আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মহাকাশের বিস্ময় কোয়েসার (দ্বিতীয় পর্ব)।

তাই জ্যের্তিবিদদের ধারনা এই কোয়েসার গুলো কল্পনাতীত দুরত্বের তারাজগতের ওপারে রয়েছে। তাদের মতে যেটি যত দুরের জ্যেতিস্ক হবে সেটি ততো প্রাচীন। এবং তাদের আরো ধারনা মহাবিস্ফোরনের (Big bang) কিছুকাল পরেই এগুলোর উদ্ভব হয়। এবং প্রসারনের পথ ধরে দুরে ছড়িয়ে পরে। দূরত্ব বাড়ার সাথে সাথে কোয়েসারের সংখ্যার বৃদ্ধি মহাবিস্ফোরন তত্বকেই সমর্থন দেয়।

প্রশ্ন হচ্ছে এত দূরে থাকা সত্ত্বেও কোয়েসার কেন দৃশ্যমান? এর কারন কোয়েসার থেকে প্রতিনিয়ত নিঃসৃত হচ্ছে অবিশাস্য পরিমানের তেজশক্তি এই শক্তি বের হচ্ছে রেডিও তরংগ,দৃশ্যমান আলোক তরংগ এবং এক্স-রশ্মির আকারে। একটি সাধারন গ্যালাক্সী থেকে যে তেজশক্তি নির্গত হয় তার থেকে কয়েকশো গুন বেশী তেজশক্তি নির্গত হয় কোয়েসার থেকে। কোয়াসারের বিকিরন শক্তির মাত্রাঃ কোয়েসার থেকে বিদ্যুতচুম্বকীয় বিকিরনের মধ্যে প্রায় সব তরংগ শক্তি বিকিরিত হয়। তবে এর মধ্যে রেডিও তরংগ,দৃশ্যমান আলোক তরংগ এবং এক্স-রের তৎপরতাই বেশী। সাইফার্ট এবং এধরনের রেডিও গ্যালাক্সী থেকে যে শক্তি বিকিরন হয় তার সাথে কোয়েসার থেকে উদ্ভূত রেডিও শক্তির তুলনা খঁজে পাওয়া যায়।

সাধারন গ্যালাক্সী থেকে উদ্ভূত রেডিও বিকিরনের পরিমান এদের তুলনায় অনেক কম। রেডিও গ্যালাক্সীর সাথে কোয়েসারের রেডিও বিকিরনের সামঞ্জস্য আছে। কিন্ত এটা মনে করার কারন নেই যে এই তেজ শক্তির সৃস্টির প্রক্রিয়া অভিন্ন। সাধারন গ্যালাক্সী এবং শক্তিশালী রেডিও উৎস গুলো আবার দৃশ্যমান আলোক তরংগে বিকিরিত তেজশক্তির দিক দিয়ে কোয়েসার থেকে অনেক পিছিয়ে। একটা সাধারন গ্যালাক্সী থেকে বিকিরিত দৃশ্যমান আলোক তরংগ থেকে একটি কোয়েসারের বেলায় তা প্রায় মানে 1 লক্ষ গুন বেশী।

মোট কথা একটি কোয়েসারের উজ্জলতা আমাদের সূর্যের চেয়ে প্রায় 2 trillion (10^12) বেশী। এবং সবচেয়ে বড় কোন গ্যালাক্সীর চেয়ে 100 (আমাদের ছায়াপথের মত) গুন বেশী উজ্জল। এক্স-রে তরংগের বিকিরন তেজশক্তির দিক থেকেও কোয়েসার সবার উপরে। অবশ্য M-87 ও M-82 গ্যালাক্সী থেকেও প্রচন্ড পরিমান এক্স-রশ্নি বিকিরন হয়। কোয়েসারের উজ্জলতার হ্রাস বৃদ্ধিঃ কোয়েসারের আর একটা গুরুত্তপূর্ন বৈশিস্ট্য হচ্ছে এর উজ্জলতার বিষমতা।

কোয়েসার 3C-345 কে 27 মাস ধরে একদিন পর পর পর্যবেক্ষেন করা হয় এবং একই সাথে কোয়েসার 3C-48 কে মাঝে মাঝে পর্যবেক্ষন করা হয়। এই পর্যবেক্ষনে দেখা যায় যে 3C-345 এর উজ্জলতার হ্রাসবৃদ্ধি হয় অত্যন্ত অস্বাভাবিক ভাবে,এর কোন নিয়ম কানুন নেই। তুলনায় 3C-48 অনেকটা শান্ত; এর উজ্জলতার বিষেশ কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না। কিন্ত হঠাৎ এক রাত্রিতে দেখা গেল যে,মাত্র 15 মিনিটের মধ্যে 3C-48 এর উজ্জলতা শতকরা প্রায় 55 ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। 1963 সালে হার্লান স্মিথ ও ডোরিস হফ লাইট পুরনো ফটোগ্রাফিক প্লেট পরীক্ষা করে দেখতে পান যে 3C-273 কোয়েসারের উজ্জলতা প্রায় 0.7 ক্রম করে বদলে গেছে।

3C-279 কোয়েসারটির মাত্র এক সপ্তাহের ভিতরে 13.4 শ্রেনীর উজ্জলতা বৃদ্ধি পায়। আমাদের ছায়াপথের তারা সমূহের ভিতরেও এমন অনেক নক্ষত্র আছে যাদের উজ্জলতার হ্রাস বৃদ্ধি পায়। কিন্ত সে সমস্ত ক্ষেত্রে এই বিষমতার মেয়াদ আছে। এর কোনটি সল্পমেয়াদী কোনটি দীর্ঘ মেয়াদী। কিন্ত কোয়েসারের বেলায় এই বিষমতার তেমন কোন মেয়াদ লক্ষ্য করা যায় না।

কোয়েসার 3C-345 উজ্জলতা 7 শ্রেনী থেকে 8 শ্রেনী পর্যন্ত পরিবর্তিত হতে দেখা যায় এবং ঠিক 80 দিন পর পর এইরুপ হ্রাস-বৃদ্ধি পেতে থাকে। এর থেকে জ্যোতির্বিদরা ধারনা করলেন যে একটি কোয়েসারের বিষমতার মেয়াদ বুঝি পাওয়া গেল। কিন্ত অবাক করার বিষয় হলো 3C-345 এর এই বিষমতার সময় 60 বার এই 80 দিনের মেয়াদ ঠিক ছিল,কিন্ত 61 তম বারে আর এই বিষমতা আর লক্ষ্য করা গেল না। এত কম সময় অত দূরবর্তী কোয়েসারের বিষমতার এইরুপ বিরাট পরিবর্তন একটা আশ্চর্য ব্যাপার। কোন খ-বস্তু আকশে যে পরিমান জায়গা জুড়ে থাকে,সেই জায়গা পরিভ্রমন করতে আলোর যতটা সময় প্রয়োজন,তার চেয়ে কম সময়ে সেই খ-বস্তুর হ্রাস বৃদ্ধি বুঝতে পারা সম্ভব নয়।

কেন্দ্রীয় অঞ্চলের আলো পাওয়ার খুব সামান্য সময় পরে প্রান্ত অঞ্চলের বিষমতা ঘটলে,বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃস্টি হয়। এর থেকে ধারনা করা যায় যে,কোয়েসার আকাশের অতি সামান্য পরিমান জায়গা দখল করে আছে। এর মানে হলো কোয়েসার অত্যন্ত ক্ষুদ্র খ-বস্তু। কোন কোন কোয়েসার রেডিও প্রখর আবার কোন কোনটি রেডিও শান্ত। কেন এমন হয় তার কারন এখনও জানা যায়নি।

তবে দেখা গেছে যে সমস্ত কোয়েসার থেকে লেজের মত অংশ বেরিয়ে আছে,সে গূলি অত্যন্ত রেডিও প্রখর। যেমন-3C-273 কোয়াসারটির লেজ,এটি কোয়েসার অপেক্ষা অধিক রেডিও প্রখর। এক্স-রের মাধ্যমে কোয়েসারের অধিকতর চমকপ্রদ ফল পাওয়া গেছে। এবং 3C-273 কোয়েসারটি সর্ব প্রথম এক্স-রের উৎস রুপে চিহ্নিত হয়। অবশ্য 1978 সাল পর্যন্ত খুব কম সংখ্যক খ-বস্তুকে এক্স-রে তরংগের মাধ্যমে পরীক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।

এই পরীক্ষায় দেখা গেছে যে কোয়েসারের এক্স-রে তরংগ বিকিরনের পরিমান আলোক তরংগ বিকিরনের প্রায় সমান;কোন কোন ক্ষেত্রে তার চেয়েও বেশী। কেবল মাত্র প্রচন্ড কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই এক্স-রে তরংগ উতপন্ন হয়। সক্রিয় ছায়াপথ গুলি প্রবল এক্স-রে তরংগ বিকিরন করে। আবার কোয়েসারও এক্স-রে তরংগের উৎসে ; সুতরাং কোয়েসারও কোন প্রকার ভয়ঙ্কর প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত বলে মনে করা হয়। চলবে........ গুগল।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.