আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সমস্যা সমাধানে সরকারের ব্যর্থতায় মহাজোটের শরীক দলগুলো নাখোশ

Only I know what is my goal, My heart is my temple.

কাজী সায়েমুজ্জামান: সরকারের ব্যর্থতায় মহাজোটের শরীক দলগুলো নাখোশ। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংকটের ফলে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বিস্ফোরণের আশংকা করছে বর্তমান মহাজোট সরকারের শরিক দলগুলো। নেতারা বলছেন, এর মধ্যেই এক বছর পার করে ফেলেছে সরকার। এ জন্য এখন জনগণ কোনো অজুহাত শুনতে চায় না। আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

সম্ভবত সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া সরকারের ওপর মহলে পৌঁছাচ্ছে না। সরকারের প্রতি জনগণের এ ক্ষোভ যে কোনো মুহূর্তে গণবিস্ফোরণে রূপ নিতে পারে। সাপ্তাহিক বুধবারের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে সরকারের শরিক দল জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও সাম্যবাদী দলের নেতারা এ কথা বলেন। তারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ১৪ দলের সভা আহবানেরও দাবি করেন। এর আগে সংবাদ সম্মেলন করে জনগণের অসন্তুষ্টির কথা জানিয়ে দিয়েছে আরেক শরিক দল জাতীয় পার্টি।

রাজধানীতে এ সংকট এতটাই ঘনীভূত হয়েছে যে, সরকারি দলের এমপিরাও গণবিস্ফোরণের আশংকা করছেন। মহাজোটের অন্যতম অংশীদার জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সংকট থেকে দেশবাসী কবে মুক্তি পাবে তার সুনির্দিষ্ট সময় জানাতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন। ৩ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একে মারাত্মক সংকট হিসেবে চিহ্নিত করে এ আহবান জানান। এরশাদ বলেন, বিদ্যুতের সঙ্গে গ্যাস ও পানির সংকটও প্রকট আকার ধারণ করেছে। সরকারের পক্ষে এ সমস্যার সমাধান করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

তবে বিদ্যুতের সংকট কমলে পানির সংকটও কমবে। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ সমস্যার আশু সমাধান করা উচিত। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার অনুরোধ, তিনি দেশবাসীকে মিডিয়ার মাধ্যমে বলুন, কবে তারা বিদ্যুৎ দিতে পারবেন। জনগণের কাছে বলা উচিত, আমরা চেষ্টা করছি। এরশাদ বলেন, এখন ধৈর্য ধারণ ছাড়া কোনো পথ নেই।

তিনি যদি অনুরোধ করেন আর বলেন, আমরা উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছি, তাহলে জনগণ আশ্বস্ত হতে পারবে। নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে দুই থেকে তিন বছর সময় লাগে। এই সরকারের সময় তো কেবল এক বছরের কিছু বেশি হয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী চাইছেন শহরের মানুষ বঞ্চিত হলেও যেন গ্রামের মানুষ বিদ্যুৎ পায়। ওরা ফসল ফলায়।

এখন জমিতে পানি দরকার। সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎ পাওয়া না গেলে বোরো চাষে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। বর্তমান সরকার বলেছে ৫০০ থেকে ৬০০ মেগাওয়াট নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে। এটা যথেষ্ট নয়। এখনো এক থেকে দেড় হাজার মেগাওয়াট ঘাটতি আছে।

কীভাবে এটা দূর করা হবে, তা নিয়ে ভাবতে হবে। কারণ বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের সমস্যার সমাধান করতে না পারলে জনগণ অসন্তুষ্ট হয়ে উঠবে। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি বলেন, এটা সত্যি কথা যে, গ্যাসের উৎপাদন কম হচ্ছে। এর উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হয়নি। এ সংকটে সমগ্র শিল্পখাত বিপর্যস্ত হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

আমরা আশা করছি, এ বছরের মধ্যেই সরকার কিছু বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়াতে পারবে। গ্যাসের উৎপাদন বাড়বে কিনা তা এখনো বলা সম্ভব নয়। কিভাবে বাড়তি বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে সে ব্যাপারে আমি বলবো, বর্তমান অবকাঠামো থেকেই এ বছর প্রয়োজনীয় দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের উৎপাদন করা সম্ভব। কেবল ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মধ্য দিয়ে এটা করা সম্ভব। আমি সরকারকে এ জন্য দায়ী করছি না।

তবে যারা এর দায়িত্বে রয়েছেন তারা হয়তো সঠিক পরিকল্পনা প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করছেন না। আমি এ সংকটকে উদ্বেগজনক মনে করছি। কারণ জনগণ অজুহাত শুনতে চায় না। তারা ব্যবস্থা চায়। সরকার এর মধ্যেই এক বছর পার করে ফেলেছে।

প্রথম বছর ছিল প্রস্ত্ততির বছর। এক বছরে জনগণ আশা করেছিল, সরকার প্রাথমিক প্রস্ত্ততি শেষ করবে। আমার কাছে মনে হচ্ছে বিদ্যুৎ ও গ্যাস উৎপাদনে সরকার প্রথম এক বছরে প্রস্ত্ততি যতটুকু নেওয়ার দরকার ছিল ততটুকু নিতে পারেনি। ওদিকে জণগণ বিক্ষুব্ধ। তারা অজুহাত শুনতে চায় না।

তারা বিদ্যুৎ আর গ্যাস চায়। আর আমরা যদি এর সরবরাহ নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করতে না পারি তাহলে তো মানুষ বিক্ষোভ দেখাতেই পারে। আমরা মহাজোটের শরিক। সুতরাং এর দায় তো আমাদের ওপরও বর্তায়। আমরা এর দায়িত্ব নিচ্ছি।

কিন্তু আমি সরকারকে পরামর্শ দেবো, আরেকটু যত্নবান হলে গ্যাস উৎপাদন বাড়ানো যেতো। আমার মনে হয় তিতাস গ্যাসের স্থানে চেষ্টা করলে অল্প কিছু গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানো যায়। আমি মনে করি উচ্চ পর্যায়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে তাদের বসা উচিত। গত এক বছরে সময় নষ্ট না করে সবার পরামর্শ নিয়ে কাজ করা উচিত ছিল। টেন্ডার প্রক্রিয়ায় এত বিলম্ব যেখানে হয় সেখানে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করার দায়িত্ব তো সরকারেরই।

আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করে আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন করে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়ার পথ সুগম করে দেওয়ার দায়িত্ব সরকারেরই ছিল। আমি বলবো সেখানে সরকার অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। আমরা অবিলম্বে ১৪ দলের একটি বৈঠক চাইবো যেখানে আমাদের মতামত জানানোর চেষ্টা করবো। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় তো আমাদের মত নিচ্ছে না। সুতরাং সরকার চাইলে ১৪ দলের বৈঠকেই আমরা কিভাবে এ সংকট মোকাবেলা করা যায় তার একটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব হাজির করবো।

সরকারের আরেক শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক বিমল বিশ্বাস বলেন, প্রথম কথা হচ্ছে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস হলো জনগণের চলার পথে এখন সবচেয়ে বড় সংকট। আর সেই সংকট সমাধানের ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতা ইতোমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে গেছে। জনগণ সেটাই বুঝছে। আর ওয়ার্কার্স পার্টি জনগণের চিন্তার বাইরে তো থাকতে পারে না। এ বিষয়গুলো এখন জনজীবনে নাভিশ্বাস তৈরি করছে।

এটাকে ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। সে কারণে নড়াইলে ওযার্কার্স পার্টি পানি ও বিদ্যুতের দাবিতে মিছিল-সমাবেশ করেছে। ওয়ার্কার্স পার্টি এ ব্যাপারে যথোচিত পদক্ষেপ ও সমাধানের জন্য উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে মনে করছে এবং এজন্য কাজ করার চেষ্টা করছে। আমি যেটা বলতে চেয়েছি এ পর্যন্ত সরকার এসব সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। আমি মনে করি জনজীবনের এ সমস্যা লাঘবে সরকারের ত্বরিত ব্যবস্থা নেওয়া যায় এবং কিছু হলেও এর সমাধান করা যায়।

সরকার কারা চালায় তা তো আমরা ঠিক জানি না। তবে এটুকু বুঝি যারা সরকার পরিচালনা করছেন বা পরামর্শ দিচ্ছেন তা আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে যাচ্ছে। জনগণের কান্নার বাণী সরকারের সমগ্র পর্যায়ে পেঁŠছাচ্ছে না বলেই মনে হচ্ছে। সরকার ক্ষমতায় আসার আগেও দিয়েছে এখনও একটি যুক্তি দিয়ে যাচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার সামান্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করেনি।

কিন্তু একবছরেরও বেশি এ সময়কালে সরকার এ বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে কিছু চেষ্টা করছে তার ফল তো দেখতে পাচ্ছি না। নড়াইলে অবস্থানকালে আমি দেখেছি, সেখানে রাত ১২টার পর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ দেখলাম। সারাদিন বিদ্যুৎ ছিল না। গ্রামাঞ্চলের সেচ সংকট দূর করার জন্য শহরের বিদ্যুৎ গ্রামে দেওয়ার যে কথা শুনছি তার হিসাব মেলাতে পারছি না। কারণ নড়াইলে বিদ্যুতের অভাবে সেচ এমনভাবে ব্যাহত হচ্ছে যে ফসলের ক্ষেত শুকিয়ে গেছে।

এর উন্নতি যে হবে তার লক্ষণও তো দেখা যাচ্ছে না। আমরা বারবার প্রধান শরিক দল আওয়ামী লীগকে ১৪ দলের বৈঠক ডাকার জন্য বলি। আমাদের কথা আর প্রয়োজন অনুযায়ী তারা তো আর বৈঠক ডাকেন না। এ বৈঠক ডাকা উচিত। যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন এটা জাতীয় সংকট হিসেবেই থাকা উচিত।

এর সমাধানের জন্য আমাদের পরামর্শ সরকার নিতে পারে। তবে সরকার এ ধরনের কোনো পরামর্শ নিচ্ছে বলে আমাদের জানা নেই। একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে আমি হতাশার মধ্যে পড়তে চাই না। এ সংকট এড়াতে আমি যৌক্তিক পদক্ষেপের পক্ষপাতী। সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বলেন, এটা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত একটি পুরনো বিষয়।

এটি বিবেচনায় নেওয়াটাও কঠিন ছিল। বর্তমানে ঢাকা শহর একটি জনবহুল শহর হিসেবে বিবেচিত। এ শহরে পানি সরবরাহের জন্য যে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল তা আমাদের পক্ষে নেওয়া সম্ভব হয়নি। পাশাপাশি বিদ্যুতের সঙ্গে পানি আবার গ্যাসের সঙ্গে বিদ্যুতের সম্পর্ক রয়েছে। এসব মিলিত হওয়ার কারণে একটা সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

তবে এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সরকার অবশ্যই দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছে। চাহিদা মোতাবেক এটা না হলেও এ বছরের শেষ দিকে এটা দৃশ্যমান হবে। শিল্পমন্ত্রী হিসেবে আমার মন্ত্রণালয়ের অধীনে যেসব সার কারখানা রয়েছে তার গ্যাস বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য দেওয়া হচ্ছে। যদিও আমাদের সার মজুদ রয়েছে তারপরও সামনে সার সংকট দেখা দিতে পারে। আর বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি না হলে শিল্প খাতে বিদেশী বিনিয়োগের আস্থা সৃষ্টি করতে পারবো না।

আমাদের যে ধারণা ছিল সংকট তার চেয়েও গভীর বলে আমাদের পদক্ষেপকে সেভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। মানুষের এ সংকট নিয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা সম্মিলিতভাবে এর মোকাবেলা করবো। অতীতের সরকার এ সমস্যাকে তো আমলেই নিত না। এজন্য সরকার বিষয়টিকে আমলে নিয়ে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছে। ঢাকা-৪ আসনের আওয়ামী লীগের এমপি সানজিদা খানম বলেন, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংকট তো সমস্যাই।

প্রত্যেক বছরের এ সময় তো পানির সংকট থাকে। এ নিয়ে মানুষের প্রতিক্রিয়া তো নেতিবাচক। আমরা সরকারকে এটা বলেছি। আগের সরকারগুলো তো কিছুই করেনি। তবে যত দ্রুত সম্ভব সরকার এর সমাধানের চেষ্টা করছে।

শীতলক্ষ্যার পানির অবস্থা তো জানেন। আমি সায়েদাবাদ প্ল্যান্ট ঘুরে দেখেছি। ওই পানি পরিশুদ্ধ করার পরও তার গন্ধ যাচ্ছে না। এসব একদিনের সমস্যা নয়। এ ধরনের সমস্যা থাকবেই।

আমরা সমাধান করার চেষ্টা করছি। Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.