আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এটাও জীবন।

কত আজানারে জানাইলে তুমি, কত ঘরে দিলে ঠাঁই দূরকে করিলে নিকট,বন্ধু, পরকে করিলে ভাই।

বিকাল সাড়ে পাঁচটা বাজে। বারান্দা থেকে দেখছি কিছু মহিলা পুরুষ আমার বাসার দিকে আসছে। উৎসুখ হয়ে তাকিয়ে রইলাম। তারা আমার বারান্দার নিচে এসে হই চই করে একযোগে কিছু বলতে শুরু করল।

কিছুক্ষন লাগলো তাদের কথা বুঝতে। একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে তাদের বস্তিতে। আমি গেলে পুলিশকে অনেক টাকা না দিয়েও পার পাওয়া যাবে। পোস্টমার্টেম সহজে হবে, সহজে কবর দেয়া যাবে। বাসা থেকে বের হলাম।

বস্তির ঘরে ১১/১২ বছরের ফুটফুটে একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটির মা আছে আর আছে সৎ বাবা। মেয়েটির মার চার, পাঁচটি বিয়ে হয়েছে। প্রায় প্রতিটি সংসারেই তার ছেলে মেয়ে আছে। এই ভাবে ঐ মহিলার মোট ছেলে ৫টি ও মেয়ে দুইটি।

তার ছেলেরা বিভিন্ন জায়গায় আছে। কে কি করে সঠিক ভাবে আমার জানা নেই। মহিলা হিলি দিয়ে বর্ডার পাড় হয়ে ইন্ডিয়া থেকে স্টিলের জিনিসপত্র, শাড়ি, কাপড়, জিরা, চিনি, শাল ইত্যাদি নিয়ে আসে যখন যা পায়। এই চোরাকারবারী করতে ওদের প্রানান্ত পরিশ্রম করতে হয়। ঘাটে ঘাটে টাকা দিতে হয়।

সেই সাথে আছে বি ডি আর ও বি এস এফ এর মাইর ও তাদের চাহিদা মত টাকা দেয়া । লাভ দেখা যায় কিছুই থাকে না কোন রকমে দিনের ভাতটা হয়ত জোটে । কোন কোন দিন তাও জোটে না। মহিলার বড় ছেলেটি মা বাবাদের মতই পরিবেশে বড় হয়েছে। সেও চোরাকারবারী করে ।

যেদিন কাজ থাকে না সে দিন এর বাগানে এটা ওর হাঁসটা মুরগীটা চুরি করে। তা না পারলে বিভিন্ন জলাশয় থেকে বক, পানকৌড়ি মেরে খায়। সেই ছেলেটি কাল হিলি থেকে ফিরবার সময় ট্রেনের ছাদে চড়ে বসেছে। এরা সাধারনত ট্রেনেই যাতায়াত করে এবং এদের বসবার জায়গা হয় ট্রেনের ছাদ, দুই বগীর মাঝের জায়গা যাতে চেকারকে পয়সা দিতে না হয়। গতদিন সে ট্রেনের ছাদে চড়ে আসবার সময় একটি সজনা গাছের ডাল ভেঙ্গে নিয়ে এসেছে।

সেখানে বেশ কিছু সজনা ছিল। সেই সজনা তার মা রান্না করে রেখেছে ছেলে ফিরলে ভাত খাবে বলে। এবারেও সে ট্রেনের ছেদে বসে সুইপার কলোনীর সজনা গাছে ডাল ভাঙ্গার চিন্তা করে। যেমন চিন্তা তেমন কাজ। চলন্ত ট্রেন থেকে লাফ দিয়ে সজনার ডাল ধরে ঝুলে পরে।

ভাগ্যের নির্মম পরিহাস!! ডালটা ভেঙ্গে যায়। ছেলেটি পরে দুইবগীর হুকের উপরে । সেখানে সে ঝুলে থাকে । হুকের উপর মাথাটা পরার কারনে সম্পুর্ন মাথাটা থেতলে যায়। ঝুলে থাকা হাত দুটি রেল লাইনের সাথে ঘেঁষে আসবার কারনে কোন আঙ্গুল খুঁজে পাওয়া যায়নি।

দুইপায়ের একটি পা ট্রেনের সাথে ঝুলে ছিল আর একটি পা কোন রকমে গায়ের চামরার সাথে লেগে ছিল। মুখএর উর্ধাংশে কিছুই ছিল না নাক থেকে নিচের অংশটা পাওয়া গেছে। আজ সকালে ওর মা চলে গেল বর্ডারের ওপারে। জিজ্ঞাস করলাম--না গেলে হয় না? উত্তরে কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল --মহাজন তার ক্ষতি সহ্য করেনা। না গেলে আমার অন্য বাচ্চাদের উপর অত্যাচার করবে।

আমার বাচ্চাদের হারায় ফেলবে। আমরা ওদের হাতের বান্ধা জানোয়ার।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।