আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মনসা, সুফিবাদ ও সর্পসিনেমা

সঙ্গে সাহিত্যের সুবাস ...

আমাদের শৈশবে বা কৈশোরে যখন মফস্বলে বসে সিনেমায় আসক্ত হওয়া শিখে গেছি, সেই আশির দশকে, আমাদের ছোট্ট জনপদে তখনও ভিসিআরের গণতন্ত্রায়ণ ঘটেনি, তখন পর্যন্ত এফডিসি থেকে উৎপাদিত সিনেমাই আমাদের কাছে একমাত্র সিনেমার প্রকরণ। এবং অনেক কিছুর পাশাপাশি তাতে লক্ষ করেছি সাপনির্ভর ছবির প্রাবল্য। নাগিনী নিমেষে নারীতে রূপান্তরিত হচ্ছে -- এই ফ্যান্টাসি আমাদের নাবালক মনকে ঠিক ততখানিই আমোদিত করতে পারতো যেমনটি আজকের ‘অবতার’ ছবিতে, প্রধান চরিত্রটি যেমন করে মানুষ থেকে না’ভি উপজাতিতে রূপান্তরিত হয় এবং আমাদের চমৎকৃত করে। সেসব ছবিতে মানুষের চাইতে সাপই যেন বেশি দেখা যেত, নায়িকাদের কপালের টিপটাও হয়ে উঠতো ক্ষুদ্র একটি সাপের রেখা। যাহোক আমরা ক্রমশ সাবালক হয়ে উঠি, ভিসিআরের যুগ পেরিয়ে আমরা স্যাটেলাইট টেলিভিশনের যুগে এসে হিন্দি ও ইংরেজি ছবির সঙ্গে অধিক পরিচিত হই।

সিনেমার বাড়তি নেশা আমাদের একসময় ফিল্ম সোসাইটিসমূহের নানা প্রদর্শনী ও বর্তমানে ডিভিডি সার্কিটে হলিউড-বলিউডের বাইরেও চিলি থেকে চীন বা সুইডেন থেকে রাশিয়ার ছবিতে মজতে বাধ্য করেছে। সিনেমার ছায়াপথ আমাদের আচ্ছন্ন করে রাখে। তবে আমাদের সাবালকত্ব অর্জনের পরে, বাংলা ছবির প্রাক্তন দর্শক হিসেবে, আজ যখন এফডিসির সিনেমার দিকে তাকাই বা স্মরণ করি, সেসব ছবিকে খুব নাবালক মনে হয়। অথচ ইন্ডাস্ট্রির জন্য, যার নানা উৎপাদন একসময় আমাদের সিনেমার পিপাসা মিটিয়েছে, একটা মায়া থেকেই গিয়েছিল। নতুন শতকে এসে দেখলাম সেই মায়ামাখা ইন্ডাস্ট্রি অতল গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছে।

আমরা তাই পতিত ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে গবেষণায় নামলাম। গবেষণা-ফলাফল বই আকারেও বেরুলো। সমসাময়িক কিছু ছবিকে বিশ্লেষণ করতে উদ্যোগী হয়েছিলাম গবেষণার আওতায়। নির্বাচিত ৩টি ছবির মধ্যে একটাতে দেখা গেল আবার সেই সাপের ফ্যান্টাসি। সাবালক আমরা নাবালক সেই নির্মাণের ব্যঙ্গ করলাম এভাবে: “ঢাকাই ছবিতে সাপের গুরুত্ব সাংঘাতিক।

ফ্যান্টাসি-পোশাকি-সামাজিক সব ছবিতেই সাপের দেখা মেলে। এমনকি সাপেদের জীবন নিয়ে প্রচুর ছবি নির্মিত হয়েছে (নাগ নাগিনী, নাগিনী কন্যা, শীষনাগ প্রভৃতি ছবির নাম স্মর্তব্য), সেসব ছবিতে নাগিনী কন্যার সঙ্গে রাজপুত্রের প্রেমের ঘটনা দেখানো রীতিমতো স্বাভাবিক টেক্সটে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ে যে ছবিতে বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে প্রবল ক্ষমতাধর চশমা আবিষ্কৃত হচ্ছে সেই একই ছবিতে সর্পরূপী মানুষ বা মনুষ্যরূপী সর্পকে আমরা দেখছি। (রঙ্গীন চশমা) সিনেমায় সাপের এই প্রবল উপস্থিতি কেন, কেন অন্যান্য সরীসৃপ যেমন কুমীর কিংবা কেঁচোকে দেখা যায় না, তা নিয়ে আলাদা গবেষণা হতে পারে। বাংলাদেশী সিনে-ইন্ডাস্ট্রি কী কারণে ভারতীয় পুরাণ কিংবা মনসামঙ্গল-এর লিগ্যাসি বহন করে চলেছে, তাও বিরাট প্রশ্ন, যার সমাধান হওয়া জরুরি।

” (নাসরীন ও হক, ২০০৮: ১১৫-১৬) এরপর কিছুদিন কাটলো। ইতালি থেকে এক গ্রন্থ-সম্পাদক হঠাৎ ই-মেইলে যোগাযোগ করলেন। আমাদের গ্রন্থের খবর পেয়েছেন অনলাইনে, এবার আমার কাছ থেকে বাংলাদেশী কয়েকটি ছবির রিভিউ চান, বইতে অন্তর্ভুক্ত করতে চান। তবে তার বইটি হবে যত অদ্ভূতুড়ে জঁরা বা সিনেমার ধরন আছে তার রিভিউয়ের সংকলন, যাতে চলচ্চিত্র-উৎপাদনকারী সব দেশের প্রতিনিধিত্ব রাখতে চান তিনি। জঁরাগুলো হলো হরর, ফ্যান্টাসি, থ্রিলার, সাইকোথ্রিলার, ক্রাইমথ্রিলার ইত্যাদি।

তার চাপাচাপিতে একটা হরর ফিল্ম রিভিউ করে পাঠালাম, যদিও বাংলাদেশে হরর ছবি হয়না বললেই চলে। এবার ফ্যান্টাসি ছবির পালা। আমি ভাবছিলাম ইবনে মিজানের ‘বাহাদুর’ ছবির কথা। কিন্তু ঐ ছবির ডিভিডি বাজারে আসেনি। আমার সাপনির্ভর ছবির কথা মনে পড়লো।

সর্পরূপী মানব/মানবী বা মানব/মানবীরূপী সর্পের মতো ফ্যান্টাসি আর কয়টা হয়? রাইফেলস স্কোয়ারে খুঁজে দুটো ছবি পেলাম -- শেখ নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘নাগিন’ আর মাসুদ পারভেজ পরিচালিত ‘নাগপূর্ণিমা’। ‘নাগপূর্ণিমা’ ছবির নামটা মনেই ছিল, একটি গানের কারণে -- এ্যান্ড্রু কিশোরের কণ্ঠে গানটি হলো ‘তুমি যেখানে, আমি সেখানে, সেকি জাননা?’ লিরিক খুব সাধারণ, কিন্তু আলম খানের কম্পোজিশন দারুণ। সাপখোপের ছবিতে এরকম একটা আধুনিক কম্পোজিশন, ভাবাই যায়না! পরে এই গানটি বিজ্ঞাপনেও ব্যবহৃত হয়েছে। ছবি দুটো সংগ্রহ করে ফেললাম। এবার দেখার পালা।

‘নাগিন’ ছবির পরিচালক শেখ নজরুল ইসলাম আশির দশকেই ‘এতিম’ এবং ‘মাসুম’ নামের শিশুচরিত্রনির্ভর সামাজিক ছবি বানিয়ে মোটামুটি নাম করেছিলেন। আর মাসুদ পারভেজ, ‘নাগপূর্ণিমা’ ছবির পরিচালক তো এ্যাকশন ও মার্শাল আর্ট ছবির পরিচালক-প্রযোজক-নায়ক(সোহেল রানা) হিসেবে বিশেষত্ব অর্জন করেছিলেন। আমি খানিক অবাক হলাম সামাজিক ও এ্যাকশন ছবির পরিচালকরা নাগ-নাগিনীদের নিয়ে ছবি করেছেন! আবার রোমান্টিক নায়ক-রাজ রাজ্জাক (নাগিন), লাস্যময়ী-আধুনিক নায়িকা ববিতা (নাগপূর্ণিমা), এ্যাকশন হিরো সোহেল রানাও (নাগপূর্ণিমা) এসব ছবিতে অভিনয় করেছেন। প্রমাণিত হয় যে নাগ-নাগিনীনির্ভর এইসব ফ্যান্টাসি কতটা সাধারণ জঁরা ছিল আশির দশকে, যার রেশ পরবর্তী দশকগুলোতেও দেখা গেছে। কিন্তু ছবি দেখতে গিয়ে অপরীক্ষিত ঐ কথাটা বারবার মনে পড়তে থাকে: “বাংলাদেশী সিনে-ইন্ডাস্ট্রি কী কারণে ভারতীয় পুরাণ কিংবা মনসামঙ্গল-এর লিগ্যাসি বহন করে চলেছে, তাও বিরাট প্রশ্ন, যার সমাধান হওয়া জরুরি”।

ব্যঙ্গাত্মকভাবে কথাটা বলা হলেও, কথাটার মধ্যেই সমাধানসূত্র ছিল। খুব স্পষ্ট করে না হলেও, এদফা সমাধানের কাছাকাছি পৌঁছানো গেল। কিন্তু কীরকম ব্যাপার সেটা? তার আগে ছবি দুটির কাহিনী বলে নেয়া দরকার। কাহিনীসূত্র: নাগিন জমিদার আলম চৌধুরী (শওকত আকবর) প্রজাদরদী কিন্তু তার নায়েব মাহতাব (গোলাম মোস্তফা) দুশ্চরিত্র ও অত্যাচারী। আলম চৌধুরী একদিন হাতেনাতে ধর্ষণোদ্যত মাহতাবকে ধরে ফেলে, চাবুক দিয়ে প্রহার করে এবং নায়েবের নির্বাহী ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে নিজের হাতেই সব নির্বাহী ক্ষমতা নিয়ে নেয়।

মাহতাব প্রতিশোধস্পৃহ হয়ে এক সাপুড়ে দম্পতিকে ডেকে দায়িত্ব দেয় জমিদার রাতে ঘুমিয়ে থাকলে সাপকে দিয়ে যেন হত্যা করে। সাপুড়ে যেনতেন নয়, বীণ বাজিয়ে একেবারে সাপুড়েদের আরাধ্য নাগিনকে হাজির করে এবং জমিদারের শয্যায় চালনা করে। ঘটনাচক্রে জমিদারের শয্যায় সেদিন শুয়েছিল জমিদারকন্যা জেবা। নাগিন জেবাকেই দংশন করে, এবং সবাইকে চোখের জলে ভাসিয়ে জেবাকে অতঃপর নদীতে, কলার ভেলায় ভাসিয়ে দেয়া হয়। বলা দরকার জেবা ও নায়েবপুত্র সেলিম খেলার সাথী ছিল।

যাহোক, মাহতাব এরপর জমিদারের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেয়, তাকে কারাগারে বন্দি করে রাখে। নাগিনের অন্বেষণে জঙ্গলে এলোপাতাড়ি বীণ বাজাচ্ছিল এক সাপুড়ে সর্দার (রাজীব)। সে-ই জেবার প্রায়-মৃতদেহ উদ্ধার করে এবং সাধু বাবার সাহায্য নিয়ে সর্দার নাগিনকেই ডেকে আনে এবং তাকে বাধ্য করে বিষয় ফিরিয়ে নিতে। এরপর জেবা দুলি (সুচরিতা) নাম নিয়ে সাপুড়ে সর্দারের আশ্রয়ে বড়ো হতে থাকে। সর্দারের আরও দু’জন আশ্রিত হলো চম্পা (নূতন) ও রমজান (বাবর), যারা সম্পর্কে ভাইবোন।

দুলি-চম্পা সুহৃদ বান্ধবীর মতো করে বড়ো হতে থাকে, কিন্তু যৌবনপ্রাপ্ত রমজান দুলিকে ভালবাসে ও বিয়ে করতে চায়। এদিকে দুলি একদিন একটা সাপকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছিল আর সেলিম (রাজ্জাক) ঐ সাপটিকেই গুলি করে মারতে চাচ্ছিল। এই ঘটনায় তাদের মধ্যে সামান্য বিতর্ক হলেও, প্রথম পরিচয় হয়ে যায় এবং পরস্পরকে মনে ধরে যায়। আরেকদিন এক সাপ সেলিমকে দংশন করেই বসে। গুরুতর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, কারণ খোদ সর্দারও ঐ সাপের বিষ নামাতে ব্যর্থ হয়।

সেলিমকে ধরাধরি করে নিকটবর্তী মাজারে নেয়া হয়, দুলি-চম্পা-সর্দার সবাই মিলে গান গেয়ে মওলার কাছে ফরিয়াদ জানিয়ে সেলিমকে সুস্থ করে তোলা হয়। সেলিম চোখ মেলেই দেখে দুলিকে, দুলির প্রতি তার প্রেম পোক্ত হয়। আর জমিদার খুশি হয়ে সাপুড়ে পরিবারকে লাখেরাজ সম্পত্তি দান করে অনুরোধ করে যাযাবর জীবন পরিত্যাগ করে থিতু হতে। এতে সেলিম ও দুলির সুবিধে হলো। কিন্তু রমজান অখুশি হলো, ওদের দু’জনের অবাধ মেলামেশা দেখে তার গা জ্বলে যায়।

আর জমিদারও একপর্যায়ে সাপুড়ে পাড়ায় সেলিমের যাতায়াতের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলো। কিন্তু তাদের অভিসার গোপনে চলতে থাকে। রমজান একদিন দুলির হাত থেকে সেলিমের উপহার দেয়া আংটি কেড়ে নেয়। দুলি রাতে তার আংটি খুঁজতে রমজানের ঘরে যায়। রমজান জেগে গিয়ে দুলির প্রতি পুনরায় প্রেম-কাম নিবেদন করে।

জোরপ্রয়োগ করতে গেলে দুলি ক্রোধান্বিত হয়, তার মধ্যে পরিবর্তন ঘটে এবং নাগিনে রূপান্তরিত হয়ে সম্ভ্রম রক্ষা করে। বোঝা যায় যে-নাগিন একদিন জেবাকে কেটেছিল, সেই এখন দুলির মধ্যে বাস করে। রমজান এতে খুশিই হয়, সাপুড়ে হিসেবে। সাপুড়েদের আরাধ্য নাগিন যে একেবারে ঘরের মধ্যে! সে সর্দারের কাছ থেকে মানুষ থেকে বেজিতে রূপান্তরিত হবার মন্ত্র শেখে। সর্দারও তাকে ভবিষৎ সর্দার বানাবার প্রতিশ্র“তি দেয়।

তবে রমজান আরেকবার দুলিকে ধর্ষণোদ্যত হলে, সর্দার হাতেনাতে ধরে ফেলে এবং তাকে কাবিলা থেকে বের করে দেয়। বঞ্চিত রমজান যোগ দেয় জমিদার মাহতাবের সঙ্গে। রমজান জমিদারকে জানায় সেলিম ও দুলির সম্পর্কের কথা। জমিদার নিজ সন্তানকে আরেক পরগণায় পাঠিয়ে দেয় কৌশলে এবং আটকে রাখে সেখানে। আর রমজানকে দায়িত্ব দেয় সর্দার ও দুলিকে ধ্বংস করার জন্য।

রমজান পাতালমণি সাপের নেতৃত্বে হাজার হাজার সাপ পাঠায়, কিন্তু নাগিন দুলি একাই পাতালমণিকে পরাস্ত করে। এরপর জমিদার আদেশ দেয় সাপুড়ে পল্লী পুড়িয়ে দিতে। দুলি জমিদারের কাছে গিয়ে মিনতি জানায় যে প্রেম করে সে অন্যায় করেছে, পুরো কৌমের জন্য ক্ষতি না করা হয়। জমিদার দুলিকে তুলে দেয় রমজানের হাতে এবং রমজান দুলিকে জোরপূর্বক নিয়ে যায়। তখন দুলি নাগিনে পরিণত হয়, রমজান পরিণত হয় বেজিতে।

তাদের লড়াই চলে। এদিকে সেলিমের গোপন-প্রেমিকা অথচ ত্যাগী মানসিকতার চম্পা সাপের মুখ দিয়ে চিরকুট পাঠায় সেলিমের ফাটকে। সেলিম কাররক্ষীদের সঙ্গে মারামারি করে, ত্যাগী দ্বিতীয় নায়িকা চম্পার মৃত্যু সেখানেই হয়, কোলেটারাল ড্যামেজ হিসেবে। সেলিম প্রাসাদে আসে, রমজানের সঙ্গে লড়াই হয়, মারামারিতে কোলেটারাল ড্যামেজ হিসেবে জমিদার মাহতাবেরও মৃত্যু ঘটে। ওদিকে কারারক্ষীর সহায়তায় কারাগার থেকে বেরিয়ে আসে আসল জমিদার।

সর্দারও যথাসময়ে হাজির হয়। জমিদার আলম চৌধুরীর লেখা চিরকুটটা সঙ্গেই ছিল সর্দারের। দুলি যে আসলে জেবাই, তা জানা যায়, চিরকুটের বদৌলতে। সেলিমও জানতে পারে সে ভুল মানুষকে ভালবাসেনি, দুলি তো তার খেলার সাথী জেবা। কিন্তু রমজানকে কামড়ে নাগিন জেবা তখনও বেহুঁশ।

সর্দার জানালো, বেহুঁশ হবার কারণ নাগিনের আত্মা চিরতরে চলে গেছে জেবাকে ছেড়ে। জমিদার পেল হারিয়ে যাওয়া মেয়ে ও জমিদারি, বাবাকে হারালেও সেলিম পেল তার প্রেমিকা দুলিকে (অথবা খেলার সাথী জেবাকে)। কিন্তু সর্দার কিছুই চায়না। নাগিনের খোঁজে জঙ্গলে জঙ্গলে সে বীণ বাজাতে থাকে। কাহিনীসূত্র: নাগপূর্ণিমা ‘নাগপূর্ণিমা’ ছবির কাহিনী ‘নাগিন’ থেকে আরও খানিকটা জটিল।

সাপুড়ের এক ছেলে এক মেয়ে। মেয়ের পোষা পাখিকে কালনাগিনী খেতে গেলে মেয়ে লাঠি হাতে তাকে মারতে যায়। কালনাগিনীর ছোবলে মেয়ের মৃত্যু ঘটে। কন্যাহারা সাপুড়ে খেপে গিয়ে বীণ বাজাতে বাজাতে কালনাগিনীর খোড়লে পৌঁছে যায়। কালনাগিনীর সন্তানকে সে ধরে ফেলে এবং আছাড় মেরে হত্যা করে।

এতে নাগিনীও ক্ষেপে যায়, এবং ঘোষণা দেয় সাপুড়ের ছেলেকে হত্যা করার মাধ্যমে তাকে নির্বংশ করা হবে। ছেলে মঙ্গলকে বাঁচাতে সে যায় সাধু বাবার কাছে। সাধু বাবা তাকে বলে যে কালনাগিনীর হাত থেকে মঙ্গলকে বাঁচাতে হলে ওকে কঠিন এক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। ওকে প্রতিদিন কালনাগের বিষ খাওয়াতে হবে, ১২ বছর পর্যন্ত। কালনাগের বিষের প্রভাবে কোনো সাপ তাকে মারতে পারবে না।

আর দেওয়া হয় একটা তাবিজ। সেই তাবিজ কখনোই খোলা যাবেনা, এবং তাবিজ খোলার অবকাশে কোনো সাপ যদি তাকে দংশন করে তবে পরের পূর্ণিমা রাত থেকেই শুরু হবে অঘটন। বাবাজির কাছ থেকে বিষ নিয়ে মঙ্গলকে সাপুড়ে প্রতিদিন বিষ খাওয়ায়, এভাবেই বেড়ে ওঠে মঙ্গল। তরুণ মঙ্গলের (সোহেল রানা) প্রেমের সাথী হলো লাচি (ববিতা)। কিন্তু লাচিকে পছন্দ করে সাপুড়ে সর্দারের নাতি শেরু (আদিল)।

তাকে বিয়েও করতে চায়। পথের কাঁটা সরাতে শেরু মঙ্গলকে মারতে দলবল পাঠায়। মারামারির এক পর্যায়ে হাতের তাবিজ খুলে যায় মঙ্গলের, আর সেই ফাঁকে তাকে দংশন করে কালনাগিনী। পরের পূর্ণিমা রাতেই মঙ্গলের মাঝে কিছুটা পরিবর্তন আসে। উত্তরের পাহাড়ে কোনো এক নারী (রোজিনা) গান গায়, সেই গানের টানে মঙ্গল ছুটে যায় সেই নারীর কাছে, ভুলে যায় পেছনের সবকিছু।

একপর্যায়ে ঘুমিয়ে পড়ে সেই পাহাড়েই। হত্যার উদ্দেশেই মঙ্গলকে অনুসরণ করে শেরু। কিন্তু অচেনা নারীকে দেখে ফিরে আসে এবং লাচিকে জানায় মঙ্গলের পূর্ণিমা অভিসারের কথা। পরের পূর্ণিমায় লাচি অনুসরণ করে মঙ্গলকে। সেও দেখে সেই নারীর নাচ আর গানে সম্মোহিত মঙ্গলকে।

কিন্তু মঙ্গল লাচিকে দেখেও চিনতে পারেনা। বরং কামড়াতে আসে লাচিকে। তবে শেরুর বাহিনী এসে মঙ্গলকে তার আগেই আক্রমণ করে। মারামারির এক পর্যায়ে মঙ্গল কামড় দেয় শেরুর অনুচরকে। সে তৎক্ষণাৎ মারা যায়, এবং তার শরীরে বিষের সংক্রমণ ফুটে ওঠে।

শেরু রটিয়ে দেয় মঙ্গল মানুষ না, সাপ। এরপর মঙ্গলের মধ্যে শুরু হয় অস্তিত্বের সংকট। সে বাবার কাছে প্রকাশ করে পূর্ণিমা রাতে ভুলে যায় সবকিছু, তার মধ্যে ওলট-পালট হয়ে যায়। তার ইচ্ছে করে কাউকে পেঁচিয়ে ধরে মেরে ফেলতে অথবা দংশন করতে। বাবা বুঝতে পারে ১২ বছরের অধ্যবসায় বিফলে গেছে।

সে আবার ছোটে সাধুবাবার কাছে। জানতে পারে আর এক পূর্ণিমা পরেই মঙ্গল পুরোপুরি নাগে পরিণত হবে। এই বিপদ ঠেকানোর একটাই উপায়, নাগপুরীতে গিয়ে নাগরাজের বর নিয়ে আসতে হবে, নাগরাজ খুশি হয়ে বর দিলেই কেবল এই রূপান্তর ঠেকানো যাবে। কিন্ত সেটা প্রায় অসম্ভব একটা কাজ। কিন্তু সেই অসম্ভব কাজ করতেই রওয়ানা দেয় মঙ্গল।

এদিকে শেরু জটাগুরুর কাছে যায় কিছুতেই যাতে নাগপুরীতে পৌঁছতে না পারে তার ব্যবস্থা করতে। জটাগুরু শেরুর কাছ থেকে এক নারীকে ভোগের জন্য উপঢৌকন পেয়ে নানা তন্ত্র-মন্ত্র জপতে বসে। মঙ্গলকে আটকাতে পাঠানো হয় বেজি। বেজি ও প্রায়-সর্প মঙ্গলের মধ্যে লড়াই হয়, মঙ্গল পরাস্ত হয়ে ক্ষতবিক্ষত হয়। তাকে শুশ্রƒষা করতে হাজির হয় সেই নারী, যার গান শুনে মঙ্গল পূর্ণিমা রাতে উতলা হয়ে পড়তো।

জানা যায় তার নাম চন্দ্রমণি, নাগকন্যা সে, কিন্তু নাগরাজের বরে সে মানুষের রূপও ধারণ করতে পারে। আর সে বহুদিন ধরে যে প্রেমিককে খুঁজে আসছিল, মঙ্গলই হচ্ছে সেই প্রাণনাথ। সে খুশি এজন্য যে অচিরেই মঙ্গল নাগে পরিণত হবে এবং ভুলে যাবে অতীত মানবজন্ম এবং তার আর মঙ্গলের মাঝে আর কোনো ব্যবধান থাকবে না। কিন্তু মঙ্গল তখনও লাচির প্রেমিক এবং মানবজন্মই তার কাক্সিক্ষত। সে কিছুতেই নাগে রূপান্তরিত হতে চায়না।

সে বরং চন্দ্রকে অমোঘ বাণী দেয়, ‘ভালবাসার সার্থকতা পাওয়ায় নয়, ত্যাগে’। অতএব তার মঙ্গলকেই সাহায্য করা উচিত, নাগপুরী খুঁজে পেতে। ঐ মুহূর্তে চন্দ্র তাকে সাহায্য করে না। কিন্তু মঙ্গল ঠিকই নাগপুরীতে পৌঁছে যায়, নাগরাজের মূর্তির সামনে অনেক কাকুতি-মিনতি করে তার মানবজন্ম অক্ষুণœ রাখার জন্য। কিন্তু নাগরাজ সাড়া দেয়না।

মঙ্গলের দেহে রূপান্তর ঘটতে থাকে। রূপান্তরের জ্বালা সইতে না পেরে সে ধরাশায়ী হয়। ওদিকে জটাগুরু মন্ত্র-তন্ত্র জপে দুই নর্তকীকে দিয়ে সর্প-নৃত্যের আয়োজন করে, নাগরাজের আবির্ভাবের জন্য। আর ধরাশায়ী মঙ্গলের পাশে, নাগরাজের মূর্তির সামনে নাচতে থাকে চন্দ্র। চন্দ্রর জয় হয়।

মঙ্গল ফিরে পায় মানবজীবন। কৃতজ্ঞতা জানাতে না জানাতেই চন্দ্র চিরকালের জন্য পরিণত হয় সর্পে। ওদিকে লাচিকে জোরপূর্বক বিয়ের আয়োজন করে শেরু। মঙ্গল ফিরে আসে বিয়ে সমাপ্ত হবার আগেই। শেরু চিৎকার করে ওঠে, মঙ্গল সাপ, ওকে মারো।

মঙ্গল দাবি করে সে এখন বিষমুক্ত। সে লাচির ঘাড়ে কামড় দিয়ে প্রমাণ করে সে বিষমুক্ত। তার বিষমুক্তির খবর কালনাগিনীর কাছে পৌঁছে যায়। সে তার পুরনো প্রতিজ্ঞা পালন করতে ছুটে আসে। মঙ্গলকে দংশন করতে হবে।

এদিকে চন্দ্রমণিও বন্ধুকে রক্ষা করতে ছুটে আসে। ক্রস কাটিং সম্পাদনায় আমরা দেখতে পাই মানুষে মানুষে ও সাপে সাপে লড়াই। অবশেষে শুভর জয় হয়। এই দুই গল্পের প্রেক্ষাপটে আমি আসলে বিশ্লেষণ করতে চাইবো কেন বাংলা সিনেমায় সাপের এই প্রবল উপস্থিতি? কেন এসব ছবিতে মসজিদের চাইতে মাজার বেশি দেখা যায়? মনসা, সুফিবাদ ও সর্পসিনেমা এজন্য প্রাচীন কাল থেকে বঙ্গের মানুষের ধর্মপালনের প্রেক্ষাপটটিতে দৃষ্টি দেয়া দরকার। এই অঞ্চল প্রাচীনকালে বরেন্দ্র, সমতট, বঙ্গ, হরিকেল এরকম কয়েকটি জনপদে বিভক্ত ছিল এবং অধিবাসীরা জনপদ অনুসারেই পরিচিত হতো।

আর উত্তর ভারতে আর্যরা খ্রিস্টপূর্ব দুই হাজার বছর পূর্বে আসলেও দূরবর্তী পূর্ব ভারত বা এই অঞ্চলে তারা আসে অনেক পরে। এই অঞ্চলের অনার্য লোকজন তাদের কাছে ‘বর্বর’রূপেই পরিচিত ছিল। খ্রিস্টের জন্মের মাত্র কয়েকশ বছর আগে, মৌর্য আমলে (৩২১-১৮১ খ্রি.পূ.) আর্যপ্রভাব অনুভূত হয়। তাই দেখা গেছে আর্য দেব-দেবীদের চাইতে অনার্য বা স্থানীয় দেব-দেবীরাই এখানে বেশি পূজিত হতো। মনসামঙ্গলের কাহিনী তারই সাক্ষ্য দেয়।

মনসা ছিল সাপের দেবী এবং অনার্য দেবী। চাঁদবেনে পূজা করতো আর্য দেবতা শিবের। কিন্তু মনসা চাঁদবেনের ভজনা কামনা করে। চাঁদবেনে তা অস্বীকার করে এবং মনসাকে দেবী বলেই মানতে চায়না। ক্রোধান্বিত মনসা চাঁদ সওদাগরের সপ্তডিঙ্গা ডুবিয়ে দেয়।

আর হত্যা করে সাত পুত্রকে। কনিষ্ঠতম পুত্র লক্ষ্মীন্দরের সঙ্গে বিয়ে হয় বেহুলার। সেই লক্ষ্মীন্দরকেও বাসররাতে সাপে কাটে মনসার অভিশাপে। এরপর স্বামীকে নিয়ে শুরু হয় বেহুলার ভাসান। স্বামীপ্রেম, দেবীভক্তির মাধ্যমে সে ফিরে পায় স্বামীকে, শ্বশুরের সপ্তডিঙ্গা ও সাত সন্তান, বিনিময়ে চাঁদবেনে শিবপূজার পরিবর্তে মনসাপূজা শুরু করে।

এই কাহিনী তাই আর্য দেবের ওপরে অনার্য দেবীর বিজয় ঘোষণা করে। মনসামঙ্গল বঙ্গে তাই বহুল পঠিত, বেহুলা-লক্ষ্মীন্দরের কাহিনী বহুজনপ্রিয়। মনসাও জনপ্রিয় একজন অনার্য দেবী। প্রাচীনকালে বঙ্গ ছিল বনজঙ্গল আর জলা-জংলায় ভরপুর। মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনের সঙ্গেই সাপ অস্তিত্বমান ছিল।

সাপ-খোপের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্যও সাপের দেবীর পূজা অনিবার্যতায় রূপ পেতো। অনার্য ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম, আর্যধর্মের দীর্ঘ ইতিহাসের পর একপর্যায়ে এদেশে আসে মুসলমানরা। তুর্কী বখতিয়ার খলজির অসিযোগে বঙ্গবিজয়ের আগেই বঙ্গের মানুষের অন্তর জয় করে নিয়েছিল ইরান থেকে আসা সুফি সাধক-দরবেশরা। ইরানি সুফিবাদের মধ্যে যেহেতু এক ধরনের উদারতা ছিল, তাই অনার্য মত মননে রেখেই স্থানীয় লোকজন মুসলমান হয়েছিল। মনসা তাই মন থেকে দূর হয়ে যায়নি।

আবার সুফি সাধক বা পীর-মুর্শিদকে ঘিরেই বঙ্গে গড়ে উঠেছে মাজার সংস্কৃতি। বঙ্গের মুসলমানরা সাধক-বাবার (জীবাত্মা) মধ্য দিয়েই আল্লাহকে (পরমাত্মা) পেতে চাইতো। যাহোক ব্রিটিশরা আসার পর ধর্মপালনের এই প্রধান ধারা বেশ খানিকটা পাল্টে যায়। হিন্দু-মুসলমানদের বিভেদ বাড়ে। ঊনবিংশ শতাব্দির ফরায়েজি আন্দোলনের পর বঙ্গে সুফিবাদপ্রভাবিত ইসলামের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করে অবিকৃত আরব-ইসলাম।

অন্যদিকে ব্রিটিশপ্রবর্তিত আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে জন্ম নেয় সেকুলার মূল্যবোধ। বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রাধান্যে ও শাস্ত্রীয়-রাজনৈতিক ইসলামের চাপে সুফি ইসলাম হয়ে পড়ে গৌন। এককালের লোকধর্ম হয়ে পড়ে প্রত্যন্ত গ্রামীণ ও প্রান্তীয় মানুষের গৌনধর্ম, এক সাব-কালচার। এফডিসিতে যারা ছবি বানাতে আসেন তাদের মধ্যে আধুনিকমনস্কতা, শৈল্পিক পরিশীলিনতার অভাব দেখা যায়। আধুনিকতা ও সেকুলারিজমের পঠন-পাঠনের সুযোগ ঘটেনি তাদের।

তাদের সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতার মধ্যে রয়েছে লোকজ বিভিন্ন আঙ্গিক (যেমন যাত্রা), বিভিন্ন মিথ (যেমন মনসামঙ্গল), ধর্মাচারের মধ্যেও রয়েছে গ্রামীণ ভক্তিবাদ (পীর-মুর্শিদবাদ)। এফডিসির চলচ্চিত্রে সাপনির্ভর অনেক অনেক ফ্যান্টাসি নির্মাণ তাই আশ্চর্যের কোনো বিষয় থাকছে না, শেষপর্যন্ত। ‘নাগিন’ ছবিতে দেখা যাচ্ছে নাগিনকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সাপুড়ে-সর্দার যখন মন্ত্রপাঠ করছে তখন বারবার মা মনসার নাম নিচ্ছে। এমনকি নাম নিচ্ছে মান পীর-মুর্শিদেরও। যখন জেবার প্রায়-মৃতদেহ সে নদী থেকে উদ্ধার করে, তখন নাগিনকে ডেকে বিষ ওঠানোর ব্যবস্থা করার জন্য সে ছুটে যায় সাধু বাবার কাছে।

আবার সেলিম যখন সাপের কামড়ে বেহুঁশ, যখন সাপুড়ের মন্ত্রও ব্যর্থ, তাকে ভালো করে তুলতে সর্দার-দুলি-চম্পা সবাই তাকে নিয়ে যায় মাজারে। বাবার মারফতে মওলার কাছে তারা সেলিমের জীবনভিক্ষা করে, গান গেয়ে। ‘নাগপূর্ণিমা’ ছবিতে কালনাগিনীর হাত থেকে মঙ্গলকে রক্ষা করার জন্য বাবা সাপুড়েও ছুটে যায় সাধুবাবার কাছে। বলা যায় ছবির কাহিনীর প্রাণভোমরাই ছিল সাধুবাবার হাতের কৌটায়। মঙ্গলের জীবনে যাওয়া ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার জন্য সে মোটেই নিজে দায়ী ছিল না।

কিন্তু তার ভবিতব্যের সকল সমাধানসূত্র সাধুবাবার হাতেই ছিল। তাইতো মঙ্গল যখন ক্রমশ সাপে পরিণত হচ্ছে, তার অস্তিত্বের সঙ্কট চরমে, তখন নাগরাজ্যে গিয়ে নাগরাজের বর পাবার পরামর্শও দেয় সাধুবাবা। বাংলা সিনেমায় মসজিদের দেখা ততটা মেলেনা, কিন্তু মাজারের দেখা অহরহই মেলে। বাংলা সিনেমায় মাজারের এই বহুল উপস্থিতি প্রকারন্তরে রাজনৈতিক ইসলামের প্রসারকে চ্যালেঞ্জ জানায়, সাংস্কৃতিক অভিপ্রকাশের মাধ্যমে। তবে সাংস্কৃতিক অভিপ্রকাশ হিসেবে এফডিসির পরিচালকেরা বেছে নিয়েছেন প্রযুক্তিনির্ভর একটি আধুনিক মাধ্যমকে, যে-মাধ্যমের ওপরে তাদের খুব একটা দখল নেই।

ফলে এইসব ফ্যান্টাসির স্পেশাল ইফেক্ট হয় নিম্নমানের। ‘নাগিন’ ছবিতে আমরা দেখি নাগিনের মুখ থেকে এলোমেলো আলোকরশ্মি বেরুচ্ছে। মানুষ থেকে সাপ বা সাপ থেকে মানুষে রূপান্তরের ফ্যান্টাসি তারা একদমই নির্মাণ করতে পারছেন না। কেবল একটি কাট-এর মাধ্যমে এই পরিবর্তন দেখাচ্ছেন তারা, ইফেক্ট দেবার চেষ্টাও করেননি। ‘নাগিন’ ছবির এক দৃশ্যে দেখা গেল কারাবন্দী জমিদার বলছে, “এই অন্ধকার কারাগার-এ আমি আর বাঁচতে চাইনা” ... ইত্যাদি।

কিন্তু ভিস্যুয়ালে দেখা গেল আলো-ঝলমলে কারাগারের সেট। তবে এসব ছবির দুয়েকটি ক্ষেত্রে তারা পারঙ্গমতা অর্জন করেছেন: এক. সাপুড়েদের বীণ বাজানোর নৃত্যভঙ্গি, দুই. অভিনেত্রীদের সাপুড়ে-নৃত্য পরিবেশনা। মডার্নিটির রুচি ও শৈলী অর্জনে অযোগ্যতা কিন্তু লোকধর্মের সঙ্গে মানসিক আলগ্নতার কারণে আমরা এফডিসি থেকে সাপনির্ভর ও মাজারগামী অনেক ছবি পেয়েছি, ‘নাগিন’ বা ‘নাগপূর্ণিমা’ হয়তো তার শ্রেষ্ঠ উদাহরণও নয়। তথ্যসূত্র গীতি আরা নাসরীন ও ফাহমিদুল হক, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্প: সঙ্কটে জনসংস্কৃতি, (ঢাকা: শ্রাবণ, ২০০৮)। চিত্র: একটি রিকশা পেইন্টিং; সূত্র: Click This Link প্রথম প্রকাশ: খালেদ মুহিউদ্দিন সম্পাদিত 'মিডিয়াওয়াচ': Click This Link


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।