আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ন্যানো প্রযুক্তিতে- ইরানের সাফল্য

আসুন আমরা ২টি ভারী বস্তু আল্লাহর কুরান ও রাসুলের(সাঃ) পরিবারকে(আঃ) অনুসরন করি। উন্নয়নশীল দেশগুলো এখন নিজেদের উন্নয়ন ও কল্যাণের স্বার্থে এবং কৌশলগত দিক থেকে প্রয়োজনীয় একটি প্রযুক্তি হিসেবে ন্যানো প্রযুক্তির চর্চা হচ্ছে। চর্চার প্রাচুর্যে এখন বিশ্বের সাথে প্রতিযোগিতার পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। ইরান সাম্প্রতি বছরগুলোতে ন্যানো প্রযুক্তির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক অর্জনের ক্ষেত্রে ইরানের এই উন্নয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ন্যানো প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সাফল্য ইরানসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্যে একটি সুবর্ণ সুযোগ বলে মনে করা হয়। কেননা এই প্রযুক্তিতে সাফল্যের ফলে উন্নত দেশগুলোর সাথে উন্নয়নশীল দেশগুলোর বৈজ্ঞানিক দূরত্ব কমে যাবে এবং এই প্রযুক্তিতে উৎপন্ন পণ্যসামগ্রীর একটি বাজার তৈরি হবে। তুলনামূলক পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ন্যানো টেকনোলজিতে ইরান পিছিয়ে তো নেই-ই বরং এতো অগ্রসর যে কোনো কোনো উন্নত দেশের পর্যায়ে প্রায় পৌঁছে গেছে। ইরান এখন চাচ্ছে এই প্রযুক্তিকে আরো বেশি কাজে লাগিয়ে বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বের পনেরটি দেশের তালিকায় স্থান করে নিতে। বিশ সালা কর্মসূচির আওতায় এ বিষয়টির ওপর ইরান এখন ব্যাপক গুরুত্ব দিচ্ছে।

এক্ষুণি ইরান ন্যানো প্রযুক্তিজাত পণ্য সামগ্রী উৎপাদনের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্য এবং মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে,আর বিশ্বের দেশগুলোর মাঝে রয়েছে চৌদ্দতম স্থানে। তবে ইরান ২০২৫ সালের মধ্যে তার গৃহীত লক্ষ্য বাস্তবায়নে সক্ষম হবে। ইরানের পরিকল্পনা হলো ২০২৫ সালের মধ্যে ন্যানো টেকনোলজির সাহায্যে উৎপন্ন পণ্য সামগ্রীর বাজার তৈরির ক্ষেত্রে যেন যথার্থ অবস্থানে পৌঁছে যাওয়া যায়। ন্যানো প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ইরান এরিমধ্যে বহু ধরনের ঔষধ তৈরি করছে। প্রায় এক দশক হলো ইরান আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যানো প্রযুক্তির চর্চা করছে।

শুরু থেকেই ন্যানো প্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা আর গবেষণা চালিয়েছে ইরান। এইসব গবেষণার ফলে ইরান বর্তমানে নিজেদের বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমেই ন্যঅনো টেকনোলজির ক্ষেত্রে বড়ো ধরনের সাফল্য অর্জন করেছে। উদাহরণস্বরূপ কার্বন ন্যানো টিউবের কথা বলা যায়। বলা যায় কৃত্রিম রক্তবাহী ধমনী তৈরিতে ন্যানো মলিকিউলের ব্যবহারের কথা কিংবা ন্যানো ব্যাকটেরিয়াল এবং ম্যাগনেটিক সামগ্রী উৎপাদনের কথা। তেহরানের শহিদ বেহেশতি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক ইতোমধ্যে ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি ঔষধ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন।

গুরুত্বপূর্ণ এই ঔষধটির নাম হলো ইন্টারফেরন গামা-১। রাসায়নিক ক্ষত চিকিৎসায় কিংবা জেনেটিক সমস্যাজনিত রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই ঔষধটি ব্যবহার করা হয়। গত বছরের শুরুর দিকে এই ঔষধটি বাজারজাত করা হয়েছে। একইভাবে গত বছরের মে মাসে শহিদ বেহেশতি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকগণ মেরুরজ্জু এবং স্নায়ুর ক্ষয়ক্ষতির চিকিৎসার জন্যে ন্যানো-অণুর ব্যবহার করে সাফল্যের সাথে নতুন একটি ঔষধ আবিষ্কার করেছেন। মেডিক্যাল ন্যানো প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ইরানী বিশেষজ্ঞদের আরো একটি সাফল্য হলো ন্যানো ফাইবার ব্যবহার করে কৃত্রিম লিভার তৈরি করা।

আর্টিফিশিয়াল ব্লাড ভেসেল্‌স তৈরির ক্ষেত্রেও এই প্রযুক্তি সাফল্যের সাথে ব্যবহৃত হয়েছে। গত বছর ইরান ন্যানো প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আরো একটি সাফল্য অর্জন করেছে তা হলো, ইরান ম্যাগনেটিক কনডাকটিভিটি ন্যানো ফাইবার তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। এটি চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ব্যাপক কাজে লাগে। স্নায়ুর ক্ষত চিকিৎসা এবং দেহের সেন্সর সেল মেরামতের ক্ষেত্রে বিশেষত ব্যবহার করা হয় এটি। এর মাধ্যমে মাইক্রো রোবট, মাইক্রো বায়োলজিক্যাল সিসটেম এবং ইন্টেলিজেন্ট কেমিক্যাল সেন্সর তৈরি করা সম্ভব হবে।

বৈজ্ঞানিক এই বিরাট সাফল্যের কারণে বিচিত্র ধরনের পণ্যসামগ্রী উৎপাদন করা সম্ভব যা হবে একেবারেই নতুন এবং অনন্য। ইরানী গবেষকগণ গত বছর আমেরিকার মিনিসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের সহযোগিতায় ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করে মানব জিন ট্রান্সপ্লান্টেশন ডিভাইস বা যন্ত্র আবিষ্কার করেছে। ক্যান্সারের মতো দূরারোগ্য রোগের চিকিৎসায় এর প্রয়োগ নিরাপদ এবং কার্যকরী। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে জিন ট্রান্সপ্লান্টেশন যন্ত্রের আবিষ্কার একটা যুগান্তকারী ঘটনা। অ্যামোক্সিসিলিনের ওপরও ইস্ফাহান শিল্প বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকগণ গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন কার্বন ন্যানো টিউব এবং অ্যামোক্সিসিলিনের মিশ্রণে যে ইলেক্ট্রো-কেমিক্যাল সেন্সর রয়েছে ন্যানো ধাতব অণু ব্যবহারের মাধ্যমে তার পরিমাণ শতগুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব।

এর বাইরেও ন্যানো প্রযুক্তির সাহায্যে আরো চারটি ঔষধ আবিষ্কার করেছেন ইরানী বিশেষজ্ঞগণ। এগুলো হচ্ছে, নিওমিক্সার ফ্যাক্টর-সেভেন, নিওমিক্সার ফ্যাক্টর-এইট, ক্যান্সার প্রতিরোধক ট্রিপটোরেলিন এবং অ্যাজমা প্রতিরোধক সালমেটেরোল। নিওমিক্সার ফ্যাক্টর-সেভেন ইরানের বাইরে একটিমাত্র দেশ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে আর নিওমিক্সার ফ্যাক্টর-এইট ইরান ছাড়া বিশ্বের আরো তিনটি দেশ উৎপাদন করতে পেরেছে। ইরান এখন বায়ো-টেকনোলজিক্যাল মেডিসিন উৎপাদনকারী দেশগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে। শিল্প-কলকারখানাতেও ইরানী গবেষকগণ ন্যানো টেকনোলজির সফল ব্যবহার করেছেন।

উদাহরণস্বরূপ স্মার্ট গ্লাসের কথা বলা যায়। এই গ্লাসের রঙ এবং স্বচ্ছতা পরিবর্তনশীল। আলো এবং উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রেও এই গ্লাস কার্যকরী। ন্যানো টেকনোলজির এই পণ্যটি ব্যবহার করে পরিবেশ ও ত্বকের ওপর ক্ষতিকর পাশ্বর্প্রতিক্রিয়া সৃষ্টিকারী আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির প্রবেশ বন্ধ করা যেতে পারে। এ সব আবিষ্কার বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে ইরানের অগ্রগতি বা সফলতাগুলোর ক্ষুদ্র এবং খণ্ড একটি চিত্র মাত্র।

এ পর্যায়ে ইরানের বৈজ্ঞানিক উৎপাদন এবং লেখালেখির ক্ষেত্রে অগ্রগতি ও উন্নয়নের দ্রুততা সম্পর্কে একটি পরিসংখ্যান দেওয়ার চেষ্টা করবো। বিজ্ঞান সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক তথ্য সংস্থা ইনফেরমেশান সায়েন্সেস ইনস্টিটিউট বা আইএসআইএ’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান ২০০৫ সাল থেকে ২০০৯ সালের এপ্রিল পর্যন্ত পাঁচ বছরে বিগত পাঁচ বছরের তুলনায় ষোলোটি স্তর ডিঙিয়ে বিশ্ব বৈজ্ঞানিক উৎপাদনে শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর তালিকায় উনিশতম স্থানে উন্নীত হয়েছে। এখনো অগ্রগতির সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে। নির্ভরযোগ্য এই প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদন অনুযায়ী ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি বিস্ময়কর। মজার ব্যাপার হলো, এই সকল অগ্রগতিই অর্জিত হয়েছে ইরানের ওপর পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক অবরোধের মধ্যে।

তাও আবার প্রথমত আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে ইরানের নিজস্ব কষ্টসহিষ্ণু বিশেষজ্ঞরাই স্বদেশের সীমিত সুযোগ-সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে এইসব অসামান্য অর্জনগুলো দেশকে উপহার দিয়েছেন। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৭ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.