আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পিস্তল শাহ

একদিন তুমি ডাক দেবে, আমি প্রতীক্ষায় আছি

মৌলভি এনায়েত আলী কদম শাহ তার সামনে বসা লোকটির ওপর যে প্রচণ্ড রেগে আছেন সেটা তার মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে না। সেটা বুঝা যাচ্ছে তার পা দেখে। তিনি পা দুটো ক্রমাগত নাড়াচ্ছেন। পা নাড়ানো তার প্রচণ্ড রাগের লক্ষ্মণ। রাগ জিনিসটা হলো আগুনের মতো।

আগুন যেমন কোনো কিছু দিয়ে চাপা দিয়ে রাখা যায় না, রাগও চাপাচাপির জিনিস না। রাগ অগ্নিবৎ, মানুষের কোনো একটা দুর্বলতা দিয়ে সেটা প্রকাশ পাবেই। মৌলভি এনায়েত আলী কদম শাহর দুর্বলতা তার পা, সে দুটে ক্রমাগত নড়ছে। পা পুরোপুরি থামানোর জন্য তার ইচ্ছা হচ্ছে সামনে বসা লোকটির পাছায় কষে একটা লাথি মারতে। সেটা সম্ভব না।

সম্ভব না বলেই তার রাগ আরো বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে তার পায়ের নড়ন। কিন্তু সামনে বসা লোকটিকে কদম শাহর রাগের ব্যাপারে মোটেও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মনে হচ্ছে না। সে মেঝেতে বিছানো নরম কার্পেটে বসে আয়েশ করে দাঁত খিলাল করছে। তবে দাঁত খিলাল করার আদব তার জানা আছে।

ডান হাত দিয়ে খিলাল করার সময় বাম হাত দিয়ে মুখটা আড়াল করে রাখতে হয়। সে সেটা করছে। তবে সমস্যা অন্য জায়গায়। খিলাল করার পর দাঁতের ফাঁক ফোকর থেকে যে খাদ্যকণা বের হচ্ছে সেগুলো সে গিলে ফেলতে পারছে না। তার অভ্যাস নেই।

সে খিলাল করে বহিরাগত জিনিসকে পিক করে থুতুর সঙ্গে ফেলে দেয়। কিন্তু এখানে তা পারছে না। পীর সাহেবের সামনে থেকে পিক করে থুতু ফেলার জন্য ওঠে যাওয়া বেয়াদবি। এমন মুহতারাম লোকের সামনে একটু বেয়াদবিও বিরাট গোনাহর কাজ। সে গোনাহর কাজ পারতপক্ষে করে না।

গোনাহ করলে অন্তর মরে যায়। তার অন্তর মুর্দা না, জিন্দা। তার অনেক শাগরেদ তাকে জিন্দাদিল বলে ডাকে। জীবিত থাকতে জিন্দাদিল লকব পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। এমন সময় মৌলভি এনায়েত আলী কদম শাহ পা নাড়ানো বন্ধ করে ধমক দিলেন, এই তোমার মুখের মধ্যে কী? মুখ এমন চিপায়া রাখছো কেন? লোকটি কোৎ করে ঢোক গিলে হাসি হাসি মুখ করে বললো, মুখের মধ্যে থুতু জমা হইছিলো।

বেয়াদবি হওয়ার ভয়ে উইঠা গিয়া ফেলতে পারি নাই। তার কথার মধ্যে কোনো জড়তা নেই। জড়তা না থাকাটাও বেয়াদবি। পীর সাহেব এই বেয়াদবি ছাড় দিলেন। : তুমি কি জানো তোমারে আমি কেন ডেকে আনছি? : জি না হুজুর, আমার ধারণা-জ্ঞান অতি অল্প।

অল্প বললে ভুল হবে, আমার ধারণা-জ্ঞান মাঝে মধ্যে ভয়াবহ উল্টা পাল্টা হয়। শুনেন, একবার হইলো কি...। : এই থামো! আমারে জ্ঞান দিবা না। আমারে জ্ঞান দেয়ার জন্য তোমারে ডাকি নাই। : বেয়াদবি মাফ করবেন হুজুর! আমি আপনাকে জ্ঞান দিতে আসি নাই, জ্ঞান নিতে আসছি।

জ্ঞান হইলো মুমিনের হারানো ধন, যেখানে পাইবে কুড়াইয়া লও। হাদিসের কথা। ঠিক বললাম হুজুর? : তোমারে জ্ঞান দিতে নিষেধ করলাম না! : আর হবে না হুজুর। : শুনলাম তুমি নাকি এলাকায় অস্ত্রের কারবার শুরু করছো? তোমার আস্তানায় নাকি প্রায়ই গুণ্ডা-পাণ্ডাদের আসা যাওয়া হয়? কথা কি ঠিক? : হুজুর আপনে কামেল মানুষ আল্লাহওয়ালা লোক, আপনে সব জানেন। আপনেই বলেন, পদ্মার পাড়ে আমি খানকাহ বানাইয়া নিজের ইবাদত-বন্দেগি নিয়া থাকি।

সারাদিন লোকজনের যাওয়া আসা। কে গুণ্ডা আর কে ফানা ফিল্লাহ, সেই খবর তো হুজুর আমি নাদান বলতে পারবো না। নানান কিছিমের লোকজন আসে নানা তদ্বির-মান্নত নিয়া। ইবাদত-বন্দেগি করে, জিকির-আজকার করে। এমন একটা ইবাদতের জায়গায় বসে আমি অস্ত্রের কারবার করবো, এইটা কি হুজুর কোনো বিশ্বাসযোগ্য কথা হইলো? পীর কদম শাহ বুঝলেন, এই ঘুঘু অনেক ঘাটের জল খাওয়া।

কথার তেলেসমাত তার শেখা হয়ে গেছে। এই লোকের সঙ্গে এখন লাইন ঠিক রেখে কথা বলা বৃথা। তার সঙ্গে কথা বলতে হবে বেলাইনে। পীর কদম শাহ বেলাইনের কথা শুরু করলেন। : আমি অতো কিছু শুনতে চাই না।

আমি শুধু জানি তুমি পীরগিরির তলে তলে বন্দুক-পিস্তলের কারবার শুরু করছো। এই কারণেই তোমারে সবাই ডাকে পিস্তল শাহ নামে। আমি কি বেঠিক বললাম? : অর্ধেক ঠিক অর্ধেক বেঠিক। ... ('চলবে' লিখবো কি না বুঝতে পারছি না। অনেকদিন ধরে মাথায় ঘুর ঘুর করছিলো তাই লিখে ফেললাম।

হুমায়ূনিক স্টাইলে লেখার কোশেশ করেছি। জাস্ট পরীক্ষামূলক, দেখি কীভাবে লিখতে হয়। এই আর কি... বিরাট দুঃসাহস টাইপের কাজ। )

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.