আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাওরে বর্ষা এলেই মৃত্যু বাড়ে

দাগ খতিয়ান নাইতো আমার/ঘুরি আতাইর পাতাইর...

বিড়ম্বিত সড়ক যোগাযোগের মতই অবহেলিত সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের নৌ যোগাযোগ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারের নীতি নির্ধারনী মহল, বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন সুনামগঞ্জের সড়ক উন্নয়নের কথা বললেও হাওরাঞ্চলের নৌ যোগাযোগ উন্নয়নের কথা কেউ বলছেনা। যার ফলে হাওরবাসীর যাতায়াতের পরিকল্পিত, যুগোপযোগি ও প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানো নৌ যোগাযোগের আধুনিক ব্যবস্থা গড়ে উঠছে না। দূর্ঘটনা প্রতিরোধ ও দূর্ঘটনা পরবর্তী উদ্ধার তৎপরতা চালানোর নূন্যতম ব্যবস্থাও নেই। হাওরে যোগাযোগকাজে নিয়োজিত নৌকা গুলোতেও নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই।

প্রতিনিয়ত হাওরাঞ্চলে দূর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়লেও মৃতের সংখ্যা নির্ণয় করা যাচ্ছে না। সরকারের কোন দফতরেও মৃত্যুর প্রকৃত রেকর্ড নেই। প্রাণহানিতে ক্ষতিগ্রস্থরা কোন ক্ষতিপূরণও পাননা। বর্ষায় হাওরে প্রাণহানি এড়াতে হাওরাঞ্চলের নৌপথে নিরাপত্তা ব্যবস্থা রেখে বিশেষ জলযান নির্মাণের কথা বলেছেন হাওরবাসী লোকজন। সুনামগঞ্জ স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্ষায় জেলা ও উপজেলা শহরে, স্থানীয় হাটবাজার, স্কুল কলেজ ও বিভিন্ন গ্রামে যাতায়াতের জন্য ছোটখাটো নৌকাই হাওরবাসীর একমাত্র ভরসা।

সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের রাস্তা বর্ষায় ডুবে যাওয়ার পর নৌপথেই বাধ্য হয়ে চলতে হয় হাওরবাসীকে। নৌ চলাচলের উপর স্থানীয় প্রশাসনেরও কোন নজরদারি নেই। যার ফলে হাওর এলাকার কিছু লোক ছোট নৌকায় ইঞ্জিন লাগিয়ে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণ ব্যবসা করছে। অনেকে নিজস্ব ছোট নৌকায় ও গস্তি নৌকায়ও চলাচল করেন। বর্ষায় হাওর এলাকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, দিরাই, শাল্লা ও ধরমপাশা উপজেলায়।

এসব উপজেলার বিভিন্ন হাওরে প্রতি বছরই দূর্গটনায় মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিরা জানান, ২০০৬ সনে হাওরাঞ্চলে কয়েকটি দুর্ঘটনায় প্রায় চল্লিশজন যাত্রী মারা যান। ওই বছর কানলার হাওরে ৬ জন, ফেব্র“য়ারি মাসে ধরমপাশায় কংস নদীতে ৮জন যাত্রী মারা যান। ২০০৭ সালের জুলাই মাসে সদর উপজেলার তেরহাল হাওরে দুইজন, জুলাই মাসের ২৫ তারিখ তাহিরপুরের লুবার হাওরে ৩জন, অক্টোবরে টাঙ্গুয়ার হাওরে ৪জন মারা যায়। ২০০৮ সালেও প্রায় ২০জন মারা যায়।

২০০৯ সালের জুলাই মাসে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে নোয়াগাও পার্শবর্তী হাওরে স্কুলছুটি শেষে বাড়ি যাওয়ার পথে নৌকা ডুবিতে কাটাখালি বিদ্যালয়ের ৪জন স্কুল শিক্ষার্থী মারা যায়। সর্বশেষ গত ৮ জুন সুনামগঞ্জের ধরমপাশা হাওরে স্কুল শিক্ষার্থী ও যাত্রী বহনকারী একটি নৌকা ডুবে গেলে ৭জন স্কুলছাত্রীসহ ১৬ জন ও গত মাসে টাঙ্গুয়ার হাওরে ৩জন মারা যায়। এভাবেই প্রতি বছর হাওরে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। তবে নৌকাডুবিতে নিহতের পরিসংখ্যান নির্ণয়ে প্রশাসনিক কোন তথ্য নেই এবং ক্ষতিগ্রস্থরা কোন ক্ষতিপূরণও পাচ্ছে না। ধরমপাশা উপজেলার সেলবরষ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলা উদ্দিন শাহ বলেন, নদীপথে নৌচলাচলের নিয়ম কানুন থাকলেও হাওরাঞ্চলে নৌ যাতায়াতের নিয়ম কানুন নেই।

যার ফলে যে কেউই ছোট নৌকায় ইঞ্জিন লাগিয়ে দিব্যি ব্যবসা করে যাচ্ছে। এসব নৌকায় নূন্যতম নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। যার ফলে বর্ষার দূর্গম হাওর পাড়ি দিতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। স্থানীয় প্রশাসনও প্রতিরূল পরিবেশ ও টেকনিক্যাল সাপোর্ট না থাকায় তদারকি ও উদ্ধার তৎপরতা চালাতে পারছেনা। যার ফলে হাওরে প্রাণহাণী বাড়ছে।

সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য এমএ মান্নান বলেন, ‘হাওরাঞ্চলে উন্নত সড়ক যোগাযোগ নির্মাণ কঠিন ও ব্যয় বহুল। তাই হাওরের নৌ যোগাযোগ উন্নত করতে বিশেষজ্ঞ-ইঞ্জিনিয়ার সমন্বয়ে হাওরাঞ্চলের জন্য বিশেষ ‘জলযান’ তৈরি করতে হবে। পাশা স্থানীয় সরকারকে দুর্ঘটনা এড়াতে ও দুর্ঘটনা পরবর্তী ত্বরিৎ পদক্ষেপ নিতে টেকনিক্যাল সাপোর্ট থাকা জরুরি। এ বিষয়টি নিয়ে এখনই ভাবতে হবে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।