আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাখি আমার একলা পাখি



যদি কোনদিন আকাশটা তীব্র মেঘলা হয় কি করে মানুষ?যদি অর্থহীনতার অর্থ খুব বেশী তীক্ষ্ম এবং স্পষ্ট হয়ে ওঠে তখন কোথায় মুখ লুকায় মানুষ?যখন অমোঘ একাকিত্বের সত্য নিজ উপলদ্ধিতে পরিস্ফূট হয়ে ওঠে পৃথিবী হতে নিজ অস্তিত্ব অস্বিকার করতে চায় তখন কি করে মানুষ?কোন কোন দিন এমন দিন আসে নিরর্থকতার অর্থ ছাড়া আর কোনকিছুই অর্থবহ মনে হয়না। অচেনা শূন্য এক কষ্ট কেবল। কোন কোনদিন কারণে অথবা অকারণে নিজ অস্তিত্ব হতে নিজ অধিকার সরিয়ে ফেলার তীব্রতম আকুলতা তীব্রভাবেই দমন করে মানুষ। অথবা, কেউ কেউ করেনা। বধূ শুয়ে ছিল পাশে-শিশুটিও ছিল; প্রেম ছিল,আশা ছিল-জ্যোৎস্নায়,-তবু সে দেখিল কোন্ ভূত?ঘুম কেন ভেঙে গেল তার? অথবা ঘুম হয়নি বহূকাল- প্রতিটি মানুষই তার জিবনে কখনো না কখনো এ ব্যথার ভার বয়ে চলেন।

চিন্তাশীল মানুষের এ ব্যথা এত তীব্রতম আকার ধারণ করে হয় তা তাকে সৃষ্টিশীল করে তোলে অথবা ধ্বংসপ্রবণ। মানুষ তার অপরিসীম চাহীদায় নিয়ত ঘুরপাক খাচ্ছে। জীবনচক্র এমনভাবে তৈরী কেবলই উন্নততর মানের চিন্তা। জাগতিক উন্নতির পেছনে ছুটতে ছুটতে ক্লান্ত হওয়ার পরও তৃ্ষ্ঞা মেটেনা। কি জানি কি খোঁজে মানুষ,কি জানি কি চায়।

কোন কোন মুহূর্তে আধাঁর হয়ে এলে চারপাশ মানুষ আশ্রয় খুঁজে পায়না আর। আমার একলা বেলার কোন সাথি নেই। আজ যখন আমার সময় অসময়ের, দূদন্ড অবসর হয়না কারো আজ। আজ যখন অর্থহীনতা আমাকে তুচ্ছ করে ফেলছে কেউ নেই উপলদ্ধি করে,আজ হাহাকারের মেঘে আধার হয়ে আসে আমার অস্তিত্ব,আমি যেন খলচরিত্র,এ জীবন আমার নয়,অন্য কিছু, অন্য কিছু , অন্য কিছু চাই আমি। কী সেটা? এখানে এসে থেমে যাই যেন আমরা।

জীবনানন্দের বিপন্ন বিস্ময়ে আমরা সবাই বিপন্ন বোধ করি,কিন্ত বিপন্নের কারণ সন্ধানে খুব একটা অনিসন্ধিৎসূ হইনা। মূলত জীবনের শুরু এখান থেকেই। আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে যে বিপন্ন বিস্ময় খেলা করে কি তার রহস্য?আমাকে একলা করে,আলাদা করে,অস্হির করে। যখন আধাঁর হয়ে আসে চারপাশ সে আধাঁরকে একটু সময় দেইনা কেন,কেন একটু বসিনাআধাঁরে?আধাঁর কে নিয়ে খেলি,আধাঁর নিয়ে ভাবি,আধাঁরকে একটু আলো দেই। আধাঁর কে একটু আলো দেই।

। মানুষের যে জীবন তা কি কেবল যাপন শেষে ধ্বংসতেই সীমাবদ্ধ?তাহলে অন্যান্য প্রাণীকূ ল থেকে এ আলাদা কেন?কোন এক রহস্য এর সৃষ্টিতে,কোন দায়, কোন উদ্দেশ্য। অসীম চিন্তাশক্তি তাকে আলাদা করেছে অন্যান্য প্রাণী থেকে। আমার জন্ম,আমার ;জীবন,আমার ব্যর্থতা-কে আমি? কে আমি? আমি একটি প্রাণী,কিন্তু অন্য সকল প্রাণী হতে আলাদা,কারণ আমি যৌক্তিক প্রাণি;আমি মানুষ কিন্তু অন্য সকল মানুষ হতে আমি আলাদা। মানুষের সকল সাধারণ বৈশিষ্ট্য নিয়েও নিজস্ব চিন্তা,নিজস্ব বোধ সর্বোপরি নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির কারণে প্রতিটি মানুষ নিজ গুণে অনন্য।

আমার দূঃখ আলাদা,আমার আনন্দ নিজস্ব,আমার ব্যথাবোধ সতন্ত্র,আমার চাহিদা ভিন্ন,আমার কল্পনাশক্তি অনন্য,আমার চিন্তাধারা- একেবারেই আমার। কী আমার নিজস্ব চিন্তা? যখন চারপাশ এত তীব্র অন্ধকার হয়ে আসে যে দৃষ্টি মেলে তাকাতে ভয় লাগে তখন দৃষ্টি কিছুক্ষন বন্ধ থাকুক। বন্ধ থাকুক কর্মচণ্চলতা,সকল কর্মব্যস্ততা থেকে কিছুক্ষন নিজেকে আড়াল করি। কিছুখন নিজেকে নিজে একলা সময় দেই,কিছুক্ষণ আপনাতে ডুব দেই। আপনাতে ডুব দিয়ে কিছুখন আপনাকে খূঁজে বেড়াই।

আপনাতে ফিরি ,আপনাতে হাসি,আপনাতে দহি,আপনাকে গলা জড়িয়ে কিছুখন কাঁদি। আমার মাঝে যে আমি তার কাছে একটু বসি,একটু কথা বলি,একটু সাহস দেই,একটু আশার পথ দেখাই। আমার মাঝে যে বিশাল আমি তাকে একটু বাইরে নিয়ে আসি,তাকে নিয়ে একটু বেড়াতে যাই,আমার মূল্যবান সময় তাকে একটু দিয়ে,সময়টুকু অমূল্য করে রাখি। অন্ধকারে ডুব দিয়ে যদি তাকে বের করে আনা যায়,আর কোন কাজ নেই আর। তখন মূক্তি,তখনই পূর্ণতা।

একবার যদি আপনি তাকে পথ দেখান,বাকি জিবন সেই আপনাকে পথ দেখাবে। আপনার হাত ধরে ধরে আপনাকে নিয়ে যাবে আপনার লক্ষ্যে,কিছুতেই পা মচকাতে দেবেনা। আপনার মাঝে যে বিশাল শক্তি,তার সন্ধানে নিমগ্ন হোন। তাই যখন তীব্র অন্ধকার করে আসে চারপাশ তখন চাকচিক্যময় জগতের অন্তরালে প্রকৃত জিবনের যে তাৎপর্য তাকে উপলদ্ধি করি একটু ,আমার একাকিত্বের লক্ষ্যে পৌছাই। তোমার কি ছিল যে তুমি কাঁদ।

তুমি কি নিয়ে এসেছ যে তুমি কাঁদ। তুমি কি নিয়ে যাবে যে তুমি কাঁদ। গীতার এ শ্লোকে জীবনের নগ্ন সত্য পরিস্ফূটমান। তুমি একা বলেই তুমি অনন্য,তুমি একা বলেই মানুষে মানুষে একসূত্রে বাঁধা তুমি তা বোঝ,তুমি একা বলেই স্বার্থহীনতায় যে সকল স্বার্থ লুকানো তা তোমাকে বুঝতে হবে। কারণ তুমি মানুষ,এক ধরণের প্রাণী কিন্তু অন্য সকল প্রাণী হতে শ্রেষ্ঠতর।

তেমার ভিতরে যে স্নিগ্ধ আলো বাইরের চোখ ঝলসানো আলোয় তাকে ঝলসে যেতে দিওনা। "আপনাকে চিন"-পৃথিবীর সমস্ত জ্ঞান সক্রেটিসের এই একটি বাক্যেই নিহিত,আর জ্ঞানই পূণ্য। পাখি আমার একলা পাখি নিমগ্ন মগ্নতায় আধাঁরের পাশে বসে,তাকেএকটু আলো দাও। আধাঁরকে একটু আলো দাও। ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.