শামস বিশ্বাস। যাকে না দেখলে বিশ্বাস করতে পারতাম না মানুষ এতটা সরল হতে পারে। তাকে দেখে আরো ধারণা হল, তাহলে রাজশাহীর মানুষ সবাই এইরকম সরল হয় নাকি?
হয়তো হয়।
কারণ, আমি তেমন জটিলতা কোথাও পেলাম না। ট্রেনের কেবিনে খাবার সার্ভ করা তামীম থেকে বরেন্দ্র জাদুঘরের কর্তা ব্যক্তি পর্যন্ত।
কোথাও না। কেউ-ই না। সবাই আন্তরিক। সবার মধ্যে কোথাও একটা সরলতা আছে। আমি কারনটা খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
কেন তারা সরল? আবহাওয়া? নাকি এখানকার খাওয়া দাওয়া? খুঁজে বের করা দরকার ছিল।
কোথাও গেলে আমি সাধারণত পরিচিত কারো সাথে যোগাযোগ করিনা। শামসের সাথে করলাম। হাসি মুখের এই তরুণ কার্টুনিষ্টকেই আমার সমগ্র রাজশাহী মনে হয়। ঢাকায়, আমার অফিসে একদিন দেখা করতে আসা শামস যেভাবে রাজশাহী সম্পর্কে কথাবার্তা বলল, বোঝা গেল নিজের শহর রাজশাহী সম্পর্কে তার জানার পরিধি ব্যাপক।
তাই মোট্রোপলিন সিটি রাজশাহীর রাস্তায় বের হবার পর দিকশূণ্য হয়ে আমি ফোন দিলাম তাকে। ফোন দেয়ার মিনিট দশেকের মধ্যে হাজির সে।
বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরে যাবো শামস।
চলেন। তবে তার আগে চলেন পদ্মার পার আর রাজশাহী কলেজটা দেখবেন।
চলেন।
সেখানেও না করলাম না।
তার আগে ভাইয়া চলেন রাজশাহীর সেরা চা’টা খাবেন।
শামস সম্পর্কে আমার যে এভারেষ্ট সমধারণা তাতে আমি নিশ্চিত এক অসাধারণ চায়ে চুমুক দিতে যাচ্ছি। শামসের সাথে চলতে চলতে শুনছি তার রাজশাহী বয়ান।
যে রাস্তায়ই হাটছি বা রিকশায় চড়ে যাচ্ছি শামস জানাচ্ছে, সেই রাস্তার ইতিহাস, রাস্তার পাশে পুরাতন বাড়ীর ইতিহাস, সামনে পরা পুরাকীর্তির ইতিহাস।
আমি মুগ্ধ হচ্ছি তার জানার ব্যাপকতা দেখে। শামস সরলভাবে জানিয়ে যাচ্ছে একের পর এক ইতিহাস। এর মাঝে আমাদের অসাধারণ চা খাওয়াও হয়ে গেল।
শামস তার ধারাভাষ্যে জানিয়েই চলছে, ভাইয়া এই রাস্তায় ১৭৪৪ সালে রাজা...
ভাইয়া ওই যে পুরাতন বাড়ীটা দেখছেন ওখানে ১৯২৩ সালে থাকতেন...
আমি মুগ্ধতা আড়াল করার চেষ্টা করলাম।
আমার অতি মুগ্ধতা তার সরলতায় চিড় ধরাতে পারে এই ভয়ে। তবু সামান্য মুগ্ধতার প্রকাশ করলাম, ওই মিয়া এত কিছু শিখছেন কেন?
আমি এমন একটা উত্তর প্রত্যাশা করেছিলাম যে শামস বলবে, নিজের শেকড় সম্পর্কে ধারণা না রাখলে তো এই জন্ম ব্যার্থ হয়ে যাবে। অথবা অন্য কোনো ওজনদার বাক্য।
শামস তার আশেপাশেও গেলোনা। সরলভাবে জানিয়ে দিল, এমনি এমনি ভাইয়া।
অন্যদের কাছ থেকে নিজেকে আলাদা করতে।
আমি আরেক দফা মুগ্ধ হলাম। ভুলে গিয়েছিলাম, শামস সরল একটা ছেলে।
২.
বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের সামনে দাঁড়ালাম। শামসের তথ্যপ্রবাহ চলছে।
বিল্ডিং সম্পর্কে, বিল্ডিং এর আশপাশ সম্পর্কে, এমনকি গাছপালা সম্পর্কেও।
সবই তার জানা।
প্রচন্ড গরমে আমি যেমন শামসের বর্ণণামতো, বিল্ডিং, বিল্ডিং এর আশপাশ, গাছপালা দেখছিলাম তেমনি দেখছিলাম এক আখের রস বিক্রির গাড়ি। মনের তৃষ্ণা মেটাতে তো শামসের কাছে ইতিহাস শুনছিই। সাথে গলার তৃষ্ণাও মেটানো দরকার জরুরী মনে হচ্ছে।
তাই সেখানে গেলাম। শামস বাইরের জিনিস খায়না। সে না খেলেও আমি এবং আমার সঙ্গে থাকা আমার ভাই চরম প্রশান্তি নিয়ে আখের রস পান করলাম।
এরপর চোখের প্রশান্তির জন্য ঢুকলাম বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরে।
(চলবে)
ছবি:
১.জাদুঘরের বাইরের অংশ
২.জাদুঘরের ভেতরে খালি জায়গা
৩.তথ্যের জাদুঘর শামস
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।