আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খুদেদের জন্য গণিত কর্মশালা-২

অলসদের দিয়ে কী আর হয়। আলসেমি ছাড়া!

আজকের ক্লাশটা ছিল সংখ্যা চেনানো নিয়ে। তবে, শুরু করেছি একটি ম্যাথম্যাজিক দিয়ে। কেমন করে সংখ্যার টানে সবাইকে সমান করে দেওয়া যায়। ক্লাশের সবাই. এক একজন একটি করে সংখ্যা নিয়ে কাজ করেছে।

কেও নিয়েছে ২৫, কারো ২৩, কারো ৩১২। তারপর তারা সবাই কিছু যোগ বিয়োগ গুণভাগ করেছে। শেষে দেখা গেল সবার কাছে একই সংখ্যা আছে! আমি ভাবছি প্রতিদিনের ক্লাশের শুরুতে এমন একটি সংখ্যার খেলা শেখানো হবে। কাল শেখাবো কীভাবে বন্ধুত্বের মাধ্যমে কোন একজনের বয়স বের করে ফেলা যায়, সামান্য যোগ বিয়োগ করে। সংখ্যার ব্যাপারটা খুব সহজভাবে আমাদের সন্তানদের শেখানো হয় না বলে আজকে বুজতে পারলাম।

১১ যে আসলে ১০‍+১ এটাই তো শেখানো হয়নি! কী সাংঘাতিক। [আমি একবার দেখেছি আমার এক ভাগনীকে ঢাকার একটি বিখ্যাত স্কুলে ১০১ থেকে ৬০০ পর্যন্ত কথায় লিখতে দেওয়া হয়েছে, বাড়ির কাজ হিসাবে!!] অথচ গণিতের প্রতি ভালবাসাটা শুরু হয় সংখ্যা দিয়েই। এখন আমরা যে দশভিত্তিক সংখ্যা চিনি তার উদ্ভব ম্যালা আগে হয়েছে। তবে, খ্রীস্টপূর্ব ৬০০ (??) বছর আগে আর্যভট্টের শুণ্য আবিস্কারের পর থেকে এটি এখনকার ফরমে এসেছে। আমাদের হাতের দশ আঙ্গুল থেকে এর উদ্ভব।

মায়াদের সিস্টেম ২০ অঙ্ক বিশিষ্ট। এখন আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় সংখ্যা হলো গুগল, ১ এর পর ১০০ শূণ্য। এবং গুগলপ্লেক্স গুগলের পর ১০০ শূণ্য!! তবে, আমাদের দেশে সবচেয়ে বড় সংখ্যা হল পরার্ধ, ১ এর পর ১৭ টি শূন্য। আমার ক্লাশে অবশ্য আমি কোটির ওপরে যাচ্ছি না। ক্রম টা জানা থাকাটা খারাপ না।

প্রথমটি ছাড়া প্রতিটি তার ওপরের চেয়ে ১০গুণ বড়। একক দশক শতক সহস্র (হাজার) অযুত লক্ষ নিযুত কোটি অর্বুদ পদ্ম খর্ব নিখর্ব মহাপদ্ধ শঙ্কু জলধি অন্ত্য মধ্য পরার্ধ লিখতে হবে আসলে এভাবে পরার্ধ মধ্য অন্ত্য জলধি শঙ্কু মহাপদ্ধ নিখর্ব খর্ব পদ্ম অর্বুদ কোটি নিযুত লক্ষ অযুত সহস্র শতক দশক একক (২ লাইন হয়ে গেল) কয়েকটা বিষয় লক্ষণীয়। যেমন পদ্মের হাজারগুন হলো মহাপদ্ম! যেমন ইংরেজীতে মেগার হাজারগুন হলো গিগা! আমাদের শিক্ষার্থীদের একটি দূর্বলতা হলো তাদের সংখ্যার স্থানীয় (পজিশনাল) ও স্বকীয় (ইনট্রিনসিক) মান বুঝতে না পারা। ওদের যদি আপনি দুই কোটি দুই অঙ্কে লিখতে বলেন তাহলে তাদের মাঝের শুণ্য নিয়ে ঝামেলা তৈরি হয়। কিন্তু যদি লিখতে বলেন দুই কোটি পনের লক্ষ ত্রিশ হাজার একমত বারো, তাহলে কিন্তু মোটেই কোন অসুবিধা হয় না।

আজকে এই জায়গাটা নিয়ে কাজ করেছি। আমার ক্লাশের ছেলেমেয়েবা চতুর্থ বা পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। কাজে তাদের এই সমস্যা থাকার কথা ছিল না, কিন্তু আছে। এটি সারাদেশে প্রায় একই। গণিত অলিম্পিয়াডে আমরা একটা সংখ্যা এরকম লিখতে দেই এবং দেখি যে প্রায় ৪ জনে ১ জন এটা লিখতে পারে না! আজকে আর একটা বিষয়ছিল - গুণ আর ভাগ।

ভাগ যে, আসলে বিয়োগ আর গুণ যো আসলে যোগ এটা বোঝানো প্রায় অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে! বেচারারা কতোটা না খারাপভাবে তাদেরকে পড়ানো হয় স্কুলে, শেখানো হয় না। আজকে মার্বেল ভাগাভাগি করেছে ব্যবহারিকভাবে। অঙ্ক না করে, প্রাচীন পদ্ধতিতে। ভাগের কনসেপ্ট বোঝানোর আর কোন নতুন বুদ্ধি পাচ্ছি না। যোমন ১৬টা মার্বেল আয়ুব আর মুনিরের মধ্যে ভাগ করতে হবে যাতে মুনির যা পাবে আয়ুব তার থেকে ২টা বেশি পাবে।

এটি করানো হলো প্রথম নিয়ম থেকে‌ নিচের মতো করে মুনির আয়ুব মোট ১ ১‍+২=৩ ৪ ২ ২‍+২ =৪ ৬ ৩ ৩+২ =৫ ৮ ৪ ৪+২ =৬ ১০ ৫ ৫+২ =৭ ১২ ৬ ৬‍+২ =৮ ১৪ ৭ ৭+২ =৯ ১৬!!! এভাবে ভাগের ব্যাপারটা বোঝানোর পর তাদেরকে আমি শর্তটা পাল্টে দিয়ে বললাম ঔ ১৬ টা মার্বেল এখন এমনভাবে ভাগ করো যাতে আয়ুব আমার থেকে ৩গুণ বেশি পায়। আমি দেখলাম এই পদ্ধতিতে ওরা ব্যাপারটা সহজে পারলো। মার্বেল ভাগ করতে গিয়েও তারা সহজে সেটা পারলো। পরে যখন আমরা কোন নিয়ম খোজার চেষ্টা করবো তখন এই ছবিটা তাদের অনেক সাহায্য করবে। এই ধরণের সমস্যার সমাধার বীজগণিত দিয়ে করে ফেলাটা (এক্স ধরে) খুবই সোজা।

কিন্তু তাতে শিক্ষার্থীদের কেবল যান্ত্রিক দক্ষতা হয় বলে আমার মনে হয়, আসলে কনসেপ্টটা ক্লিয়ার হয় না। ফর্মুলা ছাড়া গুণতে শেখাটা দরকার। সবার সেকেন্ড ডিয়ারেন্সিয়াল নেগেটিভ হোক।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।