আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তথ্যের জাদুঘর শামসের সাথে রাজশাহীর দুই জাদুঘরে- ২



৩. শামসের বর্ণনা মতে, এখানে আছে, গুপ্ত তম্রশাসন ও পাল-সেন পর্বের শিলালিপি। প্রাচীন দুষপ্রাপ্র হিন্দু, বৈধ্য ও ষৈব মুক্তি। সচিত্র অষ্টসহস্রিকাপ্রজ্ঞাপারমিতা এটি একটি বৌদ্ধ দর্শন গ্রন্থ। রাজা হরি বর্মার উনবিংশততম রাজত্বকালে আনুমানিক ইংরেজী ১১০৩ সালে অনুলিখি। অন্য আর একটি বহু চিত্র সম্বলিত অষ্টসহস্রিকাপ্রজ্ঞাপারমিতা, ইং ১২৭৩ সালে অনুলিখিত।

'আদ্য পরিচয়' শেখ জাহিদ কর্তৃক ইং ১৪৯৮ সালে রচিত। বাঙলা পুঁথির মধ্যে এটি প্রাচীনতম পুঁথি। ১৪ পৃষ্ঠা- ২৭ পৃষ্ঠায় সমাপ্ত। এটি একটি পরিপূর্ণ যোগের বই। বাদশাহ শাহজাহানের সময়ে লিখিত কোরআন শরীফ ও পারসিক জ্যোতিষ।

রোমান হরফে বাঙলা দুর্গেশনন্দিনী। মথুরেশ লিখিত শব্দ রত্নাবলী নামক 'কোষ'; বাঙলার বারভূঁইয়া শ্রেষ্ঠ ইশা খাঁর পুত্র মূসা খাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় রচিত। বাংলার স্বাধীন সুলতান মাহমুদ শাহের রাজত্বে ১৫৩৩ ইং সালে একটি সেতুর উদ্বোধন ফলকে বঙ্গারে সংষ্কৃত শিলালিপি। মুসলিম সুলতানদের আমলে লিপিগুলির মধ্যে সুরফুদ্দীন ফিরোজ শাহের শিলালিপিটি প্রাচীন। মাহীসন্তোষ মসজিদের 'হোসেন শাহী মিহরাব' পাঠান স্থাপত্য শিল্পের অন্যতম শ্রেষ্ট নিদর্শন এটি।

শের শাহী কামান। ইং ১৫৪১ সালে সম্রাট শের শাহের শাসন আমলে সৈয়দ আহমদ রুমি কতৃক নিমিত। দলিল দস্তাবেজ, চিঠিপত্র, ফরমানের মধ্যে সম্রাট জাহাঙ্গীর, আহমদ শাহ, ফররুখ শিয়ারের ফরমান উল্লেখযোগ্য। একটি প্রাচীন পান্ডুলিপিতে প্রথম পৃষ্ঠায় সম্রাট আকবর, জাহাঙ্গীর এবং শাহ্জাহানের হস্তলিপি। হস্তলিখিত বাংলা প্রাচীন পুঁথির সংখ্যা ১,৬০০টির অধিক আর বঙ্গারে সংস্কৃত পুঁথির সংখ্যা ৩,০০০ অধিক।

৪. এতো বর্ণণা শুনে আমার ভালোই লাগছিল। সেই ভালোলাগা থেকে জানতে চাইলাম, এখানে ছবি তুলতে দেয়না? শামসের ‘না’ শোনার আগেই চোখ পড়ল দেয়ালে। ছবি তোলার নিষেধাজ্ঞা জানানো নোটিশ। মন খারাপ করে ঘুরছি। হঠাৎ মনে হলো।

দুর, এভাবে সম্ভব না। শামসকে বললাম, চলেন ডিরেক্টরের রুমে। গেলাম। পরিচয় দিলাম। জানালাম, আমার কিছু ছবি লাগবে।

প্রথমে ডিরেক্টর সাহেব না সূচক চেহারা করে রইলেন। পাশ থেকে তার কোনো এক সহকারী আমাদের জন্য আর্শীবাদ হয়ে আর্বিভূত হলে। বোঝালেন, স্যার ওই পত্রিকাতে আমদের একটা নিয়ে রিপোর্ট গেলে তো খারাপ না। আমাদেরও প্রচার প্রচারণা হবে। আমরা এদিক থেকে ব্যাপকভাবে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম।

ডিরেক্টর সাহেবের মন গলল। জিজ্ঞাসা করলেন, কোনগুলোর ছবি নেবেন? আমি চুপ করে রইলাম। তাকে কিভাবে বলি, সবই তুলতে চাই। কিভাবে বলি, পত্রিকার চেয়ে বড় প্রয়োজন আমাদেরই। এমন দূর্লভ জিনিসপত্রের সামনে এলাম ছবি না তুলেই যাবো? এতটা লোভের উর্ধ্বে ওঠা সম্ভব হলোনা।

যেমন সম্ভব হয়নি ফরাসি দেশটারও। যারা প্রদর্শণীর নাম করে এসব নিয়ে গিয়েছিল রেখে দেবার জন্য। যদিও শেষ অবধি পারেনি। এদিকে আমাদের অনুমতি মিলল। তার আগে নির্দিষ্ট করে দেয়ার চেষ্টা চলল, কোন কোন মূর্তির ছবি আমরা নিতে পারবো? জিজ্ঞাসা করলাম, কোনটি কোনটি উল্লেখযোগ্য? সে আলোচনায় শামসের জ্ঞানের আরেক দফা ঝলক দেখলাম।

খোদ ডিরেক্টরও অনেক তথ্য জানেননা যা শামস হরবর করে বলে দিচ্ছে। শুনে শুধু মাথা নাড়ছেন ডিরেক্টর। ভারপ্রাপ্ত ডিরেক্টরের অনেক তথ্যও শুধরে দিচ্ছে শামস। আমরা ডিরেক্টরের রুম থেকে বের হয়ে জাদুঘর ঘুরে ঘুরে দেখছি। আহ মানুষের সৃষ্টিশীলতা! কি বাণিয়েছে! প্রতিটার বর্ণণাই পাচ্ছি শামস থেকে।

ভাইয়া, এটা ১৫৪৩ সালের মূর্তি...এটা উদ্ধার হয়েছে... এটা ভাইয়া ৯০০ শতকের অস্ত্র...এটা পাওয়া গেছে...। মূর্তির সৌন্দর্য এবার শামসের বর্ণনাকে ম্লান করে দিয়েছে। এবার আর ইতিহাস বা শামসের বিষয়ে মুগ্ধতা নেই আমার। আমি মুগ্ধ নয়ণে শিল্পীর নিপুনতা দেখছি। দেখলাম সবই।

দেখলাম ফ্রান্স ঘুরে আসা মূর্তিও। দেখলাম অর্ধ নগ্ন শিব নামে একটি মূর্তি। যা পৃথিবীতে এক পিস। যে মূর্তি আমাদের হলেও সে তথ্য আমাদের জানা ছিলনা। জানিয়েছে ফরাসীরা।

সামান্য অনুমতি থাকলেও অনেকগুলোর মূর্তিরই ছবি নিয়ে বের হলাম। বের হলাম অসম্ভব মুগ্ধতা নিয়ে। (চলবে) ছবি: মিহরাব : এটি আ. ১৩-১৪শ শতাব্দির নৃত্যরত গণেশ : এটি আ. ২২শ শতাব্দির। এটি বছর তিন আগে ফ্রান্সে নেয়া হয়েছিল অর্ধনারী শিব : এটি আ. ১২শ শতাব্দির। এটিও ফ্রান্সে নেয়া হয়েছিল।

এটি পৃথিবীতে এক পিস। যদি আমাদের সেটা বাঙ্গালীদের সেটা জানা ছিলনা, জানিয়েছে ফ্রান্স থেকে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.