আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দিনে ৯৮টি ব্যক্তিগত গাড়ি নামছে ঢাকার রাস্তায়-একটি কপি-পেস্ট(প্রথম আলো থেকে)

ইমানের পরীক্ষা হয় সংকট কালে। ইমানের পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত থাকুন।

আমি অতীব হতবাক হইলাম। দেশের মানুষের হাতে এতো টাকা! আমি তো মনে করিতাম, দেশের মানুষের ভাত জুটে না। জুটিলেও নুন আনিতে তাহাদের পান্তা ফুরাইয়া যায়।

আমার ধারনা যে নিতান্তই ভ্রান্ত তাহা অদ্য খবরের কাগজ পাঠ করিয়া অনুভব করিতে পারিলাম। আরেকটি কথা, ঢাকা শহরে একটি শকট পুষিতে মাসে কত টাকা লাগে তাহা কি কেহ জানেন? এতো টাকা কোথা হইতে আসে? তাহারা কি সব ধরনের কর পরিশোধ করেন? নাকি উতকোচ প্রদান করিয়া সব ঠিক করিয়া লন? "ঢাকায় দৈনিক গড়ে ২২৭টি যানবাহন নিবন্ধিত হচ্ছে। এর মধ্যে ব্যক্তিগত গাড়ির (কার-মাইক্রো-জিপ) সংখ্যাই ৯৮। এর পরই মোটরসাইকেল, প্রতিদিন নিবন্ধিত হচ্ছে ৮৮টি। বাসের নিবন্ধন খুবই কম, দৈনিক গড়ে মাত্র চারটি।

বাকি ৩৫টি যানবাহনের মধ্যে রয়েছে ট্রাক, টেম্পো, পিকআপ ভ্যান ইত্যাদি। এই হিসাব বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ২০০৯ সালের নিবন্ধন তালিকা থেকে নেওয়া। বিআরটিএর কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ব্যক্তিগত গাড়ি নিবন্ধিত হয়েছে সবচেয়ে বেশি। সিএনজিচালিত অটোরিকশার নিবন্ধন কয়েক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। গত বছর ১০টি ট্যাক্সিক্যাবের নিবন্ধন হয়, এর আগের দুই বছর বন্ধ ছিল।

কিন্তু নতুন নতুন গাড়ির চাপে ঢাকার সড়ক ভরে গেলেও পুরোনো গাড়ি উচ্ছেদ হচ্ছে না। রাস্তাও বাড়ছে না। ফলে যানজটে নাকাল হচ্ছে নগরবাসী। গণপরিবহন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় মানুষের ভোগান্তি দিন দিন বেড়েই চলেছে। জানা গেছে, এ অবস্থায় নতুন গাড়ির নিবন্ধন দুই মাসের জন্য বন্ধ রাখা হতে পারে।

রাজধানীর যানজট নিরসনের উপায় খুঁজতে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম যোগাযোগ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে একাধিক বৈঠক করেন গত মাসে। এসব বৈঠক থেকে যেসব সুপারিশ এসেছে, তার ভিত্তিতে ঢাকায় দুই মাস যানবাহনের নিবন্ধন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয় বলে জানা গেছে। একই বৈঠকে শিক্ষার্থীদের পরিবহনে রাজধানীর স্কুলগুলোতে নিজস্ব বাস চালুর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। এসব সিদ্ধান্ত সম্প্রতি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে বাস্তবায়নের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সড়ক ও রেলপথ বিভাগের সচিব মোজাম্মেল হক খান প্রথম আলোকে বলেন, উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের উদ্যোগে নেওয়া সিদ্ধান্তের কাগজপত্র তিনি পেয়েছেন।

দুই মাস যানবাহন নিবন্ধন বন্ধ রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিআরটিএকে চিঠি দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণপরিবহনের দুরবস্থার কারণে ঢাকায় বেশি বেশি ব্যক্তিগত গাড়ি নামছে। বিআরটিএর পরিসংখ্যানেও এর সত্যতা মেলে। ২০০৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে ঢাকায় ৯০ হাজার ব্যক্তিগত গাড়ি নিবন্ধন পেয়েছে। এ সময় বাস নিবন্ধন পায় ছয় হাজার ৪৫৩টি।

২০০৯ সাল পর্যন্ত এক হিসাবে ঢাকায় ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা দুই লাখ ১৬ হাজার। আর মোট যানবাহনের সংখ্যা পাঁচ লাখ ২৭ হাজার। বিআরটিএর হিসাব অনুযায়ী, ২০০৯ সালে এক বছরে ঢাকায় ৫৬ হাজার ৭৭৮টি যানবাহনের নিবন্ধন হয়। বিআরটিএর কর্মকর্তারা বলছেন, বিভিন্ন সরকারি ছুটি ও সাপ্তাহিক বন্ধের দিন বাদ দিলে সংস্থাটি বছরে গড়ে ২৫০ কার্যদিবস যানবাহনের নিবন্ধন দিয়ে থাকে। সে হিসাবে ২০০৯ সালে দৈনিক গড়ে ২২৭টি গাড়ির নিবন্ধন হয়।

নিবন্ধিত যানবাহনের মধ্যে কার, মাইক্রোবাস ২৪ হাজার ৪৬৭টি। বাসের নিবন্ধন হয় এক হাজার ২৬। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক শামসুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ব্যক্তিগত গাড়ি যেভাবে বাড়ছে, তা খুবই বিপজ্জনক। উড়াল সড়ক করেও লাভ হবে না। এখনই বাস চলাচলে অগ্রাধিকার দিয়ে নতুন নীতিমালা করতে হবে।

যোগাযোগসচিব বলেন, ট্যাক্সিক্যাবের সেবা ভালো হলে ব্যক্তিগত গাড়ি এত নামত না। কোন বাহনের ব্যবহার কত: জাপানি সংস্থা জাইকার ঢাকা নগর পরিবহন নেটওয়ার্ক উন্নয়ন সমীক্ষায় (ডিএইচইউটিএস) বলা হয়েছে, বর্তমানে ঢাকার জনসংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। ২০২৫ সালে এ সংখ্যা আড়াই কোটি ছাড়িয়ে যাবে। সরকারের হিসাবে অবশ্য এই সংখ্যা একটু কম, এক কোটি ১০ লাখ থেকে ৩০ লাখ। জাইকার হিসাবে ঢাকায় প্রতিদিন বিভিন্ন পরিবহনে ট্রিপ (এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত) হয় প্রায় দুই কোটি ৩০ লাখ।

এর মধ্যে রিকশায় হয় ৮৪ লাখের বেশি। বাসে যাতায়াত হয় ৭৫ লাখ। পায়ে হেঁটে ৪০ লাখ। ব্যক্তিগত গাড়ি ও সিএনজি অটোরিকশায় যাতায়াত হয় যথাক্রমে ১২ লাখ ও ১৫ লাখ। অন্যান্য বাহনে পাঁচ লাখ।

গত মার্চ মাসে জাইকা সর্বশেষ সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই সমীক্ষার মতে, রাজধানীর মানুষ তাদের ৩২ শতাংশ যাতায়াতে বাস ব্যবহার করে। অথচ ঢাকায় এ পর্যন্ত বাসের নিবন্ধন হয়েছে সাড়ে ১৬ হাজার। বিআরটিএর কর্মকর্তারা বলেন, ঢাকায় বাসের যাত্রী বেশি। কিন্তু মানসম্মত বাস নেই।

ফলে সবাই ব্যক্তিগত গাড়ি কেনার দিকে ছুটছে। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আবদুল আউয়াল বলেন, রামপুরা থেকে উত্তরায় বাসে গেলে তাঁর ২০-২৫ টাকা খরচ হয়। কিন্তু অফিস সময়ে ভিড়ের কারণে বাসে ওঠা যায় না। এই পথে বিকল্প যানবাহন সিএনজি-অটোরিকশা ও ট্যাক্সিক্যাব। ট্যাক্সিক্যাব তো বিলুপ্তপ্রায়।

অনেক কষ্টে সিএনজি পেলেও ভাড়া দেড় শ থেকে দুই শ টাকা। পর্যাপ্ত ভালো বাস থাকলে তাঁর মাসিক ব্যয়ের একটা বড় অংশ বেঁচে যেত। এসি বাস নেই: বর্তমানে ঢাকায় বেভকো নামে একটি কোম্পানি পাঁচ-ছয়টি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত (এসি) বাস চালাচ্ছে। আজিমপুর থেকে উত্তরা পর্যন্ত এই বাসগুলো চলে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বাস কম হওয়ায় প্রায় আধা-এক ঘণ্টা পরপর একটি বাস আসে।

ফলে বিভিন্ন স্টপেজে যাত্রীদের রোদে পুড়ে বা বৃষ্টিতে ভিজে অপেক্ষা করতে হয়। কলাবাগানে কথা হয় মাজহারুল হকের সঙ্গে। তিনি জানান, তাড়া থাকলে এসি বাসে উঠতে পারেন না। হাতে সময় থাকলে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে হলেও এসি বাসে ওঠেন। চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ঢাকায় এসি বাস নামছে না।

’৯৬ সালে উত্তরা-মতিঝিল রুটে প্রিমিয়াম নামে কিছু এসি মিনিবাস চলাচল করত। বেশ জনপ্রিয়ও ছিল এই বাসগুলো। কিন্তু সেগুলো এখন আর নেই। ২০০০ সালের পর ট্রান্সমিলেনিয়াম, নিরাপদ, রোডস্টার নামে রাজধানীতে এসি বাস নামে। কিন্তু সেগুলো স্থায়ী হয়নি।

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথেও কিছু এসি বাস কয়েক দিন চলে বন্ধ হয়ে যায়। সিএনজি-বাস মালিকদের সংগঠন এবিসির সভাপতি খোন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, আগে একটি বাস ঢাকার ভেতরে কমপক্ষে আটবার আসা-যাওয়া করতে পারত। যানজটের কারণে এখন চারবারে নেমে গেছে। যানজট থাকলে ভালো বাস নামবে না। পুরোনো গাড়ি চলছে: সরকার ২০ বছরের পুরোনো যাত্রীবাহী ও ২৫ বছরের পুরোনো মালবাহী যানবাহন রাজধানী থেকে তুলে দিয়ে মানসম্মত বাস চালু করার সিদ্ধান্ত নেয় গত বছরের আগস্টে।

কিন্তু পুলিশ ও বিআরটিএর কর্মকর্তারা পুরোনো যানবাহন জব্দ করে জরিমানার বিনিময়ে ছেড়ে দিয়েছেন। এগুলো আবার রাস্তায় নেমে গেছে। বিআরটিএর সাবেক চেয়ারম্যান এহসানুল হক গত বছরের আগস্টে বলেছিলেন, ঢাকায় ৬০-৭০ হাজার মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন রয়েছে। ওই মাসেই পুলিশ ও বিআরটিএ যৌথভাবে পুরোনো গাড়ি উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। ওই বছরের ৯ আগস্ট থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন হাজার ৩০৯টি যানবাহন আটকও করা হয়।

কিন্তু পুলিশ এসব গাড়ি জরিমানা ও ‘ঢাকা শহরে আর এই যান চালানো হবে না’ বলে মুচলেকা রেখে ছেড়ে দেয়। গত মাসে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পুরোনো গাড়ি উচ্ছেদের অগ্রগতি সম্পর্কিত বৈঠকে পুলিশের প্রতিনিধি জানান, গত বছরের আগস্ট থেকে এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশ ১৮ হাজার ৯৮১টি মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি আটক করে। সেগুলোও ছেড়ে দেওয়া হয়। পুলিশের প্রতিনিধি ওই বৈঠকে স্বীকার করেন, ছেড়ে দেওয়া গাড়ি আবারও ঢাকার রাস্তায় নেমে গেছে। আবার মিনিবাস: একদিকে সরকার যানজট নিরসন ও গণপরিবহন ব্যবস্থা উন্নয়নে পুরোনো যানবাহন তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, অন্যদিকে ঢাকা মহানগর পরিবহন কমিটি (ঢাকা মেট্রো আরটিসি) পুরোনো মিনিবাস অনুমোদন দিচ্ছে।

২০০৪ সালে রাজধানীতে মিনিবাসের চলাচলের অনুমতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আরটিসি। বর্তমান সরকার পুনরায় তা চালু করেছে। ইতিমধ্যে বিহঙ্গ পরিবহনসহ কয়েকটি কোম্পানিকে মিনিবাস নামানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এসব মিনিবাসের বেশির ভাগই পুরোনো। "


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।