আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আত্মকথা

সমুদ্রে সমাধিস্থ হতে চাই

যে ইচ্ছে পূরন হবে না! মানুষ আর প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে মানুষ অন্যান্য জৈবিক চাহিদার পাশাপাশি স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন? কোন চাওয়া, কোন বিশেষ কিছু পাওয়ার ইচ্ছা, অনেক সময় কিছু এলোমেলো চিন্তা (যা হয়ত অন্যের কাছে বোধগম্য নয়)। কিছু স্বপ্ন, চাওয়া বা ইচ্ছা আজন্ম স্বপ্নই থেকেই যায়, কখনও হয়ত পূরন হয় না, হবে না, না হওয়াই যেন নিয়ম। এরকম একটি অবুঝ স্বপ্নকে ভাষায় প্রকাশ করতে আমার এই প্রয়াস। নিজের কাছেই প্রশ্ন আসে স্বপ্নটা- কিভাবে আমার মধ্যে এলো? কখন এলো? কেন এলো? এ প্রশ্নগুলোর উত্তর আমি জানি না।

যেন এগুলো আজন্ম আমার মধ্যে চলছিল, চলছে এবং চলবে। আমার স্বপ্নকে নিয়ে আমি বিব্রত আমার স্বপ্নের কাছেই। এই বিব্রতবোধ থেকেই স্বপ্ন বিষয়ে আমার কলমব্যাথা এবং এখন প্রসব হচ্ছে। আমি যেটাকে স্বপ্ন বলছি চরাচরিত নিয়মে এটাকে স্বপ্ন বলে কিনা আমি জানি না। হয়ত কিছু ছিন্নভিন্ন কথা, ভাবনা, চাওয়া, ইচ্ছা বা আকাঙ্খা বলা যায়।

আমার স্বপ্ন, আমার সমাধি একসময় মানুষ মানুষ হয়ে জন্মাতো, তার পরিচয় হত সে মানুষ, মানুষ আর শুধুই মানুষ। সহজ-সরল, সুন্দর, বিশুদ্ধ সুন্দর প্রকৃত মানুষ। ধীরে ধীরে মানুষের মাঝে সৃষ্টি হয় গোত্র, দন্ধ, বংশ, জাত-পাত, দেব-দেবী, বার্তাবাহক, ইশ্বর, ধর্ম, স্বর্গ-নরক ইত্যাদি। এখন মানুষ হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ইত্যাদি হয়ে জন্মায়। আমার কথা হচ্ছে সমাধি নিয়ে, জীবনের অন্যপৃষ্ঠার আস্তানা নিয়ে।

মানুষ যখন অখন্ড ছিলো তখন তাদের সমাধি বা তার প্রক্রিয়া এক বা অভিন্ন অথবা এই বিষয়ের উপর তাদের কোন নিয়ন্ত্রন থাকত না। এখন ধর্ম বিভিন্ন, মানুষ ছিন্নভিন্ন। আল্লাহ, ইশ্বর, খোদা, ভগবান, গড হাজার নামের হাজার বিশ্বপতি, সবাই অতিক্ষমতা সম্পন্ন। দেখা যায় একজন যা পছন্দ করে অন্যজন তা অপছন্দ করে, একজন যা ভালবাসে অন্যজন তা ঘৃনা করে, একজন যে বিষয়ে যীশু অন্যজন সে বিষয়ে শিশু। ইশ্বরদের মাঝে বিরোধ বাঁধলে আমার আলোচ্য সমাধি নিয়েও বিপত্তি দেখা দেয়।

কোন ইশ্বর বলে মাটিতে পুঁতে ফেল কেউ বলে পুড়িয়ে ফেল। অনেক নিয়ম, অনেক মন্ত্র, অনেক তন্ত্র দেখা দেয়। অবশ্য তন্ত্র-মন্ত্র নিয়মগুলো যে মানুষের সৃষ্টি তা সহজেই বুঝা যায়। কারন সব নিয়মেই মৃত্যুর পর মানুষের কাছাকাছি বা দৃশ্যত বা স্মৃতিতে থাকার চেষ্টা প্রানান্ত। মানুষ মরতে চায় না।

আমি আসলে বলতে যাই এক হয়ে যায় আর এক, বলতে চেয়েছি আমার সমাধি নিয়ে কিছু কখা কিন্তু মনে হচ্ছে মানুষের ইতিহাস লিখছি, যদিও ইতিহাস লেখার ইচ্ছা আমার আদৌ নেই। আমার সমাধির কথায় আসি- মনে কখন, কিভাবে এই ইচ্ছা বা স্বপ্নের (যাকে আমি বলি সমাধিচ্ছা) বীজ বপিত হয়েছে তা আর আমার স্মৃতি থেকে উদ্ধার করা যাবে না- কবর হব না ছুঁবো না অগ্নিশিখা হব না মমি কোন সমাধি স্মৃতিবন্ধন না মানি সাগরে হব বিলীন হ্যাঁ তাই!‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌ আমার ইচ্ছা, একান্ত ইচ্ছা মৃত্যুর পর আমার কবর না হোক, আমাকে পোড়ানো না হোক। প্রচলিত অন্য কোন নিয়ম না মেনে আমাকে সমুদ্রে ডুবিয়ে দেয়া হোক। আমি আমার কোন স্মৃতিচিহ্ন পৃথিবীর বুকে দৃশ্যত রাখতে চাই না, আমি সমাধি চাই না, চাই না চিহ্ন, চাই না পুষ্পমাল্য, চাই না অশ্রু, চাই না সমাধি নামক কোন শূণ্যস্থানে কেউ এসে দাঁড়াক। আমি চির বিলীন হতে চাই।

মৃত্যুর পর আমাকে ভারী পাথরে বেঁধে সমুদ্রে ডুবিয়ে দেয়া হচ্ছে, আমি জল ছুঁয়ে, সমুদ্রের শীতলতা স্পর্শ করে, পৃথিবীর সকল কোমলতা গায়ে মেখে গভীর থেকে গভীরে আরও গভীরে আরও আরও গভীরে নেমে যাচ্ছি মৌন নগ্ন দেহে। সমুদ্রে মাছে ঝিনুকে অক্টোপাসে মিশে যাচ্ছি, তলিয়ে যাচ্ছি তল থেকে অতলে। এরকম একটি স্বপ্ন দেখতে দেখতে প্রায়শই আমি ঘুমিয়ে পড়ি। আমি জানি আমার অদ্ভুত ইচ্ছের কথা শুনে চমকে যাবে ধর্ম-ইশ্বর-পুরোহিত আর অন্ধ ধার্মিক। কিন্তু আমি কি করি? আমার যে এভাবেই সমাধিস্থ হতে ইচ্ছে করে একান্তভাবে এবং এ ইচ্ছে হয়ত আমার কখনো পূরন হবে না! তবু আমি স্বপ্ন দেখি।

দেখবো। আমার সমাধির কোন চিহ্ন থাকবে না। আমার কোন সমাধি থাকবে না। সমাধি বলে কিছু নেই। আমি বলে কেউ নেই।

কেউ থাকে না। সত্যিই কেউ থাকে না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।