আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কলেজ লাইফের বিটলামির আরেকখান নমুনা, এইবারের টার্গেট ডেমো

পথ হারাবো বলেই এবার পথে নেমেছি।

কলেজে থাকনের সময় আমার দুয়েকটা হাড্ডি যে কিছুটা বাঁকা-ত্যাড়া ছিল সেইডা মনে হয় এই পোস্ট পইড়া কিছুটা বুঝতে পারছেন। এইবার আরেকখান বিটলামির কথা শুনাই। কেমিস্ট্রি ল্যাবে ডেমোনস্ট্র্যাটর ছিলেন রেজাউল স্যার। কলেজের ডেমো'রা সচরাচর যেমন হন, ইনি আবার সেইরকম না।

লম্বায় ৫ ফিট ১০ ইঞ্চির কাছাকাছি। শরীরস্বাস্থ্য মাশাল্লা ভালো। কথাবার্তায়ও বেশ স্মার্ট। ফার্স্ট ইয়ারে ল্যাবে সিনিয়র কোন স্যার প্রথমে লেকচার দিতেন। তারপর তিনি চলে গেলে রেজাউল স্যার প্র্যাকটিক্যাল কাজ শুরু করতেন।

ফার্স্ট ইয়ারের মাঝামাঝি এসে দেখি থিওরি যিনি পড়ান, সেই টিচারই পুরো সময় ল্যাব কনডাক্ট করা শুরু করলেন। রেজাউল স্যারের দেখা নাই। স্যাররে জিগাইয়া জানতে পারলাম রেজাউল স্যার বিসিএস প্রিলি'তে কোয়ালিফাই করেছেন এবং পরবর্তী ধাপের জন্য কোমর বেঁধে পড়াশোনা শুরু করেছেন। তাই তিনি কিছুদিন ল্যাব নিবেন না। কিছুদিন পরে অবশ্য রেজাউল স্যার ল্যাবে আসা শুরু করলেন।

তবে এইবার তিনি আর আগের রেজাউল স্যার নাই। পোলাপাইনরে সবসময় ধমকের উপ্রে রাখেন। আমাদের কয়েক বন্ধু পরপর ২ সপ্তাহ ল্যাবে আসে নাই। রেজাউল স্যার শর্ত দিলেন, "ল্যাব করতে চাও? ঠিক আছে তোমাদের ল্যাব করতে দিমু। কিন্তু তার আগে ল্যাবের সবার সামনে কান ধইরা বলতে হবে যে এরপর থিকা নিয়মিত ল্যাবে আসবা " ! চিন্তা করেন কী অবস্থা।

একে তো আমরা তখন আর স্কুলে নাই। তাই এইরকম কান ধরা, চড়-থাপ্পড় জাতীয় পানিশমেণ্ট দেওয়া হইতে পারে সেইটা কারো কল্পনাতেও আসে নাই। তার ওপর আবার ল্যাবে মোট স্টুডেণ্টের এক-তৃতীয়াংশ বিপরীত লিঙ্গের। ওদের সামনেই ! মান-ইজ্জতের একটা ব্যাপার আছে না। ওরা তাই বোধ হয় এভাবে ল্যাব করার চেয়ে বাইরে বসে বিড়ি ফুঁকাকে বেটার অপশন ধরে বাইর হইয়া গেছিল।

রেজাউল স্যার আমাদের ছেলেদের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট একশনে নামলেও মাইয়াগো বিরুদ্ধে তার কৌশল ছিল ভিন্ন। মাইয়াগো সাথে তার আলাপচারিতার নমুনা- -এই মেয়ে, তোমারে অমুকবারে বিকালে দেখলাম পদ্মার পাড়ে। লগে একটা পোলা। -নাতো স্যার। আমি তো পদ্মার পাড়ে যাই নাই।

-নাহ, ঐডা তুমিই ছিলা। আমি দেখছি। ব্লা ব্লা........। । [আরে ব্যাটা, ঐ মাইয়া যদি ওর বয়ফ্রেণ্ডের লগে পদ্মার পাড়ে বেড়াইতে যায় তাতে তোর জ্বলে ক্যান? তাছাড়া এইভাবে ক্লাশের সবগুলা স্টুডেণ্টের সামনে তোর এসব আবজাব বলার তো কোন কারণ দেখি না।

] এরকম কথোপকথনের সময় স্যারের মুখের কোণে মিচকি হাসি লাইগা থাকত। তাছাড়া চোখের দৃষ্টিও কেমন জানি অস্বাভাবিক। আরেকদিনের ঘটনা, ল্যাবে এক মাইয়ার হাতে মেহেদী রঙ দেখে স্যারের মাথা গরম হইয়া উঠল। -এই মেয়ে, তুমার হাতে মেহেদী ক্যান? -এমনি স্যার। -এমনি মানে।

[হালায় পুরাই ফেভিকল। ঘটনা না শুইনা ছাড়বো না। ] -এক বান্ধবীর বিয়েতে গেছলাম স্যার। এই কারণেই মেহেদী। -তোমার বান্ধবীর বিয়া হইয়া গ্যাছে? [মাইয়ার বান্ধবীর বিয়ের সংবাদ শুইনা স্যার মনে অনেক দুঃখ পাইছে বইলা মনে হইল।

] কিছুক্ষণ ঝিম মাইরা থাকার পর, -তা তোমার বিয়া কবে হইব? [হালায় মনে হয় এইবার লুল ফালানোর চিন্তা করতেছে ] -কি জানি স্যার। যেদিন আব্বা-আম্মা দেয় আর কী। ল্যাবের প্রতিটা দিনই এইরকম কোন না কোন মেয়েরে সে বিব্রতকর প্রশ্ন করত। কলেজের ২ বছরে সায়েন্সের কোন মেয়েই বোধ হয় তার জেরা থেকে রক্ষা পায় নাই। কলেজের বাইরে এই রেজাউল স্যাররে নিয়া তাই ব্যাপক সমালোচনা হৈত।

হোস্টেলের কিছু পোলা উনার নাম দিল "জেরাউল" (ছাত্রীদের জেরা করত বৈলাই কী!) এই জেরাউল মিয়ারে ক্যামনে শায়েস্তা করা যায় সেইটা নিয়া গবেষণা শুরু হইল। শেষে তারে ফুনে জ্বালানো হৈবে বইলা ঠিক করলাম। এইসব কাজে সাক্ষী সবুত রাখন ঠিক না। গড়াইতে গড়াইতে পানি অনেকদূর চইলা যাইতে পারে। তাই নিজেই সবকিছু করব সিদ্ধান্ত নিলাম।

এক রাতে ২টার দিকে রেজিস্ট্রেশনবিহীন এক নম্বর থিকা তারে ফোন দিলাম। কয়েকবার রিং হবার পর ফোন ধরল আমাদের জেরাউল মিয়া। -হ্যালো জেরাউল ভাই থুক্কু রেজাউল ভাই? -জ্বী। কে বলছেন? (ঘুম ঘুম কন্ঠ) -কেমন আছেন? -হ্যা ভাই, আমি ভালো আছি। আপনি কে বলছেন? -আপনার কলেজের খবর কী? -হ্যা, এইতো ভালোই চলতেছে।

-বাসার সবাই ভালো? -হ্যা। কিন্তু আপনি কে? -আরে মিয়া আমারে চিনতে পারেন নাই? -না। কে? -ঐ যে সেদিন ঢাকা থিকা একসাথে আসলাম। এইবার চিনছেন? -ঢাকা থেকে একসাথে? -হুম। চিনছেন? -নাতো ভাই।

জেরাউল ভাই ওরফে রেজাউল স্যারের সাথে আরো কিছুক্ষণ ত্যানা প্যাচাইলাম। আমার পরিচয়ের ব্যাপারে তারে অনেকক্ষণ ক্লু দিলাম। উদ্দেশ্য তার ঘুম যেন ভালোমতন কাইটা যায়। শেষ পর্যন্ত এত্তগুলা ক্লু দেওয়ার পরও জেরাউল ভাই যখন আমারে চিনতে পারল না দিলাম এক ধমক, "ধূর মিয়া, আপনি যে আমার কথা এত তাড়াতাড়ি ভুইলা যাবেন আমি চিন্তাও করতে পারি নাই। আপনি মিয়া পুরাই ফাউল।

রাখেন, ফোন রাখেন। " আরেকদিন তারে ভোর সাড়ে চারটায় ফোন করে আমাশয় হইলে কী ওষুধ খাইতে হয় জিগাইছিলাম। এইরকম বেচারারে অনেক জ্বালাইছি। সে আমার কণ্ঠ চিইন্যা গেছিল। অন্য কোন নম্বর থেকে ফোন করলেও বলত, "ও, আপনি সেই লোক?" সেদিন হঠাৎ মনে পড়ল রেজাউল ভাইয়ের সাথে অনেকদিন বাতচিত হয় না।

ভাবতাছি, আইজ রাতে তারে ফোন দিমু নাকি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.