আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মোবাইল ফোনে বাংলা ভাষার ব্যবহার

বাংলা

প্রিয় সুধী, আমার সালাম ও শুভেচ্ছা নিবেন। আশা করি সবাই ভাল আছেন। বাংলা ভাষার ব্যবহার সম্পর্কে আপনাদের কাছে আমি ব্যক্তিগতভাবে এ লেখাটি লিখেছি যাতে আপনারা বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে এটি নিয়ে আলোচনা করতে পারেন এবং আপনাদের মতামত দিয়ে জোরালো ভূমিকা রাখতে পারেন। ১৯৫২ সালে ভাষার জন্য রক্ত দিয়ে আমরা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছি। ইউনিসেফ ১৯৯৯ সালে ২১শে ফেব্রুয়ারীকে “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং বর্তমানে বিশ্বের প্রতিটি দেশে আমাদের ভাষা আন্দোলনের সম্মানে ২১শে ফেব্রুয়ারী “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” হিসেবে পালিত হচ্ছে।

এটা নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য গৌরবের বিষয়। মাতৃভাষা হিসেবে ব্যবহারের দিক থেকে বাংলা ভাষার অবস্থান পৃথিবীতে ষষ্ঠ (উইকিপিডিয়া)। কিন্তু আমরা রাষ্ট্রীয় কার্যে ও ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহারিক জীবনে বাংলা ভাষার যথোপযুক্ত প্রয়োগে সক্ষম হচ্ছি না। এখানে সব বিষয় বা সমস্যার উল্লেখ না করে আমি শুধু তিনটি বিষয় উল্লেখ করব। ১. প্রায় তিন কোটি মোবাইল ব্যবহারকারীর দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ।

তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশ Multimedia সুবিধা সম্বলিত উচ্চমানের মোবাইল সেট ব্যবহার করে। কিন্তু উচ্চমানের হওয়া সত্ত্বেও এসব মোবাইল সেটে বাংলা ভাষা ব্যবহারের কোন সুযোগ নেই। উদাহরণ হিসেবে নকিয়া এন-সিরিজ, ই-সিরিজ ও অন্যান্য স্মার্ট ফোন এবং স্যামসাং, সনি-এরিকসন, মটোরোলা, এলজি, এইচটিসি, আই-ফোন ইত্যাদি কোম্পানির মোবাইল ফোনের কখা উল্লেখ করা যায়। ইন্টারনেট সুবিধা থাকা সত্ত্বেও আমরা এসব মোবাইল দিয়ে বাংলা ওয়েবসাইট বিশেষ করে বাংলা পত্রিকা, বাংলা ব্লগ, ইমেইল, ফেসবুক, উইকিপিডিয়া, গুগল ইত্যাদি ওয়েবসাইট বাংলায় ব্যবহার করতে সক্ষম হচ্ছি না। ফলে বাংলা ভাষার বিকাশ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।

সব কোম্পানিরই সাধারণমানের কিছু সেট বাংলা ভাষা সাপোর্ট করে যেগুলো দিয়ে শুধু ফোন করা ও গ্রহণ করা যায় (entry level mobile set)। কিন্তু এসব সেট ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য মোটেও উপযোগী নয় (দু’একটি ব্যতিক্রম ছাড়া)। শুধুমাত্র সাধারণমানের মোবাইল সেটে বাংলা ভাষা ব্যবহার করে প্রকারান্তরে কোম্পানিগুলো বাংলা ভাষাকে অপমান করছে। বিভিন্ন জাতীয় দিবসে পূ্র্ণ-পৃষ্ঠা রঙ্গীন বিজ্ঞাপন দিয়ে তারা বাঙ্গালী সাজার চেষ্টা করে, বাংলা ভাষার জন্য তাদের দরদ প্রদর্শন করে; কিন্তু অন্তরে তারা মোটেও বাঙ্গালী নয়। সুতরাং আপনাদের কাছে আমার আকুল আবেদন, আপনারা বিষয়টি নিয়ে পত্রিকায় লিখবেন, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করবেন, সচেতনতা তৈরি করবেন এবং মোবাইল ফোন প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর উপর চাপ সৃষ্টি করবেন যাতে তারা তাদের তৈরিকৃত সকর শ্রেণীর মোবাইল সেটে বাংলা ভাষা ব্যবহার করতে বাধ্য হয়।

কিছু সেটে যে বাংলা ব্যবহার করা হয়েছে তা অতি নিম্নমানের, অপ্রচলিত ও হাস্যকর শব্দে ভরপুর। এগুলো সংশোধন করে বাংলা একাডেমী কর্তৃক অনুমোদিত বাংলা ব্যবহার করতে হবে। ২. প্রায় সবকটি বাংলা পত্রিকা ওয়েব সংস্করণ বের করে। কিন্তু সবাই ইউনিকোড ভিত্তিক ফন্ট ব্যবহার না করায় বাংলা সমর্থিত মোবাইল ফোনেও ঐগুলো পড়া সম্ভব হয় না। তাছাড়া কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রেও ইউনিকোড ভিত্তিক ফন্ট ব্যবহৃত না হলে অনেক সময় বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।

এ সমস্যার সমাধানে আপনাদের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ৩. বর্তমান দৈনিক পত্রিকাগুলোতে কম্পিউটার বা তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ে সাধারণত একটি অংশ বরাদ্ধ থাকে। এটা নিঃসন্দেহে একটা ভাল দিক। কিন্তু এখানে মাঝেমাঝে ইংরেজি শব্দের কিছু বাংলা পরিভাষা ব্যবহার করা হয় যা অনেক সময় শ্রুতিমধুর হয় না (উদাহরণ: download এর পরিবর্তে নামিয়ে নিন, touch screen এর পরিবর্তে স্পর্শকাতর পর্দা ইত্যাদি)। আমরা মেডিকেলে পড়তে গিয়ে দেখেছি, কিছু মূল শব্দের বাংলা পরিভাষা এতটাই জটিল যে, মূল শব্দটা ব্যবহার করা তার চেয়ে অনেক সহজ (উদাহরণ: সুষুম্নাকাণ্ড, জঙ্ঘাস্থি ইত্যাদি)।

সুতরাং সব শব্দের পরিভাষা করার চেষ্টা না করে কোন কোন শব্দ অবিকৃত অবস্থায় ব্যবহূত হবে এবং বেশি প্রচলিত শব্দগুলোর গ্রহণযোগ্য পরিভাষা কী হবে তা ঠিক করলে ভাষার মাধূর্য বজায় থাকবে এবং বিভ্রান্তি দূর হবে। এ ক্ষেত্রে একটা সার্বজনীন নীতিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। আশাকরি, উপরোক্ত বিষয় গুলো বিবেচনা করে বাংলা ভাষাকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনারা যখাযখ ভূমিকা পালন করবেন। যেহেতু এ বিষয়গুলোতে কথা বলার মতো যথেষ্ঠ জ্ঞান এবং সুযোগ আপনার আছে, সেহেতু এটা করা আপনার একটা দায়িত্ব, আপনার কাছে নতুন প্রজন্মের একটা অধিকার এবং বাংলা ভাষার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের একটা সুযোগ "BANGLA Language in Mobile Phones" নামে ফেসবুকে একটি গ্রুপ তৈরি হয়েছে। আপনারা এতে যোগ দিয়ে বাংলা ভাষার মর্যাদা বৃদ্ধিতে সহায়তা করুন।

লিংক: Click This Link আপনাদের মঙ্গল কামনা করে এবং সর্বস্তরে বাংলা ভাষার সুন্দর ব্যবহারের প্রত্যাশায় শেষ করছি। ভাল থাকবেন। ডাঃ মোবাশ্বেরুল ইসলাম (সোহাগ), সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.