আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিখে নেই জীবন রক্ষাকারী কিছু পদ্ধতি [১]

salehin.arshady@gmail.com

মাঝ রাতের চিৎকারে আপনার ঘুম ভেঙে গেল। দৌড়ে মা-বাবার ঘরে গিয়ে দেখলেন আপনার বাবা মাটিতে পরে আছে। আপনার মা চিৎকার দিয়ে যাচ্ছেন। সামনে গিয়ে দেখলেন আপনাদের ডাকে বাবা কোন রকম সাড়া দিচ্ছেন না। উনার শ্বাস-প্রশ্বাস ও ঠিক স্বাভাবিক নয়।

উনি অঙ্গান হয়ে গেছেন। এখন আপনি কি করবেন?? আপনার কি করা উচিত? আপনার বাবার যা হয়েছে বলে ধারনা করা যায় তা হল cardiac arrest (হৃদপিন্ডের স্বাভাবিক ক্রিয়া বন্ধ)। (এটা Heart attack না কিন্তু) এক্ষেত্রে হৃদপিন্ডের স্বাভাবিক ক্রিয়া হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায়। যেহেতু হৃদপিন্ডের কাজ আমাদের শরীরে রক্ত সাপ্লাই দেয়া তাই এই অবস্থায় শরীরের কোষ গুলোতে প্রয়োজনীয় রক্ত পৌছেতে পারে না। বিশেষ করে ব্রেইনে প্রয়োজনীয় রক্তের অভাবে রোগী অঙ্গান হয়ে যায়।

এই জিনিস টা একদম হঠাৎ করেই হয়ে যায়। কোন রকম warning ও দেয় না। আমরা কিছু বুঝে উঠার আগেই আমাদের প্রিয়জন মারা যায়। সাধারনত cardiac arrest হওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যেই রোগী মারা যায়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার মত সময়টুকু ও পাবেন না।

আপনার প্রিয় মানুষ কে বাঁচানোর জন্য আপনার হাতে আছে মূল্যবান ১০ মিনিট। এই ১০ মিনিটে আপনি যা করবেন তার উপর নির্ভর করবে একজনের জীবন। এখন কথা হল আপনি কি পারেন তার জীবন বাঁচাতে? উত্তর হল অবশ্যই পারেন... কিভাবে?? এর জন্য যা লাগবে সেটা হল সাহস আর প্রাথমিক চিকিৎসার কিছু নলেজ। Cardiac arrest হলে শরীরের কোষ গুলোতে রক্ত পৌছাতে পারে না। প্রথমেই আপনাকে এই রক্ত পৌছানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

এর উপায় হল কৃত্রিম ভাবে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করা যাকে বলা হয় CPR (cardio pulmonary resuscitation) । এটা এমন আহামরি কোন কিছু না। কিন্তু অনেক দরকারি একটা জিনিস যা আমাদের সবার জানা উচিত। কিভাবে CPR দিতে হয় জানা থাকলে আপনি মানুষের জীবন বাঁচাতে পারবেন। বিদেশের স্কুল-কলেজেই CPR দেয়া শিখানো হয়।

বাংলাদেশে খুব কম হলেও কিছু কিছু জায়গায় হয়ত শেখায়। কিন্তু কখনোই আমরা এই বেপার গূলোকে সিরিয়াসলি নেই না। আসেন শিখে নেই কিভাবে CPR দিতে হয় *** প্রথমেই রোগীকে হাসপাতালে নেবার ব্যবস্থা করুন। এমন ক্ষেত্রে রোগীকে ইলেক্ট্রিক শক দিতে হয়। যেটা হাসপাতালেই দিতে হবে।

কেননা আমাদের দেশে এখন ও প্যারামেডিক সিস্টেম চালু হয় নি, যাদের একটা ফোন দিলেই তারা আমার বাসায় চলে আসবে। ***হাসপাতালে নেবার ব্যবস্থা করেই ফিরে যান রোগীর কাছে। মাথা পিছন দিকে করে দেখুন রোগী নিঃশ্বাস নিচ্ছে কিনা। যদি নিঃশ্বাস না নেয় তাহলে আপনার দু আঙ্গুল দিয়ে তার নাক বন্ধ করে, তার মুখের সাথে আপনার মুখ লাগিয়ে ফু দিন। বুক ফুলে উঠে তাহলে বুঝবেন ফু ঠিক আছে।

এভাবে ২বার ফু দিন। প্রতিটা ফু হবে ১ সেকেন্ড করে। *** যদি এর পরেও রোগী কোন ধরনের নড়াচড়া না করে, কাশি না দেয় বা নিঃশ্বাস স্বাভাবিক না হয় তাহলে তার বুকে চাপ দিতে দিতে হবে। নিপলের ঠিক মাঝ বরাবর দু হাত দিয়ে প্রায় ২ ইঞ্চির মত চাপ দিতে হবে। এভাবে ৩০বার চাপ দেবেন।

মনে রাখতে হবে চাপ গুলো যেন খুব দ্রুত হয়। ১ সেকেন্ডে ১টির বেশী চাপ দিতে হবে। *** এভাবেই ২বার ফু দেবার পর ৩০ বার চাপ দিয়ে যেতে হবে, যতক্ষন পর্যন্ত রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে পৌছাতে না পারবেন। **ঘটনাস্থলে আপনি একা না হলে ২জন মিলেও CPR দিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে একজিন মুখ দিয়ে ২বার ফু দিবে আর একজন ৩০বার বুকে চাপ দিয়ে যাবে।

একটি টিউটোরিয়াল ভিডিও দেখে নেই CPR কি শুধুই cardiac arrest এর জন্য? মোটেও না। ** কেউ পানিতে ডুবে গেলে ** হঠাৎ করে কারো এজমা এটাক উঠে স্বাভাবিকভাবে নিঃশ্বাস নিতে না পারলে। এইসব ক্ষেত্রেও আপনি CPR দিয়ে জীবন রক্ষা করতে পারেন। CPR একজনের জীবন বাচাতে পারে। বিপদ দেখে ঘাবড়ে না গিয়ে আমরা যদি সাহসের সাথে আমাদের বুদ্ধি কাজে লাগাতে পারি তাহলে একটা জীবন বেঁচে যেতে পারে।

এটা অনেক জরুরী একটি প্রাথমিক চিকিৎসা, যা আমাদের সবার ই জানা উচিত। বিস্তারিত জানার জন্য ক্লিক করুন www.learncpr.org

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.