থেকে জানা যায়, সমুদ্র পৃষ্টের উচ্চতা ২০৫০ সনে ১ মিটার বাড়তে পারে ফলে ৩ হাজার মিলিয়ন হেক্টর জমি স্থায়ীভাবে হারিয়ে যাবে, কমে যাবে ২০০ মিলিয়ন টন উৎপাদন । বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. নুর-ই-এলাহি বলেন ,'জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে ৰতিকর প্রভাব পড়ছে । ' উত্তরাঞ্চলে মঙ্গা দেখা দেয়ার প্রধান কারণ খরা। খরার প্রখরতায় ১০-৭০ ভাগ পর্যনত্দ ফসল উৎপাদন হার কমে যায় ।

শতকরা ৩০ভাগ জমির শস্য উৎপাদন বাধাঁগ্রসত্দ হয় এবং ১০ ভাগ ফলন কমে যায় । ৪২ ভাগ আবাদকৃত জমির ফলন কমায় ৪৪ ভাগ মানুষ ৰতির শিকার হয় । প্রায় ১.৫ মিলিয়ন টন খাদ্যশস্য উৎপাদন ব্যাহত হয় । বাংলাদেশে বছরে ৩.৭ শতাংশ হারে সব ধরনের ধান উৎপাদন ৰতিগ্রসত্দ হয় (৩৭ বছরে গড় হিসাব অনুযায়ী)। একইভাবে আউশ উৎপাদন বছরে ৪.৪ শতাংশহারে ৰতিগ্রসত্দ হয় ।

আমন ৰতিগ্রসত্দ হয় ৩.৪ শতাংশ হারে (ওংষধস ২০০৬ধ) । বৈরী জলবায়ুর ফলে আউশ উৎপাদন ২৭ ভাগ এবং গম উৎপাদন ৬১ ভাগ পর্যনত্দ ৰতিগ্রসত্দ হতে পারে । প্রবল হলে বোরো উৎপাদন ৫৫ভাগ থেকে ৬২ ভাগ পর্যনত্দ কমে যেতে পারে । বৈরী জলবায়ুতে বাংলাদেশের কৃষির বিপদগ্রসত্দতা; সমাধান কোন পথে ? বৈরী জলবায়ুর প্রকোপ বৃদ্ধির ৰেত্রে বাংলাদেশের ভূমিকা খুবই নগন্য অথচ ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। প্রাকৃতিক দুযের্াগে বাংলাদেশকে দিতে হয় চরম মূল্য।

বাংলাদেশের জলবায়ু বিপন্নতার মূল কারণগুলো হলো-ভৌগোলিক অবস্থান,নিচু ও সমতল ব-দ্বীপিয় ভূমিরূপ,ঋতু বৈচিত্র বেশি এবং বর্ষা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত,জনসংখ্যার ব্যাপক ঘনত্ব ও দরিদ্রতা,অধিকাংশ জনগন কৃষক, কৃষিকাজ জলবায়ু দ্বারা প্রভাবিত । বিদ্যমান বাসত্দবতায় করণীয় হচ্ছে- ঙ্ বৈরী জলবায়ুর বিরুপ প্রতিক্রিয়া মোকাবেলার জন্য এখন থেকেই কর্মপন্থা প্রণয়নের দিকে নজর দেয়া দরকার । এ'বিষয়টিকে উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করা জরম্নরী। ঙ্ আনত্দর্জাতিকভাবে কর্মসূচী গ্রহণের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে হবে । আনত্দর্জাতিক আলোচনায় কার্যকরভাবে ভূমিকা রাখা যাতে অভিযোজনের জন্য বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় তহবিল পায়।

সীমানত্দ সংলগ্ন দুুটি দেশের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলা প্রয়োজন। যা হবে টেকসই এবং আমাদের স্বার্থের অনুকুলে। প্রতিবেশি ভারতের সাথে রয়েছে ৫৪ টি নদীর অভিন্ন সম্পর্ক। নদীগুলোর ন্যায্য পানি প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে দক্ষ কুটনীতিক তৎপরতার প্রয়োজন। ঙ্ বর্তমান সময়ে জলবায়ূর পরিবর্তন সম্পকর্ীত খবরের ব্যাপক প্রচার ও দ্রুত বিসত্দৃতি আধুনিক গণমাধ্যমেরই অবদান।

গণমাধ্যমের ব্যবহার নিশ্চিত করে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে । ঙ্ বৈরী জলবায়ু সম্পর্কে দেশবাসী খুবই উদ্বিগ্ন এবং সচেতন। এটাকে আরো অর্থসহ ও কার্যকর করতে কমু্যনিটি রেডিও বৃদ্ধি ও কাজে লাগাতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন । ঙ্ আমাদের পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে পরিচালিত গবেষণা ও তথ্যের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রক্ষা করে জলবায়ূর পরিবর্তন সম্পর্কে অবহত হয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণে প্রস্তুত থাকতে হবে । গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারগুলোর জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গবেষণা পরিচালনা করা দরকার ।

বৈরী জলবায়ুর প্রভাব ও অভিযোজনের উপায় নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করতে হবে। আবহাওয়া অধিদপ্তরকে আধুনিকায়ন এবং ঘূর্ণিঘড়ের পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে আরো সক্রিয় হতে হবে। ঙ্ শিল্পোন্নত দেশগুলো সাবধান না হলে আমরা ভবিষ্যতের মানব সমাজের জন্য বিভীষিকাময় পরিবেশ ছাড়া কিছুই রেখে যেতে পারবনা । গ্রীনহাউজ গ্যাস নি:সরণ কমানোর জন্য উন্নত বিশ্বের উপর আনত্দর্জাতিক ভাবে চাপ সৃষ্টির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। ঙ্ সরকারকে এব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করতে হবে।

প্রকৃতিতেও যাতে ক্ষতিকর সকল গ্যাস বেশি মাত্রায় শোষিত হয় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে । দেশের প্রধান নদ-নদী গুলো যথারীতি খনন করতে হবে। ঙ্ বৈরী জলবায়ুর ফলে উদ্ভূত সমস্যাবলির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্তির জন্য প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী। উপকূলীয় এলাকায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক আশ্রয় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ঙ্ পরিবেশকে বিশুদ্ধ করে গড়ে তুলতে ব্যাপকভাবে বৃক্ষরোপণ ও বনায়ন কর্মসূচি হাতে নিতে হবে।

ওজোনসত্দরের ক্ষয়রোধে জাতীয় ও আনত্দর্জাতিক পর্যায়ে পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই। ঙ্ জলবায়ূ পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার জন্য আমাদের আর্থ সামাজিক রীতিনীতি ও অর্থনীতির বিদ্যমান কাঠামোর মধ্যে পরিবর্তন আনতে হবে। ঙ্ ঝুঁকি ঠেকাতে উপযুক্ত কর্মকৌশল গ্রহণ ও বাসত্দবায়ন জরম্নরী । খাপ খাওয়ানোর মাধ্যমে সব প্রতিক্রিয়াকে ঠেকানো যাবেনা। তবে ঝুঁিক কমানো সম্ভব হতে পারে; ঝুুঁকি কিছুটা বিলম্বিত করা যাবে ।

ঙ্ এছাড়া বাংলাদেশের করণীয় হচ্ছে-জ্বালানী সাশ্রয়ের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা। বিদু্যৎ শক্তির দক্ষব্যবহার নিশ্চিত করা। গ্যাসের অপচয়রোধ এবং গ্রামেগঞ্জে উন্নত চুলার ব্যবহার বৃদ্ধি করা। উন্নত চুলা ব্যবহারের মাধ্যমে উদ্ভিদজাত জ্বালানীর সাশ্রয় নিশ্চিত করা। নবায়নযোগ্য জ্বালানী শক্তির ব্যবহার বাড়ানো।

চাষাবাদের ক্ষেত্রে উপযুক্ত প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও প্রয়োগ করা। তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে পরিবর্তিত আবহাওয়া ও পরিবেশের উপযোগী শস্যবীজ উদ্ভাবন করা। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে চলা। গ্রীন হাউস গ্যাসের নির্গমণ হ্রাস ও কার্বন-ডাই-অক্্রাইড (ঈ০২) গ্যাস শোষণের জন্য বৃক্ষচ্ছেদন বাড়াতে হবে । ঙ্ মানুষের অধিক ফসল ফলানোর আশায় মাটিতে অতিমাত্রায় রাসায়নিক সার দেয়ায় মাটির গুণাগুণ আশংকাজনক হারে কমছে ।

প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ৯০ হাজার র্বগ কি.মি অরণ্য কাটা হয় শুধুমাত্র চাষের জমির জন্য। এর ফলে জলবায়ুরও পরির্বতন ঘটছে । এসব বন্ধ করে আমাদেরকে গ্রীণ হাউস গ্যাসের সিঙ্ক যথা গাছপালা , বনানী ও সমুদ্র সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সংরক্ষণ করতে হবে। ঙ্ একই জমিতে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে জ্ঞৌনিক পদ্ধতিতে বছরের বিভিন্ন সময়ে পযর্ায়ক্রমে বিভিন্ন প্রকার ফসল উৎপাদন করে বহুমাত্রিক ব্যবস্থার প্রচলন করা প্রয়োজন। কৃষি বিষয়ে শিক্ষিত কৃষক ছাড়া অধিক ফসল উৎপাদন সম্ভব নয়।

উপসংহার: কৃষি প্রধান বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়ন , অগ্রগতি , সমপ্রসারণ ছাড়া একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক বুনিয়াদ গড়ে তোলা সম্ভব নয়। বৈরী জলবায়ুর ৰেত্রে বাংলাদেশের দায়ভার খুবই নগন্য কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিপন্ন দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, সামপ্রতিককালে জলবায়ু পরিবর্তনের যে আকস্মিকতা, দ্রুততা ও অনিশ্চয়তা কাজ করছে তার পেছনে প্রধানত মানুষের কর্মকান্ডই দায়ী । তাইতো ১০-১১ সেপ্টেম্বর ২০০৮ লন্ডনে অনুষ্ঠিত হয় 'চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশ' শীর্ষক যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ জলবায়ু সম্মেলনে যুক্তরাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী ফিল উলাস বলেন- শিল্পোন্নত দেশের শিল্পোন্নোয়নে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ধরিত্রি। আর এর জন্য চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে বাংলাদেশের মত উপকূলবর্তী দেশ গুলোকে।

এজন্য যুক্তরাজ্য বাংলাদেশকে ১৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেবে বলেঘোষনা দেয়। বৈরী জলবায়ুর কারণে আতংকিত হওয়ার চেয়ে মোকাবেলার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণেই কল্যাণ। জলবায়ু পরিবর্তন ও পানির উচ্চতা বৃদ্ধি যদি আগামীতে হতেও থাকে হবে অত্যনত্দ ধীর গতিতে যাতে বাসত্দবিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও প্রস্তুত থাকলে আমরা পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম হবো। জলবায়ুর যে নতুনধারা বিন্যাস সৃষ্টি হবে, সেই পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সময়োপযোগী পদক্ষেপ অত্যাবশ্যকীয়। এই ঝুঁকি থেকে বাচাঁর উদ্যোগ নিতে হবে।

সম্মিলিত প্রয়াসই পারে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার প্রচেষ্টাকে সফল করতে। যাতে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে না আসে সেজন্য বিশ্বসংস্থাসহ প্রত্যেকটি দেশ সমস্যা মোকাবিলায় এগিয়ে আসবে প্রত্যাশা এটাই। মনে রাখতে হবে , জলবায়ু পরির্বতন যেমন সমস্যার সৃষ্টি করছে ,তা আবার আমাদের ন্যায়ভিত্তিক সমাজ বির্নিমাণ ও টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিতে পারে ; যদি আমরা এ বিষয়ে সঠিক নীতি ,গবেষণালব্ধ জ্ঞান ও পদ্ধতি, সামাজিক উদ্যোগ ও র্কমসূচি গ্রহণ করতে পারি ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.