আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মহাকাশের নভোচারীদের জীবন যাপনের অজানা কাহিনী।



মহাকাশের বাংলো 'ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন'। যেখানে থাকে নভোচারীরা। যেখানে একটা নিদির্ষ্ট নিয়ম মাফিক প্রতিটি দিন পার করে তারা। আমরা কতটাই বা জানি তাদের এই জীবনযাত্রা। তাদের সেই অজানা জীবনযাত্রার কাহিনী তুলে ধরবো আজকের এই টিউনে।

প্রথমেই জানাই ISS কৃত্রিম উপগ্রহ সম্পর্কর ISS মানে হয় International Space Station। আমাদের পৃথিবীর থেকে মাত্র ২৫০ মাইল ওপরের কক্ষপথে ঘুরপাক খাচ্ছে আইএসএস নামের সবচেয়ে বড় এই কৃত্রিম উপগ্রহটি। আর এর মাঝে আছে অনেক নভোচারী যারা দিন রাত খেটে চলেছে এর নির্মাণের পিছনে। এর নির্মাণ শুরু হয়েছিল ১৯৯৮ সালে মার্চে। ২০১১ সালে এর সকল কাজ শেষ হবে বলে আশা করা যায়।

পৃথিবী থেকে খালি চোখেও মাঝে মাঝে একে দেখা যায়। কি নেই এই উপগ্রহে ল্যাব, লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম, ফায়ার কন্ট্রোল সিস্টেম এবং গৃহস্থালির খুঁটিনাটি সব আছে এতে। তো চলুন দেখে আসি কৃত্রিম উপগ্রহের নভোচারীদের দৈনন্দিন কর্মকান্ড। নভোচারীদের শুভ সকাল সকাল বা রাত বলে কোন কথা হয় না আইএসএস-এ। কেননা ২৪ ঘন্টায় সূর্যাস্ত' ও 'সূর্যোদয়'হয় অনেক বার।

তাইতো তাদেরকে নিয়মিত একটা নিদির্ষ্ট সময় অনুসারে ঘুমাতে ও জাগতে হয়। সকালে উঠেই প্রথমে সোজা দাঁত ব্রাশ করা। পানির সঠিক ও মেপে মেপে পানি ব্যবহার করা তাদের জন্য ফরজ। তাইতো পানি বাঁচানোর জন্য ওদের টুথপেস্টটি বিশেষভাবে তৈরি কার। যাতে করে আর মুখ ধোয়ার জন্য পানি ব্যবহার করা না লাগে।

গোসল করার শ্যাম্পুটাও একই রকম। গোসল করতে হয় ওয়াটার জেট প্রযুক্তিতে। মাধ্যাকর্ষণ বালাই নেই, তাই পানি তো আর নিচে পড়বে না। এ জন্যই পানি ছুঁড়ে মারতে জেট ব্যবস্থা। এই কারনে সাবান ও রাখা হয় পেস্টের মতো টিউবে।

সকালের নাস্তা ও কাজের জন্য রেডি হওয়া। সকালের বাথরুম শেষ করেই চলে আসতে হয় নাস্তা খাওয়ার জন্য। কক্ষপথে ঘুরতে থাকা স্টেশনটিতে ডাইনিং রুম ও টেবিলের ব্যবস্থা করা আছে। এই সকালের নাস্তাটা নভোচারীর পছন্দ অনুসারে দেওয়া হয় যা তারা মহাশূন্যে আসার আগেই নিয়ে আসে। তবে অনেক কষ্ট করে খেতে হয় এসব খাবার।

ভেসে ভেসে খাওয়ার মজাই আলাদা কেননা ওখানে তো আর আমাদের মত মত মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নেই তাই আংশিক তরল খাবার খেতে হয় টিউব টিপে টিপে। আর হিমায়িত খাবার খেতে হয় প্লাস্টিক কনটেইনার কেটে। সাধারণত সকালে ফল জাতীয় খাবারই বেশি খাওয়া হয়। শূন্যে ভাসছে ফলফলাদি। সাধারণত কাজে যাবার আগে কমলা রং এর বিশেষ ধরনের পোষাক পড়ে নভোচারীরা।

যখন তারা আই। এস। এস এর মধ্যে থাকে তাহলে এই ধরনের কাপড় আর যখন বাহিরে গিয়ে কাজ করে তখন এর সাথে বিশেষ হেলমেট ও পড়ে নিতে আর এই ভিতরে যে কেউ যে কোন পোষাক পড়েই এমনিতেই ঘোরা ফেরা কর‍তে পারে। দেখন না দিব্যি গেন্জি গায়ে বসে আছে এক নভোচারী কিন্তু এখানে কাপড় নিয়ে একটা সমস্যা আছে। সমস্যাটা হয় কাপড় পাল্টানো।

এক কাপড় নভোচারীদেরকে টানা ১০ দিন পড়ে থাকতে হয়। শীত লাগলে দুটো করে সোয়েটার পরতে দেওয়া হয়, সঙ্গে উলের মোজা। আর সেই মোজা পরতে হবে পাক্কা এক মাস । কি ঝামেলারে বাবা!!!!আপনি হয়তো বলতে পারেন এত্ত দিন কাপড় পড়লে ময়লা হয়না। জ্বী না।

কেননা সেখানে তো কোন ময়লাই নেই। তাহলে কেমন করে কাপড় ময়লা হবে। তবে যদি যন্ত্রপাতির কারণে যদি কাপড় ময়লা কিংবা নষ্ট হয় তার জন্যও রয়েছে সমাধান_পুড়িয়ে ফেলা তবে যন্ত্রপাতির কারণে যদি কাপড় ময়লা কিংবা নষ্ট হয় তার জন্যও রয়েছে সমাধান_পুড়িয়ে ফেলা! এ কাজেও রয়েছে বিশেষত্ব। তেল পুড়িয়ে পোড়ানো হয় না অপ্রয়োজনীয় কাপড়। স্টেশন থেকে ফেরার পথে বায়ুমণ্ডলে ওগুলো আলগোছে ছেড়ে দেওয়া হয়।

বাতাসের সঙ্গে প্রচণ্ড গতির ঘর্ষণে মুহূর্তে পুড়ে ছাই হয়ে যায় সব নোংরা কাপড়। প্রতিদিনের কাজ কর্ম ও নজরদারি প্রতিদিন এখানে কমপক্ষে ১০ ঘণ্টা করে কাজ করতে হয়। এই ১০ ঘন্টার মধ্যে আছে ক্ষণে ক্ষণে স্টেশনের কম্পিউটারে উঁকি দেয়া,ফিল্টার সাফ করা,কম্পিউটার আপডেট,বিভিন্ন যন্ত্রপাতি মেরামত করা, সাপোর্ট সিস্টেম কেমন চলছে_তার ওপর কড়া নজরদারি রাখতে হয়, পৃথিবীর সাথে সবসময় যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখা,আইএসএস এর যাবতীয় রক্ষানাবেক্ষণ করা সহ অসংখ্য কাজ তবে অকর্ষবিহীন পরিবেশে শরীরে কোনো সমস্যা তালগোল পাকাচ্ছে কি না তা দেখতে কাজের ফাঁকে নিজের দিকেও শকুনি দৃষ্টিতে সারাক্ষণ চেয়ে থাকতে হয় নভোচারীকে। ঝিমুনি এলে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করে খানিকটা ব্যায়াম করে নেন তাঁরা। দৌড়ঝাঁপের জন্য ভালোই জায়গা আছে আইএসএস-এ।

বিশেষ করে হাড় ও মাংসপেশিকে সতেজ রাখতে নিয়মিত ফ্রি-হ্যান্ড কিছু ব্যায়াম করতেই হয় তাঁদের। ক্লান্ত দেহের বিশ্রাম নেয়া। অনেক খাটা খাটুনির পর কাজ শেষ করে নভোচারীরা যখন ফিয়ে আসে তখন তাদের চোখে মুখে থাকি রাজ্যের ক্লান্তি। তারা চায় একটু অবসর আর বিশ্রাম। এই সময় তারা কিছুক্ষণের জন্য হরিয়ে যায় আজানায়।

আর চেস্টা করে দেহের সকল ব্যালেন্স ঠিক রাখতে। তারা এর ফাকে ১ কাপ গরম চা আপথবা ঠান্ডা কফি পান করে থাকে। মহাকাশের বিনোদন মহাকাশযানে মাধ্যাকর্ষণ নেই, আর এটা যেন মহাকাশচারীদের একেবারে শিশু বানিয়ে দেয়। বাচ্চাদের মতোই কতোরকম মজা যে করেন তারা। কেউ মাছের মতো বাতাসে সাঁতার কাটেন, কেউ মেঝে থেকে দেওয়ালে চক্রাকারে দৌড়ান।

মগের সবটুকু কফি শূন্যে ঢেলে এরপর স্ট্র মুখে দিয়ে বাতাস থেকে কফি খান কেউ কেউ। একগাদা ক্যান্ডি শূন্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে পরে হা করে একটা একটা মুখে পোরার খেলাটাও কম মজার নয়। কেউ বা ভেসে ভেসে বই পড়েন। মহাকাশযানের ককপিটে বসে কমান্ডার ও ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ারের অন্যতম কাজ হচ্ছে ভিডিও গেইমস খেলা! গেইমসগুলো তাঁদের জন্যই বিশেষভাবে তৈরি। মহাকাশযানের সফল ল্যান্ডিং কী করে করবেন, তা ওই সিম্যুলেশন গেইম খেলে খেলে রপ্ত করেন তাঁরা।

তবে আইএসএস বা শাটলযানগুলোতে সবচেয়ে বড় বিনোদন হচ্ছে 'দেখা'। জানালা দিয়ে মিনিটের পর মিনিট বাইরের দৃশ্য দেখার লোভ সামলাতে পারেন না কেউ। কক্ষপথে প্রতি ৯০ মিনিটে একবার সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয় দেখা যায়। দুই সময়ে পৃথিবীর গায়ে দুই ধরনের আলোছায়ার ঢেউ তৈরি হয়। ওপর থেকে ওটাই নাকি সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য।

কেউ আবার খোশ গল্পে ব্যাস্ত দাবা খেলাও বাদ পড়ে না মহাকাশে। নিচের ছবিতে দেখেন পৃথিবীর খেলয়ারের সাথে কেমন করে দাবা খেলছেন একজন নভোচারী। এসব ছাড়া বই, সিনেমা, গান তো আছেই। মাঝে মাঝে বেশি একঘেয়ে লাগলে নভোচারীরা স্পেস স্টেশনের এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত দৌড়ে বেড়ান। কে কতো কম সময়ে ককপিট থেকে আইএসএস-এর লেজ ছুঁতে পারবে এমন প্রতিযোগিতাও হয়! আর এ প্রতিযোগিতায় উত্তেজনা বাড়িয়ে দেয় ওজনশূন্য পরিবেশ।

কারণ পৃথিবীর মতো গায়ের জোর বেশি হলেই যে সেখানে তাড়াতাড়ি চলা যাবে, তা কিন্তু নয়। জানতে হবে শূন্যে ভেসে থেকে এগিয়ে যাওয়ার কৌশলও। মহাকাশে রান্নাবান্না ১৯৮১ সালে শাটল অভিযানগুলোর ব্যাপ্তি ছিল দুই দিন। ১৯৯২ সালে তা বাড়িয়ে ১৪ দিন করা হয়। মিশনের মেয়াদ ১০ দিনের বেশি হলে তাকে বলে এক্সটেনডেড ডিউরেশন অরবিটার।

এ ধরনের অভিযানে উচ্ছিষ্ট সংস্কারের জন্য ব্যবহার করা হয় কমপ্যাক্টর এবং খাবার ফয়েল পেপারে প্যাকেটজাত করা হয়। এ রকম অভিযানে থাকে রিহাইড্রেবল প্যাকেজিং ব্যবস্থা। যাতে সামান্য পানি মিশিয়ে ওভেনে দিলেই খাবার তৈরি হবে। অন্যদিকে, শাটল মহাকাশযানগুলোর মাঝ বরাবর থাকে রান্নার ব্যবস্থা। সেখানে পানির মজুদ থাকে।

শুকনো খাবারকে পানি দিয়ে কিছুটা তরল করা হয়। তার পর গরম করা হয় ওভেনে। রান্না-বান্না চলছে ধুমছে স্পেস স্টেশনে তিন ধরনের খাবার রয়েছে। ডেইলি মেন্যু, সেইফ হেভেন ও এক্সট্রা ভেহিকুলার অ্যাকটিভিটি (ইভিএ)। প্রতিদিনের খাবারই হলো ডেইলি মেন্যু।

এখানে শাকসবজি ডেজার্ট-জাতীয় খাবার থাকে। নভোচারীরা ২৮ দিন অভিযানের খাবারের মেন্যু বাছাই করে রাখতে পারেন। বাছাইয়ের সময় নতুন খাদ্য যোগ বা বাদও দেওয়া যায়। ডেইলি মেন্যু সাধারণত ডিসপোজেবল প্যাকেটে থাকে। ফলে থালা-বাসন ধোয়ার ঝামেলা নেই স্পেস স্টেশনে।

একটি প্যাকেটে একটি আইটেম_সালাদ, স্যুপ কিংবা কোনো ডেজার্ট। ফল, রুটি, দুধ থাকে বড় প্যাকেজে। ঘুম হবে ভেসে ভেসে আগেই বলা হয়েছে সকাল বা রাত বলে কোন কথা হয় না আইএসএস-এ। আইএসএস-এ এতবার 'সূর্যাস্ত' ও 'সূর্যোদয়' হয় যে সময় মাপার জন্য তৈরি করা হয়েছে বিশেষ পদ্ধতি। যার নাম কোঅর্ডিনেট ইউনিভার্সাল টাইম।

এটা ধরেই ঘুমানোর কাজ চালিয়ে যান নভোচারীরা। একটা নির্দিষ্ট সময় ঘুমিয়ে নেন সবাই। শূন্যে ভেসে বেশ আয়েশ করেই ঘুমান। যাঁরা কিছুটা দীর্ঘ সময়ের জন্য মিশনে যান তাঁদের জন্য বরাদ্দ হয় 'ক্রু কোয়ার্টার'। স্বল্পমেয়াদি মিশনে যাঁরা যান, তাঁরা স্টেশনের খলি দেয়াল খুঁজে বের করে স্লিপিং ব্যাগ রেখে ওটার ভেতরেই শুয়ে পড়েন।

এর মাঝে সুসংবাদটি হচ্ছে_মহাকাশে নাক ডাকার কোনো আশংকাই নেই। মাধ্যাকর্ষণ না থাকায় মহাকাশে অনেকে চাইলেও নাক ডাকতে পারেন না! জমে উঠে উৎসবের আমেজ ও প্রিয়জনদের ছেড়ে দূর মহাকাশে ক্রিসমাস পার্টি জমিয়ে তুলতে চেষ্টার ত্রুটি করেন না মহাকাশচারীরা। ১৯৬৮ সালে মহাকাশে প্রথম বড়দিন পালন করেছিলেন অ্যাপোলো ৮-এর ক্রু, কমান্ডার ফ্রাঙ্ক বোম্যান, জিম লভেল এবং উইলিয়াম অ্যানডারস। তখন ক্রিসমাস ইভ ব্রডকাস্ট সুবাদে তাদের উৎসবে শামিল হয় বিশ্বের প্রায় ১০০ কোটি দর্শক। ১৯৭৩ সালে স্কাইল্যাব ৪-এর ক্রুরা করেছিলেন মজার কাণ্ড।

ক্রিসমাসে 'ক্রিসমাস ট্রি' না থাকলে কি আর জমে? হাতের কাছে খাবারের প্যাকেট ছাড়া আর কিচ্ছু নেই। মহাউৎসাহে তা দিয়েই তৈরি হলো ক্রিসমাস ট্রি। কাটা হলো কেক। আত্দীয়দের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ও বাদ পড়ল না। আর স্পেস স্টেশনে সবচেয়ে প্রথম বড়দিন পালিত হয় ২০০০ সালে।

মহাকাশচারী বিল শেফার্ড ও তাঁর দলের সবার দিনটি কেটে যায় গিফট খুলে আর আত্দীয়দের সঙ্গে কথা বলে। আর এখন মহাকাশে বড়দিন পালন ডাল-ভাত হয়ে গেছে। এখন টার্কি আর কেক কেটে দিনটি পালন করেন আইএসএস বাসিন্দারা। এই হল মহাকাশের নভোচারীদের মহাকাশের জীবন-যাপনের কাহিনী। সত্যিই এক আ্যাডভেন্জার পূর্ণ জীবন সেখানে।

আবার এর সাথে রয়েছে জীবনের চরম অনিশ্চয়তাও। তবু তারা ভালোবাসে এই কাজকে আর ভেসে বেড়াতে মহাশূন্যে। আমরা এই পোষ্টটির বেশ কিছু অংশ কালের কন্ঠ থেকে নেয়ে হয়েছে। এর জন্য ধন্যবাদ দিতে চাই বিশেষ রিপোর্টার তাসনিম আলম মৌটুসী,ফয়সল আবদুল্লাহ ও ঈশিতা নাসরিনকে। তো পোষ্ট টি কেমন লাগলো জানাবেন।

সকলকে ধন্যবাদ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.