আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি ও বাঘারু(৫-৮) : আহমেদ মুনির

চন্দ্রবিন্দু ও আরও অনেকে, হেঁটে হেঁটে, প্রতিটি শব্দ আমাদের, পার হয়ে যায়...
৫ মস্ত গোল আর মহিষের ওলানের মতো গোলাপি চাঁদ। বাথানের এই নীরব বিস্তারের মধ্যে শুধু জেগে আছে ছায়া। এই পৃথিবী মহিষের মুখের মতো আশ্চর্য এক সপ্নকে হারিয়ে ফেলেছে বহু আগে। মূর্খ, বোবা, ভাবতে জানে না, অথচ ভালোবাসতে হয়। যেমন দু-হাত বাড়িয়ে থাকা মহিষের এই শিংগুলি।

আর কালো বরফের মতো তাদের গা থেকে গুঙিয়ে ওঠা ঠান্ডা এক সরলতা। কিন্তু অন্য কোথাও তাকে পাবে না তুমি। এ-রাতে এ-বাথানের বাইরে কিছুমাত্র অস্তিত্ব নেই তার। যেমন নেই আমাদের মা। আমরা মানে আমি, বাঘারু আর শুকনো তৃনের গাদায় মুখ গুঁজে শুয়ে থাকা ওই নিঃসঙ্গ বাছুর।

৬ বাঘারু গান গাইলে এই পৃথিবীকে মনে হয় হারানোর পর ফিরে পাওয়া কোনো পিংপং বল। সাদা, লাল, আসমানি, পায়রার ডিমের চেয়ে সামান্য বড় সব পিংপং বল শৈশবে আমারও ছিল। ইস্কুলের বারান্দায় লাফাতে লাফাতে কোথায় যে হারিয়ে গেছে সেইসব। যেমন হারিয়ে গেছে রোলটানা খাতায় লেখা '৭ম শ্রেণী' আর খুব ফর্সা এমন সব ইস্কুলের আপারা। বাঘারু গান গাইছে এখন, সেই সুর ছড়িয়ে পড়েছে উঁচু এই চাপালিশ গাছগুলোর মাথা ছাড়িয়ে।

আর নিচে বাথানের মুখে আমাদের গা ঘেঁষে দাঁড়ানো হাঁ হয়ে থাকা কালো কালো মহিষের হৃদয়... ৭ মাঝে মাঝে এত কান্না জমে যায় যে তার ভারে আমি হাঁটতে পারি না। অথচ প্রত্যাখ্যানের এই রাত্রি ছাড়িয়ে আমি চলে যেতে পারতাম। যারা কাজ করে খায় সেইসব মানুষের ছুড়ে দেওয়া আধুলিতে ভরে উঠেছে আমার দু-হাত। অথচ মাদারির হাত ধরবার জন্য উপেক্ষার বহু প্রহর পেরিয়ে এখানে আমি এসেছি। বিজ্ঞাপনের আলোর নিচে থমকে আছে এই বাজার।

তার মাঝখানে মরা শিঙ্গিমাছের মতো প্রাণহীন একটা অন্ধগলি। ৮ মায়ের কথা মনে পড়ে, বাঘারু। কুড়ানিয়ার ছেলে তুই। এই ভীষণ বনে তার গর্ভ ফুটো করে আলোর মুখ দেখেছিলি। আর আমার মায়ের গন্ধ ছিলো রোদে তেতে ওঠা এই তৃণদের মতো ঝাঁঝালো।

আজ আর তার কথা মনে করতে পারি না। তবু পৃথিবীতে এমন কেউ আছে যার স্নেহের আঁচল ঢেকে দিতে পারে আপলচাঁদের ভেজা কালো মাটি। ঘুম পাড়ানিয়া মাঠ, বাদার জঙ্গল উজিয়ে আমরা এখানে এসেছি। কিন্তু গলা ছেড়ে মাকে ডাকতে পারছি কই! গাছ থেকে ডেঁয়ো-পিঁপড়ে উঠে এসেছে সারা শরীরে। কান্নার রসে কেমন ফুলে উঠেছে ওদের পেট।


 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।