আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মহচিন আর তাহার সর্বহারার সমাজতন্ত্র

নিজের বিষয়ে কিছুই বলিবার নাই

আসসালামু আলাইকুম, একটা সময় বলা হইতো চিনের দুঃখ হোয়াংহো। এইটা বাল্যকাল হইতে প্রায় মুখের ডগায় অবস্থান করিতো। এখনকার বাচ্চাগণের কথা অবশ্য কহিতে পারিবো না। বিগত ৪ দলীয় জোট সরকারের সময় ছাত্রদলের একজন নেতা কহিয়াছিলেন তাদের দুঃখ নাকি ছাত্র শিবির! চিনের সেই দুঃখ এখন আর নাই। প্রযুক্তি দিয়া তাহারা হোয়াংহোর অভিশাপ হইতে মুক্তি পাইয়াছে।

আবার অন্যদিকে মেকং নদীতে বাধ দিয়া সেই কীর্তিময় নদীর বারোটাও বাজাইয়াছে। তাহা হইলে এখন কী আর চিনের কোনো দুঃখ নাই? আছে। এখন চিনের দুঃখ তাহার কয়লা খনি। চিন যতই শিল্পে প্রযুক্তিতে উন্নতি করিতেছে ততই কয়লার প্রতি তাহার নির্ভরতা বাড়িতেছে। এইটাই স্বাভাবিক।

তাহা হইলে অস্বাভাবিকতাটা কোথায়? সেইটা এইখানে যে চিনে যে হারে কয়লা খনিতে দুর্ঘটনা ঘটিয়া থাকে তাহা এই দুনিয়ার অন্য কোথাও দেখিতে পাওয়া যায় না। সম্প্রতি সানঝাই (shanxi)প্রদেশে যে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটিলো তাহা দুনিয়া বাসীকে চোখে আঙুল দিয়া আবারও দেখাইয়া দিলো সেইখানে কয়লা শ্রমিকগণের অবস্থা কতোটা নাজুক আর ঝুিকর মুখে। দুর্ঘটনা ঘটিলো গত ২৪ মার্চ তারিখে। ১৫৩ জন খনি শ্রমিকদের মধ্যে এখনও ৩৩ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয় নাই। ঘটনা এইখানেই শেষ নহে।

চিনের সরকারি হিসাবে ২০০৯ সালে ১৬১৬ টি খনি দুর্ঘটনা ঘটিয়াছে। যাহাতে মারা গিয়াছে ২৬৩১ জন শ্রমিক। কমুনিস্ট-মার্কা সরকারি হিসাবে যদি এই সংখ্যাটা এই হয় তাহা হইলে বাস্তব সংখ্যাটা আরও কতো বেশি তাহা বুঝিবার জন্যে খুউব বেশি বুদ্ধি বিবেচনা খরচ করিবার প্রয়োজন নাই। এই সংখ্যাটাকে ৩৬৫ দিয়া ভাগ করিলে দেখা যায় প্রতিদিন গড়ে ৭ জন করিয়া শ্রমিক খনি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায়! এইটা কোনো সাধারণ কথা নয়। এইটা রসিকতার বিষয়ও নয়।

যে-দেশে সর্বহারার একনায়কতন্ত্র চলিতেছে। যে দেশে শ্রমিকগণই নাকি রাজা সেই দেশের শ্রমিকগণের এই দশা হইলে বলিবার কথা এই যে আমরা আর যাহাই চাহিয়া থাকি শ্রমিক শ্রেণীর আর সর্বহারার একনায়কতন্ত্র চাহি না। এই যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টিভি চ্যানেলে চিনের খনি দুর্ঘটনা নিয়া খবর প্রচার হইতেছে, তাহার কোনোখানেও একজন খনি শ্রমিকের মতামত প্রচার হইতে দেখিলাম না। কাহারা কথা বলিতেছে? বলিতেছে সেই এলাকার কমুনিস্ট পার্টির নেতাগণ। যাহারা পঙ্গু, অর্ধমৃত শ্রমিকদের উদ্ধার করিবার দৃশ্য দাড়াইয়া দাড়াইয়া দেখিয়া হাতে তালি দিতেছেন।

আর দলের নামে জিন্দাবাদ হাকিতেছেন। কী তাজ্জব অবস্থা! শ্রমিক শ্রেনির সরকার অথচ সরকারের বিরুদ্ধে, দলের বিরুদ্ধে শ্রমিকদেরই কথা বলিবার অধিকার নাই। বলিলেই তাহাকে হয়তো ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে পাঠানো হইবে। ''অপরাধীদের'' ফাসি দিতেও এই চিনের জুড়ি নাই। এখন প্রশ্ন হইতেছে : মহাচিনে কীরকম শাসন চলিতেছে? কাহারা সেখানে দেশ চালাইতেছেন? এইটা কি একটা আধুনিক দাস সমাজ নয়? এই প্রশ্নগুলি করিতেছি তাহার কারণ হইতেছে : আমাদের এই দেশে সমাজতন্ত্রের প্রতি মোহ রহিয়াছে--এমন দলের সংখ্যা কম নয়।

মানুষের সংখ্যাটাও একেবারে ঝাড়িয়া উড়াইয়া দিয়া যাইবে না। মাও সে তুঙের নামে এখনও হয়তো কেহ কেহ ভাবাবেগে অজ্ঞান হইয়া পড়িয়া যান। তাহারা ভুলিয়া যান প্রতিদিন চিনের কয়লা খনিতে ৭ জন মানুষের মৃত্যু হইতেছে। প্রকাশ্যে তাহাদের পক্ষে কথা বলিবার প্রতিবাদ করিবার কেহ নাই। পরম করুণাময় আমাদিগকে তাওফিক প্রদান করুন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.