আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কোন কথাটা ঠিক?



লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনার থাকার সময় মেজর জেনারেল শফিউল্লাহ তার সহকর্মীদের কাছে প্রায়ই আক্ষেপ করে বলতেন, “বহু চেষ্টার পর ১৫ আগস্টের ভোররাতে বঙ্গবন্ধুর সাথে ফোনে যোগাযোগের পর তিনি বললেন, ‘শফিউল্লাহ তোমার লোকেরা আমার বাড়ি আক্রমণ করেছে, কামালকে হয়তো মাইরাই ফালাইছে। ’ আমি বঙ্গবন্ধুকে বললাম, স্যার, পারলে আপনি নিজের বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র যান, দেখি আমি কী করতে পারি । ” শফিউল্লাহ আক্ষেপ করে বলতেন, মনে বড় দুঃখ, ‘বঙ্গবন্ধু জীবনের শেষ মুহূর্তে আমাকে ভুল বুঝে গেলেন। ’ তবে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা থেকে তিনি বিরত থাকতেন এবং নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য নানা অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ের অবতারণা করতেন। মনে তার ভীষণ কষ্ট ছিল, তিনি সে সময়ে লেফটেন্যান্ট জেনারেলের পদে উন্নীত হতে পারেননি।

আর একটি কথা তিনি প্রায়ই বলতেন, তার পদমর্যাদানুযায়ী প্রাপ্য গুরুত্ব তিনি পাননি বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে। শফিউল্লাহর ভাষ্যমতে, বঙ্গবন্ধু তার সেকেন্ড-ইন-কমান্ড জিয়াউর রহমানের সাথে অনেক সিক্রেট বিষয় আলোচনা করতেন। তার ধারণা, বঙ্গবন্ধুকে তার প্রদত্ত নিরাপত্তাবিষয়ক অরগানোগ্রাম বাস্তবায়ন করা হলে ১৫ আগস্টের ট্রøাজেডি ঘটত না। শফিউল্লার সেই কথিত অরগানোগ্রাম অনুমোদন না করার পেছনে জেনারেল জিয়ার হাত ছিল, এমন কথা তিনি বলতেন সহকর্মীদের সাথে একান্ত আলোচনায়। নিজেকে নির্লোভ ও নীতিবান প্রমাণ করার লক্ষ্যে এক দিন বলেন, ‘আমাকে সেনাপ্রধান হিসেবে নিযুক্তির আদেশ চূড়ান্ত হওয়ার পর আমি বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করে বলি, স্যার, জিয়া মিলিটারি একাডেমিতে ছিল আমার সিনিয়র, অতএব সেনাপ্রধানের পদ তারই প্রাপ্য।

উত্তরে বঙ্গবন্ধু রাগতস্বরে বলেন, শফিউল্লাহ, যা করার আমি ভেবেচিন্তেই করেছি । ঢাকার লেডিজ ক্লাবে বিয়ের অনুষ্ঠানে অনভিপ্রেত এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে ডালিম, রশিদসহ সেনাবাহিনীর কয়েকজন অফিসারের পদচ্যুতির পর শফিউল্লাহ যান বঙ্গবন্ধুর কাছে এবং ওসব অফিসারকে ক্ষমা করার আবেদন করে বঙ্গবন্ধুর বিরক্তিভাজন হন, সহকর্মীদের কাছে এমন কথাও বলেন সাবেক চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল শফিউল্লাহ, বীরবিক্রম। শফিউল্লাহ মনে করতেন যে তার পরামর্শ শুনলে হয়তো ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক ঘটনাটা ঘটত না। গত ১৯ আগস্ট রাতে এটিএন বাংলার সাথে এক সাক্ষাতকারে সাবেক সেনাপ্রধান বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সময় নিজের ভূমিকার সাফাই গাইতে গিয়ে বললেন, ঠিক উল্টো কথা। তার ভাষায়, তাকে শেষ মুহূর্তে ভুল বোঝেননি বঙ্গবন্ধু এটাই তার সান্ত্বনা।

সেই সময় তিনি নিজে কী দায়িত্ব পালন করেছিলেন, তার যথাযথ উত্তর দিতে ব্যর্থ সাবেক সেনাপ্রধান ধানাইপানাই করেও নানা খাপছাড়া কথার পর তার অধীন কর্মকর্তাদের হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করেন। অভ্যুত্থানকারীদের মোকাবেলা করার নির্দেশ তিনি সাফায়াত জামিলকে দিয়েছিলেন কিন্তু তা পালিত হয়নি, শফিউল্লাহর মন্তব্য। শফিউল্লাহ সাহেব এর সাথে জিয়াউর রহমানের সংশ্লিষ্টতারও অভিযোগ করেন। বিলেত প্রবাসী সাংবাদিক গাফফার চৌধুরী তার সম্পাদিত লন্ডনের নতুন দিন পত্রিকায় শফিউল্লাহকে ‘কাপুরুষ সেনাপতি’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, খোন্দকার মোশতাক, স্বৈরশাসক এরশাদ ও সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানকে অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সাথে সেবা করেছেন তিনি। এরশাদ পতনের প্রাক্কালে তিনি তার চাকরির (হাইকমিশনার) মেয়াদ বাড়ানোর তদবির করতে সুদূর মক্কা শরিফে তসরিফ নেন।

এরশাদ তখন জিনাত মোশাররফসহ বিরাট এক কাফেলা নিয়ে গিয়েছিলেন পবিত্র মক্কা শরীফে হজ পালন করতে। পবিত্র মক্কায় এরশাদের অনৈতিক আচরণের বিবরণ বিলেতে বন্ধুমহলে দেন শফিউল্লাহ। এরশাদ নাকি শফিউল্লাহর তদবিরে ইতিবাচক সাড়া দেননি। অথচ কোটি কোটি টাকা খরচ করে ব্রিটেন থেকে ছয়-ছয়টি অকার্যকর এটিপি বিমান কেনার ব্যাপারে এরশাদের একান্ত সহযোগী ছিলেন হাইকমিশনার শফিউল্লাহ। এ বিষয়ে এরশাদ পতনের পর তদন্ত শুরু হয়ে একপর্যায়ে তা ধামাচাপা পড়ে যায়।

পুরনো নথিপত্র ঘাঁটলে (যদিও তা হওয়ার নয়) অনেক অজানা তথ্য বেরিয়ে আসবে এবং দেরিতে হলেও দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া যাবে। বাংলাদেশে যখন এরশাদবিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে, তখন শফিউল্লাহ বিএনপি নেতা মেজর জেনারেল মাজেদুল হকের সাথে যোগাযোগ করেন, কিন্তু বিএনপি’র কাছ থেকে প্রার্থিত সাড়া না পেয়ে এবং জান ও মান বাঁচানোর লক্ষ্যে অগত্যা আওয়ামী ছায়াতলে আশ্রয় নেন তিনি। পুরস্কারস্বরূপ ১৯৯৬ নির্বাচনে ঢাকার রূপপুর আসন থেকে আওয়ামী লীগ টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন । যদিও তার খায়েশ ছিল নিদেনপক্ষে মন্ত্রিত্বের একটি পদ পাওয়ার, কিন্তু সে গুড়ে বালি দিলেন দলের নেতাকর্মীরা। দলনেত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য তিনি আওয়ামী শাসনামলে নারায়ণগঞ্জের ত্রাস শামীম ওসমানের নেতৃত্বে বেগম খালেদা জিয়ার পার্বত্য চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হওয়া রোড মার্চ বানচাল প্রচেষ্টায় বিশেষ অবদান রেখেও তেমন সুবিধে করতে পারেননি।

বিগত নির্বাচনের আগে যুদ্ধাপরাধীর বিচার দাবিতে তিনি অনেক দৌড়ঝাঁপ করেছিলেন। কিন্তু বিধিবাম! মন্ত্রিত্ব তো দূরে থাক, গত সংসদ নির্বাচনে তিনি মনোনয়নই পাননি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.