আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বখাটে মানুষ বা বখাটে সমাজ

নৌকা আর ধানের শীষে ভোট দিয়ে সোনার বাংলার খোয়াব দেখা আর মান্দার গাছ লাগিয়ে জলপাইর আশা করা একই! বিস্ময়ের ব্যাপার হল দিনের পর দিন আমরা তাই করছি!!

এক। বখাটে। শব্দ হিসেবে বেশ পুরোনো। তবে ব্যবহার বেড়েছে অধুনা। অথবা আগেও তারা ছিল, পত্র-পত্রিকা-টিভির কম প্রচলন ছিল বিধায় আমরা কম জানতে পারতাম।

প্রাণি হিসেবে এরা মানুষই। লিঙ্গভেদে পুরুষ (এখনো নারী বখাটের খবর পাইনি)। বয়স ১৪ থেকে ৩০। সাধারনত: তারা স্কুল/কলেজ থেকে ঝরে পড়া কিংবা অনিয়মিত ছাত্রত্বের টিকিধারী। কাজ কর্ম নেই।

দল বেধেঁ পাড়া মহল্লায় ঘুরে বেড়ায়। চা, বিড়ি, গাঁজা ফুঁকে আর আড্ডা মারে। আড্ডার বিষয়ের অত্যাবশকীয় অনুষংগ নারী, নারীদেহ, বা সুনির্দিস্ট চেনাজানা মেয়ের দৈহিক রূপ-লাবন্যের সরস বর্ননা ও কিভাবে তাকে কাবু করা যায় তার কর্মকৌশল নির্ধারন। বখাটে নামধারী এ জনগোস্টীর পারিবারিক ইতিবৃত্ত ও তাদের শিকারদের ইতিবৃত্তের মধ্যেও একটি মিল পাওয়া যায়। বখাটেরা সাধারনত: সবল পরিবারের জারজ।

সে নিজে ব্যাপক মাত্রায় রাজনীতি না করলেও তার বাবা, ভাই, মামা, চাচারা কোন না কোন ভাবে প্রতিপত্তিশীল। অবৈধ সম্পত্তি, খুন খারাবী, জবরদখল, চুরি চামারী পাওয়া যায় রক্তধারায়। অপরদিকে শিকারী মেয়েটি হয় নির্বিবাদী কোন ধনী বা নির্ধনী পরিবারের। দুই। সুন্দরী নারীর প্রতি কার না চোখ যায়! কে না তাকে পেতে চায়! কৈশোরের প্রহর কাটতে না কাটতেই তরুনীর, বিশেষ করে সে যদি দেখতে নেহায়েৎ কূৎসিত না হয়, দিকে আড়চোখে হলেও বিধে সবার চোখ।

দৃস্টিকামী জনগোস্ঠীর মধ্যে পথচারী, আত্নীয়, সহযাত্রী, ইমাম, ডাক্তার, কবি, রিকশাওয়ালা, কলিগ, সহপাঠি বিচিত্র সব মানুষই পড়ে! কিন্তু কেউ ঝাঁপিয়ে পড়েনা। কারন দুটি। অন্তর্গত বিবেক, আত্নসম্মানবোধ, ব্যক্তিত্ব, কারো কারো ক্ষেত্রে ধর্মবোধ ভেতর থেকে তাকে বাধা দেয়। আরেকটি বিষয় ঘটনা পরম্পরা সামাল দিতে না পারার ঝুঁকি। অর্থাৎ, "পাছে কোন ঝামেলায় না পড়ি" এ চিন্তার শৃংখল।

আইনী ভয় ইত্যাদি। তিন। তাহলে বখাটেরা কেন নিবৃত্ত হয়না। কারন তাদের অন্তর্গত বিবেকবোধ তাদেরকে বাধা দেয়না, আর ঘটনা পরম্পরার ঝুঁকিও তাদের কম, কেন না সে ধরনের পরিচ্ছন্ন আইনী ব্যবস্থা এদেশে নেই। বড়জোড় পত্র-পত্রিকায় দু চারটা কলাম বা রিপোর্ট ছাপা হবে।

পুলিশ গ্রেফতার করলেও কদিন বাদে নিশ্চিতই ছাড়া। এ ক্ষেত্রে জেল জরিমানার তেমন কোন নজির নেই। ঘটনার পরের আইনী ফাঁকফোকর, সবলের উৎপাত, রাজনীতি, ক্ষমতাসীনদের মদদ এসব নিয়ে কিছু লিখব না। বরং জানা যাক অন্যটি। চার।

অন্তর্গত বিবেকবোধ খানিকটা আপনাআপনিই সব প্রাণিকুলের মধ্যেই থাকে। পেট ঠান্ডা থাকলে হিংস্র বাঘও অনর্থক কাউকে হামলা করেনা। আর মানুষের মাঝে এ বোধ যথেস্ঠ বেশীই থাকার কথা। তবে ব্যাপক আকারে মানুষের বোধশক্তি গঠিত হয় মা, বাবা, পরিবার, পরিবেশ, স্কুল, বন্ধু, টিভি, সিনেমা, পত্রিকা ও বৃহ্ত্তর সমাজের প্রভাবে। গার্লস স্কুলের সামনে দারোয়ান, ডিবি বা র‌্যাব মোতায়েন করে সাময়িক 'ভীতি' সৃস্টি করা যাবে কিন্তু বখাটের অন্তরের পাশবিক বোধকে নির্মুল করা যাবেনা।

স্হান ও কাল বুঝে সে আবার পিছু নিবে কোন কিশোরীর, শিষ দিবে, ওড়না টান দিবে, মেসেজ পাঠাবে, কল করবে, অপহরন করবে, ধর্ষন করবে .....। কিশোরী বেছে নিবে আত্নহত্যার মুক্তি সনদ। পাচঁ। ডজন খানেক বাংলা টিভি চ্যানেলের কথাই বলা যাক। কি দেখায় তাতে? খবর নামক বস্তাপঁচা কিছু বিবৃতি, সাঁঝবেলায় কতিপয় মুখচেনা চাপাবাজের ঠক শো আর বাদ বাকী পুরোটা সময় নাটক।

দু একটি ব্যতিক্রম বাদে প্রলম্বিত এ নাটক গুলোতে উল্লেখ করার মত কোন কাহিনী থাকেনা। থাকে শুধু নাগরিক বা গ্রাম্য খিস্তি খেউড়। প্রেম-ভালোবাসা ও হালকা বাৎচিত ও এতদসংক্রান্ত জটিলতা ছাড়া পৃথিবীতে যে আরো হাজারটা বিষয় আছে তা এগুলো দেখলে কারো মনে হবে না। এখানকার চরিত্রদের ভাতের জোগান দেয় অন্যকেউ! গরীব হলেও এরা গোছানো ফ্ল্যাটে থাকে! যা হোক বিবেকবোধ নস্টের পেছনে এ টিভি চ্যানেলগুলোর ভুমিকা ও ফেলনা নয়! ছয়। তবে অবশ্যই সব দোষ টিভি সিনেমার না।

বরং ব্যাপক সংখ্যক মানুষের অনৈতিক আয় রোজগার, বিত্ত ও প্রভাবের নিরীখে মানুষকে মূল্যায়ন, মাত্রাহীন বেকারত্ব, যত্র তত্র দোকান পাট, টং দোকান, চোখের সামনে অন্যায়ের শাস্তি পেতে না দেখা, অন্যায়ের জোয়ারে সয়লাব বিচারালয় ও থানা, নির্মোহ আত্নকেন্দ্রিক লোভী জীবনাচার, অন্যায়ের প্রতিবাদ না করা, মজ্জাগতভাবে নারীদেরকে 'সব সয়ে যাওয়ার' বেওকুফি দীক্ষা ইত্যাদি কারনে কাংক্ষিত" বিবেকবোধ"টি দিন দিন মরে যাচ্ছে। ও দুর্ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে। আসুন আমরা ঘুরে দাড়াই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।