আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গুমের পর লাশের হাড় দেশজুড়ে তোলপাড়

গুম আতঙ্কের পর এবার মিলছে বস্তাবন্দী মানুষের লাশ, হাড়গোড়। লাশের পরিচয় মুছে ফেলতে ব্যবহার করা হচ্ছে রাসায়নিক পদার্থ, পচানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে এসব হাড়গোড়ের। আর এ অবস্থা উদ্বেগ এবং উৎকণ্ঠা বাড়াচ্ছে সাধারণ মানুষের। সর্বশেষ মাতুয়াইলে ময়লার ভাগাড় থেকে উদ্ধার করা হয়েছে অন্তত চারজনের বস্তাবন্দী লাশ ও হাড়গোড়। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে।

তাদের প্রশ্ন, উদ্ধার হওয়া হাড়গুলো আসলেই কার? আদৌ কি পরিচয় মিলবে এসব ভাগ্যহতের? এর মধ্যে অনেক নিখোঁজ ব্যক্তির স্বজনরা ছুটছেন লাশগুলোর বর্তমান ঠিকানায়। পচা লাশের হাড়গুলোর মাঝেই খুঁজে বেড়াচ্ছেন তাদের স্বজনদের! পরিচয় নিশ্চিত হলে অন্তত মনকে কিছুটা সান্ত্বনা দেওয়া যাবে- এমনই মন্তব্য কয়েকজন নিখোঁজ ব্যক্তির স্বজনদের।  

মাতুয়াইল থেকে উদ্ধারকৃত লাশের হাড় নিয়ে রাজধানীসহ সারা দেশে রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয়েছে। ওই ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক মনির উদ্দিন অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছে। মামলা নম্বর ৫৯।


এদিকে নিখোঁজ ব্যক্তিদের খোঁজে আগত স্বজনদের একজন ছিলেন খোদ পুলিশেরই সদস্য। তবে লাশের এমন অবস্থা দেখে তিনি নীরবে চলে যান। এক মাস আগে ওই পুলিশ সদস্যের ভাই নিখোঁজ হয়েছিলেন।
হাড়গুলো উদ্ধারের খবর পেয়ে ওইদিনই ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছিলেন খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা মো. রিপন। সঙ্গে ছিল নিখোঁজ মিজানুরের পাসপোর্ট আকারের ছবি।

মিজানুর সম্পর্কে রিপনের শ্যালক। রিপন জানান, ১৮ জুলাই সন্ধ্যায় শাহজাহানপুরের রনি নামের এক যুবক মিজানুর রহমানকে মুগদার বাসা থেকে ডেকে মোটরসাইকেলে করে নিয়ে যায়। এর পর থেকে মিজানুরের কোনো খোঁজ নেই। এ ঘটনায় রনিকে আসামি করে থানায় মামলাও হয়েছে।

এ ব্যাপারে মুগদা থানার উপ-পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খায়রুজ্জামান জানান, লাশের টুকরা উদ্ধারের খবর পেয়েই যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।

ডিএনএ টেস্টের পরে নিখোঁজ মিজানুরের স্বজনদের ডিএনএর সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে। মিজানুর রহমানের পরিবারের বরাত দিয়ে তিনি আরও জানান, মিজানুর ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। উত্তরার গৃহবধূ কুলসুম আক্তার কুসুম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ২৯ জুলাই তার স্বামী শিকদার হাসপাতালের সামনে থেকে নিখোঁজ হন। তার নাম বাবুল মোল্লা। তিনি বলেন, হাড় উদ্ধারের খবর জানার পর থেকে আরও টেনশনে আছি।

কীভাবে লাশগুলোর পরিচয় নিশ্চিত করা হবে তা জানতে পারলে আমি যোগাযোগ করব। আমি জানি না সেখানে কি আমার স্বামীর লাশ আছে? ডিএনএ বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শরীফ আখতারুজ্জামান বলেন, উদ্ধারকৃত হাড়গুলোর ডিএনএ পরীক্ষা নিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো আমাদের কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। হাড়ের পরিচয় বের করা সম্ভব কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা একটু সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে সম্ভব।

নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনদের ডিএনএ নমুনার সঙ্গে তা মিলিয়ে দেখতে হবে। ঢাকা মহানগর পুলিশের ডেমরা জোনের সহকারী কমিশনার মিনহাজুল ইসলাম জানান, সিমেন্টের ব্যাগের ভেতর থেকে উদ্ধারকৃত হাড়গুলো স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। হাড়গুলোতে স্ক্রু ও তার লাগানো থাকায় এগুলো এনাটমি বিভাগের বর্জ্য কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। উদ্ধারকৃত সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা পচানো হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। পুলিশ সূত্র দাবি করছে, প্রতিদিন রাতে সিটি করপোরেশনের ৩০০ থেকে ৫০০ গাড়ি মাতুয়াইল ডাম্পিং স্টেশনে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কাজ করে।

গতকাল পর্যন্ত টোকাই, ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী, মাতুয়াইল মৃধাবাড়ির ময়লার ডিপোর ইনচার্জ, সিটি করপোরেশনের গাড়ির ড্রাইভারসহ অন্তত ৩০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এদিকে সর্বশেষ কংকাল উদ্ধারের ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। এ ধরনের প্রতিটি ঘটনায় মানবাধিকার সংগঠনগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করলেও কোনো প্রতিকার মিলছে না। অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর ধারণা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা অস্বীকার করলেও এসব ঘটনায় অপরাধী চক্র এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো একটা অংশ জড়িত। তবে কোনো তদন্তের রিপোর্ট আলোর মুখ দেখে না।

বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হিসাব অনুযায়ী ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশে ১২০ ব্যক্তি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে অপহরণ বা নিখোঁজ হয়েছেন। এর মধ্যে ২১ জনের লাশ উদ্ধার, তিনজনকে ছেড়ে দেওয়া হলেও বাকিদের কোনো খোঁজ নেই। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি নেতা চৌধুরী আলম নিখোঁজসহ একের পর এক অনেক নেতা-কর্মী নিখোঁজ হন। সর্বশেষ গত বছর এপ্রিলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও এক সময়ের ডাকসাইটে ছাত্রনেতা এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি হলেও তার কোনো সন্ধান মেলেনি।  

২০১১ সালে শুধু ঢাকা শহরেই ৩০ জনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।

তাদের মধ্যে ১২ জনের লাশ পাওয়া যায়। দুজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকি ১৬ জন নিখোঁজ। এসব হারিয়ে যাওয়া মানুষের পরিবারের শঙ্কা, তারা সবাই গুপ্তহত্যার শিকার। বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান জানান, গুমের পর লাশের হাড় উদ্ধার সত্যিই অত্যন্ত ভয়াবহ বিষয়।

রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এসব ঘটনা ঘটছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পুলিশ সদর দফতরের উচিত এ ধরনের ঘটনা যে কোনো মূল্যে রোধ করা। একই সঙ্গে নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকা গণমাধ্যমে প্রকাশের ব্যবস্থা করা। নয়তো এর দায় সরকারকেই বহন করতে হবে। উল্লেখ্য, ২৩ আগস্ট মাতুয়াইল মৃধাবাড়ি এলাকার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ডাম্পিং স্টেশন থেকে মানুষের লাশের ১৬টি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ উদ্ধার করা হয়।

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.